শস্য বীমা হাসি ফুটালো ঠাকুরগাঁও-এর ৫৭৮ জন আলু চাষির মুখে
আবহমানকাল ধরে ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের টেকসই নিরাপত্তার লক্ষ্যে সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড, সিনজেনটা ফাউন্ডেশন এবং গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স শস্য সুরক্ষা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে ব্যতিক্রমী এই বীমা কৃষকদের দেবে অর্থনৈতিক সুরক্ষা।
তারই ধারাবাহিকতায় আলুর ‘লেট ব্লাইট’ রোগে ক্ষতিগ্রস্ত ঠাকুরগাঁও সদর ও আক্কেলপুর উপজেলার ১,১৪৯ জন আলু চাষি গত মৌসুমে সরাসরি এ প্রকল্পের সুফল ভোগ করছেন। উচ্চ আর্দ্রতা এবং কম তাপমাত্রার কারণে ঠাকুরগাঁও সদরে সর্বশেষ আলু উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এর ফলে ৫৭৮ জন কৃষকের কাছে বীমা দাবি সঞ্চারিত হয়েছিল যার পরিমাণ ৫২,০২৬ টাকা যা কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৯ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ।
দেশব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিটি প্রান্তিক কৃষকের কাছে এই যুগান্তকারী সেবা পৌঁছে দেবার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই তারা উত্তরবঙ্গের ২৫,০০০ কৃষককে এই পাইলট প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন এবং উত্তরবঙ্গে সিনজেনটার প্রায় ৩৫০ জন খুচরা বিক্রেতা কৃষকদের মধ্যে ফসলের সুরক্ষার জন্য বীমার প্রয়োজনীয়তার প্রচারে কাজ করেছে।
সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এ এম এম গোলাম তৌহিদ এ ধরনের সৃজনশীল প্রকল্প নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সিনজেনটা বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমাদের কৃষক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে কৃষিতে অবিরত উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা নিয়ে সরকারি সংস্থা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সাথে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, সুইস এজেন্সি ফর ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (এসডিসি) এবং সিনজেনটা ফাউন্ডেশন ফর সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার (এসএফএসএ বাংলাদেশ) এবং সুইসকন্ট্যাক্ট পরিচালিত শস্য সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২৩৩,০০০ জন কৃষককে আবহাওয়া সূচক ভিত্তিক ফসলের বীমার আওতায় আনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এই প্রকল্পের ইন্স্যুরেন্স পার্টনার হিসেবে দেশের একমাত্র ইন্স্যুরেন্স সুপার ব্র্যান্ড - গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ভবিষ্যতেও কাজ করে যাবে।
সিনজেনটা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. ফরহাদ জামিল বলেন, সিনজেনটা ফাউন্ডেশন ২০১৮ সাল থেকে ক্ষুদ্র কৃষকদের মধ্যে শস্য বীমার প্রচার করে আসছে। বিভিন্ন অংশীদারিত্ব ও বীমা বিতরণ মডেলে মাধ্যমে প্রায় ৬৩,০০০ জন কৃষককে ধান, ভুট্টা এবং আলু বীমার আওতায় আনা হয়েছে। সিনজেনটা বাংলাদেশ বাণিজ্যিক কৃষিক্ষেত্র সমৃদ্ধকরণে ও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য ক্রপ ইন্সুরেন্স-এর মতো উদ্ভাবনী প্রকল্পকে অংশীদার করে কাজ করতে বদ্ধ পরিকর।
গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স নিজস্ব রীতি অব্যাহত রেখে সিনজেনটা বাংলাদেশ এবং এসএফএসএ বাংলাদেশের সাথে ঠাকুরগাঁওয়ের ৫৭৮ জন আলুচাষীর মধ্যে আরেকটি বীমা দাবি নিষ্পত্তি করেছে। প্রান্তিক কৃষকদের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের অর্থনৈতিক সংযুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে এই মহৎ উদ্যোগের অংশ হতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করি, কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের জন্য কৃষি বীমা চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কৃষি অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কৃষি বীমার বিশদ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনযোগ্য।
কৃষকের মাঝে আলুর বীমা দাবি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও-এর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন।
তিনি বলেন, শস্য বীমা জলবায়ু পরিবর্তন গত ক্ষতি থেকে কৃষককে রক্ষা করতে একটি সময়োপযোগী প্রচেষ্টা যা ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আস্থা বাড়াবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সর্বদা কৃষকের পাশে থেকেছে এবং আমি আশা করি দ্রুত বীমা দাবি প্রদানের মাধ্যমে আরও নতুন নতুন কৃষক শস্য বীমায় আরো উৎসাহিত হবে এবং ফসলকে সুরক্ষিত রাখবে।