বিইআরসিকে আরও খাটো করা হচ্ছে!
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) পরিধি ছেটে আরও খাটো করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার তুলে নেওয়া সম্পর্কিত এক বিতর্কিত আদেশ প্রসঙ্গে অনেকেই এমন মন্তব্য করেছেন।
গত সপ্তাহে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উপ-সচিব শামীমা ফেরদৌস স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিইআরসিতে প্রেরণ করা হয়। চিঠির বিষয় হচ্ছে, এলপি গ্যাস লিমিটেড কর্তৃক সরবরাহযোগ্য এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি বিইআরসির আওতা বর্হিভূত রাখা। এতে বলা হয়েছে সরকারি এ কোম্পানিটির মার্কেট শেয়ার মাত্র ২ শতাংশ। দর নির্ধারণ করার জন্য বিপিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিইআরসি দর নির্ধারণ করায় প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি এ জনগণের সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না। সার্বিক বিষয়ে বিবেচনায় সরকারি কোম্পানিটির এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি বিইআরসির আওতা বর্হিভূত রাখা প্রয়োজন বলে প্রতীয়মান হয়, একই সঙ্গে এ দায়িত্ব বিপিসি পালন করতে পারে। এমতাবস্থায় এলপি গ্যাস লিমিটেড কর্তৃক সরবরাহযোগ্য এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের বিইআরসি আওতা বর্হিভূত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এই চিঠিকে বেআইনি ও বিধিবর্হিভূত বলে মন্তব্য করেছে ভোক্তাদের প্রতিষ্ঠান ক্যাব। গত ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। এর আগে কোম্পানিগুলো নিজের খেয়ালখুশি মতো দরে বিক্রি করতো, অন্যদিকে বিপিসি ঘোষণা করতো সরকারি কোম্পানির এলপিজির দর। যদিও কখনই ঘোষিত দরে সরকারি এলপি গ্যাস কখনই বিক্রি হয় নি, তুলনামুলক দর কম হওয়ায় পুরোটা চলে গেছে কালোবাজারে। বেসরকারি কোম্পানিগুলো তাদের ঘোষিত দরও বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
বিইআরসির আইন সম্পর্কে কয়েক মাস আগে পাঠানো এক চিঠিতে ক্যাব উল্লেখ করে, ২০০৩ সালে করা বিইআরসিআইনের আলোকে পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের খুচরা ট্যারিফ প্রবিধানমালা-২০১২ ও পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ পরিবহন ট্যারিফ প্রবিধানমালা-২০১২ প্রণয়ন করে বিইআরসি। প্রবিধানমালা আইনমন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সেই প্রবিধানমালা আটকে রেখে এলপিজি অপরেশনাল লাইসেন্সিং নীতিমালা-২০১৭ প্রণয়ন করে। এই নীতিমালায় এলপিজি মূল্যহার নির্ধারণ পদ্ধতি ও লাইসেন্সিং অবৈধভাবে নিজের হাতে রেখে দেয়। যে কারণে এতোদিন এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করতে পারেনি বিইআরসি। বিইআরসি আইনের সঙ্গে নীতিমালা সাংঘর্ষিক হওয়ার বিইআরসির পক্ষ থেকেও আপত্তি তোলা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তাতে কোনো কর্ণপাত না করে নিজের হাতে রেখে দেওয়ার পথে হাটে।
এভাবে কেটে গেছে কয়েক বছর। এখন এলপি গ্যাস সমন্বিত নীতিমালা-২০২১ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত চাওয়া হয়েছে। এতেও বিইআরসির কর্তৃত্ব খর্ব করা হয়েছে। ক্যাবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হযেছে নীতিমালা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
উল্লেখ্য, বর্তমানে শুধু বিদ্যুৎ পাইকারি ও খুচরা মূল্য ও গ্যাসের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র খুচরা মূল্য নির্ধারণ করছে বিইআরসি। জ্বালানি তেলের মূল্য বিইআরসি করার কথা থাকলেও বরাবরেই নির্বাহী আদেশে হয়ে আসছে। যে কারণে বিইআরসি আইন আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে বলে অনেকে তীর্যক মন্তব্য করেন। সেই কাঁটা ঘায়ে লবণ ছিটানোর সঙ্গে তুলনা করেছেন অনেকেই।