‘জ্বালানি সনদে স্বাক্ষর রাষ্ট্রকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে’
জ্বালানি সনদ চুক্তি কোনভাবেই জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে না। এতে জ্বালানি রূপান্তর নীতি বাধাগ্রস্ত হবে, রাষ্ট্র ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ক্যাব আয়োজিত গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপে এমন অভিমত উঠে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান বলেন, জ্বালানি সনদ চুক্তির মূল উদ্যোক্তা ছিল নেদারল্যান্ডস। তারাই এখন বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে বের হয়ে যাওয়া খুব সহজসাধ্য নয় তাই একে জংলী সনদ বলা হয়। ১৯৯১ সালে ডাবলিনে এক সভায় ডাচ প্রধানমন্ত্রী এনার্জি কমিউনিটি গড়ার প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাবের হাত ধরে ইউরোপীয় জ্বালানি সনদ চূড়ান্ত হয়। চুক্তিটি ১৯৯৮ সাল থেকে কার্যকর হয়।
সনদে স্বদেশি বিদেশি বাছ-বিচার না করে সবাইকে সুরক্ষা দেওয়া কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে এনার্জি চার্টারে স্বাক্ষর করে এখন পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য সম্মেলনে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে, শিগগিরই চুক্তি করার পথে রয়েছে। ধারা ৫, ১১ ও ১৪ অনুযায়ী লোকাল কোনো পণ্য ব্যবহারে বাধ্য করতে পারবে না। জনবলও নিতে বাধ্য করা যাবে না।
ভোক্তার জন্য জ্বালানি মূল্য কমালে বিনিয়োগকারী যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাতে মামলা করতে পারবে। এই সনদে সই করলে বিদেশি কোম্পানি বিনা বাঁধায় তাদের পুঁজি, মুনাফা ফেরত নিয়ে যেতে পারবে। সবচেয়ে বিপদজনক হচ্ছে, বিনিয়োগ সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব নিরসনে অতি ব্যয়বহুল আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করা হয়েছে। অন্যান্য আইনের মতো প্রাথমিক ধাপে স্বাগতিক রাষ্ট্রের আদালতে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এই সনদ স্বাগতিক দেশের জন্য একটি অসম ও ভারসম্যহীন অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে।
সূচনা বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক না থাকলে যেমন শরীর অচল হয়ে পড়ে। অর্থনীতির জন্য জ্বালানিও তেমনি। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি কিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জ্বালানির মূল্য কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। যেসব দেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানির দাম উঠানামা করে তাদের মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। আমেরিকা তার উপযুক্ত উদাহরণ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জ্বালানির দাম জনগণের নাগালে রাখতে হবে।
ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. এম শামসুল আলম বলেন, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের অবৈধ ও এখতিয়ার বর্হিভূত কর্তৃত্ব, রেগুলেটরি সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা ও অদক্ষতা, সুশাসনের সংকট এবং উপেক্ষিত জ্বালানি অধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জ্বালানি জাস্টিস এমন অবস্থা বাংলাদেশে জনবান্ধন জ্বালানি উন্নয়নে বড় বাঁধা।
সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি সরবরাহের দায়িত্ব বিইআরসির। কিন্তু তারা আইন যথাযথভাবে পালন করছে না। তারা লুন্ঠনমূলক ব্যয় অনুমোদন দিচ্ছে। ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। এমনকি সামাজিকভাবেও তেমন কোন আন্দোলন দেখা যাচ্ছে না।
এদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির নামে নিম্নমানের জিনিসের ব্যবসা হচ্ছে। রাজস্থানে যে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, সেখানে ৩ টাকার কম খরচ পড়ছে।