ভর্তুকি শেখ হাসিনার কাছে বিনিয়োগ: নসরুল হামিদ
ভর্তুকি শেখ হাসিনার কাছে বিনিয়োগ, ১ কোটি ৮০ লাখ লাইফ লাইন গ্রাহককে নামমাত্র মূলে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এফডিসিতে এটিএন বাংলার ‘আলোর মশাল তোমার হাতে’ প্রিমিয়ার তথ্যচিত্র শো আয়োজনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এটিএন বাংলা নির্মিত ৩০ মিনিটের ভিডিওটিতে গত ১৫ বছরের উন্নয়ন তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্রামের বাজারগুলো আগে সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে যেতো। এখন অনেক রাত পর্যন্ত সচল থাকছে। এতে গতিশীল হয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি।
ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে বলেন, ক্যাপাসিটি চার্জ না দিলে একটি পাওয়ার প্ল্যান্টও সম্ভব না। চার্জ যদি না দেই, তাহলে ট্যারিফ বাড়িয়ে নেবে। কেউ কি বাসা ভাড়া নিলে যখন থাকবে তখন ভাড়া দেবে। বাসায় না থাকলেও ভাড়া দিতে হবে। আমি যদি বলি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করো, লাগলে বিদ্যুৎ নেবো, না লাগলে নাই। তাহলে ব্যাংকও বিনিয়োগ করবে না। কথা হচ্ছে অতিরিক্ত চার্জ দেই কিনা। আমরা কোন অতিরিক্ত চার্জ দেই না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তখন বুঝতে পেরেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে হবে। সবার ঘরে বিদ্যুতের বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করেন, পৃথিবীর আর কোন দেশের সংবিধানে বিদ্যুৎকে এভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু ৫টি গ্যাস ফিল্ড কিনে নিয়েছিলেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল ৫টি গ্যাস ফিল্ড কিনে নেওয়া। এর প্রভাব হিসেব করে বলা কঠিন।
প্রধানমন্ত্রী পিতার স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়াকে মূলমন্ত্র হিসেবে ধারণ করেন। আমি দেখেছি তারেক জিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলছেন, মার্কেটে বিদ্যুৎ দিলে বাসায় থাকবে কিভাবে। এই কথা বলে কিভাবে। আমি সাধারণভাবে বলবো, তাদের সাধারণ জ্ঞানও ছিল না। আর বড় করে বললে, দেশের জন্য যে ভালোবাসা তা অন্তরে ধারণ করেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি ।
তিনি বলেন, বিগত ৬০ বছরে ৪০ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ দিয়েছে, আর মাত্র ১৩ বছরে আমরা ৬০ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে সিস্টেম লসও কমিয়ে আনা হয়েছে। এরশাদের সময়ে ৪৪ শতাংশ সিস্টেম লস ছিল। বিএনপির সময়ে ছিল ২২ শতাংশ , এখন কোন কোন জায়গায় ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পেরেছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি প্রথম ফোন দেন, তারপর জানতে পারি বিদ্যুতের দায়িত্ব পাওয়ার কথা। আমি তখন ভয় পেয়ে গেলাম, তার আগে সংসদে প্রতিমন্ত্রী প্রতিনিয়ত নাস্তানাবুদ হতেন বিদ্যুৎ দিতে না পেরে। রোগীকে জরুরি রক্ত দেওয়া প্রশ্নে যেমন দাম ইস্যু নয়, তেমনি রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট। তখন প্রথম কাজ করেছি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে পেরেছি। আমরা যখন রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার উদ্যোগ নিলাম, তখন ব্যাপক সমালোচনা করা হলো, সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন গিয়ে দেখে আসেন। রামপালে যতদিন কাজ করেছি, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। এখন প্রতি মিনিটের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা এখনও সাশ্রয়ী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরবিচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী এবং মানসম্মত বিদ্যুৎ দেওয়া। আমরা আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবলে যাচ্ছি। আগামী ৫ বছরে বড় সিটিতে তার দৃশ্যমান থাকবে না। বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের পোর্টফোলিও ৪০ বিলিয়ন ডলার, এটা কোথা থেকে এলো। একমাত্র আস্থার কারণে এই বিনিয়োগ এসেছে। আমেরিকার বড় কোম্পানি শেভরন, এক্সিলারেট, ভারতের টাটা, আদানি, রিলায়েন্স, সিঙ্গাপুর সেমকপ, মারুবিনি এসেছে। বাংলাদেশে অনেক বড় কোম্পানি তৈরি হয়েছে। করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের কিছুটা সমস্যায় ফেলেছে। অনেক দেশ এই সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। আমরা ভালো আছি এটা দাবি করবো না, তবে অন্যদের তুলনায় ভালো আছি।
তিনি বলেন, ৫০ বছরে একমাত্র বিদ্যুৎখাত স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে। গত ৬ বছরের মধ্যে চারবার প্রথম হয়েছি পিপিএ বাস্তবায়নে। আমাদের লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ।
এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা আগামী ৫ বছরের মধ্যে সিঙ্গাপুর ব্যাংককের পর্যায়ে পৌঁছে যাবো। মানুষ অনেকে জানেন না এসব উন্নয়নের কথা। আমি চাই আরও দশ বছর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থেকে দেশের চেহারা পাল্টে দিক।
বিদ্যুতের লোডশেডিং হলে গালাগাল করা হয়, আপনারা বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন কেনো লোডশেডিং হয়। আপনারা জানাতে পারেননি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকট হচ্ছে। প্রতিটা অফিসে জেনারেটর রয়েছে, পুরুষরা ফিল করতে পারেন না। দুর্ভোগ পোহান মহিলারা, তারা কিন্তু বিদ্যুৎ গ্যাস না থাকলে ক্ষুব্ধ হয়।
আমি গার্মেন্ট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি বিদ্যুৎ না থাকায়। দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হতো। আমি ৮ বছর জাতীয় ট্রফি পেয়েছি, সেই আমি গার্মেন্ট বন্ধ করেছি। এখন লোডশেডিং নেই বললে চলে। আমি এই উন্নয়ন কেনো প্রচার করতে পারবো না। আমরা ভালোটাকে তুলে ধরতে জানি না, টিআরপি বাড়ানোর জন্য নেতিবাচক খবর তুলে ধরা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিগত ১৫ বছরে সবেচেয়ে ভালো করেছে দুটি মন্ত্রণালয়। একটি হচ্ছে বিদ্যুৎ আরেকটি হচ্ছে যোগাযোগ বলে মন্তব্য করেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান।
এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আগে বহুতল ভবন করতে গেলে জেনারেটরের আগাম বুকিং দিতে হতো। তারপরও নির্ধারিত সময়ে পাওয়া যেতো না। এখন জেনারেটর কোম্পানি উল্টো অফার নিয়ে ঘুরছে।
৭ টাকা ইউনিটের বিদ্যুৎ ভ্যালু অ্যাড করে যদি ৫০ টাকা বিক্রি করি, তাহলে বেশি দামে বিদ্যুৎ না বিদ্যুৎহীন কোনটি ভালো। ক্যাপাসিটি পেমেন্টকে অ্যাড্রেস করতে হবে। হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকম ব্যাখ্যা থাকতে পারে।
এটিএন বাংলার উপদেষ্টা (অনুষ্ঠান) নওয়াজেশ আলী খান বলেন, ১৫ বছর আগের চিত্র দেখলে দেখতে পাই ঘরে আইপিএস না থাকলে কল্পনা করা দায়।