পেট্রোবাংলা ও বিপিসি পেমেন্ট দিতে হিমশিম খাচ্ছে: সিপিডি
![পেট্রোবাংলা ও বিপিসি পেমেন্ট দিতে হিমশিম খাচ্ছে: সিপিডি](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2023/Nov/16/1700128939392.jpg)
পেট্রোবাংলা ও বিপিসি পেমেন্ট দিতে হিমশিম খাচ্ছে: সিপিডি
আমদানি প্রবণতার কারণে পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন পেমেন্ট দিতে হিমশিম খাচ্ছে। দেশীয় তেল-গ্যাস উত্তোলনের চেয়ে আমদানিতে গুরুত্ব বেশি দেওয়া এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সিপিডির ডিরেক্টর রিসার্চ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সিপিডি প্রতি ৩ মাস পর পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম কোর্য়াটারের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উপর রিপোর্ট "পরিবর্তনের পথে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত" প্রকাশ উপলক্ষে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সরবরাহকারিদের ৬৭০ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট বকেয়া পড়েছে বিপিসির। অন্যদিকে পেট্রোবাংলার এলএনজি আমদানি বাবদ বকেয় পড়েছে ৩০০মিলিয়ন ডলারের মতো। এই দায় মেটাতে পেট্রোবাংলা ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) কাছে ৬ মাসের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকেট ঋণ নিচ্ছে। সিন্ডিকেট ঋণ সাময়িক সময়ের জন্য স্বস্তি মনে হলেও বিপদ বাড়াবে। আমরা এখনই বকেয়া পরিশোধ করতে পারছিনা, এরসঙ্গে সুদসহ বোঝা যুক্ত হচ্ছে।
আমদানিকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেভাবে দেশীয় জ্বালানির উত্তোলনে গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। যে কারণে আজকের এই সংকট। নতুন গ্যাস কূপ না করলেও পুরাতন গ্যাস কূপের সংস্কার যথা সময়ে হলেও এই সংকট হতো না। যত দ্রুত সম্ভব আমদানি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। বিকল্প জ্বালানির দিকে যেতে না পারলে ডলার সংকট দূর করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন ড. মোয়াজ্জেম ।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের ৫১ শতাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেকার পড়ে থাকছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র এক সময় উদ্বৃত্ত ছিল, এখন উদ্বৃত্ততর থেকে বাহুল্য হয়ে গেছে। যা মাথা ব্যাথার জায়গা হয়ে দাড়িয়েছে। এখন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নতুন করে চুক্তি নবায়ন করা উচিত হবে না।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিন্ন ভিন্ন ট্যারিফ প্রসঙ্গে বলেন, সবকিছুর মূলে হচ্ছে দায় মুক্তি আইন। যদি প্রতিযোগিতামুলক বাজার থাকতো তাহলে এমন অসম চুক্তি হতো না। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে মালিকের নাম পাশে বসালে দারুণ একটি যোগসূত্র দেখা যায়। নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি এসব সুবিধা পাচ্ছে। চুক্তির অস্বচ্ছতার প্রশ্ন থেকেই যায়।
তিনি একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভবিষ্যতে সবচেয়ে সাশ্রয়ী হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এমনকি সাশ্রয়ী গ্যাসের চেয়েও কম দাম পড়বে। বাংলাদেশ ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে তাদের কার্যক্রমের অগ্রগতি গড়ের চেয়ে অনেক নীচে অবস্থান করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে কোনটিং নির্ধারিত সময়ে আসতে পারি নি। বিলম্বে কিংবা আংশিক উৎপাদনে এসে ৪টি, আর ৯টি এখনও উৎপাদনে যেতে পারি।
রিপোর্টে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে এলএনজি আমদানি নীতি সিদ্ধান্ত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কাতারের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদী এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। আরও দু’টি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং গ্যাস রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) স্থাপনের চুক্তি করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য নতুন করে ২০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দিকে জোর দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়, বিদ্যুতের সবচেয়ে কম ব্যবহার হচ্ছে ময়মনসিংহ ও রংপুর জোনে। তবে বিগত ৩ মাসে এসব জোনেই বেশি লোডশেডিং দেওয়া হয়েছে। লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু উৎপাদন ঘাটতি নয়, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণেও লোডশেডিং বেড়েছে। গত জুনে সঞ্চালন সমস্যার কারণে প্রায় ২৪১০ বিদ্যুৎ বিহীন থাকে। আগস্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল ৫০১৬ ঘণ্টা।
সাংবাদিক সম্মেলনে রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্স এসোসিয়েটস হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি।