ভোলায় ৫ টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে: সচিব

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেছেন, দ্বীপ জেলা ভোলার দু’টি গ্যাস ফিল্ড থেকে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন গ্যাস এলএনজি আকারে আনার প্রক্রিয়া চলমান। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সরবরাহ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।

এলএনজি আকার আনার পাশাপাশি ভোলা-বরিশাল-খুলনা এবং বরিশাল থেকে ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ওই এলাকায় ৫ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ আশা করা হচ্ছে। কাগজপত্রে ১২ টিসিএফ মজুদের কথা বলা হলেও কিছুটা কম করেই বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ভোলায় দু'টি গ্যাসফিল্ডে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে। যা দিয়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। ৯টি কূপের মধ্যে ৫টি এখনই গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম রয়েছে যেগুলো থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। গ্যাসের চাহিদা না থাকায় মাত্র ৮০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, আবার পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে দেওয়া যাচ্ছে। অপর ৪টি কূপের মধ্যে ১টির পাইপলাইন এবং ৩টি কূপের প্রসেস প্লান্ট রেডি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ওই এলাকায় আরও ১০টি কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, অনেকে ধারণা করেন সেখানে ১২ টিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে। পাইপ লাইন করতে গেলে ৫ বছর সময় প্রয়োজন হবে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে এলএনজি আকারে আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। দু’টি ফিল্ডের মধ্যে ১টি থেকে ৬০ মিলিয়ন অন্যটি থেকে ২০ মিলিয়ন আনা হবে।

গ্যাস সংকট নিয়ে কি ভাবছে সরকার এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এরমধ্যে রয়েছে চুরি ও সিস্টেম লস কমিয়ে উন্নতি করা। গড়ে ১০ শতাংশের মতো সিস্টেম লস রয়েছে। কিছু কূপের সংস্কার (ওয়ার্কওভার) করে উৎপাদন বাড়ানো, এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোরদার করা। আমরা ১০০টি কূপ খননের প্রক্রিয়া শুরু করেছি, বাপেক্সের জন্য আরও ৩টি রিগ কেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি রিগের টেন্ডার করা হয়েছে। পাশাপাশি সিসমিক সার্ভের কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের যে দুটি এফএসআরইউ রয়েছে যার মাধ্যমে বছরে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করা সম্ভব। আরও দুটি এফএসআরইউ স্থাপন এবং ল্যান্ডবেজড টার্মিনাল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা চাই দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে। না হলে এলএনজি আমদানি যতো বাড়বে, গাসের দাম ততো বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, চলতি বছরে ১০১ কার্গো আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ৫৬ কার্গো আসছে জিটুজি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে কাতার ও ওমান থেকে। ব্রুনাই থেকে জিটুটি ভিত্তিতে বছরে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির চুক্তি চুড়ান্ত পর‌্যায়ে রয়েছে। নাইজেরিয়া এবং উজবেকিস্তান থেকে আমদানির জন্য আলোচনা চলমান রয়েছে। আমরা স্পর্ট থেকে সরে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির মাধ্যমে পুরো এলএনজি আমদানির দিকে যাচ্ছি।

দাম প্রসঙ্গে বলেন, ১০১ কার্গো আমদানি করে বিদ্যমান দরে বিক্রি করলে বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। যা বছরে দাঁড়াবে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

তিনি বলেন, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে আসছে অর্ধেকের মতো। আর ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে যোগান দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ২৫ শতাংশ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আমদানির পর মিশ্রিত গ্যাসের দর পড়ছে ৩০ টাকার মতো। আর বিক্রি করা হচ্ছে ২২.৮৭ টাকা হারে। এতে করে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যে কারণে আমরা নতুন শিল্পে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দামের বিষয়টি এখন বিইআরসি দেখছে। তারা তাদের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী দেশে ৮টি গ্রাহক শ্রেণিতে অনুমোদিত লোডের পরিমাণ রয়েছে ৫ হাজার ৩৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট (দৈনিক)। এর বিপরীতে চাহিদা ধারণা করা হয় ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে, আর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিলিয়নের মতো।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১ টাকা দরে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি থেকে ১.২৫ টাকা দরে, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট গ্যাস কেনা হয়। এরপর বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও টাল্লোর কাছ থেকে কেনা গ্যাসের সংমিশ্রণে গড় দর দাঁড়ায় ৬.০৭ টাকা ঘনমিটার। আর প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫.৭০ টাকা (আগস্ট ২০২৪)। ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৫.৭২ টাকা। ফলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমাতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করলে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ঘাটতি হবে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা। যে কারণে তারা নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে ১৫২ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।

যখন এক-চতুর্থাংশ আমদানি করতে ত্রাহী অবস্থা, সেই সময়ে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসছে, এতে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে উৎপাদন। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতো ২ ফেব্রুয়ারি ১৯০৩ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। প্রতি দিনেই কমে আসছে দেশীয় ফিল্ডের উৎপাদন।

বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে ১১৩ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে ৯৯টির মতো। এর মাধ্যমে ২৯টি গ্যাসফিল্ড আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। মোবারকপুর ও কশবার মতো কয়েকটি ফিল্ডে গ্যাসের উপস্থিতি পেলেও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয় নি। বাংলাদেশ প্রতি ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটি করে কূপ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে, আমেরিকা প্রতি ১৪ বর্গকিলোমিটারের ১টি এবং ভারত ১৮.৬ বর্গকিলোমিটারের ১টি কূপ খনন মানদন্ড বিবেচনা করা হয়। সঙ্গত কারণে দেশে গ্যাস সংকটের জন্য অনুসন্ধান স্থবিরতাকেই দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।