শ্রমিকের বেতন দিতে বিনা সুদে ঋণ পাবে রফতানি প্রতিষ্ঠান
শ্রমিকদের বেতন দিতে বিনা সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পাবে রফতানি প্রতিষ্ঠান। উৎপাদনের নূন্যতম ৮০ শতাংশ পণ্য রফতানি করছে এমন সচল প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাবে। তবে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি করেছে।
এর আগে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঋণের অর্থ কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।
এর প্রেক্ষিতে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে সহজ শর্তে ঋণ-বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান প্রসঙ্গে এ সার্কুলার জারি করা হয়।
দেশে সকল তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রফতানিমুখী বাণিজ্যের ওপর নভেল করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সচল রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ঋণ-বিনিয়োগ প্রদানের উদ্দেশ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ হতে আর্থিক প্রণোদনা তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিল হতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনা সুদে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের চাহিদা মোতাবেক ঋণ-বিনিয়োগ হিসাবে অর্থ প্রদান করবে। কেবলমাত্র শ্রমিক-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ তিন মাস বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ঋণ-বিনিয়োগ গ্রহণ করতে পারবে।
শুধুমাত্র সচল রফতানিমুুুখী প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে ঋণ সুবিধা পাবে।
যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান মোট উৎপাদনের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ রফতানি করে তারা রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যে সকল প্রতিষ্ঠান তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বিগত ডিসেম্বর ২০১৯, জানুয়ারি ২০২০ এবং ফেব্রুয়ারি ২০২০ এই তিন মাসের বেতন পরিশোধ করেছে তারা সচল শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। আর রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রমাণের জন্য বাণিজ্য সংগঠনের (যেমন বিজেএমইএ, বিকেএমইএ ইত্যাদি) প্রত্যয়নপত্র লাগবে।
বেতনের অর্থ শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করতে হবে। কোন প্রকার নগদ লেনদেন করা যাবে না। যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ব্যাংক হিসাব নেই। তাদের মালিক নিজ উদ্যোগে ব্যাংক হিসাব খুলে দিবে। এসব হিসাবে কোনো চার্জ আরোপ করতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিনা সুদে এ তহবিল থেকে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিবে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তাদের প্রশাসনিক ব্যয় হিসাবে এককালীন ২ (দুই) শতাংশ সার্ভিস চার্জ নিতে পারবে।
ঋণ নেওয়ার পর ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ২ বছরে ১৮টি সমান কিস্তিতে ব্যাংককে সার্ভিস চার্জসহ ঋণ পরিশোধ করবে। ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধিত না করলে প্রচলিত নিয়মে শ্রেণিকরণ করতে হবে এবং খেলাপি হিসেবে বকেয়া কিস্তির উপর ২ শতাংশ হারে দণ্ড সুদ আরোপ করা যাবে।
ঋণ দেওয়ার ধরণ উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, যে শিল্প প্রতিষ্ঠান ঋণ আবেদন করলো তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতনের মোট পরিমাণ ধরা হলো ৩০০ টাকা। তাহলে ওই ব্যাংক এপ্রিল মাসের ২০ তারিখের মধ্যে প্রণোদনা তহবিল হতে ৩০০ টাকা ঋণ প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবরে আবেদন করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নামে ৩০০ টাকা ঋণ মঞ্জুর করে এপ্রিল মাসের শেষ কর্ম দিবসের পূর্বে ১০০ টাকা, মে মাসের শেষ কর্ম দিবসের পূর্বে ১০০ টাকা এবং জুন মাসের শেষ কর্ম দিবসের পূর্বে ১০০ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চলতি হিসাবে আকলন করবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এপ্রিল মাসের শেষ কর্মদিবসে ১০০ টাকা আবেদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ সৃষ্টি করে একই দিনে শ্রমিক কর্মচারীদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করবে এবং একইভাবে মে মাসের শেষ কর্ম দিবসে ১০০ টাকা এবং জুন মাসের শেষ কর্ম দিবসে ১০০ টাকা আবেদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ সৃষ্টি করে একই দিনে শ্রমিক কর্মচারীদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করবে।
ঋণগ্রহীতা তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২০ হতে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ড পাবে। প্রথম কিস্তি শুরু হবে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস হতে এবং সর্বশেষ কিস্তির সময় হবে ২০২২ সালের জুন মাস। এক্ষেত্রে যথাসময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হলে মোট ৩০০ (তিনশত) টাকা ঋণের জন্য ১৮টি সমান কিস্তির মাধ্যমে ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ ৩০৬ টাকা আদায় করা যাবে।