করোনায় দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক বিপদ বাড়ছে
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের হানায় দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক বিপদ বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। মৃত্যু ও আক্রান্তের দিক থেকে এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নকামী দেশগুলো করোনার কারণে আর্থিক দিক থেকে বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অচল হয়ে পড়তে পারে বেশ দ্রুতগতিতে চলা অর্থনীতির চাকা।
এই আশঙ্কার কথা জানা গেছে বিশ্বব্যাঙ্কের এক রিপোর্টে। তাতে বলা হয়েছে, 'অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আদর্শ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়া। পর্যটন শিল্প অসাড় হয়ে পড়ে রয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, বস্ত্র শিল্পে চাহিদা নেই, ক্রেতা বা বিনিয়োগকারীর কাজেও ধাক্কা লেগেছে।'
বিশ্ব ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস অনুযায়ী, করোনা বিস্তারের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশে মন্দা, কোনও দেশে বা মহামন্দাও দেখা দিতে পারে। কমে যেতে পারে প্রবৃদ্ধি, যা বিগত ৪০ বছরের মধ্যে নিম্ন পর্যায়ে চলে আসবে।
তথ্য-পরিসংখ্যান বলছে, চলতি আর্থিক বছরে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াতে পারে ১.৮ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশে। যদিও বিশ্বব্যাপী করোনা-সংক্রমণের আগে এ অঞ্চলে ৬.৩ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
কিন্তু এখন বিশ্বব্যাঙ্ক দাবি করছে যে, করোনার কারণে সৃষ্ট বিরূপ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মালদ্বীপ। মূলত পর্যটন শিল্পের উপরে নির্ভরশীল মালদ্বীপের জিডিপি ১৩ শতাংশ নীচে নেমে যেতে পারে। অন্য দিকে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা যথাক্রমে ৫.৯ শতাংশ ও ২.২ শতাংশ নিম্নমুখী হতে পারে। স্বস্তিতে দক্ষিণ এশীয় অর্থনীতির হেভিওয়েট দেশ ভারতও। এ দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার ঘোরাফেরা করবে ১.৫ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশের মধ্যে। করোনা-পরিস্থিতির আগে যা ছিল ৪.৮ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে।
অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোকেও প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী চাপ সহ্য করতে হবে। বিশেষ করে যারা পোষাক শিল্প ও জনশক্তি খাতের উপর নির্ভরশীল, তারা বড় ধরনের চাপের মধ্যে পড়বে। অভিবাসী শ্রমশক্তি-নির্ভর দেশগুলোর অর্থনীতিও হোঁচট খাবে।
করেনার কারণে ঠিক কেমন ক্ষতি হবে এবং কোন কোন দেশের চিত্র কেমন দাঁড়াবে, তা এখনই গবেষকরা চিত্রিত করতে পারেননি। তবে প্রাথমিক পূর্বাভাস হিসেবে অর্থনৈতিক বিপদ বৃদ্ধির বিষয়ে তারা নিশ্চিত। অবশ্য, সঙ্কটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ অঞ্চলের দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতৃত্বের দক্ষতা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে বিপদের তারতম্য।
মোদ্দা কথায়, করোনার ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্যসেবার চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধেও দক্ষিণ এশিয়ার সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী নজর রাখতে হবে করোনার আশু ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিপদের দিকেও। প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য বের করতে হবে বিকল্প পন্থা।
করোনার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় সৃষ্ট সম্ভাব্য আর্থিক বিপদ সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'সারা বিশ্বে ঘনীভূত অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব এ অঞ্চলেও আসতে বাধ্য। করোনার জন্য সামাজিক স্থবিরতার কারণে সেবা, উৎপাদন ও বিনিয়োগ খাতে স্থবিরতা আসবে। এতে পর্যটন, হোটেল ও হসপিটালিটি খাতে আয় কমবে।'
ড. কামাল বলেন, 'পোষাক শিল্প ও শ্রমবাজার সঙ্কোচন হওয়ার প্রভাবও পড়বে দক্ষিণ এশিয়ায়, যা এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি যেসব ক্ষেত্রের উপর প্রধানত নির্ভরশীল, সেগুলো করোনার কারণে কমবেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এ অঞ্চলের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সূচক নিম্নগামী হবে।'
ক্যাপশান
করোনায় দক্ষিণ এশিয়ায় কমবে প্রবৃদ্ধি, ছবি,: সংগৃহীত