কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেছেন, আমরা এক সময় জীবন দিয়ে গ্যাস রপ্তানি, টাটা গ্রুপ ও ফুলবাড়ী (ফুলবাড়ী কয়লা খনি) ঠেকিয়েছি। রাষ্ট্রের ভ্রান্তনীতির কারণে দেশটা এখন আমদানির বাজার হয়ে গেল।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘জ্বালানি রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে সাহিত্য ও সংস্কৃতিজনের দায় ও দরদ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এম শামসুল আলম আরও বলেন, বিগত পনের বছরে অলিগার্ক শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে। নির্বিচারে লুণ্ঠন বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলকেও হার মানিয়েছে। দুর্নীতিকে আইনী কাঠামো দেওয়া হয়েছে দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে। সম্ভবত আদিম যুগেও এমন কাজের সুযোগ ছিল না। যারা লুণ্ঠন করেছেন তাদেরকে কখনও অনুতপ্ত হতে দেখেছেন! না, তারা অনুতপ্ত হয় নি। তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরীরা বীরদর্পে বলেছে আদানির চুক্তি প্রকাশ করা যাবে না। তাদের মধ্যে দায় এবং দরদ দেখতে পাই নি।
তিনি বলেন, মাওলানা ভাসানীর মতো রাজনীতিবীদরা কেনো নমস্য হন, কারণ তারা দেশের জন্য দায় ও দরদ দিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু এখন দায় ও দরদের অনুপস্থিতি দেখছি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুরি হয়েছে, হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে।
তিনি বলেন, ক্যাবের ২১ দফার ভিত্তিতে সারাদেশে গণস্বাক্ষর অভিযান চলছে। খুব শিগগিরই গণস্বাক্ষর সম্বলিত ২১ দফা সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, আমি মনে করি না রাজনীতি ছাড়া কোনো শিল্প হতে পারে। আমি যেটা বিশ্বাস করি, সেভাবে নাটক লিখি।
জ্বালানি রূপান্তর ইস্যুকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রস্তাবনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সব বিষয় পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করার সঙ্গে একমত না। আমি দেখেছি প্রয়োজন ছাড়া অনেক বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত শিশুরা এসব বিষয় পড়ে আনন্দ পান না। প্রত্যেক শ্রেণিতে এসডিজি বিষয়ক চ্যাপ্টার থাকতে হবে কেনো।
ক্যাব আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও গবেষক কাজল রশীদ শাহীন। তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে জনগণ যেমন দেশের প্রতি ভালোবাসা হিসেবে নিজের দায় ও দরদ দিয়ে ভূমিকা রেখেছেন। সেভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, মানুষের জীবন ও মানের প্রায় সবকিছুই নির্ভর করছে জ্বালানির উপর। এখন বলা হচ্ছে জ্বালানির অধিকার মানুষের মানবাধিকারের সমতুল্য। বাস্তবতা হচ্ছে, জ্বালানির প্রাপ্যতা, জ্বালানির দাম, অধিকার, দারিদ্র, জ্বালানির সুবিচারের বিষয়গুলো কেবল তাত্ত্বিকভাবে নয়, মানুষের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণও করে চলেছে।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়ার সভাপতিত্ব করেন। শুভ কিবরিয়ার সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের উপপরিচালক অনন্ত উজ্জল, সহকারি এটর্নী জেনারেল আরিফ খান, কথা সাহিত্যিক সাজেদুল ইসলাম, সাংবাদিক জব্বার হোসেন, ফয়সল আহমেদ, মাসরুর শাকিল প্রমুখ। এতে দেশের উদীয়মান শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি ও লেখকরা অংশ নেন। বক্তারা দেশের জনগণের জ্বালানি খাসলত (ব্যবহারগত আচরণ) বদলানোর উপর তাগিদ দেন।