পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতির প্রচার নেই, ভোট দিতে পারছেন না প্রবাসীরা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,চাঁদপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতির প্রচার নেই, ভোট দিতে পারছেন না প্রবাসীরা

পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতির প্রচার নেই, ভোট দিতে পারছেন না প্রবাসীরা

পোস্টাল ব্যালটে ভোটের সুযোগ থাকলেও শুধুমাত্র ঝামেলা মনে করেই ভোট বঞ্চিত চাঁদপুর জেলার প্রবাস জীবন কাটানো লাখ লাখ ভোটার। বছরের পর বছর তারা প্রবাসে টাকা আয়ের চেষ্টায় মগ্ন থাকলেও দেশের সাংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে দেখাচ্ছেন না বিন্দুমাত্র আগ্রহ। যদিও সরকারি বেসরকারি উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণার মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটে ফেরানো যেতে পারে বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল।

শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি কার্যালয়ের এক তথ্য পর্যালোচনায় অধিকাংশ প্রবাসীই ঝামেলা মনে করে পোস্টাল ব্যালটে ভোটে অংশ না নেয়ার বিষয়টি উঠে আসে।

বিজ্ঞাপন

তথ্য মতে, ২০০৫ সালের নভেম্বর হতে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা হতে নানা কারণে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছেন ৪ লাখ ৮১ হাজার ৩'শ ৯ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে নভেম্বর পর্যন্ত সময়েই ৪৮ হাজার ৩'শ ৮৯ জন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ভোটে অংশ নিতে নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে হলেও কেউই এখনো আবেদন করেননি।

চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, চাঁদপুরে বর্তমানে ভোটার রয়েছেন ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৬'শ ৯ জন। তাহলে বলা চলে জেলার মোট ভোটারের প্রায় ২৫ শতাংশ ভোটারই প্রবাসে রয়েছে। যারা জেলার ৫টি সংসদীয় এলাকায় এবারের মোট ২৯ জন প্রার্থী হতে আগামী ৫ বছরের জন্য ৫ জনকে নির্বাচিত করার ভোটাধিকার প্রয়োগ হতে বঞ্চিত থাকছেন।

চাঁদপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, 'দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কোন প্রবাসীর কাছ থেকেই পোস্টাল ব্যালট পেপারে ভোটের আবেদন এখনো আসেনি। এমনকি একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এ জেলার কোন ভোটার প্রবাস হতে ভোট দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করে কোন আবেদন করেনি। যদি আবেদন করতো তাহলে অনতিবিলম্বে ওই ভোটারের কাছে ডাকযোগে একটি পোস্টাল ব্যালট পেপার এবং একটি খাম পাঠিয়ে দিতাম। ভোটার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য ব্যালট পেপার পাওয়ার পর নির্ধারিত পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে ব্যালট পেপারটি পুনরায় আমাদের কাছে খামে করে ডাকযোগে পাঠাতো। অথচ এসব কৌশলকে জটিল এবং অনেকে না জানার কারণে এ জেলার লাখ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ হতে বঞ্চিত থাকছেন।'

দুবাইয়ে থাকা চাঁদপুরের ভোটার বাবু জানান, 'টাকা কামাইতে ব্যস্ত সময় পার করছি। এতো নিয়ম কানুন মেনে ভোট দিতে যে সময়টুকু প্রয়োজন তা বের করাই কষ্ট। তাই এতো ঝামেলার মধ্যে ভোট দেইনা। তাছাড়া এখানে ভোট দিতে অন্য প্রবাসীদেরও কোন উৎসাহ বা মাথাব্যাথা দেখছি না।'

চাঁদপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, 'ভোটার তালিকায় নাম আছে ব্যক্তিদের মধ্যে দেশের জেলখানায় বা অন্য আইনগত হেফাজতে থাকা ব্যক্তি কিংবা নিজের এলাকার বাইরে অন্য ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে থাকা ব্যক্তি এবং বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি ভোটারেরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। অথচ বিষয়টি জানা নেই অনেক প্রবাসীদের। পোস্টাল ব্যালট কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানোকে অধিকাংশ প্রবাসীরা ঝামেলা মনে করে এবং অনেকে না জানার জন্যই সংসদ নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ হতে বঞ্চিত হচ্ছেন।'

মোহাম্মদ শফিকুর রহমান আরও বলেন, 'অনেকে পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিষয়টি শুনলেও না বুঝেই এটি জটিল মনে করছেন। আমার মতে বিষয়টিকে সহজভাবে নিয়ে শত ব্যস্ত থাকলেও দেশ সেবার অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে একটু সময় বের করে হলেও নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা উচিত।'

এদিকে সচেতন মহল মনে করছেন, প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিতে সরকারি বেসরকারিভবে আইনী নিয়মকানুন ঢালাওভাবে সহজীকরণ দেখিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্র প্রচারণা চালানো এখন সময়ের দাবি। এতে করে পোস্টাল ব্যালটের বিষয়টি সম্পর্কে প্রবাসীরা অবগত হবে এবং এ পদ্ধতিতে ভোট বঞ্চিত লাখ লাখ ভোটার ভোটে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ হবে।