ঢাকা-১০ উপনির্বাচন
দূষণমুক্ত প্রচারে ইসির প্রস্তাবে সম্মত প্রার্থীরা
ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে দূষণমুক্ত নির্বাচনী প্রচারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পাঁচ দফা প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন সব প্রার্থী। ফলে এই নির্বাচনের প্রচারণা হবে দূষণমক্ত। জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রচারে এমন নতুনত্ব আনছে কমিশন।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ইটিআই ভবনে এ লক্ষ্যে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ইসি। সেখানে ইসির পক্ষ থেকে এগুলো নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাব তোলেন। এই প্রস্তাবের সমর্থন দেন অংশ নেওয়া প্রার্থীরা।
জানা গেছে, ইসির পক্ষে দূষণমুক্ত প্রচারের জন্য পাঁচ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ঢাকা-১০ উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জিএম সাহতাব উদ্দিন।
প্রস্তাবনায় ছিল- ১. প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালায় বর্ণিত সংখ্যক নির্বাচনী ক্যাম্প অনুমোদিত স্থায়ী স্থাপনায় স্থাপন করবেন। ক্যাম্পসমূহে প্রার্থীরা পোস্টার, ব্যানার, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করতে পারবেন। সিটি করপোরেশন আইনে অনুমোদিত ডেসিবেল মাত্রায় মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন।
২. নির্বাচন কমিশন আসনের ২১টি জায়গা নির্ধারণ করেছে। সকল প্রার্থী সেখানে নিজ নিজ স্ট্যান্ড স্থাপন করে পোস্টার ঝুলাতে পারবেন। এক একটি জায়গায় পর্যায়ক্রমে সকল প্রার্থী শব্দযন্ত্র ব্যবহার করে আচরণ বিধিমালায় বর্ণিত সময়কালে প্রচারণা চালাতে পারবেন।
৩. প্রার্থীরা নির্ধারিত স্থানে শোভাযাত্রা, পদযাত্রা সীমিত রাখবেন। নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক প্রার্থীকে এ লক্ষ্যে নির্দিষ্ট দিন, সময় নির্ধারণ করে দিবেন।
৪. নির্বাচন কমিশন জনসভার জন্য এক বা একাধিক জায়গা নির্দিষ্ট করে দিবে। উক্ত নির্ধারিত স্থানে কর্তৃপক্ষের। অনুমোদন গ্রহণ করে তারা পর্যায়ক্রমে সভার আয়োজন করবেন।
৫. কোনো তোরণ নির্মাণ করা হবে না, রাস্তার ফুটপাতে কোনো ক্যাম্প করা যাবে না, রাস্তায় কোনো পথসভা করা হবে না, সর্বোপরি নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কার্যক্রম হতে সবাই বিরত থাকবেন।
এসব প্রস্তাবনা উত্থাপনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা এমন ছিল যে পোস্টারের জন্য চাঁদ, সূর্য কিছুই দেখা যেত না। এসব কারণে দুর্ভোগ তৈরি হয়। সংসদ নির্বাচন অথবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এত পোস্টার, ব্যানার, এত মাইকিংয়ের প্রয়োজন আছে কিনা, কোনো দেশের নির্বাচনে এমন করে কিনা। তারা না করলে আমরা করব না। কেন আমাদের শহরটাকে দূষিত করব। ঢাকা সিটির নির্বাচনে নাকি ২৫ টন পলিথিনের পোস্টার তৈরি হয়েছে, এগুলো কোথায় যাবে। তাই আমরা এই নির্বাচনের প্রচারণার জন্য ২১টি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাস্তার যেখানে সেখানে পোস্টার না টানিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্বাচনী যে অফিস থাকবে, সেখানে প্রয়োজনে কমিশন নিজের খরচে বোর্ড টানিয়ে দেবে। সেই বোর্ডে ছয়জন প্রার্থী পোস্টার লাগাবেন।’
পরে একে একে প্রার্থীদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ভোটারদের সুবিধার্থে গণপরিবহন সচল রাখার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘বিলবোর্ডে প্রচারের সুযোগ দিতে হবে। ভোটের আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দেখার সুযোগ দিতে হবে।’
বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম বলেন, ‘এজেন্টদের নিরাপত্তা দেওয়া হয় না। তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়। হয় এজেন্টদের কেন্দ্রে যাওয়া, অবস্থান ও বাড়িতে ফেরার নিরাপত্তা দিতে হবে, অন্যথায় নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে এজেন্ট তুলে দিতে হবে।’
আলোচনায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শাহাজাহান বলেন, ‘নির্দিষ্ট স্থানে প্রচার চালালে অলিগলিতে তা সম্ভব হবে না। এতে ভোটাররা প্রার্থী সম্পর্কে জানতে পারবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম। কীভাবে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো যায়, তা ভেবে দেখা উচিত। এজেন্টরা নিরাপদে কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ইসিকে সেই ভূমিকা পালন করতে হবে।’
প্রার্থীদের সমর্থন নেওয়ার পর সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটা করে অফিস রাখতে পারবেন। এর বাইরে একেবারেই মাইক বাজাতে পারবেন না। নির্ধারিত ২১ জায়গায় পোস্টার টানাতে পারবেন। আর প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে অফিস করবেন, সেখানে পোস্টার টানাতে পারবেন। এর বাইরে কোথাও বা রাস্তা, অলিতেগলিতে পোস্টার টানাতে পারবেন না। আর লেমিনেটেড পোস্টার টানাতে পারবেন না। ঢাকা-১০ আসনের জন্য গাড়ি চলাচল উন্মুক্ত করলাম। শুধুমাত্র মোটরসাইকেল চলবে না।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা-১০ আসনের ভোটের দিন অফিস খোলা থাকবে। আমরা সার্কুলার জারি করে দেব, যাতে অফিস থেকে গিয়ে কর্মকর্তারা ভোট দিতে পারেন। প্রতিটি দল ৫টি শোভাযাত্রা করতে পারবে। যেখানে সুবিধা সেখানে শোভাযাত্রা করতে পারবেন।’ তবে এই নির্বাচনে কোনো জনসভা করা যাবে না। আগামীতে নির্বাচনী আচরণবিধি পরিবর্তন করে এই বিধিগুলো যোগ করা হবে। জাতীয় পর্যায়ের জন্য আমরা বিধিই পরিবর্তন করে ফেলব।’
পরে ইসির প্রস্তাবনা সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষর করে সমর্থন জানান ছয় প্রার্থী।
ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে বৈধ প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. শফিউল ইসলাম, বিএনপির শেখ রবিউল আলম, জাতীয় পার্টির হাজী মো. শাহজাহান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) আব্দুর রহীম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা ১০ আসনে একাদশ সংসদের সদস্য ছিলেন নব নির্বাচিত মেয়র তাপস। ঢাকা দক্ষিণের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে ২১ মার্চ ভোটের দিন সামনে রেখে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ছিল গত বুধবার। আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ছিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রত্যাহারের সুযোগ শেষে ১ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ হবে।