জলদি সেরে ওঠো কত্ত কাজ বাকি...
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটে। গত ৬ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তির পর বুধ ও বৃহস্পতিবার ভালোই কেটেছিলো বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত এই অভিনেতার। কিন্তু ৯ অক্টোবর বিকেলে হঠাৎ করে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। শুরু হয় মৃদু শ্বাসকষ্ট এবং বাড়তে থাকে রক্তচাপ।
তাই চিকিৎসকরা দেরি না করে ওই দিনই তাকে স্থানান্তরিত করেন কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালের আইটিইউ’তে। পরে তাকে ১১ ও ১২ অক্টোবর প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই ভেঙে পড়েছে তার ভক্তরা। পাশাপাশি ৮৫ বছর বয়সী এই অভিনেতাকে নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন ইন্ডাস্ট্রির তারকারাও। সকলেই তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছেন।
এপার-ওপার দুই বাঙলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান একটি কার্টুন ছবি শেয়ার করেছেন। যার ক্যাপশনে লেখা রয়েছে- “জলদি সেরে ওঠো, কত্ত কাজ বাকি...।”
জয়া আহসানের পাশাপাশি এই কার্টুন ছবিটি শেয়ার করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বেশ কয়েজন ভক্তও।
অভিনেত্রী অর্পিতা চ্যাটার্জী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন- “তিনি আমাদের কাছে একটি প্রতিষ্ঠান .. তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং তাকে আবার ক্যামেরার সামনে দেখার অপেক্ষায় রয়েছি..।”
প্রখ্যাত এই অভিনেতার আরোগ্য কামনা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার লিখেছেন- “প্রবীণ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছেন জেনে আমি চিন্তিত। তার দ্রুত আরোগ্য ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।”
সৌমিত্রের ভক্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষক রাজীব নন্দী তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘আপনি তো এভাবে শুয়ে থাকার মানুষ নন উদয়ন পণ্ডিত! মনটা অধৈর্য হয়ে আছে’!
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চিকিৎসার জন্য গঠন করা মেডিকেল টিমের চিকিৎসকের সংখ্যা ৪ থেকে বাড়িয়ে ১৬ করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তিনি কোভিড এনসেফেলোপ্যাথির শিকার হয়েছেন। এর অর্থ এখন তার করোনা সংক্রমণ মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু কতোটা প্রভাব ফেলেছে তা জানার জন্য তাঁর মস্তিষ্কের এমআরআই করা হবে। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা ততোটা ভালো না থাকায় এমআরআই করা যায়নি। তবে তার ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করা হলে সেখানে তেমন কোনো জটিলতা ধরা পড়েনি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে তার মেয়ে পৌলমী বসু সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, কোভিড এনসেফেলোপ্যাথি রয়েছে তার বাবার। যার ফলে আচ্ছন্নভাব থাকে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তার একটি বায়োপিকের শুটিংয়ের জন্য গিয়েছিলেন টালিগঞ্জের ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওতে। সেখানেই তিনি অসুস্থ বোধ করেন।
জানা গেছে- ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওতে সে দিন লাঞ্চ ব্রেকের পর সৌমিত্রর ইন্টারভিউ নেন পাঁচ জন। তাদের মধ্যে ছিলেন- সন্দীপ রায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী ও পরিচালক অতনু ঘোষ। বাকি দু’জন সাংবাদিক।
১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতার মির্জাপুরে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।
১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’-এর মধ্য দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এরপর তিনি সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার ভিতর ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। পরবর্তীতে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মত জনপ্রিয় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘দেবী’, ‘স্বরলিপি’, ‘সমাপ্তি তিনকন্যা’, ‘আগুন’, ‘বেনারসি’, ‘অভিযান’, ‘শেষ প্রহর’, ‘চারুলতা’, ‘বাক্স বদল’, ‘কাপুরুষ’, ‘কাচ কাটা হীরে’, ‘বেলাশেষে’, ‘প্রাক্তন’ উল্লেখযোগ্য।
শুধু সিনেমা নয়, অসংখ্য নাটক, যাত্রা এবং টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় ছাড়া তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন। করেছেন পরিচালনার কাজটিও।
ভারত সরকার কর্তৃক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ২০০৪ সালে ‘পদ্ম ভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ লাভ করেন। এছাড়া ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অফ অনার’ লাভ করেন। একই বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার অর্জন করেন। যদিও ২০১৩ সালে তিনি একই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।