গান-পাঠ-আবৃত্তিতে ছায়ানটের প্রতিবাদ
গান-পাঠ ও আবৃত্তিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ জানাল ছায়ানট। ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াও’ শিরোনামে সোমবার(২৫ অক্টোবর) রাতে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয় ছায়ানটের ফেসবুক পেজে ও ইউটিউব চ্যানেলে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন।
তিনি বলেন, “একাত্তর সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ভরসা হয়েছিলো এবার মানুষের মতো মানুষ হয়ে মুক্ত হাওয়া শ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারবো। পাশের দেশ থেকে আনন্দিত মনে দেশে ফিরে এলাম, কিন্তু ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে এসব কী লেখা? মুক্তিযুদ্ধে সর্বভাবে সহায়তা করেছে যে দেশ, সেই ভারত বিষয়ে কী বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য আর হুমকী। ‘আমরা চলে যাচ্ছি, কিন্তু আবার ফিরে আসবো’। বুকের ভিতর শিরশির করে উঠলো।
“এই কী শত্রুমুক্ত দেশে ফেরা? এই কী মানুষের মতো বাঁচবার জন্য যতো সাধনার ফল? সেদিনকার ভয় বারবার বাস্তবরূপে ফিরে এসেছে স্বাধীন বাংলাদেশে। সম্প্রদায় বিদ্বেষের বিষ সাপের মতো ছোবল দিয়েছে বারবার। আমরা কবে মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচতে পারবো?”-আক্ষেপ জানান বরেণ্য এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
তাঁর বক্তব্যের পর ছায়ানটের শিল্পীদের সম্মিলিত কন্ঠে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রনাথের গান ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী’। নজরুলের কবিতা ‘তোমার বাণীরে করিনি গ্রহণ ক্ষমা কর হজরত’ পাঠ করেন জয়ন্ত রায় । কবিতাটি গান আকারে পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল। লাইসা আহমদ লিসার কন্ঠে- ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়ে’ এবং আবদুল ওয়াদুদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আর নহে, আর নয় আমি করি নে আর ভয়’।
কবিতা পাঠ করেছেন সুমনা বিশ্বাস, জহিরুল হক খান। চন্দনা মজুমদার শুনিয়েছেন লালনের গান ‘এমন মানবসমাজ কবে গো সৃজন হবে’। ছায়ানটের রীতি অনুযায়ী শেষ পরিবেশনা ছিল জাতীয় সংগীত।
সম্প্রতি দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে পথেও নেমেছিলো ছায়ানট। গত ২২ অক্টোবর ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হয় দীর্ঘ মানববন্ধন। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে ১১টা ৫০ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে অংশ নেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ্, কণ্ঠশীলন এবং ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তন ও নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ ছায়ানটের কর্মী-সংগঠকবৃন্দ।