‘তাঁর মতো মানুষই জাতিকে এগিয়ে নেন’

  • বিনোদন রিপোর্ট, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অনুষ্ঠানের মঞ্চে আসাদুজ্জামান নূর

অনুষ্ঠানের মঞ্চে আসাদুজ্জামান নূর

৭৫তম জন্মদিনে বন্ধু, সতীর্থ, ভক্ত-অনুরাগীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন নন্দিত অভিনেতা, আবৃত্তিশিল্পী ও রাজনীতিক আসাদুজ্জামান নূর। গতকাল রোববার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় আয়োজিত হয় তাঁর জন্মোৎসব।

জন্মদিনের আয়োজনে উপস্থিত হয়ে নূর বলেন, “আমি জন্মদিন পালনে কখনোই আগ্রহী ছিলাম না। এবার সম্মতি দিয়েছি একটি মাত্র কারণে, এখানে সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে। কিন্তু এই আয়োজন ম্নান হয়ে যায়, যখন দেখি, যে অপশক্তির বিরুদ্ধে ৭১ সালে লড়েছি, সেই শক্তি তার হিংস্র ফণা তুলেছে। এ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে চিরতরে। আমাদের অবশ্যই ফিরতে হবে ৭২ এর সংবিধানে, যে সংবিধান আমাদের দিয়ে গেছেন জাতির পিতা, যে সংবিধানের পাতায় পাতায় লাখো শহীদের রক্তের চিহ্ন, লক্ষ মা বোনের কান্না আর অশ্রু।”

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, “৭৫ বছর পূর্ণ করে সূর্যাস্তের দিকে তাকিয়ে আছি। তাতে আমি এতটুকু বিষণ্ন বোধ করি না। দীর্ঘকাল এ পথ চলায় যে সময়টাকে সঙ্গে নিয়ে আমি পথ হেঁটেছি সেটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সঞ্চয়। সময় আমাকে হাত ধরে নিয়ে গেছে এক গন্তব্য থেকে আরেক গন্তব্যে। চলার পথে কত মানুষের সাহচর্য আমার জীবনবোধকে শাণিত করেছে, কত মানুষের ভালবাসা আমার জীবনকে ঋদ্ধ করেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা, এ বাণীই আমার সবচেয়ে বড় সত্য।”

“চিরকাল মানুষের সঙ্গে থাকতে চেয়েছি, থাকার চেষ্টা করেছি এখানে সাফল্য-ব্যর্থতা দু'টোই আছে। ব্যর্থতার দায়ভার আমার। সাফল্যে সবার অবদান। আমার পথচলা আপনাদেরই হাত ধরে।”-যোগ করেন নূর।

বিজ্ঞাপন



ফুল, রঙিন বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছিল জাতীয় নাট্যশালা। সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজন ও তরুণ কর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো মিলনায়তন। ‘তোমারি হোক জয়’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন ৭৫ জয়ন্তী উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক অনুপম সেন। সব শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মীর পক্ষ থেকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় পুষ্পস্তবক। পরে তাঁকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পোশাক পরিয়ে দেন কবি কামাল চৌধুরী ও সাংসদ অসীম কুমার উকিল। উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রধান অতিথি।

অনুষ্ঠানে, সম্মিলিতভাবে আবৃত্তিকর্মীরা সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। এরপর আসাদুজ্জামান নূরকে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যসচিব গোলাম কুদ্দুছ স্বাগত বক্তব্য দেন।
নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ তার বক্তব্যে বলেন, “তোমার ছায়া বিস্তৃত হয় চুয়ান্ন হাজার বর্গমাইলের মানুষের বুকের ভেতর, যে বুকে থাকে দুঃখ–বেদনার কাব্য। মঞ্চ থেকে জনারণ্যে ক্রমশ তুমি বর্ধিত হতে হতে যুগপৎ শিল্প ও রাজনীতির জমিনে মহিরুহসম চিরসবুজ বৃক্ষ আজ! হে বাংলা নাটকের সুবর্ণ নট, তোমাকে সাধুবাদ জানাই।”

আলোচনা পর্বে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি আসাদুজ্জামান নূরের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন বক্তারা। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক অনুপম সেন বলেন, “সংস্কৃতি অঙ্গনে আসাদুজ্জামান নূরের অবস্থান যথার্থই সোনার মতো উজ্জ্বল। চারপাশের ঘনায়মান অন্ধকার তিনি তাঁর উজ্জ্বলতা দিয়ে দূর করেছেন। তাঁর মতো মানুষই জাতিকে এগিয়ে নেন।”

মঞ্চে আরও উপস্থিত নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সারা যাকের, জিয়াউল হায়দার কিসলু, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক প্রমূখ।