রেহানা মরিয়ম নূর: নারীবাদ নয়, ব্যক্তিগত ইগোর বহিঃপ্রকাশ



শুভ্রা গোস্বামী, অতিথি লেখক
অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সিনেমা অঙ্গন কাঁপছে 'রেহানা মারিয়াম নূর' জ্বরে। কান উৎসব থেকেই এই সিনেমা নিয়ে বাংলাদেশের দর্শকের মধ্যে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা কল্পনা। অবশেষে বাংলাদেশের দর্শক এই সিনেমাটি দেখার সুযোগ পেয়েছে। রিলিজের পর থেকেই নানান দর্শকের ছিল নানান ধরনের অভিমত।

কারো কাছে এই সিনেমা নারীবাদের প্রতীক, কেউ দেখছেন প্রচণ্ড সাহসী সিনেমা হিসেবে, কেউ আবার এই সিনেমার মূল চরিত্র আজমেরী হক বাঁধনের ব্যক্তিগত জীবনের লড়াই এর সাথে এই সিনেমাকে গুলিয়ে ফেলছেন। কেউ বলছেন টেকনিক্যালি খুবই রিচ এই সিনেমা আবার কারো কাছে ক্যামেরার কাজ বিরক্তিকর মনে হয়েছে। সম্প্রতি দেখে এলাম রেহানা মারিয়াম নূর। নানান দেশের নানান ভাষার চলচ্চিত্র দেখার সুবাদে আমার মনে হয়েছে নিজের দেশের এই সিনেমা নিয়ে যে আলোচনাগুলো হচ্ছে সেগুলো আসলে অনেকাংশে অতিরঞ্জিত।  

প্রথমত বাংলাদেশের নব্য নারীবাদীরা মনে করছেন, এটা প্রচন্ড রকমের নারীবাদী সিনেমা, এই সিনেমায় নাকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মুখে ঝামা ঘষে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে নারীবাদ চর্চার এখন থার্ড ওয়েভ চলে। এবং এই থার্ড ওয়েভে এসে নারীবাদীরা নারীবাদ বিষয়টিকে গুলিয়ে ফেলছেন। যেমনটা কিছুদিন আগে নায়িকা পরিমনি ইস্যুতেও আমরা দেখেছি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই সেটা নারীবাদ হয়ে যায় না। এমনকি পুরুষের প্রতি ঘৃণা, কিংবা কারো ব্যক্তিগত জেদকেও নারীবাদ বলা যায় না। নারীবাদ একটা দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন।

নারীবাদী সিনেমার উৎকৃষ্ট  উদাহরণ আমাদের পাশের দেশেই আছে। আপনারা ‘পিংক’ কিংবা ‘থাপ্পড়’ সিনেমাটা দেখে থাকলে বুঝবেন যেখানে সরাসরি নারীবাদকে প্রমোট করা হয়েছে। ‘থাপ্পড়’ সিনেমায় মূল চরিত্রে যিনি ছিলেন তার জেদ আর রেহানা মারিয়াম নূর সিনেমার মূল চরিত্রের জেদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় চলচ্চিত্রটির

রেহানা মারিয়াম নূর-এ আমরা যেটা দেখি সেটা স্পষ্টত ব্যক্তিগত ইগোর বহিঃপ্রকাশ। চরিত্রটি শুরু থেকেই এংগজাইটিতে ভুগত এবং তার ইগো এতটাই বেশি যে নিজের সন্তানও সেই ইগোর হাত থেকে রক্ষা পায় নি। অপরদিকে ‘থাপ্পড়’ সিনেমায় সাধসসিধা এক গৃহবধূর লড়াই আমরা দেখি। যাকে তার স্বামী কোন দোষ ছাড়াই থাপ্পড় মেরেছিল এবং সে সেটা মেনে নিতে পারেনি তাই পরিবার ,সমাজের সাথে যুদ্ধ করে সে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছিল। কাজেই মানসিক ভাবে অস্থির, একজন ওসিডি পেশেন্টকে শুধুমাত্র অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারনে নারীবাদী বানিয়ে দিলে ঝামেলা। আমরা যেটা সচরাচর করে থাকি।

হ্যাঁ চরিত্রটি অসম্ভব সাহসী, বাস্তববাদী তবে সে নারীবাদী নয়। নারীবাদী হলে ওই শিক্ষককে শাস্তি দেবার জন্য এনির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিজের বলে মিথ্যা অভিযোগ করতেন না বরং ঠান্ডা মাথায় ভিন্ন উপায়ে ওই শিক্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করতেন। এখানে শুধুমাত্র নিজের জেদ, ব্যাক্তিগত ট্রমা আর ইগোকে স্যাটিসফাই করেছেন তিনি। নিজের মেয়ের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্য। তার মেয়েকে তিনি পুরো ঘটনা না বলে, না বুঝিয়ে শুধু নিজের ইগোকে জিতিয়ে দিতে জঘন্য খারাপ ব্যবহার করেছেন। যাকে নব্য নারীবাদীদের নারীবাদ বলে মনে হতেই পারে তবে নারীবাদ এতটা স্থুল নয়।

এবার টেকনিক্যাল জায়গায় যদি আসি, তবে দেখব যে ক্যামেরার অতিরিক্ত নড়াচড়া দর্শকের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করেছে। অনেকেই বলছেন দর্শককে অস্বস্তিতে ফেলতে ডিরেক্টর এটা ইচ্ছে করেই করেছেন। সেটা মানছি। মাথায় আপনি বাড়ি মেরে বুঝাতেই পারেন যে এই সিনেমা আরাম পাবার জন্য নয় কিন্তু চোখের কথাও তো ভাবতে হবে স্যার।

এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডে দু’টি পুরস্কার জেতে চলচ্চিত্রটি

বার্টল ব্রেখট একজন মার্ক্সবাদী নাট্যকার ছিলেন। তিনি তার প্রযোজনাগুলোতে এলিয়েনেশন থিওরি ব্যবহার করতেন। অর্থাৎ কোন ইমোশনাল মুহূর্তে দর্শকের মোহ ভেঙ্গে দিয়ে তাকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনা। তিনি মনে করতেন দর্শক নিষ্ক্রিয় নয়। তাদেরকে ভাবাতে পারলেই থিয়েটার সফল। সেই থিওরি অনুযায়ী চিন্তা করলেও আমরা এই সিনেমায় মোহ ভঙ্গের কিছু বিষয় দেখতে পাই, তবে সেটা দর্শককে ভাবানোর চাইতে বিরক্তিতে ফেলেছে বেশি। আমি নিজেই কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে ছিলাম কারন ব্যথা করছিল। মাথার আরাম চাইছিও না কারন বিষয়বস্তু আরামের নয় কিন্তু চোখের আরাম ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তবে ফলো শট, কিছু জায়গায় ফোকাস ডিফোকাসের খেলাগুলো বেশ ভালো লেগেছে।

কালার গ্রেডেশন নিয়েও অনেকের নানান মতামত দেখা গেছে। এ ধরনের কালারে বাংলাদেশে খুব একটা সিনেমা দেখা যায়নি। বিষয়বস্তুর সাথে সিনেমার কালার আমার কাছে বেশ সামঞ্জস্যপূর্নই মনে হয়েছে। তবে লাইটের খেলা আরেকটু খেলতে পারতেন ডিরেক্টর। কিছু কিছু জায়গায় অযথা শ্যাডো চলে এসেছে যেটা সিনের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে।

অভিনয় নিয়ে কোন কথা নাই। বাঁধনের এটা এখনো পর্যন্ত বেস্ট কাজ। বাকি সবাই বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। আরেফিন চরিত্রের ডায়লয় থ্রোয়িং এ শুরুর দিকে ঝমেলা মনে হলেও পরবর্তীতে সেটাকেই ন্যাচারাল মনে হয়েছে। ইমু চরিত্রে বাচ্চাটি বেশ ভালো অভিনয় করেছে।

এই সিনেমায় মিউজিকের তেমন ব্যবহার নাই। তবে আবহসংগীত বেশ ভালো ছিল। কিছু জায়গায় আবার বেশি ও মনে হয়েছে যেমন দরজা খোলা বন্ধ করার শব্দ মাঝে মাঝেই মিলছিল না। তারপরও ফলি নিয়ে বেশ খেটেছেন রেহানা মারিয়াম টিম।

ডায়লগ খুবই পরিমিত পরিমানে ছিল। তবে কিছু জায়গায় চরিত্র কি বোঝাতে চাচ্ছে তা ভালোভাবে বোঝা যায়নি। যেমন রেহানা যতবার ফোনে কথা বলেছে ততবারই ডায়লগ শুনে পুরো পরিস্থিতি কল্পনা করতে হয়েছে কারন এক্সপ্রেশন যতটা বোল্ড ছিল ডায়লগ ততটা ছিল না।

আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা হিসেবে যথেষ্ট ভালো সিনেমা। তবে সিনেমার ভাষা কম মনে হয়েছে সেটা, ডায়লগ, কালার, সিনেমাটোগ্রাফি সব জায়গাতেই। ক্লোজ শটের সংখ্যা খুব বেশি ছিল তাই কিছু কিছু জায়গায় নাটক বা টেলিফিল্মের মতন লেগেছে। কয়েকদিন আগে ‘ধামাকা’ নামে নেটফ্লিক্সে একটা সিনেমা দেখলাম যেখানে একটা স্টুডিও তে পুরো সিনেমা শেষ হয় অথচ শট গুলো কি চমৎকার।

কান উৎসবে প্রযোজক, নির্মাতা, ও অভিনেত্রী বাঁধন

বিষয়বস্তু মানেই সিনেমা নয়। তাহলে তো ক্যামেরা লাগতোই না বই পড়েই সিনেমার স্বাদ নেয়া যেত। আসলে বাংলাদেশে এই ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে সিনেমা হয় না বললেই চলে তাই দর্শক ওভাররেটেড করে ফেলেছেন।

অপরদিকে কান ফেস্টিভ্যাল একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  কানে না গেলে এই সিনেমা বাংলেদেশের কতজন দর্শক দেখতেন তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে দিনশেষে মন্দের ভালো সাদ কে অভিনন্দন এইরকম বিষয়বস্তু নিয়ে সিনেমার গল্প ভাবার জন্য।

 

 

আরও পড়ুন
‘রেহানা মরিয়ম নূর’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ অনুরাগ কাশ্যপ
অ্যাপসায় সেরা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ও বাঁধন
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সমালোচনায় তসলিমা, প্রতিবাদী প্রিন্স
এর চাইতেও আরও ভালো কিছু হয়তো করতে পারতাম: সাদ
কানের লালগালিচায় এক টুকরো বাংলাদেশ

   

শিল্পার স্বামীর বিপুল অঙ্কের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রাজ কুন্দ্রা ও শিল্পা শেঠী দম্পতি

রাজ কুন্দ্রা ও শিল্পা শেঠী দম্পতি

  • Font increase
  • Font Decrease

শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রার প্রায় ৯৮ কোটি রুপির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ভারতের আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)।

বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির মধ্যে অভিনেত্রীর জুহুর ফ্ল্যাটও রয়েছে। মুম্বাইয়ের জোনাল অফিসের তরফে রিপু সুদন কুন্দ্রা ওরফে রাজ কুন্দ্রার সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২০০২ সালের মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুযায়ী।

সন্তানদের সঙ্গে পূজাপাঠে শিল্পা ও রাজ কুন্দ্রা দম্পতি

ভারতের মহারাষ্ট্র পুলিশ ও দিল্লি পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হওয়া একাধিক এফআইআরের ভিত্তিতে ইডি তদন্ত শুরু করেছে।

রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিটকয়েনের আকারে প্রতি মাসে ১০ শতাংশ রিটার্নের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

২০১৮ সালে দুই হাজার কোটি রুপির বিটকয়েন কেলেঙ্কারি মামলায় রাজ কুন্দ্রাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, মামলাটিতে শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রার কোনো ভূমিকা আছে কি না বা তিনি এ ঘটনার শিকার কি না তা পরিষ্কার নয়। কিন্তু এখন যেভাবে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে ওই ঘটনায় রাজ কুন্দ্রার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

সন্তানদের সঙ্গে হলি খেলায় মেতে উঠেছেন শিল্পা ও রাজ কুন্দ্রা দম্পতি

তথ্যসূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

 

;

শিল্পার স্বামীর বিপুল অঙ্কের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রাজ কুন্দ্রা ও শিল্পা শেঠী দম্পতি

রাজ কুন্দ্রা ও শিল্পা শেঠী দম্পতি

  • Font increase
  • Font Decrease

শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রার প্রায় ৯৮ কোটি রুপির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ভারতের আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)।

বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির মধ্যে অভিনেত্রীর জুহুর ফ্ল্যাটও রয়েছে। মুম্বাইয়ের জোনাল অফিসের তরফে রিপু সুদন কুন্দ্রা ওরফে রাজ কুন্দ্রার সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২০০২ সালের মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট অনুযায়ী।

সন্তানদের সঙ্গে পূজাপাঠে শিল্পা ও রাজ কুন্দ্রা দম্পতি

ভারতের মহারাষ্ট্র পুলিশ ও দিল্লি পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হওয়া একাধিক এফআইআরের ভিত্তিতে ইডি তদন্ত শুরু করেছে।

রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিটকয়েনের আকারে প্রতি মাসে ১০ শতাংশ রিটার্নের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

২০১৮ সালে দুই হাজার কোটি রুপির বিটকয়েন কেলেঙ্কারি মামলায় রাজ কুন্দ্রাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, মামলাটিতে শিল্পা শেঠির স্বামী রাজ কুন্দ্রার কোনো ভূমিকা আছে কি না বা তিনি এ ঘটনার শিকার কি না তা পরিষ্কার নয়। কিন্তু এখন যেভাবে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে ওই ঘটনায় রাজ কুন্দ্রার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

সন্তানদের সঙ্গে হলি খেলায় মেতে উঠেছেন শিল্পা ও রাজ কুন্দ্রা দম্পতি

তথ্যসূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

 

;

অভিমান ভুলে কাছাকাছি তাহসান-মিথিলা!



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সাবেক তারকা দম্পতি তাহসান খান ও রাফিয়াত রশিদ মিথিলা

সাবেক তারকা দম্পতি তাহসান খান ও রাফিয়াত রশিদ মিথিলা

  • Font increase
  • Font Decrease

জনপ্রিয় তারকা তাহসান খান আর রাফিয়াত রশিদ মিথিলা ছিলেন এ দেশের দর্শকের কাছে আদর্শ জুটি। তাদের দীর্ঘ বছরের সংসার যখন ভেঙে যায়, তখন সেই খবর মেনেই নিতে পারছিল না ভক্তরা। এই জুটির সম্পর্ক যাতে ঠিক হয়ে যায় এ নিয়ে সে সময় দাবী পর্যন্ত জানানো হয়।

কিন্তু দুজনের ভেতরে যে ঘুনপোকা ধরেছিল সে কথা তো আর বাইরের কেউ জানতো না। ফলে তাদের বিচ্ছেদটা হয়েই যায়। এরপর থেকেই দর্শকের ভীষণ প্রিয় মিথিলা বার বার কটাক্ষের শিকার হতে থাকেন। 

তবে কেন বিচ্ছেদ হয়েছে এ নিয়ে এই দুই তারকা কখনোই মুখ খোলেননি। এমনকি অন্য তারকারা যখন বিয়ে ভেঙে গেলে পার্টনারের দোষ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন, তখন তাহসান-মিথিলা ছিলেন একেবারেই ভিন্ন। তারা কখনোই একে অপরের নামে কোন কটু কথা বলেননি। বরং এই দম্পতির একমাত্র কন্যা আইরা যাতে সুন্দর একটি পরিবেশে বড় হয় সেজন্য বিচ্ছেদের পরও তারা ফোনে কথা বলা কিংবা কখনো দেখাও করেছেন হাসিমুখে।

একমাত্র কন্যা আইরাকে নিয়ে মিথিলা ও তাহসান (পুরনো ছবি)

বিচ্ছেদের প্রায় ৭ বছর হতে চলেছে। কিন্তু ক্যামেরার সামনে তাদের একসঙ্গে পাওয়া যায়নি। মাঝে শুধু একবার একটি ই-কমার্স সাইটের লাইভ সেশনে এসেছিলেন দুজন। তবে এবার ভক্তদের জন্য সুখবর নিয়ে হাজির হয়েছেন তাহসান-মিথিলা।

নতুন একটি ওয়েব সিরিজে তাদের একসাথে দেখা যাবে। জানা গেছে, ৭ পর্বের সিরিজটির নাম ‘বাজি’। নির্মাণ করছেন ‘মাটির প্রজার দেশ’ খ্যাত নির্মাতা আরিফুর রহমান। একটি হোটেলে মাস দুয়েক আগে ওয়েব সিরিজটির একটা ধাপের শুটিং হয়েছে। যদিও এ বিষয় নিয়ে নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী কেউই মুখ খোলেননি।

‘বাজি’ সিরিজ সম্পর্কে আরও জানা গেছে, এতে তাহসান একজন ক্রিকেটরের চরিত্রে অভিনয় করছেন। বিপরীতে মিথিলাকে দেখা যাবে সাংবাদিকের চরিত্রে। ওয়েব সিরিজটি নির্মাণ করা হচ্ছে দেশিয় একটি ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য। এ বছরই মুক্তি পেতে পারে সিরিজটি।

সাবেক তারকা দম্পতি তাহসান খান ও রাফিয়াত রশিদ মিথিলা

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন প্রেমের পর ২০০৭ সালের ৩ আগস্ট প্রেম করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তাহসান ও মিথিলা। সাবেক এই দম্পতির সংসারে আইরা তেহরীম খান নামের এক মেয়ে রয়েছে। তারা জুটি বেধে ‘আমার গল্পে তুমি’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস’, ‘ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে প্রেম’, ‘মধুরেন সমাপয়েত’সহ দারুণসব নাটকে অভিনয় করেছেন। এ জুটি একসঙ্গে গানও গেয়েছেন। তবে ২০১৭ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের পরে ভক্তদের মন ভেঙে যায়।

এরপর মিথিলা ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত মুখার্জিকে বিয়ে করেন। তবে তাহসানের আর কোন বিয়ের খবর পাওয়া যায়নি এতোদিনে।

;

‘বাস্তব চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে কবরী ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী’



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সারাহ বেগম কবরী

সারাহ বেগম কবরী

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢালিউডের মিষ্টি মেয়ে’খ্যাত নায়িকা কবরী। রোমান্টিক থেকে সামাজিক, বানিজ্যিক থেকে জীবনঘনিষ্ট সব ধরনের সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে কিংবদন্তীর কাতারে সামিল করেছিলেন।

‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে একটি ছবির কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি এই ছবির পরিচালক এবং প্রযোজকও তিনি। এই ছবিকে ঘিরে ছিল তার অনেক স্বপ্ন। ছবির কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল মারা যান বাংলার অন্যতম সেরা এই অভিনেত্রী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় ৭১ বছর বয়সে তিনি মারা যান। আজ তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।

মীনা পাল চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়ে কবরী হয়ে ওঠেন

চট্টগ্রামের মীনা পাল চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়ে কবরী হয়ে ওঠেন। মিষ্টি হাসি ও অনবদ্য অভিনয় প্রতিভা দিয়ে জায়গা করে নেন দেশের কোটি মানুষের অন্তরে। এ দেশের সিনেমাকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন, তাদের মধ্য তিনি অন্যতম।

কবরীর পুরো পরিবারই ছিল ভীষণ সংস্কৃতিমনা। বড় বোনদের মধ্যে দুই বোন নাচতেন। ছোট ভাই তবলা বাজাতেন। কবরী নাচ-গান একসঙ্গে করতেন। ৭০ বছরের জীবনে তিনি ৫৬ বছর কাটিয়ে দেন চলচ্চিত্রে। ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করা কবরী এক সময় নিজেকেই নিজের তুলনা করে তোলেন। এমন কথা শোনা যায়, তার সমসাময়িক এবং অগ্রজ অভিনয়শিল্পীদের কণ্ঠে।

সারাহ বেগম কবরী

১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক সারাহ বেগম কবরীর। পরের বছর তিনি অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়। ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরী’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলো। কবরী অভিনীত ‘ময়নামতি’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘সারেং বৌ’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘সুজন সখী’র মতো ছবির মাধ্যমে দর্শক অবাক বিস্ময়ে দেখেছেন কবরীর অসামান্য এক অভিনেত্রী হয়ে ওঠা। অভিনয়ে, প্রযোজনায়, পরিচালনায় সাত দশকের জীবনটা এক আশ্চর্য সফলতার গল্প।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। তারপর টেলিভিশন ও সব শেষে সিনেমায়। শুরুর জীবনে কবরী বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। সম্পর্কচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বিয়ে করেন সফিউদ্দীন সরোয়ারকে। ২০০৮ সালে তার সঙ্গেও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কবরী ছিলেন পাঁচ সন্তানের মা।

উজ্জ্বল ও কবরী

কবরীকে নিয়ে বলতে গিয়ে চলচ্চিত্রের গুণী শিল্পী উজ্জ্বল বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের একজন বাঙালি নায়িকা কেমন হবে, কবরী ছিলেন তার সংজ্ঞা। চেহারা, চলন, কথাবার্তা, ব্যক্তিত্ব-সব দিক থেকে কবরী ছিলেন আদর্শ। কবরী ছিলেন একেবারে স্বচ্ছন্দ, স্বাভাবিক। আমরা তাকে দেখে মুগ্ধ ছিলাম। আমি যখন কাজ শুরু করি, কবরী তখন দেশের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা। তখনকার নারীর যে ইমেজ ছিল—যেমন লজ্জাবতী, আকর্ষণীয়, প্রেমিকা, সব দিক দিয়ে কবরী ছিলেন সেরা।’

কবরী ও সুজাতা আজিম

বরেণ্য অভিনয়শিল্পী সুজাতা একবার গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘আমার কাছে কবরী ছিলেন একজন পাওয়ারফুল অভিনেত্রী। আর ব্যক্তিগতভাবে তিনি স্পষ্টবাদী ছিলেন। যে কারণে হয়তো অনেকেই তাকে ভুল বুঝতেন। ভালো-খারাপ দুটিই তিনি সরাসরি বলে দিতেন। এটা আমার খুব ভালো লাগত। বাস্তব চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে অভিনেত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি সহজেই যেকোনো চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে যেতেন। যে কারণে তিনি ছিলেন সফল অভিনেত্রীর নাম।’

ঢাকার চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন রাজ্জাক-কবরী

অভিনয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া কবরী নিজেকে শুধু অভিনয়ে আবদ্ধ রাখেননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে তার ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখান থেকে পাড়ি জমান ভারতে। কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন কবরী। শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে ‘রংবাজ’ পায় বেশ জনপ্রিয়তা। ৫০ বছরের বেশি সময় চলচ্চিত্রে রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল ও বুলবুল আহমেদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। ঢাকার চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন রাজ্জাক-কবরী।

অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করার খুব আগ্রহ ছিল কবরীর

তার সমসাময়িক এমন কেউ নেই, যার সঙ্গে চলচ্চিত্রে তিনি পর্দা ভাগাভাগি করেননি। কিন্তু মনে মনে একজনের সঙ্গে অভিনয়ের স্বপ্নটা দেখতেন, যা পূরণ হয়নি। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করার খুব আগ্রহ ছিল তার। বিগবির অভিনয় ও কথাবার্তা মুগ্ধ করত কবরীকে।

২০০৫ সালে এসে ‘আয়না’ নামের একটি ছবি নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন কবরী। এরপর রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্ত হয়েছেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে।

সোহেল রানা

কবরীর বর্ণাঢ্য জীবনকে কাছ থেকে দেখেছেন গুণী অভিনয়শিল্পী, প্রযোজক এবং পরিচালক সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘‘কবরীকে ‘মিষ্টি মেয়ে’ নামটা এ দেশের সাধারণ মানুষেরাই দিয়েছেন। সাধারণ লোকের দেওয়া নামটাই বোধ হয় একজন শিল্পীর বড় প্রাপ্য। একজন শিল্পী হিসেবে তার বড় সার্থকতা। এরপর শিল্পী হিসেবে তাকে নিয়ে আর দ্বিতীয় কথা বলার নেই। সি ওয়াজ জাস্ট আন প্যারালাল। ওই মিষ্টি মুখ বা ওই মিষ্টি হাসি বা ওই মিষ্টি অভিনয়—বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আসেনি এর আগে এক কবরী ছাড়া। আগামী ৫০ বছরে আসবে বলেও আমার ধারণা নেই। আমি বিশ্বাস করি, শত বছরে কবরী একটাই জন্মায়।’

দুই ভূবনের দুই কিংবদন্তী সাবিনা ইয়াসমীন ও কবরী

বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমী অনেকের প্রিয় কবরী। আর তার প্রিয় তালিকায় ছিলেন সোফিয়া লরেন, এলিজাবেথ টেলর, অড্রে হেপবার্ন, গ্রেগরি পেক, উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিকাশ রায় ও ছবি বিশ্বাস। তার সবচেয়ে প্রিয় সংগীতশিল্পীর তালিকায় দেশের বাইরে মান্না দে, হেমন্ত ও শ্রীকান্ত আচার্য। দেশের মধ্যে সুবীর নন্দী ও সাবিনা ইয়াসমীনের কণ্ঠ তার খুব প্রিয়।

;