সুস্থ হয়েই যে কারণে সংবাদ সম্মেলনে সাইফ
-
-
|

সাইফ আলী খান
গেল মাসের মাঝামাঝি সময়ে নিজ বাড়িতে হামলার শিকার হন সাইফ আলী খান। ছুরিকাহত হয়ে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। এরপর খানিক সুস্থ হয়ে আট দিন পর গত ২১ জানুয়ারি বাড়ি ফেরেন এই অভিনেতা। এরমধ্যে মুম্বাই পুলিশকে তদন্তে সাহায্য করে চলেছেন।
এরমধ্যে বাড়ি ফেরার প্রায় ১৩ দিন পর প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন পতৌদীর ছোট নবাব। এসময় অভিনেতার পরনে ছিল ডেনিম শার্ট এবং জিন্স। চুল ছিল ব্যাকব্রাশ করা এবং পাতলা গোঁফ। তবে অভিনেতার বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিক সম্মেলনে সাইফের দিকে একাধিক প্রশ্ন আসে। অভিনেতা কেমন আছেন, জানতে চান অনেকেই। সাইফ তার সংক্ষিপ্ত উত্তরে বলেন, ‘এখানে আপনাদের সবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পেরে ভালো লাগছে। আমি এই ছবিটা নিয়ে খুবই উত্তেজিত।’
এদিকে সোমবার প্রকাশ্যে আসে সাইফ অভিনীত নতুন সিনেমা ‘জুয়েল থিফ’ এর ফার্স্ট লুক। সেটির উন্মোচন অনুষ্ঠানেই হাজির হয়েছিলেন অভিনেতা।
অভিনেতা সিনেমাটি প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে পরিচালকের সঙ্গে এই ছবিটা নিয়ে কথা হয়েছে। আমি সব সময়েই এই ধরনের ছবির অংশ হতে চাইতাম। এত ভালো সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে এ রকম একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম।’
সিনেমাটির প্রেক্ষাপট একটি মূল্যবান হীরে চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এতে সাইফ ছাড়াও অভিনয় করেছেন জয়দীপ অহলাওয়াট। ছবিটির অন্যতম প্রযোজক সিদ্ধার্থ আনন্দ। সিনেমাটি মুক্তি পাবে একটি ওটিটি প্লাটফর্মে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও সাইফের নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। একটি ওয়েব সিরিজকে কেন্দ্র করে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সেই বিতর্ক এতটাই প্রবল ছিল যে সাইফের নিরাপত্তাও শঙ্কায় পড়ে।
২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারি মুক্তি পায় ওয়েব সিরিজ ‘তাণ্ডব’। আলী আব্বাস জাফরের ৯ পর্বের এই রাজনৈতিক থ্রিলার নিয়ে মুক্তির আগেই বিতর্ক তৈরি হয়। সুনীল গ্রোভার, তিগমাংশু ধুলিয়া, ডিম্পল কাপাডিয়া, জিশান আইয়ুবের সঙ্গে সিরিজের মূল চরিত্রে ছিলেন সাইফ আলী খান।
হিন্দু দেব-দেবীদের বিকৃত রূপে তুলে ধরে ওই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে, এই অভিযোগে ‘তাণ্ডব’ ওয়েব সিরিজের নির্মাতা ও অভিনেতাদের বিরুদ্ধে লক্ষ্ণৌয়ে এফআইআর হয়েছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে মুম্বাইয়ে রওনা দেয় উত্তর প্রদেশ পুলিশ। মুম্বাইয়ে বিজেপি নেতা ও বিধায়ক রাম কদমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ ও পোস্টার ছেঁড়াও চলে সমানতালে।
অ্যামাজন প্রাইমের দপ্তরে টানা ছয় ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন রাম কদম। বৈঠক শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের চাপ এতটাই প্রবল ছিল যে টিম “তাণ্ডব” অবশেষে দেশের কাছে মাথা নুইয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে। তবে আমরা এতেও সন্তুষ্ট নই। যতক্ষণ না তাদের জেলে ভরা হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের প্রতিবাদ থামবে না এবং রাস্তায় বিক্ষোভ চলতে থাকবে।’এরপরই ‘তাণ্ডব’–এর নির্মাতাদের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে কারও অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে। পরে ক্ষমা প্রার্থনার আরও একটি বিবৃতি দেয় অ্যামাজন প্রাইম। সিরিজের প্রথম পর্ব ‘তানাশাহ’ থেকে শিব ও নারদরূপী দুটি প্রধান চরিত্রের মধ্যে সংলাপের দৃশ্যও বাদ দেওয়া হয়।
মনে করা হয়, এ ঘটনার পর থেকেই ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের কনটেন্ট নির্বাচনে সতর্ক হয়ে গেছে। ‘তাণ্ডব’-এর দ্বিতীয় মৌসুম যে এ কারণেই আসেনি, সেটা সহজেই অনুমেয়।
এ ছাড়া দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিনেমা প্রযোজনা করার পরও মুক্তি দেয়নি আরেকটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স। সেই সিনেমায়ও আছে রাজনৈতিক বক্তব্য।
‘তাণ্ডব’ মুক্তির পরই এর অভিনয়শিল্পী সাইফ আলী খান ও নির্মাতা আলী জাফর আব্বাসের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। কারণ, অনেক গোষ্ঠী প্রকাশ্যেই তাদের হুমকি দিয়ে আসছিল। তবে এই সিরিজ নিয়ে অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতারা কার্যত দুই দলে ভাগ হয়ে যান। কঙ্গনা রানৌত সিরিজটির প্রবল সমালোচনা করেছিলেন।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান অভিনেতা কৌশিক সেন মনে করেন, সিরিজটিতে বিতর্কিত কিছু নেই। এটা নিয়ে যা হয়েছে, তার সবটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপের মুখে অ্যামাজনের পিছু হটাকেও দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছিলেন অভিনেতা।
জানা গেছে, তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রচণ্ড চাপে ছিলেন সাইফ আলী খান। তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় কি না, সে শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। এত দিন পরও ‘তাণ্ডব’ বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি অভিনেতা।
‘তাণ্ডব’ সিরিজটি বানিয়েছিলেন ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’, ‘ভারত’-এর মতো হিট সিনেমার নির্মাতা আলী জাফর আব্বাস। কিন্তু এই বিতর্কের পর আর কোনো সিরিজ বানাননি তিনি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আইএমডিবি