মাঝে মাঝে দেখা মেলে ‘উদয়ী-পাকরাধনেশ’
ছোট হয়ে আসছে অরণ্য। গুটিয়ে আসছে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ। বনভূমি উজাড় করে বসতি এবং জনকোলাহলসহ নানাভাবে আজ বিপন্ন আমাদের প্রকৃতি। যারা বনের প্রাণী তারাও অনেক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে। থাকে ভীতি বা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে। পাখি, বন্যপ্রাণীসহ সকল জীববৈচিত্র্যের অবস্থা এরকমই।
চিরসবুজ বনের দৃষ্টিনন্দন বড় ঠোঁটের একটি বিশেষ পাখি রয়েছে। দৃষ্টিকাড়া গভীর সৌন্দর্য তার প্রকাণ্ড ঠোঁটেই। ঠোঁটটি বিশাল বড় আর আকর্ষণীয়। তাই এমন ঠোঁট দ্বারা এ পাখি পরিচিত। পাখিরাজ্যের আর কোনো পাখির সাথেই এর ঠোঁট মেলে না। এই পাখিটির নাম ‘উদয়ী-পাকরাধনেশ’। তবে এ পাখিটি লোকালয়ের পাখি নয়। তাই কখনো এ পাখিটিকে অন্য পাখির মতো সহজে দেখা যায় না। এরা গভীর বনের পাখি। ঘন বনের লালিত সৌন্দর্যের মাঝে ওরা বিপন্ন হয়ে এখনো টিকে রয়েছে।
বনভ্রমণের কোনো এক সৌভাগ্যক্ষণে হঠাৎ করে হয়তো এর সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে। তবে আজ ওরা ভালো নেই। প্রজননজনিত সমস্যায় আমাদের দেশ থেকে বিপন্ন হতে চলেছে উদয়ী-পাকরাধনেশ। এর ইংরেজি নাম Oriental Pied Hornbill এবং বৈজ্ঞানিক নাম Anthracoceros albirostris।
উদয়ী-পাকরাধনেশ বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। তবে উপমহাদেশের প্রখ্যাত পাখি পর্যবেক্ষক ও গবেষক সালিম আলীর বইতেও এ পাখিটিকে ‘কাও ধনেশ’ বলা হয়েছে। আইইউসিএন এ প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত ঘোষণা করেছে।
বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ বলেন, উদয়ী-পাকরাধনেশ ধীরে ধীরে আমাদের চিরসবুজ বন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় গাছগুলোকে রক্ষা করতে পারলেই এদের সুদিন ফিরে আসবে। এই ছবিগুলো সিলেট এবং চট্টগ্রামের চিরসবুজ বন থেকে তুলেছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল খান বলেন, আমাদের পাহাড়ি বনের বিশালাকৃতির বড় বড় গাছগুলো ধীরে ধীরে কাজ হয়ে যাচ্ছে। উজাড় করা হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। আর এই ক্রমগত বৃক্ষনিধনের ফলে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে এসে পড়ছে গাছপালাকে আশ্রয় করে টিকে থাকে আমাদের দেশে অসংখ্য জীববৈচিত্র্য। এই পাখিগুলো এমনিতেই বিপন্ন। তারপর বনের বড় বড় গাছ উজাড়সহ প্রজননজনিত কারণে ধীরে ধীরে এরা আমাদের সবুজ বন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু ওরা ওদের পরবর্তী প্রজন্ম রেখে যেতে পারছে না তাই তাদের অস্তিত্ব আজ সংকটে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বনগুলোতে বাস করা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীরা বিশাল ঠোঁট এবং বড় বড় পালকের জন্য এ পাখিটিকে শিকার করে থাকে। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে কিছু অসাধু কবিরাজ ধনেশের তেল দিয়ে অপচিকিৎসা করে থাকেন।
এ পাখিটির দৈর্ঘ্য ৫৫ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার। এদের বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রামের ঘন বনাঞ্চলগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, ভুটান, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং চীনের দক্ষিণাঞ্চল এদের প্রধান আবাসস্থল। এমন নয়নাভিরাম প্রকাণ্ড হলুদ ঠোঁট দেখেই পাখিটিকে আলাদা করে চেনা যায়। এদের দেহ সাদা-কালো। পিঠ চকচকে কালো। তবে পেট ও লেজের শেষাংশ সাদা বলে জানান ড. মনিরুল।