ভ্যাকসিন: সংস্কার, কুসংস্কার, ভীতি!
করোনা টিকাশুধু করোনা ভ্যাকসিন নয়, অতীতের নানা রোগের ভ্যাকসিন নিয়ে সংস্কার, কুসংস্কার ও ভীতি ছড়িয়ে পড়েছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞান এসব সমস্যা ও বিঘ্ন পেরিয়েই এগিয়ে চলেছে।
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে যে দ্বিধা ও অনীহা চলছে এবং কিছু কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, সেগুলোও অতিদ্রুত কাটানো সম্ভব হবে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বহু ক্ষেত্রে প্রতিষেধক-বিরোধীরা বলে থাকেন, প্রতিষেধকের ১০০% ক্ষেত্রে কার্যকারিতা দেখা দিলে তবেই প্রতিষেধক নিতে চাইবেন মানুষ। কিন্তু কোনও প্রতিষেধকই সব ক্ষেত্রে সবার উপরই সমান কাজ করে না। যেমন, ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিষেধক ৫০% কাজ করাতেই কিন্তু রোগটি নিয়ন্ত্রণে এসেছিল।
অনুরূপ সমস্যা তৈরি হয়েছিল পোলিও ভ্যাকসিন নিয়েও। এ টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয় ভারতে। বলা হয়, টিকা নিলে পুরুষত্ব হারানোর ও স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণের মতো ঘটনা ঘটছে। পরে ধর্মনেতাদের সাহায্য নিয়ে সরকার সমস্যাটির মোকাবিলা করেছিল।
একইভাবে, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কর্নাটক ও তামিলনাড়ুতে গুজব ছড়িয়েছিল, হামের প্রতিষেধকে শূকর-নিঃসৃত কিছু রয়েছে। এর ফলে বহু জায়গায় টিকাকরণ থমকে গিয়েছিল। বহু কষ্টে ও ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে টিকা গ্রহণে সম্মত করা সম্ভব হয়েছিল।
ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সঙ্গত কারণ আছে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এও মনে রাখা ভাল যে, ভ্যাকসিন বিষয়ক সব সংশয়ই সঙ্গত নয়। বহু ক্ষেত্রে সংস্কার, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থও কাজ করে। ভুল তথ্য, অসম্পূর্ণ তথ্যের কারণে যেমন ভ্যাকসিন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, একই ভাবে ভ্যাকসিন সম্পর্কে সন্দেহের পিছনেও অনেক ক্ষেত্রে ভুল তথ্য ঘুরছে।
ভ্যাকসিনের পক্ষে বা বিপক্ষে তথ্যের মধ্যে ফারাক করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অত্যন্ত দুরূহ কাজ। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও প্রতিষেধক নিয়ে মতপার্থক্য প্রচুর। ফলে ভ্যাকসিন নিয়ে এক ধরনের বিভ্রম তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এবং ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মধ্যে আশাবাদের পাশাপাশি সন্দেহ, সংশয় ও নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়াও স্বাভাবিক।
যখন একটি নতুন রোগকে সামাল দিতে নতুন ভ্যাকসিন তৈরি হয়, তখন তাকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মোকাবিলা করতে হয় নব নব সমস্যা, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া। ফলে মানুষের মধ্যেও তৈরি হয় সংশয়।
কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণা ক্রমে ক্রমে বিদ্যমান নানা সমস্যাকে কাটিয়েই এগিয়ে চলে। এক্ষেত্রে সঠিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সামনে নিয়ে আসা সরকার ও গণমাধ্যমের দায়িত্ব, যাতে বিভ্রান্তি ও সংশয়ের অবসান হয়। প্রকৃত অবস্থা মানুষ যেন জানতে পারে এবং সে অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে, সে ব্যবস্থা করাই সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব। তাহলেই ধীরে ধীরে বিভ্রান্তি কেটে স্বচ্ছতার মাধ্যমে সকলের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিষেধক নিতে শুরু করেছেন। সাফল্য আসার পর তারা প্রচারে অংশ নিলে টিকা-দ্বিধা প্রতিরোধ জোরদার হবে। যে নেতারা স্বাস্থ্যকর্মীদের ডিঙিয়ে গিয়ে টিকা নিয়েছেন, তারাও প্রতিষেধকের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে পারেন। জো বাইডেন, কমলা হ্যারিস, রানি এলিজ়াবেথ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ টিকা নিয়েছেন, যা সাধারণের মধ্যে বিরাজমান ভয় কাটাতে সাহায্য করেছে। ফলে টিকাকরণের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষেধক বিষয়ক তথ্যগুলো স্বচ্ছ ভাবে জানানো প্রয়োজন। কঠিন পরিস্থিতিতে কঠিন পথেই এগোতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।