জাপানে আগাম প্রস্ফুটিত চেরি
জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলা হয় এবং একই সঙ্গে অভিহিত করা হয় চেরি ফুলের দেশ হিসেবেও। নানা বর্ণ ও বাহারের বিখ্যাত চেরি ফুলের জন্য জাপান বিশ্বব্যাপী প্রসিদ্ধ।
সেই জাপানে চেরি ফুলকে ঘিরে বিরাট কাণ্ড ঘটেছে এ বছর। সময়ের চেয়ে আগে দেশের নানা স্থানে আগাম প্রস্ফুটিত হয়েছে চেরি। লোকজন অবাক বিস্ময়ে আগাম ও পরিপূর্ণ চেরির বাহার দেখছে।
এমন ঘটনা ঘটেছিল ৭০ বছর আগে। তখনো সময়ে আগে চেরি ফুলের পূর্ণ প্রস্ফুটন হয়েছিল। সাধারণত চেরি ফোটে গ্রীষ্মের শেষদিকে। পূর্ণ বিকশিত হতে যে তাপমাত্রার দরকার, চেরি সেটা পায় গ্রীষ্মের শেষে বা মাঝামাঝি। +
কিন্তু বসন্তের মাঝামাঝি চেরি ফোটায় মানুষ যেমন আনন্দিত হয়েছে, তেমনি উদ্ভিদবিজ্ঞানিরা অবাক হয়েছেন। তাদের ধারণা, জলবায়ুর পরিবর্তনের বিষয়টি ইঙ্গিত দিচ্ছে পূর্ণ প্রস্ফুটিত চেরি। কারণ, চেরি ফোটতে যে তাপমাত্রা দরকার, সেটা হওয়ার কথা মধ্য গ্রীষ্মে। মধ্য বসন্তেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে গ্রীষ্মের মতো, যে কারণে প্রস্ফুটিত হয়েছে চেরি।
জাপানে চেরি ফুলকে ডাকা হয় 'সাকুরা'। ফুলটি জাপানের জাতীয় মর্যাদা ও সংস্কৃতির প্রতীক। যেমন, ইরান ও মধ্য এশিয়ায় গোলাপ আর ইউরোপে ডেফোডিল বা লিলি বা রডোডেনড্রন, তেমনি জাপানে চেরি। কবে চেরির কুঁড়ি আসে, কবে ফোটবে, সব লিপিবদ্ধ করে রাখা হয় জাপানে।
জাপানি সমাজ জীবনে চেরির ভূমিকা অনন্য। চেরি ফোটার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে গৃহীত হয় নানা আনুষ্ঠানিকতা। বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো বা নামকরণ করা হয় বছরের চেরি ফোটার দিনটির সঙ্গে মিলিয়ে।
এবছর চেরি ফোটার দিন ধার্য ছিল ৭ এপ্রিল। মধ্য গ্রীষ্মের বদলে বসন্তের শেষ দিকে দিনটি নির্ধারণ করেন উদ্ভিদবিজ্ঞানিরা আবহাওয়া ও তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে। প্রতিবছরই এমন হিসাব করা হয় চেরি ফোটাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এবছর নির্ধারিত দিনের ১০ দিন আগে ২৭ মার্চ জাপানের প্রাচীন রাজধানী কিয়োটো শহরে পূর্ণ প্রস্ফুটিত চেরির দেখা পাওয়া যায়। তারপর একাধিক শহরে চেরির পরিপূর্ণ প্রস্ফুটনের খবর আসতে থাকে।
জাপানের আবহাওয়াবিদ, উদ্ভিদবিজ্ঞানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা আগাম চেরি ফোটার বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে। কারণ, ৭০ বছর আগে, ১৯৫৩ সালে একবার নির্ধারিত দিনের কয়েকদিন আগে চেরি ফোটার রেকর্ড রয়েছে। ৭০ বছর পর করোনাকালে আবার কেন এমন হলো, তা খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।