অপরূপ সৌন্দর্যের সিকিম



এটিএম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ
অপরূপ সৌন্দর্যের সিকিম।

অপরূপ সৌন্দর্যের সিকিম।

  • Font increase
  • Font Decrease

ছবির মতো সাজানো গোছানো ভারতের একটি প্রদেশ, যার নাম সিকিম। সিকিম সম্পর্কে যখনই জানতে পারি তখন থেকেই সিকিম যাবার স্বপ্ন দেখি। কিন্তু সিকিমে বাংলাদেশীদের প্রবেশাধিকার না থাকায় সিকিম যাওয়া আগে কখনো সম্ভব হয়নি। পরে যখন ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে সিকিমে বাংলাদেশীদের প্রবেশাধিকার দেয়া হয় তখন থেকেই সিকিম যাওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকি। আজকে আপনাদের সাথে আমার সিকিম ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবো।

২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর রাত ৮ টার সময় আমি আর আমার সহকর্মী জাহিদ ভাই মিলে শ্যামলী পরিবহনে চড়ে বসলাম শিলিগুড়ি হয়ে সিকিমের উদ্দেশ্যে। আমাদের দুজনেরই আগেই ভারতের ভিসা নেয়া ছিলো এবং আগেই ট্রাভেল টেক্স জমা দিয়ে টোকেন নিয়ে রেখেছি। সারারাত ভ্রমণ শেষে ১৭ নভেম্বর সকালে পৌঁছালাম বুড়িমারী স্থলবন্দর। ফ্রেশ হয়ে বুড়িমারীর প্রখ্যাত বুড়ির দোকানে নাস্তা সেরে নিদ্দিষ্ট সময়ে ইমিগ্রেশন শেষ করে ভারতে চ্যাংড়াবান্ধা থেকে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। চ্যাংড়াবান্ধা থেকে ডলার এক্সচেঞ্জ করে নিলাম, এখানে শিলিগুড়ি বা গ্যাংটকের চেয়ে ভালো রেট পাওয়া যায়।

দুপুর সাড়ে বারোটায় পৌঁছালাম শিলিগুড়ি। প্রথমে আমরা যোগাযোগের জন্য একটা সিম কিনলাম। তারপর লাঞ্চ সেরে দার্জিলিং টেক্সিস্ট্যান্ড থেকে একটি ছোট টাটা অল্টো গাড়ি ১৮০০ রুপিতে গ্যাংটক এমজি মার্গ পর্যন্ত ভাড়া করলাম, গাড়িটি সিকিমের হওয়ায় এতো কমে প্রাইভেট টেক্সি পেলাম। ভাড়া করার সময় আমার ড্রাইভারকে বলে নিয়েছি রাংপোতে ইনার লাইন পারমিট (ওখচ) নিতে থামার কথা। দুপুর আড়াইটার সময় শিলিগুড়ি থেকে আমাদের গাড়ি যাত্রা শুরু করলো গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে।

ছোট্ট শিলিগুড়ি শহর, ক্যান্টনমেন্ট, সেভক এরিয়া পাড়ি দিয়ে গাড়ি চলছে তিস্তা নদীর পাড় ঘেঁষা সড়ক ধরে। তিস্তার নীলচে পানির সৌন্দর্যে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। নদীর মতই এঁকেবেঁকে রাস্তা চলে গেছে, সে রাস্তা ধরে আমাদের গাড়ি ছুটছে। পিচঢালা মসৃণ সড়ক, খানাখন্দক খুবই কম। আশেপাশের দৃশ্য বদলাচ্ছিল একটু পরপরই। কখনো পাহাড়ের সারির পাশ দিয়ে ছুটছি, সাথে ঘন গাছপালা। আবার কখনো পাহাড়গুলো দূরে সরে যাচ্ছিল, সামনে চলে আসছিল গাছের সারি আর ঘন ঘাসের জমি।

যাত্রাপথের প্রতি বাঁকে সুউচ্চ পাহাড়গুলো একটাই ইঙ্গিত দেয়- সৃষ্টিকর্তাই শ্রেষ্ঠ শিল্পী।
যাত্রাপথের প্রতি বাঁকে সুউচ্চ পাহাড়গুলো একটাই ইঙ্গিত দেয়- সৃষ্টিকর্তাই শ্রেষ্ঠ শিল্পী।

এখানে বলে রাখছি আমার সিকিম ভ্রমণের জন্য দেশ থেকে দশ কপি করে ছবি ও সর্বশেষ ভিসাসহ পাসপোর্টের কপি সাথে নিয়ে রেখেছি। কারণ সিকিমের যেকোনো জায়গায় ভ্রমণের জন্য বিদেশী পর্যটকদের ইনার লাইন পারমিট (ওখচ) ও রেষ্ট্রিকটেড এরিয়া পারমিট (জঅচ) নিতে হবে ছবি ও পাসপোর্টের কপি প্রয়োজন হয়। সিকিম থেকে ফিরার সময়ও আবার রাংপোতে অবহিত করতে হয়। মজার বিষয় হচ্ছে সিকিম প্রবেশের সময় ও ফিরার সময় পাসপোর্টে সিল দেয়া হয়।

ইনার লাইন পারমিট দিয়ে আপনি শুধু সিকিম শহর ভ্রমন করতে পারবেন। সিকিমের অন্যান্য যায়গা ভ্রমন করতে হলে আপনাকে রেষ্ট্রিকটেড এরিয়া পারমিট নিতে হবে, যা শুধু সিকিমের অনুমোদিত ট্যুর এজেন্ট থেকে ট্যুর প্যাকেজ নেয়ার মাধ্যমে নিতে পারবেন। ট্যুর এজেন্ট আপনাদের  রেষ্ট্রিকটেড এরিয়া পারমিট ব্যবস্থা করে আপনাদের প্যাকেজ অনুযায়ী ঘুরাবে। তবে অনেক সময় গাড়ির ড্রাইভারই গাইড হিসেবে কাজ করে।

শিলিগুরি থেকে গ্যাংটক যেতে প্রায় ৪ ঘন্টার মত সময় লাগে। আকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ও তিস্তা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে রাস্তায় একটি চা বিরতি দিয়ে কখন যে রাংপো চেকপোস্ট পৌঁছে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। প্রায় তিনঘন্টার মতো লাগলো রাংপোতে পৌছাঁতে। রাংপোতে আমাদের অভ্যর্থনা জানালো বিশাল এক ঐতিহ্যবাহী ফটক। ওপরে সবুজ চৌচালা, দু’পাশে কলাম, কলামের গায়ে রংবেরঙের নকশাকাটা কারুকার্য, যা সিকিমের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। রাংপো চেকপোস্ট থেকে পাসপোর্ট ও পারমিট পেপারে এন্ট্রি সিল নিতে প্রায় ২০ মিনিটের মত লাগলো, প্রায় ২০/২১ জনের মতো ট্যুরিস্ট ছিলো। এখান থেকে পারমটি না নিলে গ্যাংটক গিয়ে কোন হোটেলেই থাকতে পারবেন না এবং কোথাও ঘুরতেও পারবেন না।

আমরা পারমিশনের কাগজ ও পাসপোর্টে সিল নিয়ে আবার গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে রওনা হই এর মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে আঁধার ঘনিয়ে এসেছে, আশপাশের সুউচ্চ পাহাড়ী বসতির বৈদ্যুতিক আলোগুলো জ্বলে উঠেছে, মনে হচ্ছে আকাশে সারি সারি তারা জ্বলছে, সে এক অসাধারণ অনুভূতি যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। প্রায় সোয়া এক ঘন্টার মধ্যেই আমরা গ্যাংটক (এমজি মার্গ) পৌঁছে যাই, ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় সন্ধ্যা সাতটার কিছু বেশি। গাড়ি থেকে নামতেই বেশ ঠান্ডা আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরে, তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এবার হোটেল নেয়ার পালা, আমরা কয়েকটা হোটেল দেখা শেষে এমজি মার্গের রেডপান্ডা স্ট্যাচুর পাশেই হোটেল বায়ুলে উঠলাম। আমরা ২ জনের জন্য ১টা রুম নিলাম, যার ভাড়া পড়েছিলো ১৪০০ রুপি।

তিস্তা নদীর বয়ে চলা মুগ্ধ করে ভ্রমণপিপাসুকে।
তিস্তা নদীর বয়ে চলা মুগ্ধ করে ভ্রমণপিপাসুকে। 

হোটেলে উঠেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ি পরের দিনের নর্থ সিকিমের (লাচুং ও ইয়ামথান) ট্যুর প্যাকেজ বুকিং ও রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। হোটেলের একদম নিকটে এমজি মার্গ থেকে লালবাজারের দিকে নামার মুখেই ঠাকুর এন্ড ব্রাদার্স ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসে গেলাম। সেখানে দেখি চট্টগ্রাম থেকে আসা বাংলাদেশী এক দম্পতিও পরের দিন লাচুং ও ইয়ামথান ভ্রমণের জন্য প্যাকেজ খুঁজতে এসেছেন। পরিচয়ের পর উনারা আমাদের সাথে লাচুং ও ইয়ামথান ভ্রমণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তখন ৪ জন একসাথে একটা মাহিন্দ্র স্কোরপিও জীপসহ দুইদিনের যাওয়া আসা, থাকা খাওয়া, রেস্ট্রিকটেড এরিয়া পারমিট (জঅচ) নেয়া, ইয়ামাথান ভ্যালী ও লাচুং জিরো পয়েন্ট বেড়ানো সহ ১৬০০০ রুপিতে প্যাকেজ বুকিং দিলাম।

গ্যাংটকে রাত ৮ টার মধ্যেই প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, তার আগেই একটি রেষ্টুরেন্টে চিকেন কারি দিয়ে ভাত খেয়ে নেই। এরপর শুরু হয় মুসলিম হোটেলের সন্ধান। লাল মার্কেট দিয়ে একটু সামনে গেলে মিলবে জান্নাত হোটেল ও আসলাম বিরিয়ানি। অনেক দেশি বিদেশী পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত গ্যাংটক শহরের এই প্রাণকেন্দ্র এমজি (মহাত্মা গান্ধী) মার্গ, আইনশৃখংখলা পরিস্থিতি খুব চমৎকার, ক্রাইম নেই বললেই চলে। কিছুক্ষণ এমজি মার্গে ঘুরে মহাত্মা গান্ধীর স্ট্যাচু ও রেডপান্ডা স্ট্যাচুর পাশে ছবি তুলে ফিরে এলাম হোটেলে। এবার ঘুমাবার পালা, পরদিন আবার সফর শুরু হবে।

পরদিন ১৮ নভেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই পাহাড়ের গায়ে গড়ে উঠা গ্যাংটক শহরের দৃশ্য দেখতেই মনটা চনমনে হয়ে উঠলো। মনের মধ্যে তখন অদ্ভূত এক অনুভূতি। ছোটবেলায় বই পড়ে যে ছবি এঁকেছি মনের মধ্যে, আজ সে ছবি বাস্তব হয়ে চোখের সামনে! সকালের অসাধারণ এমজি মার্গ দেখে কিছু ছবি তুললাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে সাড়ে নয়টার সময় হোটেল থেকে চেকআউট হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ভাজারা টেক্সি স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে।

মূলত এখান থেকেই লাচুং-ইয়ামথান প্যাকেজের গাড়িগুলো ছেড়ে যায়। লোকাল একটা টেক্সিতে জনপ্রতি ২০ রুপিতে পৌঁছে গেলাম সেখানে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের অন্য দুই সহযাত্রী দম্পতিও হাজির। আমাদের ড্রাইভারকে ফোন দিতেই সেও হাজির, আমাদেরকে ছোট্ট একটা ব্রিফ করে নিয়ে চললো জীপের কাছে। এই দুদিনের জন্য সে আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড, আমাদের সবগুলো লাগেজ ও ব্যাগ গাড়িতে তুলে প্রায় সাড়ে দশটার দিকে আমরা নর্থ সিকিমের (লাচুং) উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।

হিম বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ যেনো ছন্দময় সুর ছড়িয়ে দিচ্ছে চারিদিকে।
হিম বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ যেনো ছন্দময় সুর ছড়িয়ে দিচ্ছে চারিদিকে।

পথে কিছু যায়গা সাইটসিয়িং করি- রাংরাং ব্রীজ, নাগা ফলস, মেয়ং ফলস, সেভেন সিস্টারস ফলস, তুং ব্রীজ, অমিতাভ বচ্চন ফলস, চুংথাং ভিউ পয়েন্ট ও তিস্তা নদীতে চুংথাং হাইড্রো ইলেকট্রিক পাওয়ার প্লান্ট, পাহাড়ী টানেল সড়ক, সহ আরো কয়েকটা পয়েন্ট সবগুলো এখন মনে পরছে না। পথে আমরা প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত দুপরের খাবার খেয়ে ছিলাম ভাত, ডাল, চিকেন কারি। বিকেলে চায়ের বিরতি ছিলো চুংথাং ভিউ পয়েন্টে। আকাঁবাকাঁ পাহাড়ী পথের অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে লাচুং পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। লাচুং পৌঁছে ড্রাইভার আমাদের নিয়ে যায় প্যাকেজ অর্ন্তভুক্ত হোটেল হিডেন গ্লেসারে। আমরা হোটেলে উঠে হালকা ফ্রেশ হতেই পরিবেশন করে চা বিস্কিট।

আমারা চা বিস্কিট খেয়ে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেই বেরিয়ে পড়ি রাতের ছোট্ট লাচুং শহরটা দেখার জন্য। তাপমাত্রা তখন প্রায় মাইনাস দুই ডিগ্রী, সাথে হীম বাতাস। স্বল্প সময়ে যা দেখলাম তাতে ছোট্ট লাচুং শহরটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। কিন্তু এখানে যে পরিমান ঠান্ডা তাতে বেশিক্ষণ টিকতে পারলাম না তাই হোটেলে চলে আসলাম। এখানে আমাদের বাংলাদেশী ও কলকাতার কিছু মানুষ পেয়ে তাদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। ইতিমধ্যে আমাদের রাতের খাবার রেডি হয়ে গেল সবাই খেয়ে নিলাম। ড্রাইভার আমাদের বলে রাখে সকাল ৭ টার মধ্যে রেডি থাকতে। তাই আমরা খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে ৩ টা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরলাম ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য। প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল, শেষ রাতে তাপমাত্রা মাইনস ছয় ডিগ্রীতে নেমেছিল, নভেম্বর মাস হওয়ায় তখনো তুষারপাত শুরু হয়নি।

প্রচন্ড ঠান্ডায় ১৯ নভেম্বর খুব ভোরে আলো আসার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে বাইরে যেতেই লাচুংয়ের অপরূপ রূপ দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল। হিমালয়ের পূর্ব সীমার অর্ন্তগত বিশাল বিশাল পাহাড় পর্বত চারিদিকে, সেগুলোর উপরের দিকে বরফ আচ্ছাদিত, সে যে কি অপূর্ব দৃশ্য তা নিজে চোখে না দেখলে বলে বোঝানো যাবেনা। বরফে ঢাকা চূড়াগুলোতে মেঘের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা, যেন এক অপার্থিব দৃশ্যের অবতারণা। হিম বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ যেনো ছন্দময় সুর ছড়িয়ে দিচ্ছে চারিদিকে।

ধীরে ধীরে পূবাকাশে সূর্য উঁকি, বিপরীত দিকের পর্বতের চূড়াগুলোতে সূর্যের সোনালী আভা আছড়ে পড়তেই এক মনভোলানো দৃশ্যের দেখা মিললো, মনে হচ্ছে পর্বতের চূড়ায় উজ্জ্বল সোনালী দ্যুতি। এ যেন এক স্বর্গীয় সাজে সেজেছে প্রকৃতি! কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে হোটেলে ফিরে আমরা ৭ টার মধ্যে আমরা রেডি হয়ে নেই এবং যথাসময়ে আমাদের ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে দিলো ইয়ামথাং ভ্যালি ও জিরো পয়েন্টের উদ্দেশ্যে। পথে ইন্ডিয়ান আর্মির চেকপোস্টে আমাদের পারমিট চেক করে।

পর্বতের চূড়ায় উজ্জ্বল সোনালী দ্যুতি।
পর্বতের চূড়ায় উজ্জ্বল সোনালী দ্যুতি।

লাচুং থেকে পাহাড়ী সর্পিল পিচঢালা পথে ইয়ামথান ভ্যালীর দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। এই উপত্যকা শীতকালে পুরোপুরি ঢেকে যায় শ্বেতশুভ্র বরফের চাদরে, তখন তার অন্য এক রূপ দেখা যায়। বাকি সময় সবুজ ঘাসের কার্পেটে মোড়া এই উপত্যকা, আর নীলরঙা তিস্তা নদীর বয়ে চলা মুগ্ধ করে ভ্রমণপিপাসুকে। ইয়ামথান ভ্যালী ফুলের সাম্রাজ্য হলেও নভেম্বরে ফুলের সম্ভাষণ পেলাম না। কিন্তু পুরো ভ্যালী শীতের আগমনের কারণে ধীরে ধীরে রূপ বদলানোতে ব্যস্ত। ভ্যালী জুড়ে পর্যটকদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য স্থায়ীভাবে বেশ কিছু আসন পেতে রাখা হয়েছে। পথের ধারে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি পাইন গাছ, নাম না জানা পাহাড়ী ফুল। যাত্রাপথের প্রতি বাঁকে সুউচ্চ পাহাড়গুলো একটাই ইঙ্গিত দেয়- সৃষ্টিকর্তাই শ্রেষ্ঠ শিল্পী।

প্রায় সাড়ে আটহাজার ফুট উঁচু শহরের উপর তিন-চার হাজার ফুট উচ্চতার একেকটি পর্বত দাঁড়িয়ে আছে নিরহংকারী হয়ে। কোনোটির চূড়ায় বরফের আচ্ছাদন, আবার কোনোটির গায়ে সবুজের প্রলেপ, কোনোটি আবার ন্যাড়া হয়ে একটু গোমড়ামুখো। কোনো পাহাড় সূর্যকে আড়াল করতে ব্যস্ত, কোনোটি আবার সূর্যের আলোর প্রতিফলন আর প্রতিসরণের সূত্র মেনে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। প্রতিটি পাহাড় তার নিজস্বতায় অনন্য। পথের দুধারে পাইন গাছের সারি, বিভিন্ন পাহাড়ি ফুল বাড়িয়ে তুলেছে অপরূপ শোভা। ইয়ামথান যাওয়ার পথে একটি স্থানে আমাদের গাড়ি সকালের নাস্তার জন্য বিরতি দিয়েছিলো, যা আমাদের প্যাকেজভুক্ত ছিলো। এখান থেকে সবাই গামবুট ভাড়া করেছি জিরো পয়েন্ট গিয়ে বরফে হাঁটার জন্য।

আমরা আবার ইয়ামথান উপত্যকা  থেকে জিরো পয়েন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। চীন সীমান্তের কাছাকাছি বলে সাধারণ পর্যটকদের এই পর্যন্তই যাওয়ার অনুমতি মেলে। প্রায় সাড়ে পনের হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত জিরো পয়েন্টের অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নজর কাড়বেই। যারা গেছে তারা জানে যে এই পথের দৃশ্য ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। যত উঠছি চারদিকের পর্বতগুলোর গা সাদা শুভ্র বরফের চাদরে আচ্ছাদিত, পাদদেশে এখনো বরফ জমেনি। আমরা চীন সীমান্তের কাছাকাছি জিরো পয়েন্টে পৌঁছালাম, মনে হলো পর্বতের চূড়ায় পৌঁছে গেছি। গাড়ি থেকে নেমে পাহাড়ের পাদদেশ ধরে পর্বতের বরফের দিকে হেটে চললাম। তবে পাদদেশ পর্বতের বরফগলা পানিতে ভেজা, সাবধানে পা ফেলতে হয়, যদিও আমাদের বরফে হাঁটার গামবুট থাকাতে কোনো সমস্যা হয়নি।

তিস্তা নদীর উৎপত্তিস্থল এই স্থানটি, পাহাড়ী ছোট ছড়ার মধ্যে দিয়ে এই বরফগলা পানি প্রবাহিত হয়ে তিস্তা নদীর জন্ম দিয়েছে। ছড়াটির উপর কাঠের পাটাতন দিয়ে বেশ কয়েকটি সাঁকো বানানো আছে। সাঁকো পার হয়ে আমার বরফের কাছে চলে এলাম। জীবনে প্রথম প্রাকৃতিক ভাবে মাটিতে জমে থাকা বরফ দেখা ও ছোঁয়ার অভিজ্ঞতা, সে এক অসাধারণ ভালো লাগা। বরফের উপর শুয়ে, বসে, হেঁটে কিছু সময় কাটালাম ছবি তুললাম। স্বচ্ছ নীল আকাশ, শ্বেত শুভ্র বরফাচ্ছাদিত পর্বত, হিমেল হাওয়া। কনকনে ঠান্ডায় হাতের দস্তানা খুলে একমিনিট থাকাও দুষ্কর। চমৎকার কিছু মুহূর্ত স্মৃতি করে নিলাম। বেশ কিছুক্ষন সেখানে মজা করে গাড়ির দিকে এগুলাম ফেরার জন্য। প্রায় সাড়ে পনের হাজার ফুট উঁচু হওয়ায় এখানে অক্সিজেন স্বল্পতা রয়েছে, আমি কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম, ইয়ামথান ফিরে আসার পর শ্বাস-প্রশ্বাস আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হলো।

প্রায় সাড়ে বারো হাজার ফুট উচ্চতায় সৃষ্টিকর্তার এক অপার্থিব নিদর্শন।

অপরূপ দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে আমারা হোটেলে ফিরে এলাম। ফ্রেশ হয়ে দুপরের খাবার খেয়ে আমরা গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সন্ধায় পৌঁছালাম গ্যাংটক শহরে, ড্রাইভার আমাদেরকে হোটেলের সামনে নামিয়ে দিলেন। এবার আমরা উঠেছি হোটেল চাংলো চেনে, এটি আগের হোটেলের চেয়ে অনেক ভালো হোটেল, ভাড়াও কম ১২০০ রুপী, এটি এমজি মার্গের একটু পশ্চিমে নামনাম রোডে সিকিম লেজিসলেসিভ এসেম্বলি হাউজ ও রোপওয়ের ঢালুতে অবস্থিত।

আমরা রুমে প্রবেশ করে ফ্রেশ হয়ে বের হই এবং বেশ কিছুক্ষণ এমজি মার্গ ও লালবাজারে ঘোরাঘুরি করে এবং কিছু কেনাকাটা করে খান চাচা'স কিচেনে চিকেন বিরিয়ানি খাই, বিরিয়ানিটা খুবই সুস্বাদু ছিলো। খাওয়া শেষে আমরা হোটেলে ফিরে যাই এবং হোটেলের মালিকের সাথে পরের দিনের জন্য সাংগু লেকের প্যাকেজ নিয়ে কথা বলতেই সে আমাদের ৩৫০০ রুপিতে পারমিটসহ সাংগু ট্যুর প্যাকেজ ঠিক করে দিলো। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও কিছু অগ্রিম টাকা দিলাম। হোটেল মালিক জানিয়ে দিলেন সকাল সাড়ে আটটায় আমাদের সফর শুরু হবে। এবার রুমে গিয়ে ঘুমোবার পালা। ২০ নভেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে তৈরী হয়ে নিলাম সাংগু লেক ভ্রমণের জন্য। যথাসময়ে গাড়ি হাজির, আমরা চড়ে বসলাম, যাত্রা শুরু হলো সাংগু লেকের উদ্দেশ্যে।

সাংগু যাওয়ার পথে চেক পোষ্টে আমাদের পারমিট চেক হয়। কিছুদূর যাওয়ার পর অনেকটা খাড়া পাহাড়ে খাজ কাটা পিচ ঢালা রাস্তা, নিচের দিকে তাকাতেই ভয় হচ্ছিল, তবু সবাই ভালোই মজা করছিলাম। মাঝে মাঝে রাস্তা ধসে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে, সেগুলো মেরামত হয়েছে। এভাবে কিছু চলার পর ফিফটিন মাইল নামক জায়গায় চলে আসি এবং এখানে স্বল্প সময়ের যাত্রা বিরতিতে সবাই নুডুলস স্যুপ খাই। তারপর আবার এগিয়ে চলা শুরু। সাংগুর রাস্তাটা লাচুংয়ের রাস্তার চেয়েও এডভেঞ্চারাস। সাংগু লেক পৌঁছে আমরা বিমোহিত। খুব সুন্দর স্বছ নীল পানির একটি লেক, প্রায় সাড়ে বারো হাজার ফুট উচ্চতায় সৃষ্টিকর্তার এক অপার্থিব নিদর্শন। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে এই লেকের পানি প্রচন্ড ঠান্ডায় বরফে রূপান্তরিত হয়। তখন সেখানে ভিন্ন আরেক রূপ তৈরী হয়। লেকের দু পাড়ে ঘোরাঘুরি করলাম ছবি তুললাম। লেকের পাড়ে একটি মন্দির রয়েছে।

পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধির জন্য মন্দিরের পাশে অনেকগুলো পোষা চমরী গরু (ইয়াক) রেখেছে স্থানীয়রা, পর্যটকরা এগুলোতে চড়ে লেকের পাড়ে বেড়ায়, ছবি তোলে। একটি পর্বতের পাদদেশ থেকে ক্যাবল কারে করে পর্বতের চূড়ায় উঠে ঘুরে আসা যায়, আগেরদিন লাচুংয়ে অক্সিজেন সংকট অনুভব করায় অসুস্থ হওয়ার ভয়ে আজ ক্যাবল কারে উঠিনি। যতটুকু সৌন্দর্য দেখতে পাই তা মুখের ভাষায় পরিপূর্ণ ভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রায় ঘন্টা খানেক বেরিয়ে আবার গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে রওনা হই এবং দুপরের মধ্যেই আমরা গ্যাংটক ফিরে আসি। ফিরে এসে আমরা আসলাম বিরিয়ানি থেকে বিফ বিরিয়ানি খেয়ে হোটেলে ফিরে রেস্ট নেই। বিকেল থেকে সন্ধ্যায় আমরা লালবাজারে ঘুরে কেনাকাটা করে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে আসি। সিদ্ধান্ত নিলাম এই কদিনের ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করতে আগামীকাল ঘুম না ভাঙা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমাবো।

হিমালয়ের পূর্ব সীমার অর্ন্তগত বিশাল বিশাল পাহাড় পর্বত চারিদিকে।
হিমালয়ের পূর্ব সীমার অর্ন্তগত বিশাল বিশাল পাহাড় পর্বত চারিদিকে।

পরদিন ২১ নভেম্বর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘড়িতে সাড়ে নয়টা। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে বের হলাম। দু-তিন মিনিট হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত সিকিমের লেজিসলেসিভ এসেম্বলি দেখে এলাম। ছোট্ট সুন্দর একটি এসেম্বলি ভবন, ২৫ জন সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসেন। ভূমিপুত্র হিসেবে ভারতের সাবেক ফুটবল দলের অধিনায়ক বাইচুং ভুটিয়া সেখানে খুবই বিখ্যাত। পর্যটন বান্ধব একটি রাজ্য। এরপর গেলাম পাশেই অবস্থিত ক্যাবল কারে চড়তে। টিকিট কেটে সারিবদ্ধ লাইনে আমরা উঠে পড়লাম ক্যাবল কারে। ধীরে ধীরে ক্যাবল কার চলতে শুরু করলো, আর উম্মুক্ত হতে থাকলো পাহাড়ি রাজ্য সিকিমের গ্যাংটক শহর প্রকৃতি।

প্রতিটি পাহাড়ের গায়ে তৈরি ঘরবাড়ি গাছগাছালি খুব সুন্দর লাগছিলো। অপর প্রান্তের নিচে কারুকার্যময় একটি প্রজাপতি স্ট্যাচু দেখে আমরা ফিরে এলাম। স্বল্প সময়ে ভালো রোমাঞ্চকর রাইড। এবার আমরা গ্যাংটক সিটি ট্যুরের জন্য ১৫০০ রুপিতে একটি ট্যাক্সি ভাড়া করলাম। সিটি ট্যুরের অংশ হিসেবে আমরা হনুমানটক, গণেশটক, চিড়িয়াখানা (যদিও আমরা প্রবেশ করিনি), বোটানিক্যাল গার্ডেন, তাশি ভিউ পয়েন্ট, বাকতাং ওয়াটার ফল (এখানে জিপলাইনিং করেছি), রুমটেক মোনেস্ট্রি, সিকিম মিউজিয়াম ঘুরে এমজি মর্গে এসে খান চাচা'স কিচেনে লাঞ্চ সারলাম।

তারপর বিকেল অবধি কেনাকাটা সেরে হোটেলে ফিরে লাগেজ গোছালাম। রাতের খাবার খেয়ে এমজি মার্গে শেষবারের মতো ঘুরে হোটেলে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন ফেরার পালা, ২২ নভেম্বর সকলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে হোটেল থেকে চেকআউট করে ২০০০ রুপিতে একটি টেক্সি ভাড়া করলাম শিলিগুড়ির বাগডোগরা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।

বাগডোগরা থেকে আমাদের কলকাতাগামী ফ্লাইট বিকাল ৩:৪০ এ, আর কলকাতা থেকে ঢাকার ফ্লাইট রাত সাড়ে নয়টায়। সিকিম ভারতের অন্যতম একটি পরিচ্ছন্ন রাজ্য, অপরাধ নেই বললেই চলে, স্থানীয়রা খুবই বন্ধুবৎসল ও পর্যটন বান্ধব। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় সুস্থ ভাবে, সুন্দর ও সঠিক পরিকল্পনায় সিকিম ভ্রমণ সম্পন্ন করেছি। সিকিমের অনন্য সুন্দর মুহূর্তগুলোর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ।

   

সুন্দরবনের জল-জঙ্গলের রূপকথা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ওপাড়ে ঘন বন জঙ্গল, মাঝখানে শিবসা নদী আর এপাড়ে বাঁধের ধারের জমিতে সারিবদ্ধ ঝুলন্ত বাড়ি। জঙ্গলে হেঁটে বেড়ায় চিত্রা হরিণ, নদীর ডাঙ্গায় দেখা মেলে ভোঁদরের। সবুজভাব নদীতে ডিঙি নৌকায় জীবিকার সন্ধানে মাছ ধরে ঝুলন্ত বাড়ির বাসিন্দা। সবমিলে যেন জল-জঙ্গলের রূপকথা।

দৃশ্যটি খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ানের। এখানে জল-জঙ্গলের সঙ্গে মানুষের বসবাস। সুন্দরবনের সৌন্দর্য ও উপকূ্লের তাণ্ডব সহ্য করা নলিয়ানকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বার্তা২৪.কম-এর ফটো এডিটর নূর এ আলম।

শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রলয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এখনকার বাসিন্দারা এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর/ছবি: নূর এ আলম


নিজের বসতভিটা হারানোর পর ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ধারের জমিতে। সেখানেও ঘর বানানোর মতো আর মাটি অবশিষ্ট নেই। ফলে জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর।

এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে/ছবি: নূর এ আলম


তাই এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে। মোটামুটি মাঝারি ঝড় হলেই ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে। সুন্দরবনে জেলেরা দিনে রাতে মাছ ধরে, তারা দিন-রাতের হিসাব করে না।

 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরছেন জেলে/ছবি: নূর এ আলম


 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরেন তারা। কিনারা দিয়ে কাদায় হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


এরপরও নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে। অনেক জেলে ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন।

জেলেরা ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন/ছবি: নূর এ আলম


বর্ষায় শিবসার জলে ডুবে থাকা নলিয়ানের এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার জন্য এই ডিঙি নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।

শিবসা নদী/নূর এ আলম


নলিয়ানে উপকূলের বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করা চিত্র শুধু নয়, রয়েছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক প্রকৃতি। শিবসার অপার সৌন্দর্য।

গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি/ছবি: নূর এ আলম


নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ঘন গাছপালার সবুজ বন। যাতে চোখ জুড়িয়ে আসে।

হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ/ছবি: নূর এ আলম


যেখানে রয়েছে হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ। গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি, ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির। 

নলিয়ান পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গলের ভেতরে লোহার ব্রিজ/ছবি: নূর এ আলম


পর্যটকদের জন্য জঙ্গল ভেদ করে তৈরি করা লোহার ব্রিজ। পর্যটকরা সুন্দরবনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে এই ব্রিজে হেলেন দিয়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে নেয়।

জঙ্গলে হরিণ খুনশুটিতে ব্যস্ত/ছবি: নূর এ আলম


সুন্দরবনের প্যাঁচেপ্যাঁচে কাঁদায় হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা মিলে হরিণের দলের সঙ্গে। জঙ্গলে তারা তখন নিজেদের মধ্যে খুনশুটিতে ব্যস্ত।

মায়াবী চোখে তাকিয়ে হরিণ/ছবি: নূর এ আলম


এরই ফাঁকে মায়াবী চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখে দু’পা বিশিষ্ট মানুষের দিকে। আড় চোখে তাকায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা বানরের দলও। তারা সারাদিন বনে দৌড়ঝাঁপ করে।

বানরের দৌঁড়ঝাপ/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে।

নদীর তীরে দেখা মেলে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী ভোঁদরের/ছবি: নূর এ আলম


জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়।

 শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে। জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়/ছবি: নূর এ আলম

বড় বড় ঘূর্ণিঝড় যারা মোকাবিলা করা নলিয়ানের কাছে কুমির আর এমন কি! সব কিছু তোয়াক্কা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয় তাদের কাছে!

;

ইতিহাসে ২৮ মার্চ: বর্ণবাদের প্রতিবাদে কিংয়ের পক্ষে ২৫ হাজার মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

  • Font increase
  • Font Decrease

মানব ইতিহাস আমাদের অতীতের কথা বলে। আজ যা কিছু বর্তমান তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আমাদের অতীতের কারণেই। সেই অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়।  

আজ ২৮ মার্চ, ২০২৪। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখঅ যাবে, আজকে ঘটেছিল নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। জেনে নেয়া যাক, কি ঘটেছিল আজকের তারিখে!

*মার্টিন লুথার কিং ছিলেন বর্ণবাদের বিপরীত আন্দোলনকারী আফ্রিকান নেতা। ১৯৬৫ সালে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সমর্থন করে মিছিলে নেমেছিলেন আজকের তারিখে। এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে আলাবামায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার তৈরিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।    

*যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৯৭৯ সালে পানির পাম্প ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে চারপাশে তেজস্ক্রিয় বাষ্প এবং আয়োডিন ছড়াতে শুরু করে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৫০০ জন কর্মী এই বাষোপর সংস্পর্শে আসায় শারীরিক সমস্যার আশঙ্কায় ছিল। আমেরিকার জনগণ এই ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।  

*১৯৮৬ সালে অ্যাচেসন এবং লিলিয়েনথাল পারমারবিক শক্তি সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা উল্লেখ করেন তারা। ২৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের সেই রিপোর্টটি প্রকাশ করে।

*হিলসবোরো দুর্ঘটনায় প্রায় ১শ লোকের প্রায় গিয়েছিল ১৯৯১ সালে। শেফিল্ডে পিষ্ট হয়ে ৯৬ জন লিভারপুল ফুটবল সমর্থক নিহত হন। এছাড়া আরও দেড় শতাধিক ভক্ত আহত হন। এই বিপর্যয়ে আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট ছিল নিহতদের পরিবার। তাই, আজকের তারিখে তারা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল।

*১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ ১৯৩৯ সালের ২৮ মার্চ শেষ হয়েছিল।

;

তালপাতার পাখায় ঘোরে সংসারের চাকা



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। যা দেখে মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুরের কবিতা ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ বলছি বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের কথা। বর্তমানে গ্রামটি তাল পাখার গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নারী-পুরুষ সবাই তালপাতা দিয়ে পাখা বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গরমে তালপাতার পাখার বাতাস গা জুড়িয়ে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম। একটির নাম যোগীরভবন, অপরটি আড়োলা আতালপাড়া। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটি পাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দুটি গ্রামে একেক পাড়ায় একেক ধরনের পাখা তৈরি হয়। যোগীরভবন গ্রামে নারীরা তৈরি করেন হাতলপাখা বা ডাঁটপাখা। আর আড়োলা আতালপাড়ায় তৈরি হয় ঘোরানো পাখা বা ঘুন্নী পাখা আর পকেট পাখা। পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন দুটি গ্রামের সব নারী। শীতের শেষে বসন্তকালে, অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।

পাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারী

গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাড়ির উঠানে রং তুলির আঁচড়ে ঘুরানো পাখা রাঙিয়ে তুলছেন সখিনা বেগম। রাঙানো পাখা বাঁধায় করছেন গোলজার। বাঁধা হয়ে গেলে পাখাটি বিক্রি করবেন তিনি।

হাতপাখার গ্রামে এবার ২০ লাখ পাখা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এই পাখা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।

গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা অবসর সময়ে পাখা তৈরির কাজ করেন। বংশ পরম্পরায় এই দুই গ্রামের মানুষ তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পাখার চাহিদা, সেই সঙ্গে বাড়ছে পাখা তৈরির কাজের পরিধি।

আড়োলা গ্রামের খন্দকার বলেন, দাদার আমল থেকে তারা তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালপাখা তৈরির কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙের আচর দিয়ে তাল পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে থাকেন। আকরাম আকন্দ বলেন, গত বছর তিনি পাখা বিক্রি করে সংসার খরচ বাদে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতে গত বছর দুই গ্রাম থেকে ১৫ লাখ তালপাখা বিক্রি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার চাহিদা বাড়ায় ২০ লাখ পাখা বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে নাম দেয়া হয়েছে- পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা।

পাখা তৈরিতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং লোহার তার প্রয়োজন হয়। পাখা তৈরির পর বিভিন্ন রঙের আচর দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। ১০ টাকায় কেনা তাল গাছের একটি পাতা বা ডাগুড় দিয়ে তৈরি হয় বড় পাখা বা ডাগুর পাখা ২টি, ঘুরানী পাখা ৪টি এবং পকেট পাখা ৬টি।

তালপাতার পাখা

পাখা তৈরির কারিগর জানান, বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় বাঁশ এবং তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর বাঁশ ছোট ছোট আকারে কাটতে হয়। তালপাতাও কেটে পাখা তৈরির উপযোগী করা হয়। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ। চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাহারি রঙ করে বিক্রয় উপযোগী করা হয়।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসেন তালপাখা কিনতে।

যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, তিনি প্রতি বছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ডাগুর পাখা তৈরি করেন। এই পাখাগুলো বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখার চাহিদা বেশি বলে জানান মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, একটি তাল পাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়ে গেছে।

আতাইল পাড়া গ্রামের পারভীন, মর্জিনা, সাবিনা, বেবি, সুমি জানান, তারা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি হাত পাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরের ছয় মাস সংসারের কাজের ফাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজ করে তারা বাড়তি আয় করছেন। এইসব নারীরা তাদের সৌখিন জিনিস কিনে থাকেন নিজের টাকায়।

পকেট পাখা ১১ টাকা, ঘুরানী পাখা ২০ টাকা এবং ডাগুর পাখা ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতপাখার চাহিদা বাড়ছে বলে পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী করিম জানান। শহর এবং গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু প্রশান্তি পেতে ধনী-গরিব সবাই হাত পাখার ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

;

ইতিহাসে ২৭ মার্চ:স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

  • Font increase
  • Font Decrease

সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সাথে বছরের পর বছর কেটে যায়। বর্তমান হয় অতীত। তার সাথেই তৈরি হয় ইতিহাসের। মানব সভ্যতায় ঘটে যাওয়া ইতিহাস হয়ে থাকে জাতির কাছে স্মরণীয়। প্রতি বছর যখন ক্যালেন্ডারে একই তারিখগুলো ফিরে আসে, মানুষ পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে।

আজ ২৭ মার্চ, ২০২৪। বিগত বছরগুলোতে এই তারিখে ঘটা অনেক ঘটনা হয়েছে স্মৃতিতে অমলিন। ইতিহাসের পাতায় জুড়ে গেছে নতুন নতুন ঘটনা। চলুন জেনে নিই,আজকের তারিখে কি ঘটেছিল!    

১৯৭৭ সালে স্পেনে টেনেরিফ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ডাচ এয়ারলাইনের সেই দুর্ঘটনায় কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রানওয়েতে দু’টো জেট বিমানের সংঘর্ষে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে উৎপন্ন বিধ্বংসী দাবানলে সর্বমোট ৫৮৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ১৯৮০ সালে উত্তর সাগরের প্ল্যাটফর্ম ধসে পড়ে। রিগটি ডান্ডি থেকে ২৩৫ মাইল পূর্বে সেই আবাসন প্ল্যাটফর্ম দুর্ঘটনায় ১২৩ জন শ্রমিক মারা যান।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে কমিউনিটি পার্টির অনেক রাশিয়ান উচ্চতর কর্মকর্তা পরাজিত হন। তৎকালীন সময়ে এই ঘটনাকে একটি বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।     

১৯৬৩ সালে ব্রিটেনে রেললাইন কম ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষতি হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মোট রেলব্যবস্থার এক-চতুর্থাংশ সেবা কমিয়ে দেওয়া হবে। এই নিয়ে সুদূরপ্রসারী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২৭ মার্চ।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

;