কাজী নজরুল ও মৎস্যজীবী আন্দোলন



ড. রূপকুমার বর্মণ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) তাঁর মাত্র ৪৩ বছরের সৃষ্টিশীল জীবনে রেখে গেছেন গান, কবিতা ও কথা সাহিত্যের অফুরন্ত ভান্ডার। স্বাধীনতা, বিদ্রোহ, প্রেম, ভক্তি ও মানবমুক্তি বিষয়ক নজরুলের কবিতা ও গান তাঁর সমকাল ও ভাবীকালের প্রেরণার উৎস। সাধারণ থেকে অতি সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া, শোষণ, বঞ্চনা তথা পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত সমাজের কথা তুলে ধরে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিদ্রোহী কবি।

কুলি, মজুর, শ্রমিক ও কৃষকদের শোষণের  বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা নজরুলের কবিতা ও গান শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক ও তাত্ত্বিক রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বা শ্রমিক কৃষক দলের (Workers and Peasants Party) সক্রিয় কর্মী নজরুল কৃষক, শ্রমিক, বিপ্লবী ও দেশসেবকদের খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। কৃষক ও কারখানা শ্রমিকদের পাশাপাশি বাংলার মৎস্যজীবীদের জীবনসংগ্রামও কবির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ১৯২৬ এর ৮ই মার্চ নদিয়ার কৃষ্ণনগরে বসে কবি সৃষ্টি করেছিলেন ‘জেলেদের গান’ নামে এক উদ্দীপণা ও প্রতিবাদে ভরা শ্রমজীবী মানুষের এক অপূর্ব প্রতিবাদী সঙ্গীত।

‘জেলেদের গান’ প্রথম প্রকাশিত হয় লাঙ্গল- এ (১৮ই মার্চ ১৯২৬, বাংলা ৪ঠা চৈত্র, ১৩৩২)। পরের বছর ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থে এটি সংকলিত হয় ‘ধীবরদের গান’ নামে। এই গানটির রচনার প্রেক্ষাপটও খুব চমকপ্রদ। একটু পেছনের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে     তখন সবেমাত্র  প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮) শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে (১৯১৯) বিশ্বশান্তি রক্ষায় তৈরি হয়েছে জাতি সংঘ (বা League of Nations) এর মতো সংগঠন। এই সংঘের অন্যতম শাখা সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (International Labour Organisation)। এর অব্যবহিত পরেই এই সংস্থায় যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশে শ্রমিক সংগঠন গড়ে তোলার তোরজোড় শুরু হয়। এমনকি পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির উপনিবেশগুলোও এব্যাপারে পিছিয়ে ছিল না।

১৯২০ সালেই ভারতে গড়ে ওঠে All India Trade Union Congress (AITUC) এর মত শ্রমিক সংগঠন। অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের আবহ (১৯২০-১৯২২) ও ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির পরিমন্ডলে ব্রিটিশ-ভারতের অন্যান্য শ্রমজীবীদের মতো বাংলার মৎস্যজীবীরাও গড়ে তোলেন ‘নিখিল বঙ্গীয় ও আসাম প্রদেশীয় মৎস্যজীবী সম্মেলন (All Bengal and Assam Provincial Fishermen Conference)।

১৯২০ এর দশকে বরিশালের রমনীমোহন বিশ্বাসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটি বাংলার মৎস্যজীবীদের উন্নয়ন ও শ্রমিক হিসাবে তাদের প্রাপ্য আধিকার রক্ষায় সোচ্চার হয়ে ওঠে। অচিরেই শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক কৃষ্ণনগরের হেমন্ত সরকার (১৮৯৭-১৯৫২) বাংলার মৎস্যজীবীদের একতাবদ্ধ করতে এগিয়ে আসেন। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর সহপাঠি ও বন্ধু, স্বাধীনতা সংগ্রামী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক তথা বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেমন্ত সরকারের আহ্বানে কবি নজরুল কৃষ্ণনগরে হাজির হন। ১৯২৬ এর ১০ই মার্চ নজরুল, হেমন্ত সরকার, বসন্ত কুমার মজুমদার ও হেমপ্রভা মজুমদারের সঙ্গে মাদারিপুরে পৌঁছান । ‘নিখিল বঙ্গীয় ও আসাম প্রদেশীয় মৎস্যজীবী সম্মেলনের’ তৃতীয় অধিবেশনে (মাদারিপুর, ১১-১২ মার্চ, ১৯২৬) উদ্ধোধনী সঙ্গীত রূপে ‘জেলেদের গানটি’ নিজের সুরে গেয়ে শোনান কবি নজরুল। তিনি গেয়ে ওঠেন:

আমরা নীচে পড়ে রইব না আর

শোনরে ও ভাই জেলে

এবার উঠবরে সব ঠেলে ।

এ বিশ্ব সভায় উঠল সবাইরে

ঐ মুঠে মজুর হেলে

এবার উঠব রে সব ঠেলে ।

সমগ্র বিশ্ব যখন কৃষক ও শ্রমিক সবাই নিজ নিজ অধিকারের দাবিতে জেগে উঠেছে সেই সময় মৎস্যজীবীদের জন্য নজরুলের উদাত্ত আহ্বান সম্মেলনে উপস্থিত সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। নজরুল তাঁদের  মনে করিয়ে দিলেন:

ও ভাই আমরা জলের জল-দেবতা

বরুন মোদের মিতা,

মোদের মৎস্যগন্ধার ছেলে ব্যাসদেব

গাইল ভারত-গীতা ।

আমরা দাঁড়ের ঘায়ে পায়ের তলে

জলতরঙ্গ বাজাই জলেরে

আমরা জলের মত জল কেটে যাই,

কাটব দানব পেলে।

এবার উঠবরে সব ঠেলে ।

কবি তৎকালীন বাংলার সাত লক্ষ মৎস্যজীবী (মল্ল ক্ষত্রিয়) দের আঁশবটি হাতে অসুর-নিধনে এগিয়ে যেতে বলেছিলেন তাঁর রচিত এই গানটিতে। ।

বাংলাদেশের জাতীয় কবির এই গান নিঃসন্দেহে মৎস্যজীবীদের অনুপ্রাণিত করেছিল। ১৯৪২ এ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গেলে মৎস্যজীবীদের আন্দোলনের সঙ্গে কবি আর যুক্ত থাকতে পারেননি। তবে কবির অকৃত্রিম বন্ধু হেমন্ত সরকার তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত (১৯৫২) বাংলার (বিশেষ করে নদীয়া জেলার) ‘মৎস্যজীবী আন্দোলনের’ সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।

‘জেলেদের গানটি’র রচনার পর প্রায় একশো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন ঔপনিবেশিক আমলের মতো উৎপাদন ব্যবস্থা আর নেই। মাছ ধরা ও মাছ চাষ (pisciculture) এখন আধুনিক প্রযুক্তি ও বৃহৎ পুঁজির দখলে চলে গেছে। মূলধনের অভাবে মাছচাষ বা সমুদ্র থেকে মাছ ধরার (Marine fishing) কাজে প্রথাগত মৎস্যজীবীরা আজ পরিণত হয়েছেন জল মজুরে (water labourers)। বাংলার (পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ) নদীনালা ও খালবিলগুলি তাঁদের জীবিকা নির্বাহের জন্য অপ্রতুল মনে হওয়ায় তাঁরা ক্রমাগত অন্যান্য পেশা গ্রহণ করার চেষ্টা করে চলেছেন।

ভারত ও বাংলাদেশ উভয় রাষ্ট্রেই মৎস্যজীবীদের শিক্ষিত শ্রেণি উচ্চতর পেশা গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই শ্রেণি প্রথাগত মৎস্যজীবীদের থেকে নিজের দুরত্ব ক্রমশই বাড়িয়ে চলেছে। তবে তাঁদের একটা অংশ এখনও মাছধরা, মাছ বিক্রি বা আড়ৎদার হিসেবে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। তাই রশিকবিল, তিস্তা, তোর্ষা, মহানন্দা, ভাগীরথী, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা, তিতাস, হুগলী , জলঙ্গি, মাথাভাঙ্গা বা  চূর্নী নদীতে কান পাতলে এখনোও এই প্রথাগত মৎস্যজীবীবিদের জাল ফেলার শব্দ শোনা যাবে। স্বাভাবিকভাবেই নজরুলের লেখা শতবর্ষ উত্তীর্ণ ‘ধীবরদের গান’ এখনও প্রাসঙ্গিক।

ড. রূপ কুমার বর্মণ, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও  আম্বেদকর চর্চা কেন্দ্রের সমন্বয়ক ।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;