বাংলা লোকসংগীতের বিশ্বায়ন



ড. রূপকুমার বর্মণ
বাংলার চিরায়ত লোকশিল্পী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলার চিরায়ত লোকশিল্পী। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা ও বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম চালিকা শক্তি হল তাদের বৈচিত্র্যময় লোকসংগীত। মাঠেঘাটে কাজের সাথে সাথে লোকসংগীতের অবিরাম ধারা বয়ে চলেছে বাংলার (বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) সর্বত্র। বাউল, ফকির ও মরমী সাধক থেকে শুরু করে লোকসংগীত ও দেহতত্বের গান শোনা যায় অন্ধ ভিক্ষাজীবীর গলায়। বাঁশের বাঁশি, একতারা, দোতারা, সারিন্দা ও হরেক রকমের বাদ্যযন্ত্রের সাথে লোকসংগীতের মুর্চ্ছনা বাংলার মূল্যবান সাংস্কৃতিক সম্পদ। পল্লীগীতি, ভাটিয়ালি, সারি, জারি, ভাওয়াইয়া, বাউল, ভক্তিগীতি, দরবেশী, রাখালিয়া, মুর্শিদা, গম্ভীরা, ঝুমুড়, পূর্বালী, গোয়ালপাড়িয়া বা সিলেটি লোকসংগীত গ্রামীণ বাংলা ও বাঙালী মধ্যবিত্তের গন্ডী ছেড়ে আজ বিশ্বায়নের সংগীত জগতে পা রেখেছে।

সম্প্রতি “আইলরে নোয়া দামান আসমানের তারা” বা “জীবনখাতায় প্রেম কলঙ্কের দাগ লাগাইয়া”র মত সিলেটি ঘরানার লোকসঙ্গীতের আদলে সৃষ্ট গানগুলি সামাজিক মাধ্যম, ইউটিউব ও অন্যান্য অন্তর্জালিয় মাধ্যমের দৌলতে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাঙ্গালীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

বাংলা লোকসংগীতের ভূবনায়িত পণ্যে পরিণত হওয়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হলে আমাদের তাকাতে হবে খানিকটা পেছনের দিকে। আবহমানকাল ধরে চলে আসা বাংলা জনজীবনের গান, মরমী ভক্তিগীতি, কীর্তন, বাউল এবং লালন ফকির (আনুমানিক.১৭৭৪-১৮৯০), রাধারমন দত্ত (১৮৩৩-১৯১৫ ), হাসন রাজা (১৮৫৪-১৯২২), শাহ আব্দুল করিম (১৯১৬-২০০৯) ও অন্যান্য সাধকের গান বিশ শতকের প্রথম ভাগ থেকেই রেডিও, রেকর্ড ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের হাত ধরে গ্রামের মেঠোরাস্তা বা নদীর তীর ছেড়ে শহরমুখী হতে থাকে। পাশাপাশি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১) ও কবি নজরুলের (১৮৯৯-১৯৭৬) গানে বাউল ও অন্যান্য লোকসংগীতের সুরের ব্যবহার বাংলার লোকসংগীতকে তথাকথিত ভদ্রলোকদের দরবারে পৌঁছে দেয়।

বিশ শতকের মাঝামাঝি বামপন্থী ভাবধারা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচীর প্রচারে বাংলার লোকসংগীতের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। হেমাঙ্গ বিশ্বাস (১৯১২-১৯৮৭), নিবারণ পন্ডিত (১৯১২-১৯৮৪) ও তাঁদের মতো বামপন্থী ঘরনার শিল্পী ও গীতিকারদের সুযোগ্য পরিচালনায় পূর্ববাংলার কীর্তন ও ভাটিয়ালীর সুর রাজনৈতিক আন্দোলনের হাতিয়ারে পরিণত হয়। লোককবি নিবারণ পণ্ডিতের “হরি তোমার অপার লীলা বোঝা হইল ভার” (১৯৩৯) ও “চল একসাথে চল গড়বো মোরা রাঙা দুনিয়া”(১৯৪৫) বা হেমাঙ্গ বিশ্বাসের “মাউন্ট ব্যাটেন মঙ্গলকাব্য (১৯৪৮)” ১৯৪০-র দশকে ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল।

বিশ শতকের মধ্যপর্বে রেডিও ও রেকর্ডের সৌজন্যে বহু লোকসংগীত গ্রামীণ জীবনের নীরব ও শান্ত পরিবেশ থেকে কোলাহলপূর্ণ শহর ও মহানগরে পৌঁছে গিয়েছিল। তাছাড়া বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া লোকসঙ্গীতের রেকর্ড শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছিল। আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (১৯০১-১৯৫৯), শচীন কর্তা/শচীন দেব বর্মণ, (১৯০৬-১৯৭৫), কেদার চক্রবর্তী, হরিশ পাল, টগর অধিকারী (১৯১৪-১৯৭২), নির্মলেন্দু চৌধুরী (১৯২২-১৯৮১), অমর পাল (১৯২২-২০১৯), আব্দুল আলীম (১৯৩১-১৯৭৪), অংশুমান রায় (১৯৩৬-১৯৯০), পুর্ণদাস বাউল, কৃষ্ণা চক্রবর্তী ও অন্যান্য শিল্পীদের কন্ঠে বাংলার লোকসংগীত ১৯৪৭-পরবর্তী ভারত ও বাংলাদেশ (পূর্ববাংলা/পূর্ব পাকিস্তান) উভয় দেশেই বহুল প্রচলিত হয়েছিল।

এদের মত স্বনামধন্য শিল্পীর প্রচেষ্টা বাংলার কৃষক ও মাঝি-মাল্লাদের সুরকে ভদ্র সমাজের ‘সংগীত জলসা’ ও ‘ড্রয়ংরুমে’ পৌঁছে দিয়েছিল। শচীন কর্তার “তোরা কে যাসরে ভাটি গাঙ বাইয়া”, “কালো সাপে দংশে আমায়” ও “আমি টাকডুম টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল” এর মতো আব্বাস উদ্দিনের গাওয়া “ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে” “নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে”; প্রতিমা বরুয়ার (১৯৩৪-২০০২) গোয়ালপাড়িয়া গান, অমর পালের ভাটিয়ালি ও ভক্তিসংগীত, আব্দুল আলীমের গাওয়া “নবী মোর পরশমনি” বা নীনা হামিদের কন্ঠে “আমার সোনার ময়না পাখি” ও ফরিদা পারভীনের গাওয়া “লালন ফকিরের গান”’ স্বপ্না চক্রবর্তীর গলায় “বড়লোকের বেটি লো” বা “বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা”, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ও রথীন্দ্রনাথ রায়ের গাওয়া পল্লীগীতি এবং বাংলার আরোও অনেক লোকসঙ্গীত উপমহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের দরবারে ঠাই পেয়েছে। একইসঙ্গে বাংলা লোকসঙ্গীতের সুরের সঙ্গে উপমহাদেশের অন্যান্য লোকসংগীতের সুরের মিশ্রণ ঘটিয়ে বাংলার মেঠো সুরকে জনপ্রিয় করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন অনেকেই। তাই হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও ভুপেন হাজারিকার (১৯২৬-২০১১) প্রচেষ্টায় ‘ভাটিয়ালি’ ও ‘বিহুর’ মিশ্রনে সৃষ্ট ‘রাধা-রংমন’ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিল।

লক্ষ করার বিষয় হলো বিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে হিন্দি বা বাংলা সিনেমায় যেমন পাশ্চাত্য সংগীতের বহু সুর ব্যবহৃত হয়েছে তেমনি বাংলার লোকসংগীতের সুরও ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সিনেমায় ব্যবহার করেছেন অনেক স্বনামধন্য সংগীত ও চিত্রপরিচালক। শচীন দেব বর্মণ, সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২), ঋত্বিক কুমার ঘটক (১৯২৫-১৯৭৬) ও সদ্য প্রয়াত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (১৯৪৪-২০২১) বাংলার বিভিন্ন জেলার লোকসঙ্গীতকে সিনেমায় ব্যবহার করে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। ঋত্বিক ঘটকের সিনেমায় ব্যবহৃত “নৌকার ভারে গঙ্গা বোঝাই”, “লীলাবালি লীলাবালি ভর যুবতী” বা “নামাজ আমার হইল না আদায়” এর মতো গানে যেমন পূর্ববঙ্গের সুর বেজে ওঠেছে তেমনি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সিনেমায় “কালো জলে কুচলা চলে” বা “ফুল গাছটি লাগাইছিলাম” এর মত গানগুলিতে শোনা যায় রাঢ বাংলার ঝুমুরের মূর্চ্ছনা।

তবে বিশ শতকের শেষ দশক থেকে বাংলা লোকসংগীত একটা আলাদা একটা মাত্রা পেতে শুরু করেছে। বাণিজ্যিক সিনেমায় লোকসঙ্গীতের ব্যবহার করার প্রবণতা যেমন বেড়েছে তেমনি বিভিন্ন ‘বাংলা ব্যান্ড’ লোকসঙ্গীতকে নতুন করে পরিবেশন করতে শুরু করেছে। ফলে লালন ফকির, রাধারমণ দত্ত, হাসন রাজা, শাহ আব্দুল করিম ও অন্যান্য গীতিকারদের রচিত গান এবং প্রচলিত পল্লীগীতি আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে সাবেকি বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণে এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। ‘বিসর্জন’ ও ‘প্রাক্তন’ সিনেমায় ব্যবহৃত গানগুলি একটু মন দিয়ে শুনলে এ বিষয়টি সহজেই হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব।

একুশ শতকের গোড়ায় সরকারি টেলিভিশন ছাড়াও ব্যক্তিগত মালিকানায় পরিচালিত বিভিন্ন চ্যানেলগুলো লোকসঙ্গীতের প্রচারে সহায়ক হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেরই টিভি চ্যানেলগুলোর পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনের সংগীতের অনুষ্ঠান হারিয়ে যাওয়া লোকসংগীতকে নতুন আঙ্গিকে শ্রোতাদের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন ধারাবাহিকেও বাংলার লোকসঙ্গীতের ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে। একই সঙ্গে নজরুল ইসলাম বাবু, মমতাজ, স্বপন বসু, সুখবিলাশ বর্মা, অভিজিৎ বসু, সুভাষ চত্রবর্তী, সাত্যকি ব্যানার্জি, সৌরভ মনি ও তাঁদের মতো অনেক শিল্পী ও শ্রষ্ঠা বাংলা লোকসঙ্গীতের এই নতুন অধ্যায়কে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তবে এই নতুন অধ্যায় শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। লন্ডন, ওয়াশিংটন, ইউরোপ, আমেরিকা ছাড়াও মধ্য এশিয়ার শিল্পীও তাঁর মতো করে আজ “ভ্রমর কইয়ো গিয়া” গেয়ে ওঠেন।

বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবস্থার দ্রুত বিকাশ ও ইউটিউবের মতো ডিজিটাল প্লাটফর্মের সৌজন্যে বাংলার লোকসংগীতগুলো অতি দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে সারা পৃথিবীর বাঙালীদের মধ্যে। সামাজিক গণমাধ্যমও এই কাজে সদর্থক ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাই বাংলা লোকসংগীতের আদলে সৃষ্ট (ভাটিয়ালী, সিলেটি, ভাওয়াইয়া, ঝুমুর, বাউল, ইত্যাদি) গানগুলো শোনা যাচ্ছে পৃথিবীর সর্বত্র।

এ প্রসঙ্গে লক্ষণীয় যে তাৎক্ষণিকভাবে জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে ওঠা আধুনিক ঘরানার লোকসংগীতগুলো দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। এই গানগুলির রেকর্ড বা ভিডিওতে অনেক ক্ষেত্রেই মূল গীতিকার, গায়ক ও সুরকারের নাম গোপন থেকে যাচ্ছে। ফলে শাহ আব্দুল করিম, রতন কাহার, হরিরাম কালিন্দী, পন্ডিত রামকানাই দাশ, ধনেশ্বর রায় ও তাঁদের মতো অনেকেই দৃষ্টির অগোচরে থেকে যাচ্ছেন। তবে আশার কথা এই যে, বাংলা লোকসংগীত আজ বিশ্বায়িত পণ্যে পরিণত হয়েছে যা বিশ্বের যে কোনও সংগীত ঘরানারা সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে!

ড. রূপ কুমার বর্মণ, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও আম্বেদকর চর্চা কেন্দ্রের সমন্বয়ক।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;