সিঙ্গাপুর টু ইন্দোনেশিয়া: প্রমোদ তরীতে ভাসার গল্প



মোস্তফা মহসীন
সিঙ্গাপুর টু ইন্দোনেশিয়া: প্রমোদ তরীতে ভাসার গল্প

সিঙ্গাপুর টু ইন্দোনেশিয়া: প্রমোদ তরীতে ভাসার গল্প

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের প্লেন যখন চাঙ্গি এয়ারপোর্টে নামলো, তখন দূর থেকে যেন ডাক দিলো কোনো ঘনিষ্ঠজন নয়, এক জমকালো খয়েরি সন্ধ্যা!

উড়ানযাত্রায় রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের আতিথেয়তা খারাপ বলবো না। মধ্য এপ্রিলের সেই সন্ধ্যায় তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বেশ সহনীয় বলেই মনে হলো। তবে ঝকঝকে চাঙ্গি এয়ারপোর্টটাকে বিশালতার ব্যাপ্তিতে দুবাই এয়ারপোর্টের মতো বড় মনে হলো না। বেশ ছিমছাম, গোছানো মনে হলো।

দুই বাংলাদেশিকে দেখে সুদর্শন ইমিগ্রেশন অফিসার জানতে চাইলেন, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা কিনা? আমরা ভিজিটর হিসেবে ঘুরতে এসেছি শুনে পাসপোর্ট চেক করলেন যথারীতি। ডাবল এন্ট্রি ভিসা দেখে আবারও জিজ্ঞাসা, অন্যদেশে যাব কিনা? ’জ্বি, যাওয়ার ইচ্ছা আছে’ শুনেই পাসপোর্ট কর্তার দমাদম সিলমোহর। যাত্রাসঙ্গী বন্ধু ইমনের বিশ্বজয়ের ভুবনভোলানো হাসি দেখে মনে হলো; যেন লি কুয়ান নয় এই মুহূর্তে সেই দেশটির জাতির পিতা!

ফিলিপাইনের ছাত্রদের সাথে

ট্যাক্সি খুঁজতে গিয়ে বড়সড় লাইনে দাঁড়াতেই দুজনে বুঝে নিলাম, কাকে বলে জগতে শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন! এবারে আমাদের গন্তব্য লিটল ইন্ডিয়ায়। যেখানে মূলত টুরিস্টদের থাকার জন্য তুলনামূলক সাশ্রয়ী অগুণতি হোটেল রয়েছে। সিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ হলেও বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশের তালিকায় অনেক আগেই নিজের নাম খোদাই করেছে।

সেই রাতে ডিনার করতে বেরুলাম, বাঙালিদের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত মুস্তফা সেন্টারে। চীনা, মালয়, ভারতীয়দের মুখাবয়ব দেখতে দেখতে, ভিন্ন ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির বিষয়টি সামনে এলো। সিঙ্গাপুরে প্রায় ৭৫ ভাগই চীনা বংশোদ্ভুত, ১৪ ভাগ মালয়। কিন্তু আচরণে মনে হলো ওরা সিঙ্গাপুরিয়। একটাই জাতি। আমাদের দেশে যেমন আদিবাসীরা  পাহাড়ে বসবাসে আগ্রহী, মূলধারায় মিশতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না; সিঙ্গাপুরে কিন্তু তেমন নয়। আদিবাসী মালয়রা সেখানে বরং মূলধারায়  বসবাস করে একধরনের তৃপ্তিবোধ করেন।

ডিনারের পাশাপাশি অভিবাসীদের কাছ থেকে সিঙ্গাপুরের কোন জায়গা কেনাকাটা-ঘুরাঘুরির জন্য উৎকৃষ্ট, সে সম্পর্কে ধারণা পেলাম। ’হোটেল ডিকশন’ মাঝারি মানের হোটেলে হলেও প্রভাতে বুফ্যে ব্রেকফাস্ট ছিলো ফ্রি। সেখানে বেশ ক‘জন বাংলাদেশি পর্যটকের সাথে সৌজন্য বিনিময় হলো। এদেরই একজন শরিয়তপুরের নাঈম শেখ। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এই ভদ্রলোকের কাছে জানা গেল, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যয়বহুল হলেও ফলদায়ক। প্রচুর বাংলাদেশি, নেপালি, শ্রীলঙ্কান ছাড়াও পাশ্বর্বতী থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম থেকে লোকজন প্রতিদিনই এখানে ছুটে আসছেন।

বাটাম আইল্যান্ড

পরদিন সকালে আবার শহরটি ঘুরে ঘুরে দেখি, এখানে রাস্তায় কোনো রাবিশের সন্ধান পেলাম না। রাস্তায় সিগারেটের বাট ফেলে দিয়ে ধরা পড়লে ১০ ডলার গুণতে হয় জরিমানা। মেট্রোতে চড়ে রওনা দিই, সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় নাগোরদোলা ‘সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার’ দর্শনে। এর অবস্থান মেরিনা বে। এটাকে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে উচুঁ নাগরদোলা বা ফ্যারিস হুইল, যার মাধ্যমে আপনি পুরো সিঙ্গাপুর শহর দেখতে পাবেন। আর আপনি চাইলে নাগোরদোলাতে অবস্থানকালীন আপনার ডিনারটাও সেরে নিতে পারেন! ছোটবেলা ভাবসম্প্রসারণে পড়েছি, ‘অর্থই অনর্থের মূল’! এখন দেখছি; অর্থ থাকলে এ যুগে আর  কোনো কিছুই সাধ্যাতীত নয়!

চীনে কখনো যাইনি, কিন্তু এখানে এসে দেখা হচ্ছে প্রচুর চীনা মুখ। অতঃপর দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতেই যেন ঢুকে পড়ি ‘চায়না টাউনে’। যতোই দেখছি, চীনাদের প্রভাব দেখে ততোই শিহরিত আমি, কি নেই ওখানে? চীনের ঐতিহ্যবাহি খাবার থেকে শুরু করে নান্দনিক সব পোশাক, উজ্জ্বল লাল লণ্ঠন সবই দেখছি সহজলভ্য। জনশ্রুতি, পৃথিবীর বুকে এখানেই প্রথম চীনারা বসতি স্থাপন করে।

সিঙ্গাপুর এক জলঘেরা দ্বীপদেশ। উত্তরে মালয়েশিয়াকে পৃথক করা জোহর প্রণালী, দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়ার বাটাম দ্বীপকে পৃথককারী সিঙ্গাপুর প্রণালী, পশ্চিমে মালাক্কা প্রণালীর দক্ষিণ মুখ আর পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ ঘিরে রেখেছে এই অনিন্দ্য সুন্দর দ্বীপ দেশটিকে। প্রভাবটা আসলে দক্ষিণ চীন সাগরেরই। তাই সিঙ্গাপুরে বেড়াতে এসে আপনি জলে ভাসবেন না; এটা হয় নাকি?

সিঙ্গাপুরে নিজ হোটেলের পাশে

এক জায়গায় জলের রঙ গাঢ় নীল, আরেক জায়গায় টারকোয়েজ ব্লু। মনে হলো, মরুভূমিতে যেমন মরীচিকা ধাঁধা লাগিয়ে দেয় পর্যটকদের, এখানেও ঠিক তেমনই। আমরা ভাসছি জলে। সিঙ্গাপুর থেকে ফেরি ছেড়েছে সেই সাত সকালে। প্রথমে মেট্রোতে চেপে আমরা আসলাম সোজা হারবারফ্রন্টে। এখান থেকেই যাচ্ছি, বালি এবং জাকার্তার পর ইন্দোনেশিয়ার তৃতীয় ব্যস্ততম প্রবেশদ্বার বাটাম দ্বীপ দর্শনে। ইন্দোনেশিয়ার সাথে রয়েছে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। সেই কারণে বাংলাদেশিদের জন্য রয়েছে অন-অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা।

একপাশে সানতোসা আইল্যান্ড, অন্যপাশে সিঙ্গাপুর সমুদ্র-বন্দরকে সাক্ষী রেখে আমাদের চোখ আটকে যাচ্ছে সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে। বন্দরের দিকে জাহাজ ভিড়তেই দেখি, পাহাড়ের বুকে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘ওয়েলকাম টু বাটাম’। কেন বাটাম এতো বিখ্যাত? কেন প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের প্রাণের স্পন্দনে ১০ লাখ মানুষের শহর বাটাম আলোড়িত হয়? কারণ একটাই, অধুনা ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর এই ত্রিবিধ দেশের উৎপাদনের ভিত হিসেবে ধরা হচ্ছে বাটাম দ্বীপকে। বাটাম চীনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমতুল্য। পরিকল্পিতভাবে এখানে রাখা হয়েছে ব্যবসা এবং বিনোদনের সুব্যবস্থা।

ইন্দোনেশিয়া ধনী দেশ না হলেও তাদের ইমিগ্রেশন সিস্টেম আমাদের চাইতে উন্নত আর দ্রুততর। আরো একবার পাসপোর্টে সিল। ভ্রমণ তালিকায় যুক্ত হলো ভিসামুক্ত একটি দেশ। কোনো ক্যামেরা নয় চোখের পলকে ধারাবাহিকভাবে নজরবন্দী করছিলাম, ইনফরমেশন সেন্টার, মানি এক্সচেঞ্জ, ফাস্টফুডের দোকান, প্রসাধনীর দোকান, সঙ্গে চমৎকার দেহবল্লরির অধিকারী গুচ্ছ গুচ্ছ তরুণী। ক্ষিদের জ্বালায় সঙ্গীর উসখুসের ভেতরেই কিনা গুচ্ছ গুচ্ছ তন্বি তরুণীরা পালালো!

ইন্দোনিশার তরুণী ইউহানা পারদানার সাথে লেখক

কয়েকটি ফুড কোর্টে খানিকক্ষণ উঁকি মেরে একটিতে ঢুকলাম। ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় ব্রেকফাস্ট ‘নাসিং গোরিং’। ভাতের সঙ্গে পছন্দ অনুযায়ী ভাজা মাছ অথবা ডিম পোচ। ব্রেকফাস্ট বিল ১ লাখ ২৫ হাজার ইন্দোনেশিয়ার রুপি!  শুনে আঁতকে ওঠার কিছুই নেই; ওখানে টাকার মান এমনই। ১ বাংলাদেশি টাকার বদলে আপনি পাচ্ছেন ১৬৫ ইন্দোনেশিয় রুপিয়া।

কফির চুমুকে তৃপ্ত হয়ে ইনফরমেশন সেন্টারে চোখ রাখি। পরনে জিন্স, কুর্তা, তার সঙ্গে ম্যাচিং করানো ক্রিস্ট্রাল বসানো মাথার স্কার্ফ; নাম তার ডিয়ান পেলেঙ্গি। পুলক জাগানো হাসিতে ভদ্রমহিলা সম্ভাষণ জানালেন। বাংলাদেশি শুনে সাশ্রয়ী প্যাকেজে ডে ট্যুরের ব্যবস্থা করে দিলেন। পেয়ে গেলাম সিঙ্গাপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডি টুরে আসা ভিন্ন ভিন্ন দেশের ছাত্রদের সাথে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের নিশ্চয়তা। ভাবছি, মিনিবাসে চড়ে একদিনেই শহরটা প্রদক্ষিণ কিভাবে সম্ভব? ওইদিকে বাসের ভেতরে চলছে হরদম বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের হল্লা, গান, খুনসুটি, র্যা ফেল ড্র... আর কিছু সময় পরপর গাইডের ইংরেজি ভাষায় পরবর্তী স্পটের স্থাপত্যকীর্তি গাথা‘র বর্ণনা।

এরপরেই গাইড নিয়ে গেলেন, বাটামের অন্যতম প্রধান ‘মসজিদ রায়া’। এর সারাদেহ আছড়ে পড়ছে চমৎকার কারুকার্য শোভিত শিল্পের বুনোট। পিরামিড আদল। একসঙ্গে ভেতরে সাড়ে তিন হাজার আর বাইরে ১৫ হাজার মুসল্লি এখানে নামাজ আদায়ে সক্ষম। এরপর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ‘দুতা বৌদ্ধ মন্দির’ দেখবার পালা। বারবার নৈঃশব্দের ভেতর দিয়ে জেগে ওঠছি, আর দেখছি কী করে বৌদ্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা মেতে ওঠেন আরাধনায়? মনোলোকে প্রার্থনার সুর-ছন্দ মগ্নতর করার জন্যই বুঝি কিছু সময় নিভিয়ে রাখতে হয় দু‘চোখের পাতা!

বাটাম দ্বীপ

কোনো কোনো মূর্তির গায়ে ফুলের মালা, আশপাশে জ্বলছে প্রদীপ আর ধুপ-ধোনা। এখানেই গাইড জানালেন, বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী এক বৌদ্ধ দেবতা। যারা এর পুজা করেন, তারা জ্ঞান, উত্তম স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব এবং বাগ্মিতা লাভ করেন। বয়সে চল্লিশ ঊর্ধ্ব গাইড উইরানতো দুদো, মিশুক আর বাকপটু। সদালাপী মানুষটি জানালেন, চাকরি জোগাতে ব্যর্থ হয়ে এখন পর্যটকদের আনন্দদানই তাঁর পেশা এবং একমাত্র নেশা। এখানকার ক্যাথলিক চার্চ, রিসোর্ট, শপিংমল, ম্যাসেজ পার্লার কোনো কিছুই দেখানোর বাদ রাখলেন না।

ম্যাসেজ পার্লারে এক ঘণ্টার ঐচ্ছিক ম্যাসেজ, যা প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত। শরীর মর্দনের পর দেওয়া হলো ইন্দোনেশিয় বিখ্যাত শরবত। তারপর গাইডের নির্দেশনায় আমরা ছুটলাম ‘বেরেলাঙ সি ফুড’ রেঁস্তোরায়। ভারত মহাসাগরের নীল জলরাশির উপর ভাসছে পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রেঁস্তোরা। রাজদরবারের মতোই লম্বা টেবিল। প্রতিটি টেবিলেই ইন্দোনেশিয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া, সারি সারি ফুলের টব, শিল্পকর্ম। থরে থরে সাজানো প্লেট, গ্লাস ও চামচ। ‘জিলবুবস’ আর আঁটসাঁট পোশাকে মেহমানদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন নারী পরিবেশকরা। এখানকার নারীদের ফ্যাশন ট্রেন্ড ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিশেষায়িত। খ্রিস্টান আর বুদ্ধিস্টরা পরিধান করেন বাহারি মিনি স্কার্টের সঙ্গে ডেনিম শার্ট বা সলিড কালারের টপ।

গভীর সমুদ্রে জেলেরা যেমন জাল থেকে তুলে আনা মাছ রেঁধে খায়, তেমনই তরতাজা আর দক্ষ পাচকদের তৈরি আহার পরিবেশন করা হলো। ওদের চেষ্টা সম্ভবত সি ফুড যেন তার নিজস্ব স্বাদ হারিয়ে না ফেলে। আড়ম্বরপূর্ণ লাঞ্চ সেরে মনে হলো, নীল ঝিনুকের শাঁস, মুচমুচে হাড়ের কাঁকড়া, ফ্রায়েড রাইস, নানা জাতের ইন্দোনেশিয় ইয়োগার্ট আর সালাদ বহুকাল জিহ্বার স্মৃতিতে লটকে থাকবে!

চাঙ্গি এয়ারপোর্ট

খাওয়া-দাওয়ার পর বাস ছুটলো কিছুটা রিমোট এরিয়ার দিকে, নিও কোস্টারিনা অভিমুখে। বিশাল এই অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ঘুরতে ঘুরতে বাঘ, সিংহ, ঘোড়া, সাপ, গরু, মোরগসহ অনেক প্রাণীদের স্ট্যাচুর সাথে বন্ধুত্বও হয়ে গেল। সঙ্গে বোনাস হিসেবে পাওয়া উপজাতিদের সার্কাস আর ক্রীড়াশৈলিতেও মনটা নড়েচড়ে ওঠলো।আর ঠিক সে সময়টাতেই চোখ খুঁজে পেল সার্কাস রিং এর বাইরের মধ্যমণিকে।খোলা আকাশের নীচে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুর দিকেই ধাবিত হলাম।তিনিও সাড়া দিলেন। নাম ইউহানা পারদানা । তিনি এসেছেন রাজধানী শহর জাকার্তা থেকে। লক্ষ্য করলাম, হাস্যোজ্জ্বল, সদালাপী এই তরুণি ইসলামী মূল্যবোধকে যেমন  ধারণ করছেন  পোশাকে ঠিক তেমনই মার্জিত আচরণেও।তাঁর মা ছিলেন যাত্রাসঙ্গী অথচ আমি ভেবেছিলাম বড়বোন!এদেশে মা এবং কন্যার বয়সের ফারাক ধরাটা বেশ দুঃসাধ্য। মা জানালেন, তরুণীটি সেখানকার আইএনটিআই ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন।

এবারে তরুণি ইউহানা পারদানা বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ কৌতুহলী হয়ে ওঠলেন। নিজের জ্ঞানের ঝুঁলি থেকে আগ বাড়িয়ে জানালেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম শেখ হাসিনা আর বিরোধী দলের নেতার নাম খালেদা জিয়া।বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়ার ভালো বন্ধু,সেজন্য বাংলাদেশে বেড়াতেও আসতে চান। গল্প শুনতে শুনতে তরুণির দাঁড়িয়ে থাকাটা এতোক্ষণ উপভোগ্য ছিল কিন্তু এখন আমাকে বসতে অনুরোধ করায় মনের ভেতর ধুকপুকানি টের পাই!অতঃপর ভেতরে পরম স্বস্তির স্বাদও এনে দিলো;যখন তিনি বিজয়ের প্রতীক ভিক্টোরি চিহ্ন দেখিয়ে আমার সাথে ফটোখানা তুলেই ফেললেন!

গাড়ি ছুটছে ঘড়ির পেন্ডুলামের সাথে তাল মিলিয়ে। এরপর গাইড বেশ দৃঢ়তার সাথেই বললেন, জাপান সূর্যোদয়ের দেশ হলে, ইন্দোনেশিয়া কেন নয় সূর্যাস্তের? তাঁর বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করতেই কিনা ধার্য হলো; ‘বেয়ারল্যাং ব্রিজ’-এ  দেখা যাবে আজকের সূর্যপতন!

বেয়ারল্যাং ব্রিজ

সেতু জীবনে অনেকবারই দেখেছি, কিন্তু ‘বেয়ারল্যাং ব্রিজ’ নামের ঝুলন্ত সেতু দেখে তো আমাদের চোখ ছানাবড়া! এ যে শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য! পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে আছে সবুজের সমারোহ, সাগর সৈকত এবং ঝুলন্ত সেতু! কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরতে হবে বাটাম সেন্টার। ধরতে হবে সিঙ্গাপুর ফিরে যাবার ফেরি। পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম দেশ অথচ ধর্ম-সংস্কৃতি-জীবানাচরণে কতো না ধর্মনিরপেক্ষ। এখানে যেমন ক্যাথলিক চার্চ আছে তেমনি আছে স্থাপত্যকীর্তিতে অনন্য সব সুন্দর মসজিদ। আছে প্যাগোডা আর মন্দির এবং আছে রাস্তাজুড়ে বহাল তবিয়তে কৃষ্ণ, গণেশ, কার্তিক, হনুমানসহ অনেক দেব-দেবীর মূর্তি।এ থেকেই বুঝা যায়, পরমত ও পথকে ইন্দোনেশিয়রা কতোটা শ্রদ্ধা করেন। আসলেই একটি সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গড়তে প্রয়োজন ধর্মীয় বহুত্ববাদ যা কিনা একটি গণতান্ত্রিক সমাজেরও ভিত্তি; ইন্দোনেশিয়ায় না আসলে কোনোদিনই সেই উজ্জ্বল মহিমাটুকু উপলব্ধি করা যেতো না।

বাইরে হইচই, ঠোকাঠুকির শব্দ।বিশাল যাত্রীদল থেকে দলছূট ফিলিফিন্সের কলেজ পড়ুয়া ছাত্রর-ছাত্রীরা, একে একে বিশাল ছাউনির তলায় এসে জড়ো হলেন। তারা একটা গ্রুপ এখানকার হোটেলেই রাত্রি যাপন করবেন। বিদায় জানাতে গিয়ে অবসন্ন উইরানতো দুদো, কোলাকোলি ভঙ্গিতেই যেন আমাকে নিজ হৃদয়ে অন্তর্লীন করে নিলেন!

সকলের মুখজুড়ে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ঠ তবু বিদায়ের বিষন্নতায় কারো কারো চোখ দুটো ছলোছলো। আকম্পিত।

হঠাৎ দেখা শ্বাসরুদ্ধকর স্থিরতাগুলো গোধূলির আলোর পথেই হারিয়ে গেল। আমার মাথাটা ছুঁয়ে একটা ঘাসফড়িং উড়াল দিলো অজানা সৌন্দর্যের পথে…আমরাও টুরিস্ট বাসে ওঠে পড়লাম বিড়ালের মতো শান্ত পদক্ষেপে। ধরতেই হবে সিঙ্গাপুর যাত্রার শেষ ফেরি। ল্যাম্পপোস্টের ঝিলিমিলি আলো ফেলে হাইওয়ের রাস্তায় বাস ছুটছে কী এক দুরন্ত গতিতে… সঙ্গে চারপাশের গাছপালাও হেলছে-দুলছে। হৃদসরোবরে তখনো সতেজ ইন্দোনেশিয়ায় একটি অসাধারণ গ্রীষ্ম দিন কাটানোর মুহূর্ত।সেই মানসিক আনন্দের তৃপ্তিতেই কিনা আকাশের মেঘ গুড়ো গুড়ো হয়ে বাতাসের উপর ঢেউ রচনা করলো! উপরে সন্ধ্যাতারার শ্যেনচক্ষু! বাসের জানালায় সে কি ঝড়ের মাতম!

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;