ঢাকা অভিমুখে ছুটছে অ্যাম্বুলেন্স



আনিসুর বুলবুল
গ্রাম থেকে ছুটছে ঢাকায়, মহাসড়কে বাজছে সাইরেন। ছবি: মো. হাসান, বার্তা২৪

গ্রাম থেকে ছুটছে ঢাকায়, মহাসড়কে বাজছে সাইরেন। ছবি: মো. হাসান, বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজ চেকপোস্ট এলাকায় ডিউটি করছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ সার্জেন্ট মুহাম্মদ সোহরাব হুসাইন। তিনি বললেন, আজ আবহাওয়া খারাপ থাকার পরও একটু পর পরই সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলো ঢাকা অভিমুখে ছুটছিল। সবগুলোর ভেতরেই রোগী-স্বজন। সবার মুখেই আতঙ্কের ছাপ।

শুধু রাজধানীর এই বছিলা ব্রিজ চেকপোস্ট নয়, ঢাকার প্রবেশদ্বার গাবতলী, ডেমরা, আব্দুল্লাহপুর ও সাইনবোর্ড এলাকার চেকপোস্টেরও একই অবস্থা। দেশের বিভিন্ন স্থানে থেকে সাইরেন বাজিয়ে রাজধানী অভিমুখে ছুটে আসছে অ্যাম্বুলেন্স। ছুটে আসছেন মুমূর্ষু রোগীরা। এসব রোগীদের বড় অংশ করোনা আক্রান্ত। তবে কিডনি, হার্ট ফেইলিওরসহ অন্যান্য রোগীও ছিলেন।

 

ঢাকায় কোভিড রোগী আসছে বেশি বাইরে থেকে। ছবি: বার্তা২৪

 

আজ শুক্রবার (৩০ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজধানীর সাইনবোর্ড চেকপোস্ট এলাকা পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছে ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স, বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের বছিলা চেকপোস্ট পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছে ১২টি অ্যাম্বুলেন্স, দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত গাবতলী চেকপোস্ট দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছে প্রায় ২৫টি অ্যাম্বুলেন্স।

সঙ্কটাপন্ন বা গুরুতর রোগীরা জেলা বা বিভাগীয় শহরে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ছুটে আসছেন ঢাকায়। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স এসে রাজধানীর কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর সামনে করছে ভিড়। ঢাকার সরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই। বাইরে থেকে ঢাকায় এসে রোগীরা ঘুরছেন সেই অ্যাম্বুলেন্সে অ্যাম্বুলেন্সে। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। হাসপাতালগুলো রোগীতে ঠাসা। আগের রোগী ছাড়া পেলেই কেবল নতুন রোগী ভর্তি সম্ভব। চিকিৎসকরাও রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

 

শহরে-গ্রামে এখন শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। ছবি: বার্তা২৪

 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দেশের অর্ধেক জেলায় আইসিইউ নেই। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা বিরাজ করছে। বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে রোগী। অনেক হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে। রোগীরা জেলা-উপজেলায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ঢাকায় ছুটছে। সারাদেশ থেকে এভাবে ঢাকায় রোগী আসা অব্যাহত থাকলে সামনে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে।

মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজ চেকপোস্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সার্জেন্ট সোহরাব হুসাইন বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি অ্যাম্বুলেন্সের যাতায়াত চোখে পড়ছে। আজ শুক্রবার আবহাওয়া খারাপ থাকার পরও বসিলা চেকপোস্ট দিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টায় ১২টি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। 

তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগেও (বিকাল ৫টা) আব্দুল জলিল (৬৮) নামের একজন কোভিড রোগীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালের উদ্দেশে যেতে দেখেছি। তাকে নবাবগঞ্জ মুক্তি ক্লিনিক থেকে রেফার্ড করেছে। তার অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না।

 

রোগী নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এইসব অ্যাম্বুলেন্স আসে কাঙ্ক্ষিত হাসপাতালে। ছবি: বার্তা২৪

 

এদিকে বার্তা২৪-এর ফটোগ্রাফার মো. হাসান বলেন, মাত্র তিন ঘণ্টায় ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখেছি। আর কয়েকটি ঢাকা ছেড়ে যেতে দেখেছি। সবগুলোর মধ্যেই রোগী ছিলেন। এদের মধ্যে আল-আমিন (৩৫) কুমিল্লা থেকে ঢাকা মেডিক্যালের উদ্দেশে এসেছেন, কাকলি (২৯) ফেনী থেকে মুগদা হাসপতালের উদ্দেশে আর বকুল (৪৫) সোনারগাঁ থেকে ঢাকা মেডিক্যালের উদ্দেশে এসেছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মিরপুর, ভাষাণটেক, ধানমন্ডি, আসাদগেট ও শ্যামলীর সড়কে বের হলেই চোখে পড়ছে রোগী অথবা লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল। এসব এলাকায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সামনেও অ্যাম্বুলেন্সের উপস্থিতি বেড়েছে। এসব এলাকার বাসা থেকেও অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ শোনা যায়।

উত্তর ভাষাণটেকের বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সেলিনা আফরোজ বলেন, রাস্তার পাশেই বাসা। আগে এতো অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ কানে আসতো না। এখন এতো এতো শব্দ কানে আসে যে মাঝে মধ্যে আঁতকে উঠতে হয়। গভীর রাতে সাইরেনের শব্দকে মনে হয় অ্যাম্বুলেন্স কান্না করছে।

 

সাইরেন বাজিয়ে ছুটে মুমূর্ষু রোগীরা। ছবি: বার্তা২৪

 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব এনেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, করোনা রোগীদের আইসিইউ পর্যন্ত যাতে যেতে না হয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা সঠিক সময়ে পেলে করোনা রোগীদের আইসিইউয়ের কোনো প্রয়োজন হয় না। বর্তমানে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত হাসপাতালগুলো পুরোপুরি সচল থাকলে করোনা রোগীদের উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। তবে জনবল সংকটে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা বিরাজ করছে। জনবল নিয়োগ নিয়ে এগুলো সচল করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, মে মাসের মাঝামাঝি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি সীমান্ত জেলাগুলোতে লকডাউনের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি। এরপর ধাপে ধাপে বিস্তার ঘটিয়ে সংক্রমণ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ঈদের সময় বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। এতে সংক্রমণের আরও বিস্তার ঘটে। এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজারের ওপরে আক্রান্ত এবং দুইশর বেশি রোগী মৃত্যুবরণ করছেন। হাসপাতালে শয্যা মিলছে না। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। সুতরাং জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে চিকিৎসাসুবিধা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।

 

জেলা বা বিভাগীয় শহরে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে রোগী আসছে ঢাকায়। ছবি: বার্তা২৪

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে হাসপাতালে রোগীর শয্যা পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়বে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হলে আগামী ১০ দিনে সংখ্যাটি দেড় লাখ হবে। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়লেও শয্যা দেওয়া সম্ভব হবে না। তখন ভারতের মতো অবস্থার সৃষ্টি হবে। রোগী বাড়লে চিকিৎসা না পেয়েই হয়তো মৃত্যুবরণ করতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে ৭৫ শতাংশের মতো শয্যা পূরণ হয়ে গেছে। রোগী বাড়তে থাকলে বাকি শয্যাও পূর্ণ হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ করা। সেটি না হলে বিপর্যয় ঘটতে পারে।

দেশে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০ হাজার ২৫৫ জন মানুষ। এরমধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৭৫০ জন এবং মহিলা ৬ হাজার ৫০৫ জন। যা অদ্যবধি শতকরা হিসেবে যথাক্রমে ৬৭.৮৮ শতাংশ ও ৩২.১২ শতাংশ। করোনা আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে ৯ হাজার ৩৪৯ জন। এরপর চট্টগ্রামে ৩ হাজার ৭৫৩ জন, খুলনায় ২ হাজার ৬৯০ জন, রাজশাহীতে ১ হাজার ৫৬১ জন, রংপুরে ১ হাজার জন, সিলেটে ৭৩৬ জন, বরিশালে ৬৩৫ জন এবং ময়মনসিংহে ৫৩১ জন।

এছাড়া দেশে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২৬ হাজার ২৫৩ জন। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগের বাসিন্দাই ৭ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৬ জন। এরপর চট্টগ্রামে ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৩৪ জন, খুলনায় ৯১ হাজার ৪০০ জন, রাজশাহীতে ৮১ হাজার ৪৩৯ জন, রংপুরে ৪৩ হাজার ৯ জন, সিলেটে ৩৭ হাজার ৮২৮ জন, বরিশালে ৩২ হাজার ১২৫ জন এবং ময়মনসিংহে ২৪ হাজার ৯৪২ জন।

   

সুন্দরবনের জল-জঙ্গলের রূপকথা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ওপাড়ে ঘন বন জঙ্গল, মাঝখানে শিবসা নদী আর এপাড়ে বাঁধের ধারের জমিতে সারিবদ্ধ ঝুলন্ত বাড়ি। জঙ্গলে হেঁটে বেড়ায় চিত্রা হরিণ, নদীর ডাঙ্গায় দেখা মেলে ভোঁদরের। সবুজভাব নদীতে ডিঙি নৌকায় জীবিকার সন্ধানে মাছ ধরে ঝুলন্ত বাড়ির বাসিন্দা। সবমিলে যেন জল-জঙ্গলের রূপকথা।

দৃশ্যটি খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ানের। এখানে জল-জঙ্গলের সঙ্গে মানুষের বসবাস। সুন্দরবনের সৌন্দর্য ও উপকূ্লের তাণ্ডব সহ্য করা নলিয়ানকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বার্তা২৪.কম-এর ফটো এডিটর নূর এ আলম।

শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রলয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এখনকার বাসিন্দারা এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর/ছবি: নূর এ আলম


নিজের বসতভিটা হারানোর পর ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ধারের জমিতে। সেখানেও ঘর বানানোর মতো আর মাটি অবশিষ্ট নেই। ফলে জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর।

এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে/ছবি: নূর এ আলম


তাই এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে। মোটামুটি মাঝারি ঝড় হলেই ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে। সুন্দরবনে জেলেরা দিনে রাতে মাছ ধরে, তারা দিন-রাতের হিসাব করে না।

 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরছেন জেলে/ছবি: নূর এ আলম


 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরেন তারা। কিনারা দিয়ে কাদায় হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


এরপরও নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে। অনেক জেলে ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন।

জেলেরা ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন/ছবি: নূর এ আলম


বর্ষায় শিবসার জলে ডুবে থাকা নলিয়ানের এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার জন্য এই ডিঙি নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।

শিবসা নদী/নূর এ আলম


নলিয়ানে উপকূলের বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করা চিত্র শুধু নয়, রয়েছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক প্রকৃতি। শিবসার অপার সৌন্দর্য।

গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি/ছবি: নূর এ আলম


নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ঘন গাছপালার সবুজ বন। যাতে চোখ জুড়িয়ে আসে।

হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ/ছবি: নূর এ আলম


যেখানে রয়েছে হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ। গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি, ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির। 

নলিয়ান পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গলের ভেতরে লোহার ব্রিজ/ছবি: নূর এ আলম


পর্যটকদের জন্য জঙ্গল ভেদ করে তৈরি করা লোহার ব্রিজ। পর্যটকরা সুন্দরবনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে এই ব্রিজে হেলেন দিয়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে নেয়।

জঙ্গলে হরিণ খুনশুটিতে ব্যস্ত/ছবি: নূর এ আলম


সুন্দরবনের প্যাঁচেপ্যাঁচে কাঁদায় হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা মিলে হরিণের দলের সঙ্গে। জঙ্গলে তারা তখন নিজেদের মধ্যে খুনশুটিতে ব্যস্ত।

মায়াবী চোখে তাকিয়ে হরিণ/ছবি: নূর এ আলম


এরই ফাঁকে মায়াবী চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখে দু’পা বিশিষ্ট মানুষের দিকে। আড় চোখে তাকায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা বানরের দলও। তারা সারাদিন বনে দৌড়ঝাঁপ করে।

বানরের দৌঁড়ঝাপ/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে।

নদীর তীরে দেখা মেলে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী ভোঁদরের/ছবি: নূর এ আলম


জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়।

 শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে। জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়/ছবি: নূর এ আলম

বড় বড় ঘূর্ণিঝড় যারা মোকাবিলা করা নলিয়ানের কাছে কুমির আর এমন কি! সব কিছু তোয়াক্কা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয় তাদের কাছে!

;

ইতিহাসে ২৮ মার্চ: বর্ণবাদের প্রতিবাদে কিংয়ের পক্ষে ২৫ হাজার মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

  • Font increase
  • Font Decrease

মানব ইতিহাস আমাদের অতীতের কথা বলে। আজ যা কিছু বর্তমান তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আমাদের অতীতের কারণেই। সেই অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়।  

আজ ২৮ মার্চ, ২০২৪। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখঅ যাবে, আজকে ঘটেছিল নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। জেনে নেয়া যাক, কি ঘটেছিল আজকের তারিখে!

*মার্টিন লুথার কিং ছিলেন বর্ণবাদের বিপরীত আন্দোলনকারী আফ্রিকান নেতা। ১৯৬৫ সালে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সমর্থন করে মিছিলে নেমেছিলেন আজকের তারিখে। এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে আলাবামায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার তৈরিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।    

*যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৯৭৯ সালে পানির পাম্প ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে চারপাশে তেজস্ক্রিয় বাষ্প এবং আয়োডিন ছড়াতে শুরু করে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৫০০ জন কর্মী এই বাষোপর সংস্পর্শে আসায় শারীরিক সমস্যার আশঙ্কায় ছিল। আমেরিকার জনগণ এই ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।  

*১৯৮৬ সালে অ্যাচেসন এবং লিলিয়েনথাল পারমারবিক শক্তি সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা উল্লেখ করেন তারা। ২৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের সেই রিপোর্টটি প্রকাশ করে।

*হিলসবোরো দুর্ঘটনায় প্রায় ১শ লোকের প্রায় গিয়েছিল ১৯৯১ সালে। শেফিল্ডে পিষ্ট হয়ে ৯৬ জন লিভারপুল ফুটবল সমর্থক নিহত হন। এছাড়া আরও দেড় শতাধিক ভক্ত আহত হন। এই বিপর্যয়ে আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট ছিল নিহতদের পরিবার। তাই, আজকের তারিখে তারা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল।

*১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ ১৯৩৯ সালের ২৮ মার্চ শেষ হয়েছিল।

;

তালপাতার পাখায় ঘোরে সংসারের চাকা



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। যা দেখে মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুরের কবিতা ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ বলছি বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের কথা। বর্তমানে গ্রামটি তাল পাখার গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নারী-পুরুষ সবাই তালপাতা দিয়ে পাখা বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গরমে তালপাতার পাখার বাতাস গা জুড়িয়ে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম। একটির নাম যোগীরভবন, অপরটি আড়োলা আতালপাড়া। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটি পাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দুটি গ্রামে একেক পাড়ায় একেক ধরনের পাখা তৈরি হয়। যোগীরভবন গ্রামে নারীরা তৈরি করেন হাতলপাখা বা ডাঁটপাখা। আর আড়োলা আতালপাড়ায় তৈরি হয় ঘোরানো পাখা বা ঘুন্নী পাখা আর পকেট পাখা। পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন দুটি গ্রামের সব নারী। শীতের শেষে বসন্তকালে, অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।

পাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারী

গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাড়ির উঠানে রং তুলির আঁচড়ে ঘুরানো পাখা রাঙিয়ে তুলছেন সখিনা বেগম। রাঙানো পাখা বাঁধায় করছেন গোলজার। বাঁধা হয়ে গেলে পাখাটি বিক্রি করবেন তিনি।

হাতপাখার গ্রামে এবার ২০ লাখ পাখা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এই পাখা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।

গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা অবসর সময়ে পাখা তৈরির কাজ করেন। বংশ পরম্পরায় এই দুই গ্রামের মানুষ তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পাখার চাহিদা, সেই সঙ্গে বাড়ছে পাখা তৈরির কাজের পরিধি।

আড়োলা গ্রামের খন্দকার বলেন, দাদার আমল থেকে তারা তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালপাখা তৈরির কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙের আচর দিয়ে তাল পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে থাকেন। আকরাম আকন্দ বলেন, গত বছর তিনি পাখা বিক্রি করে সংসার খরচ বাদে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতে গত বছর দুই গ্রাম থেকে ১৫ লাখ তালপাখা বিক্রি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার চাহিদা বাড়ায় ২০ লাখ পাখা বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে নাম দেয়া হয়েছে- পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা।

পাখা তৈরিতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং লোহার তার প্রয়োজন হয়। পাখা তৈরির পর বিভিন্ন রঙের আচর দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। ১০ টাকায় কেনা তাল গাছের একটি পাতা বা ডাগুড় দিয়ে তৈরি হয় বড় পাখা বা ডাগুর পাখা ২টি, ঘুরানী পাখা ৪টি এবং পকেট পাখা ৬টি।

তালপাতার পাখা

পাখা তৈরির কারিগর জানান, বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় বাঁশ এবং তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর বাঁশ ছোট ছোট আকারে কাটতে হয়। তালপাতাও কেটে পাখা তৈরির উপযোগী করা হয়। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ। চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাহারি রঙ করে বিক্রয় উপযোগী করা হয়।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসেন তালপাখা কিনতে।

যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, তিনি প্রতি বছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ডাগুর পাখা তৈরি করেন। এই পাখাগুলো বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখার চাহিদা বেশি বলে জানান মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, একটি তাল পাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়ে গেছে।

আতাইল পাড়া গ্রামের পারভীন, মর্জিনা, সাবিনা, বেবি, সুমি জানান, তারা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি হাত পাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরের ছয় মাস সংসারের কাজের ফাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজ করে তারা বাড়তি আয় করছেন। এইসব নারীরা তাদের সৌখিন জিনিস কিনে থাকেন নিজের টাকায়।

পকেট পাখা ১১ টাকা, ঘুরানী পাখা ২০ টাকা এবং ডাগুর পাখা ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতপাখার চাহিদা বাড়ছে বলে পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী করিম জানান। শহর এবং গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু প্রশান্তি পেতে ধনী-গরিব সবাই হাত পাখার ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

;

ইতিহাসে ২৭ মার্চ:স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

  • Font increase
  • Font Decrease

সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সাথে বছরের পর বছর কেটে যায়। বর্তমান হয় অতীত। তার সাথেই তৈরি হয় ইতিহাসের। মানব সভ্যতায় ঘটে যাওয়া ইতিহাস হয়ে থাকে জাতির কাছে স্মরণীয়। প্রতি বছর যখন ক্যালেন্ডারে একই তারিখগুলো ফিরে আসে, মানুষ পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে।

আজ ২৭ মার্চ, ২০২৪। বিগত বছরগুলোতে এই তারিখে ঘটা অনেক ঘটনা হয়েছে স্মৃতিতে অমলিন। ইতিহাসের পাতায় জুড়ে গেছে নতুন নতুন ঘটনা। চলুন জেনে নিই,আজকের তারিখে কি ঘটেছিল!    

১৯৭৭ সালে স্পেনে টেনেরিফ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ডাচ এয়ারলাইনের সেই দুর্ঘটনায় কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রানওয়েতে দু’টো জেট বিমানের সংঘর্ষে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে উৎপন্ন বিধ্বংসী দাবানলে সর্বমোট ৫৮৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ১৯৮০ সালে উত্তর সাগরের প্ল্যাটফর্ম ধসে পড়ে। রিগটি ডান্ডি থেকে ২৩৫ মাইল পূর্বে সেই আবাসন প্ল্যাটফর্ম দুর্ঘটনায় ১২৩ জন শ্রমিক মারা যান।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে কমিউনিটি পার্টির অনেক রাশিয়ান উচ্চতর কর্মকর্তা পরাজিত হন। তৎকালীন সময়ে এই ঘটনাকে একটি বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।     

১৯৬৩ সালে ব্রিটেনে রেললাইন কম ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষতি হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মোট রেলব্যবস্থার এক-চতুর্থাংশ সেবা কমিয়ে দেওয়া হবে। এই নিয়ে সুদূরপ্রসারী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২৭ মার্চ।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

;