শিক্ষক দিবস পেরিয়ে বিভূতিভূষণের জন্মদিনে



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ - ১ নভেম্বর, ১৯৫০) একই সঙ্গে 'সাহিত্যিক সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য' ভোগ করেছেন। তাঁর সৌভাগ্য এই যে, তাঁর বেশ কিছু উপন্যাস প্রবল জনপ্রিয়। আর দুর্ভাগ্য হলো, তাঁর বহু গুরুত্বপূর্ণ রচনা সমালোচকদের নজর ও পাঠকের আগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে তাঁর এক-দুইটি লেখা সম্পর্কেই সাধারণ মানুষ জ্ঞাত।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অনুবর্তন' তেমনই একটি কম আলোচিত ও স্বল্প পঠিত উপন্যাস, যার সঙ্গে সমকালের সূক্ষ্মতম মিল খুঁজে পাওয়া যায়। উপন্যাসে পটভূমি ব্রিটিশ শাসিত বাংলা এবং পরিস্থিতি বর্তমান করোনাকালের মতোই বিশ্বযুদ্ধের কারণে সংকটময়। কাহিনীর নায়ক পেশায় একজন শিক্ষক এবং যুদ্ধের পরিস্থিতিগত কারণে যথারীতি পেশাগত বিপদে আপতিত। যেমনটি বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে বহু শিক্ষক এখন রয়েছেন।

'অনুবর্তন' উপন্যাসে দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় রাতের বেলায় 'ব্ল্যাকআউট' চলছে। জাপানি বোমার ভয়ে ব্রিটিশ সৈন্য অস্থির। আতঙ্কিত কলকাতার সাধারণ লোক। তারা দলেদলে প্রাণভয়ে পালাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। বিপন্ন জীবনের বিন্যাসে ছোটোখাটো স্কুল টিকিয়ে রাখা দায়৷ ছাত্রসংখ্যা নগণ্য। চারিদিকে ক্রাইসিস।

এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের চাকুরি বজায় রাখতে শিক্ষকরা ছাত্রসংখ্যা বাড়াতে এগিয়ে আসেন। শিক্ষকতার পর টিউশনিও করেন। নইলে সংসার চলে না। বিরূপতায় ভরা পরিস্থিতিতে একই সঙ্গে অর্থগৃধ্নু এবং ছাত্র প্রেমিক শিক্ষকদের ছবি এঁকেছেন বিভূতিভূষণ।

উপন্যাসে কঠোর কর্তব্যপরায়ণ রাজভক্ত হেডমাস্টার ক্লার্কওয়েল, ছাত্রপ্রেমিক নারায়ণবাবু, উঞ্ছবৃত্তি পরায়ণ দরিদ্র শিক্ষক যদুবাবু, কুচক্রী অ্যাসিস্টান্ট হেডমাস্টার, ক্লাসের শিক্ষিকা সিম্পসন। 'অনুবর্তন' উপন্যাস যেন এরকম নানা ধরনের চরিত্রের বর্ণিল চিত্রশালা। উল্লেখ্য, বাস্তবে এখানেই শিক্ষকতা করেছেন বিভূতিভূষণ স্বয়ং।

পেশায় স্কুল শিক্ষক বিভূতিভূষণ এর আগে হরিনাভিতে প্রথম শিক্ষকতা শুরু করেন। ৫ই সেপ্টেম্বর 'শিক্ষক দিবস' পেরিয়ে ১২ই সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিনের পটভূমিতে চারপাশে তাকিয়ে বহু শিক্ষকের কথাই মনে পড়ে। শিক্ষকতা পেশার উত্থান-পতনের দিকগুলোও সামনে চলে আসে। অথচ প্রবল দারিদ্র্য সহ্য করে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একজন জনপ্রিয় শিক্ষক ও সফল ভারতীয়-বাঙালি কথাসাহিত্যিক।

তবে বিভূতিভূষণ ব্যক্তিজীবনে প্রধানত শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মাঝে মাঝে তাঁকে কর্মান্তর গ্রহণ করে বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এবং এইভাবেই তাকে এক গােরক্ষিণী সভার প্রচারক, গৃহশিক্ষক, প্রাইভেট সেক্রেটারি, নায়েব, তহশিলদার প্রভৃতি বিচিত্র কর্মজীবনের সঙ্গে যুক্ত হতে হয়েছিল। এসব বিচিত্র জীবনচর্যা তাঁর বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা আহরণের সহায়ক হয়েছিল। কর্ম-উপলক্ষে নিয়ত বাসস্থান পরিবর্তনের কারণেও বিভূতিভূষণ যেমন বাঙলার পল্লীজীবন ও নাগরিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তেমনি ভাগলপুর, ঘাটশিলা, বিহার প্রভৃতি অঞ্চলে বাসকালে পাহাড় ও অরণ্যের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসবারও সুযােগ পেয়েছিলেন। বস্তুত এ সমস্তই তাঁর মনােজীবন-গঠনে এবং সাহিত্য রচনায় বিরাট ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।

তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। 'পথের পাঁচালী' ও 'অপরাজিত' তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে 'আরণ্যক', 'চাঁদের পাহাড়', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল', 'ইছামতী' ও 'অশনি সংকেত' বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের 'পথের পাঁচালী' উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে 'ইছামতী' উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মাননা 'রবীন্দ্র পুরস্কার' (মরণোত্তর) লাভ করেন।

শিক্ষকতার পেশায় না থেকে শিক্ষকদের নিয়ে লিখেছেন অনেকেই। তেমনই উল্লেখযোগ্য দুটি উপন্যাস গজেন্দ্রকুমার মিত্রের (১১ই নভেম্বর ১৯০৮ - ১৬ ই অক্টোবর ১৯৯৪)
'রাত্রির তপস্যা' ও 'জন্মেছি এই দেশে'। গজেন্দ্রকুমার মিত্র ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক, প্রকাশক ও অনুবাদক। রবীন্দ্র-শরৎ উত্তর বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ-তারাশঙ্করের পর বাঙালী মধ্যবিত্ত সমাজকে উপজীব্য করে যে সকল কথাসাহিত্যিক সার্থক সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

গজেন্দ্রকুমারের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস 'মনে ছিল আশা', গল্পগ্রন্থ 'স্ত্রিয়াশ্চরিত্রম' | ১৯৫৯ সালে তাঁর 'কলকাতার কাছেই' উপন্যাস সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়। 'কলকাতার কাছেই', 'উপকন্ঠে', 'পৌষ-ফাগুনের পালা'-এই ট্রিলজিকে (ত্রয়ী উপন্যাস) আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য উপন্যাস বলে গণ্য করা হয়। পৌষ-ফাগুনের পালা ১৯৬৪ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার পায়। গজেন্দ্রকুমারের লেখনীর বিচরণক্ষেত্র বিরাট ও ব্যাপক। সামাজিক উপন্যাস, পৌরানিক উপন্যাস, ঐতিহাসিক উপন্যাস, ছোট গল্প.কিশোর সাহিত্য-সর্বত্র তাঁর অবাধ গতি। সুদীর্ঘ ষাট বছরের অধিককাল ধরে তার কয়েক হাজার ছোটগল্প ও পঞ্চাশটিরও বেশি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।

গজেন্দ্রকুমারের 'রাত্রির তপস্যা'-এর নায়ক ভূপেন মেধাবী ছাত্র। ঘটনাচক্রে সে এক ধনী ব্যক্তির কন্যার গৃহশিক্ষক হয়। ছাত্রী সন্ধ্যার শিক্ষক-ভক্তি কখন যে প্রেমে রূপান্তরিত হল তারা কেউই বুঝতে পারে নি। এদিকে ভূপেন সংসারের কঠোর প্রয়োজনে শিক্ষক বৃত্তির চাকুরি বেছে নিল। যদিও পিতার ইচ্ছা ছিল, তাঁর পরিচিত কোনো বিলাতি সওদাগরি অফিসে চাকুরি নেয় পুত্র। শিক্ষক জীবনের দারিদ্র্য, উঞ্ছবৃত্তি আবার সেই সঙ্গে কর্তব্যপরায়ণতা সবই ভূপেন অর্জন করল তার শিক্ষক জীবনে। কিন্তু সে নিজ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হল না। তার প্রতিদিনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই সে গড়ে তুলল নিজের জীবন। শক্ত করে ভিত্তি গড়ল নিজের পৈতৃক পরিবারের। বিচিত্র পরিস্থিতিতে সে বিবাহ করতে বাধ্য হল সতীর্থ বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকের কন্যাকে। আবার কখন যে তার প্রথম ছাত্রী সন্ধ্যা, যার গৃহশিক্ষকতায় তার প্রথম শিক্ষক জীবন শুরু, তাকে ভালোবেসেছিল, বিচিত্র পরিস্থিতিতে ভূপেন তার মাথায় সিঁদুর পরিয়ে দিল — এমনই মধুর পরিবেশে হয়েছে উপন্যাসের সমাপ্তি।

'জন্মেছি এই দেশে' আদর্শ পরায়ণ শিক্ষক এবং একই সঙ্গে সুযোগ সন্ধানী উঞ্ছবৃত্তি পরায়ণ শিক্ষকদের জীবন নিয়ে লেখা উপন্যাস। শেষ পর্যন্ত আদর্শর জয়লাভ ও দরিদ্র শিক্ষকদের জীবন নিয়ে লেখা উপন্যাস। শেষ পর্যন্ত আদর্শের জয়লাভ ও দরিদ্র শিক্ষকের আত্মত্যাগ এই উপন্যাসের মূল প্রতিবেদন।

উপন্যাসগুলোর আলোচনাকালে মনে রাখতে হবে, এসবের সময়কাল ঔপনিবেশিক অবিভক্ত বাংলা। তখন শিক্ষকদের জীবন এখনকার মতো সচ্ছল ছিল না। কিন্তু শিক্ষকতার পেশাগত সংকটের অনেকগুলো দিকই বর্তমানেও দৃশ্যমান। দুঃখের বিষয় হলো, অতীতের সংকটগুলো কথাসাহিত্যে যেভাবে উন্মোচিত হয়েছে, বর্তমান বাস্তবতার চিত্রগুলো সেভাবে উদ্ভাসিত হয়নি। যদিও তখনকার মতো এখনও বহু সাহিত্যিকই পেশাগত দিক থেকে শিক্ষক, তথাপি সাহিত্যের চরিত্র রূপে শিক্ষক বহুলাংশে অচর্চিত।

শিক্ষক ও শিক্ষা সম্পর্কে স্মরণ করতে পারি রিচার্ড ফাইনম্যানকে। যিনি নোবেল পুরস্কারজয়ী বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাত। কিন্তু ফাইনম্যান নিজেকে শিক্ষক ভাবতেই পছন্দ করতেন। 'ইফ ইউ ওয়ান্ট টু মাস্টার সামথিং, টিচ ইট'— এ শুধুমাত্র তাঁর বিখ্যাত উক্তিই নয়, মনেপ্রাণে কথাটা নিজের জীবনেও বিশ্বাস করতেন তিনি। তাঁর মত ছিল, ছাত্রদের সঙ্গে অনবরত জ্ঞান আদানপ্রদানের মধ্য দিয়েই বিজ্ঞানী/শিক্ষক বেঁচে থাকেন।

ভাল শিক্ষক হতে গেলে যে আগে ভাল ছাত্র হতে হবে, অর্থাৎ বিষয়টা নিখুঁত ভাবে বুঝতে হবে— এ ব্যাপারে ফাইনম্যানের নির্দেশ অত্যন্ত পরিষ্কার। তাঁর মতে, কোনও বিষয়ের নাম জানাটা আদৌ জ্ঞান নয়, স্রেফ একটা তথ্য মাত্র। সেই তথ্য ব্যবহার করে যখন ভিন্ন ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে কোনও ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা যায়, তখনই তা জ্ঞানে উন্নীত হয় এবং বিষয়টাও ঠিকঠাক শেখা হয়ে ওঠে। কোনও বিষয় শেখানো মানেও শুধু কিছু তথ্য সরবরাহ করা নয়। বরং যাবতীয় কী, কেন, কীভাবে-র উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করা।

ফাইনম্যানের মতে, কোনও বিষয় একজন ঠিকঠাক শিখেছেন কি না, সেটা বুঝে নেওয়ার উপায় হল বিষয়টা একেবারে সহজ করে কাউকে বোঝাতে পারা। বোঝানোর সময় কোনও প্রতিশব্দ ব্যবহার করা চলবে না। সমীকরণও নয়। কারণ প্রতিশব্দ হল স্রেফ নাম, জ্ঞান নয়। বিশেষ প্রতিশব্দ ছাড়া যদি বিষয়টার কোনও অংশ ব্যাখ্যা করতে অসুবিধে হয়, তা হলে বুঝতে হবে নিজের বোঝায় খামতি আছে।

একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। উনুনে বসানো হাঁড়ির পানি কী ভাবে গরম হয়, সেটা বোঝাতে গিয়ে আমরা যদি বলি তাপের পরিচলন বা ‘কনভেকশন’ পদ্ধতি দায়ী, তা হলে শুধু পদ্ধতিটার নাম জানা হবে। প্রক্রিয়াটা কী? একটি ধাতব দণ্ড গরম হওয়ার পদ্ধতি (পরিবহণ বা ‘কন্ডাকশন’) থেকে তা আলাদা কেন? এগুলো বোঝা প্রয়োজন। তা না হলে কেউ প্রশ্ন করলেও আমরা বার বার ওই পরিচলন-পরিবহণই বলে যাব।

কিন্তু প্রক্রিয়াটা বোঝা থাকলে বিভিন্ন ‘সাধারণ শব্দ’ ও উদাহরণের সাহায্যেই বিষয়টা সহজ করে বোঝানো যায়। ব্যাপারটা শুধু বিজ্ঞান নয়, যে কোনও বিষয়ের ক্ষেত্রেই সত্যি। যেমন, একটা ছবির বা গল্পের বা কবিতার বৈশিষ্ট্য বোঝাতে গিয়ে বিমূর্ত বা ‘অ্যাবস্ট্র্যাক্ট’ কিংবা 'মরৃডান' বা পোস্টমর্ডান' বললে চলবে না, কারণ সেটা শুধুমাত্র একটা বৈশিষ্ট্যের নাম। যে লক্ষণগুলো তাকে বিমূর্ত, মূর্ত, আধুনিক কিংবা উত্তরাধুনিক করে তুলছে, সেগুলো বুঝিয়ে বলতে হবে।

প্রসঙ্গত চলে আসে শিক্ষা, বিজ্ঞান, জ্ঞানের সঙ্গে সংস্কৃতি ও জীবনবোধের সম্পর্ক। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক বৈশ্বিক মহামারি করোনার কথা। গত এক-দেড় বছরে তথাকথিত বহু শিক্ষিত মানুষের মুখে 'করোনা এসে দেখিয়ে দিল বিজ্ঞান আসলে কিছুই পারে না' ধরনের কথা শোনা গেছে। এই কথা থেকেই বোঝা যায় বিজ্ঞান আদৌ আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে ওঠেনি, শুধুমাত্র আমাদের কিছু পারা-না-পারার হাতিয়ার হয়ে রয়ে গেছে।

কেন পারে নি? কারণ, আমরা কোনও জ্ঞানকেই আমাদের জীবনের ও সংস্কৃতির অঙ্গ করে তুলতে পারিনি। আমাদের শেখা এবং পরবর্তী কালে শেখানো জুড়ে শুধুই একগুচ্ছ তথ্য। ফলে প্রথাগত লেখাপড়া শিখেও আমরা অনেক ক্ষেত্রেই কিছু তথ্য জানলেও বিষয়টি জানতে-বুঝতে এবং জীবনে বা জগৎ-সংসারে কাজে লাগাতে মোটেও পারছি না। এই ধারাবাহিক 'না-পারা' আমাদের এমন এক 'শিক্ষা', যার অপর নাম 'অজ্ঞতা', যা গভীরভাবে আমাদের ললাটে লেপ্টে আছে এবং এই দুর্বহ 'শিক্ষা' থেকে 'শিক্ষা' নিয়ে 'প্রকৃত শিক্ষিত' হওয়ার বিষয়টি সুদূরপরাহত হয়েই রয়েছে।

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;