কটিয়াদীতে বাগানে ঝুলছে মিষ্টি মাল্টা
সবুজ পাতার ভিতরে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা। রসে টইটম্বুর স্বাদে ঘ্রাণে অতুলনীয়। খেতে বেশ মিষ্টিও। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও সঠিক পরিচর্যার ফলে ফলনও হচ্ছে বেশ ভালো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অনেক স্থানেই চলে যাচ্ছে এই পাল্টা। অল্প টাকার মধ্যে ফরমালিন মুক্ত টাটকা মাল্টা পাওয়াতে মানুষের মধ্যে এর চাহিদাও বেশি। চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। ফলে দিন দিন এর চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলাতে অনেকেই মাল্টা চাষে সফলতা পাচ্ছেন। এখানকার মাটি মাল্টা চাষে অনেকটাই উপযোগী বিধায় সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারে মাল্টা চাষ।
জালালপুর ইউনিয়নের উওর চরপুক্ষিয়া গ্রামের হাজী দুলু মিয়ার ছেলে মো. সাখাওয়াত হোসেন মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন। তার সফলতায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
সরেজমিনে মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা। আকারে বেশ বড়। মাঝে মধ্যে সবুজ পাতার ভিতর কমলা রং এর মাল্টা পেকে আছে। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। প্রতিদিন অনেকেই আসছেন মাল্টা বাগান দেখতে। কেউ বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মাল্টা খেতে মিষ্টিও।
মাল্টা চাষী মো. সাখাওয়াত হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এক বিঘা (৩৫ শতাংশ) জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। জমিতে চারা রোপণ করেছিলেন ১৩০ টি। চার বছর আগে ২০১৭ সালের জুনে শুরু করেন চারা সংগ্রহ। জেলার হার্টি কালচার থেকে এবং বাকি গুলো স্থানীয় বিভিন্ন বাগান থেকে সংগ্রহ করেন। প্রতি পিছ চারা ক্রয় করেন ৮০ টাকা। বর্তমানে বাগানে ১২২ টি চারা আছে। মাল্টা চারা রোপনের পর এর সাথে বাগানো সাথী ফসল হিসাবে অন্য ফসলও চাষাবাদ করা হয়। সাথী ফসল হচ্ছে, কপি, পুইশাক, লাল শাক, ডাটা, মরিচ ইত্যাদী। সাথী ফসল থেকেই ৭০ হাজার টাকা আয় করেছেন বছরে। দুই বছর পর প্রথম ফলন হয় মাল্টার।
শুরুতে মাল্টা চারা রোপণ ও অন্য আনুষঙ্গিক খরচ বাদে মোট খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। প্রথম ফলনেই সব খরচ বাদে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মতো আয় করেছেন। এ'বছরেও ২ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আসা করছেন মাল্টা চাষি সাখাওয়াত। তিনি আরো জানায়, মাল্টা বিক্রির জন্য বাজারে নিতে হয়না। বাগান থেকেই পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়। খুচরাও বিক্রি হচ্ছে বাড়িতেই। অনেকেই বাগান দেখতে এসে দুই এক কেজি করে কিনে নিয়ে যায়। প্রতি কেজি পাইকারি ১০০ টাকা থেকে ১২০ এবং খুচরা ১৫০ টাকা কমবেশি করে বিক্রি হয়।
মাল্টা চাষী মো. সাখাওয়াত হোসেন বার্তা ২৪.কম'কে বলেন, ' মাল্টা চাষ করতে টিএসপি সার, প্রচুর জৈব সার, সেচ, আগাছা পরিষ্কার রাখতে হয়। এছাড়া তেমন কিছু আর করতে হয়না। মাল্টা চাষ লাভজনক। আগ্রহী নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ' অবশ্যই মাল্টা চাষ লাভজনক তবে তা বুঝে শুনে করতে হবে। কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে শুরু করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।'
দেশে মাল্টার উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বিদেশ থেকে মাল্টা আমদানি কমে যাবে এতে একদিকে দেশের টাকাও বাঁচবে অন্য দিকে দেশের মাল্টা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুকশেদুল হক বার্তা ২৪.কম'কে বলেন, ' মাল্টা চাষে অনেকেই সফলতা পাচ্ছে। তাদের মধ্যে সাখাওয়াত একজন। তার বাগানে গিয়েছি এবং ভালো ফলন হয়েছে দেখতে পেয়েছি। সবসময়ই কৃষি অফিসের সাথে পরামর্শ করেই কাজ করছেন। আমরাও সবরকম সাপোর্ট ও সহায়তা করে যাচ্ছি। আমরা ভালো জাতের মাল্টা চাষে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করতেছি। আগ্রহীরা কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করেই মাল্টা চাষ শুরু করতে পারবে। সবসময়ই আমরা চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি।'