করোনা নিয়ে আবার চিন্তা বাড়ছে
বৈশ্বিক মহামারি করোনা নিয়ে সারা বিশ্বেই আবার চিন্তা বাড়ছে। চারদিকে সংক্রমণ যে হারে আবার ছড়াতে শুরু করেছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা ও চিকিৎসকমহল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র মতে, পূর্ব-আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বাড়তি প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলেও একবার সংক্রমিত হলে দ্বিতীয় বার সংক্রমণের ভয় থাকে না, এটি একেবারে ভ্রান্ত ধারণা। ফলে একবার কোভিডে আক্রান্ত হলে আর হবে না বলে নিশ্চিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
প্রাপ্ত তথানুযায়ী, কয়েক মাস ধরে সংক্রমণের হার কমে আসার পর গত সপ্তাহ থেকে বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের হার আবার বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে চীনের জিলিন প্রদেশে সংক্রমণ রোধে লকডাউন জারির ঘটনাও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র পক্ষ থেকে তুলে ধরে জানানো হয়েছে যে, সংক্রমণের হার বাড়ার পেছনে উচ্চ সংক্রমণশীল ওমিক্রন ধরন এবং এর বিএ.২ উপধরনটির ভূমিকা আছে। এছাড়া জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক মেলামেশার বিভিন্ন বিধিনিষেধ শিথিলের কারণেও আক্রান্তের হার বাড়ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “কিছু দেশে নমুনা পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়ার পরেও সংক্রমণের হার বাড়ছে, যার অর্থ হচ্ছে আমরা আসলে একটি হিমবাহের চূড়াটুকুই দেখতে পাচ্ছি।” সংস্থার কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন যে, কিছু দেশে টিকাদানের হারও কম, যার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’ যুক্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র হিসাবে, বিশ্বজুড়ে মার্চের ৭ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে করোনা আক্রান্ত নতুন রোগি বেড়েছে আগের সপ্তাহের চেয়ে ৮ শতাংশ, নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ মানুষ এবং মৃত্যু হয়েছে ৪৩ হাজারের বেশি মানুষের।
সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, যেখানে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন রয়েছে। ওই অঞ্চলে আক্রান্তের হার ২৫ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ২৭ শতাংশ বেড়েছে। আফ্রিকায় এই হার বেড়েছে যথাক্রমে ১২ ও ১৪ শতাংশ। ইউরোপে আক্রান্তের হার ২ শতাংশ বাড়লেও মৃত্যুহার বাড়েনি। তবে, বিশেষজ্ঞরা ইউরোপে সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে অস্ট্রিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত বাড়ায় তারা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রেও দ্রুতই ইউরোপের মত নতুন ঢেউ দেখা যেতে পারে সম্ভাব্য বিএ.২ এর ছড়িয়ে পড়া, বিধিনিষেধ শিথিল করা ও টিকার সুরক্ষা কমে আসার কারণে।
এদিকে পার্শ্ববর্তী ভারতে দৈনিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশজুড়ে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ২,১৮৩ জন, যা রোববারের (১৭ এপ্রিল) তুলনায় ৯০ শতাংশ বেশি। রোববার করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,১৫০। ভারতে সোমবার (১৮ এপ্রিল) করোনায় ২১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতে একদিনে নতুন কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ, এর মধ্য দিয়ে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই জনবহুল দেশটিতে। আর বাংলাদেশে টানা ছয় দিন মৃত্যুহীন থাকার পর গত একদিনে দুইজন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে, এই সময়ে ৩৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ মারিয়া ফন কেরকভ মনে করেন, এ পর্যন্ত বিএ.২ কেই সবচেয়ে বেশি সংক্রামক ধরন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তবে এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি যে এর কারণে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। তথাপি তিনি সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মান্য করার ক্ষেত্রে অধিকতর সচেতনতা অবলম্বনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের মতে, আগামী কয়েকটি দিন যদি কোভিড সংক্রান্ত সব রকম সুরক্ষাবিধি মেনে চলা যায়, সে ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যাবে। তবে তার জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। এই পরিস্থিতিকে একেবারেই হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না । যেহেতু অফিসের কাজ ও স্কুল-কলেজ চলছে পুরোদমে, তাই ভয় না পেয়ে সাবধান হতে হবে এবং কোভিড বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।
সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৩৬২ জনে। শনাক্তের হার দশমিক ৬৭ শতাংশ। এদিকে ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ২৯ হাজার ১২৬ জন। অন্যদিকে, বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৬১ লাখ ৯৮ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৫০ কোটি ৪৫ লাখের বেশি।