নিউইয়র্কের দিনলিপি-৫



আমান-উদ-দৌলা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

১. আগামী সোমবার নাসা চন্দ্র অভিযানে পাঠাচ্ছে আর্টেমিস ওয়ান নামে নতুন উপগ্রহ। সঙ্গে মানুষ যাচ্ছে না। তবে একটি আধুনিক রোবট যাবে। এই অভিযান এপোলো সিরিজের ৫০ বছর পর শুরু হচ্ছে। নতুন জেনারেশনের একটি নতুন ধরনের উপগ্রহ এটি। পরীক্ষামূলকভাবে চাঁদে এটি সফলভাবে কাজ করলে মংগলগ্রহে অভিযান পাঠাবে। তারই প্রস্তুতি চলছে।

এবারের চন্দ্র অভিযান সফল হলে ২০২৪ সালের আর্টেমিস টুতে যাবে একজন নারী নভোচারী ও কালো পুরুষ নভোচারী। তাদের সাফল্যের পর ২০২৮ সালে যাবে আরও এক আর্টেমিস। এতে সহজ হয়ে আসবে চন্দ্রাভিযান। চাঁদে একটা স্থায়ী বেস স্টেশন তৈরি করা হবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে ৮০০ কোম্পানীকে ৫০ টি স্টেটের স্মল বিজনেস কোম্পানীর জিনিসপত্র কাজে লাগানো হবে। অর্থনৈতিকভাবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায় লাভবান হবে আমেরিকার ছোট ব্যবসায়ীরা।

দেখুন: https://www.nasa.gov/specials/artemis/

২. বাংলাদেশ থেকে রোহিংগা শরনার্থীদের নেবে আমেরিকা। ২৪ আগস্ট আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকনের এক বিবৃতিতে তা বলা হয়। যাতে কবে থেকে কি পরিমান নিয়ে আসবে তা বলা হয়নি। বলা হয়েছে, তাদের আমেরিকায় পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে। যাতে শরনার্থীরা নতুন করে জীবন গড়ে তুলতে পারেন।

এক বিবৃতিতে ব্লিংকন বলেন, ৫ বছর আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা চালিয়ে ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। কয়েক হাজার শিশু, নারী ও পুরুষকে হত্যা করেছে। ধর্ষণ করেছে। কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সহ এ অঞ্চলে এ যাবত আমরা মোট ১৭০ কোটি ডলার সাহায্য দিয়েছি। আমরা তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যাতে তারা আমেরিকায় নতুন জীবন শুরু করতে পারেন।

৩. বংগবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফেরত নেওয়ার ব্যপারে তৎপর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিভাগ। এর আগে মহিউদ্দিনকে চুক্তি অনুযায় ডিপোর্ট করেছিল আমেরিকান অথরিটি। তাকে হাতে পেয়ে বাংলাদেশ সরকার ফাসির আদেশ কার্যকর করেছিল। রাশেদ চৌধুরীর ক্ষেত্রে মনোযোগী হয়ে অনেক ক্রিটিক্যাল অবস্থা লক্ষ করছে বাংলাদেশ।

বলা যায়, ১৯৯৬ সালে ব্রাজিল থেকে আমেরিকায় পারি জমান রাশেদ চৌধুরী। ২০০৪ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় পান তিনি। এতোদিনে নাগরিকত্ব পেয়ে থাকতে পারেন। খুব সহজ না একজন নাগরিককে হস্তান্তর করা। যদি খুনি হয় বা দুধর্ষ অপরাধী হয় তা প্রমাণ করতে হবে। এরপর দুদেশের মধ্যে চুক্তি করতে হবে। তার নাগরিকত্বের তথ্য যদি যথাযথ সত্য না হয়। তাহলে নাগরিকত্ব বা এসাইলাম বাতিল হয়ে যাবে। তখন দুদেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব হতে পারে।

৪. বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের এক কঠিন সময়ে উপস্থিত হয়েছে। আমেরিকার বড় কোম্পানীগুলো বাতিল করেছে অর্ডারগুলো। টার্গেট ও ওয়ালমার্ট অন্যতম। পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রন যুদ্ধের নানামুখি প্রভাব তৈরি হয়েছে। এজন্য ঊর্ধ্বমুখি দাম ও মূল্যস্ফীতির প্রভাবে আমেরিকার সাধারন মানুষ সবার আগে পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে কাচামালের দাম ও জাহাজের ভাড়া বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে। সবমিলে এইশিল্পের অবস্থা খুবই খারাপ।

৫. বাংলা সিনেমার উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে উঠছে আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে। দেশের ফিল্ম ইন্ড্রাষ্ট্রি যখন প্রায় মৃত। তখন এখানে জোয়ার উঠেছে। নিউইয়র্ক, ফ্লোরিডা, টেক্সাস,মিশিগান, মিনোসোটা, ক্যালিফোর্নিয়া, ফিলাডেলফিয়া, ইলিনয়, লুসিয়ানা সহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত রাজ্যে বাংলা সিনেমা চলতে শুরু করেছে। এসব স্থানে নতুন সিনেমা আরও চলতে পারে। এখন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে ছবি যাতে আমেরিকাতেই তৈরি হয়। সম্প্রতি ঢাকায় মুক্তি পাওয়া 'পরাণ' ও 'হাওয়া' ছবি নিউইয়র্কে মুক্তি পাবে। অন্যদিকে 'পাপ পূন্য' মুক্তি লাভ করে ঝড় তুলেছে। আমেরিকায় বাবসা সফল ছবি তৈরি করতে হলে বাস্তবধর্মী ও আমেরিকার জীবন-যাপন প্রবাহের উপর ছবি নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে, মনে করেন সচেতন দর্শকরা।

৬. সত্যজিত রায়ের তৈরি 'পথের পাঁচালী' ১৯৫৫ সালে নিউইয়র্কে প্রথম বাংলা ছবি যা ম্যানহাটনে প্রদর্শিত হয়। এটি বিভূতিভুষণ বন্দোপাধ্যায়ের প্রখ্যাত উপন্যাস ১৯২৯ সালে রচিত। আজ নিউইয়র্কের কয়েকটি হলে সত্যজিত রায়ের জীবন ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র 'অপরাজিত' প্রদর্শিত হচ্ছে। কয়েকদিন চলবে।

৭. বাংলাদেশি-আমেরিকান মেয়ে ফাহমিদা আজিম পুলিতজার বিজয় অর্জন করলো। ওয়াশিংটন স্টেটে সিয়াটলে সে একটি কোম্পানীতে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে চাকরী করছে। সে চিত্রশিল্পী ও অলংকরণ শিল্পী। ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর ইনসাইডার ওয়েবসাইটে How I Escaped a Chinese Internment Camp ( যেভাবে একটি চীনা বন্দী শিবির থেকে পালিয়ে এসেছি) রিপোর্টে একটি ইলাস্ট্রেটেড এ অলংকরণের জন্য তাকে পুলিতজার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সাংবাদিকতা ও প্রকাশনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সবচেয়ে সম্মানজনক সম্মাননা হিসেবে এই পুরস্কার দেয়া হয়। ১৯১৭ সাল থেকে চালু রয়েছে।

৮. জাতিসংঘের পুলিশ সামিটে যোগদানের জন্য বাংলাদেশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ২ দিনের ভিসা পেলেন। আগামী ৩১ আগষ্ট ও ১ সেপ্টেম্বর এই দুইদিন নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘ সদর দফতরে এই শীর্ষ সম্মেলন হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে একটি দলে আইজি ড. বেনজীরও আসছেন।

গত বছর ৯ ডিসেম্বর আমেরিকান সরকারের রাজস্ব বিভাগ বেনজীর আহমেদ সহ ৭ জনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তিনি এর আগে র‍্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ানের কর্মকর্তা ছিলেন। তাকে শর্ত সাপেক্ষে ভিসা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সম্মেলন ছাড়া আর কোথাও তিনি অংশ নিতে পারবেন না।

৯. প্রেসিডেন্ট বাইডেন কলেজ-ইউনিভার্সিটির ৪ কোটি ৩০ লাখ ছাত্রছাত্রীর স্টুডেন্ট লোন মওকুফ করার ব্যবস্থা করেছেন। গত ২৪ আগষ্ট হোয়াইট হাউজের এক ঘোষণায় বাংলাদেশী আমেরিকান স্টুডেন্ট সহ লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রীর স্টুডেন্ট লোন মওকুফ করেছেন। যাদের ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত লোন ছিল। (ক্ষেত্র বিশেষ ১০ হাজার ডলার) যাদের পিতামাতা বা অভিভাবক বছরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ডলারের ( যৌথ আয় ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার) কম আয় করছে তারাই পাবে এই মওকুফের সুবিধা। এটা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল।

হোয়াইট হাউজের ঘোষণাটির লিংক দেয়া হলোঃ https://www.whitehouse.gov/briefing-room/statements-releases/2022/08/24/fact-sheet-president-biden-announces-student-loan-relief-for-borrowers-who-need-it-most/ (bbc, nytimes, cnn, wsj, apnews সহ সকল ওয়েবনিউজ ও স্থানীয় পত্রপত্রিকা থেকে বাছাই করা সংক্ষিপ্ত সংবাদ প্রতি ৭ দিনে বার্তা২৪-এর পাঠকদের জন্য 'নিউইয়র্কের দিনলিপি' পরিবেশন করা হচ্ছে।)

আমান-উদ-দৌলা, সিনিয়র সাংবাদিক। সাবেক সম্পাদক-বাংলা বিভাগ, রেডিও ফ্রি এশিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি ( ২০১৪-১৬)। সাবেক কূটনৈতিক রিপোর্টার-দৈনিক জনকণ্ঠ ( ১৯৯৪-২০০০) One of the founders and First GS of DCAB in 1998. ( Dilpomatic Correspondent Association, Bangladesh)

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;