বাংলাদেশের বিজয়ের সেই দিনগুলি



সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

 

৫১ বছর আগে গোটা বিশ্বে দিনের আলো ফোটার আগেই বাঙালিরা যেখানেই ছিলেন, টিভি বা রেডিও ঘুলে বসে পড়েছিলেন সুসংবাদটি শোনার জন্য। বেলা যত বাড়তে থাকে, বাঙালির মনে একটি প্রশ্ন কখন পৃথিবীর মানচিত্রে উঠে আসবে নতুন দেশটি, যার নাম হবে বাংলাদেশ। ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে চারটেয় ৯৩ হাজার সেনা নিয়ে দূর্দান্ত প্রতাপ শালী ইয়াহিয়া-ভুট্টোর বাহিনী আত্মসমর্পন করল। তার ১৫/২০ মিনিট পরেই পৃথিবীর মানচিত্রে উঠে এল একটি নতুন দেশ বাংলাদেশ। আমরা কলকাতায় বসে দেখেছি ৯ মাস ধরে দেশ স্বাধীন করার জন্য হাজার হাজার মুক্তিবাহিনী ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফ এর কাছে ট্রেনিং নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৯ মাসের দীর্ঘ যুদ্ধ, ভারতের সংসদে বিরোধী দলের নেতারা একসুরে দাবি করতে থাকেন ওপার বাংলার বাঙালিদের বাঁচাতে হবে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন বলতেন, আপনরা যে দাবি তুলছেন সে ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। সময়মতো সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমিও আপনাদের মতো চিন্তিত, উদ্বিগ্ন।

সেই ন-মাসের ঘটনার তো কোনও বিরাম নেই। ৭ মার্চের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ কার্যত এটিই ছিল তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা। সম্প্রতি তাঁর সুযোগ্য কন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি একটি বই লিখেছেন, বইটির নাম, “মুজিব বাংলার, বাংলা মুজিবের”। সেখানে তিনি লিখেছেন ‘ঐতিহাসিক ভাষণ যখন তিনি দেন, তখন তাঁর হাতে কোনও কাগজ ছিল না। ছিল না কোন নোট। চোখের চশমাটা খুলে টেবিলে রেখে তিনি ভাষণটা দিলেন ঠিক সে কথা যা তাঁর মনে এসেছিল। বাংলার মানুষের মনে প্রতিটি কথা গেঁথে গিয়েছিল। ‘স্বাধীনতা’ শব্দটা বুকে ধারণ করে তিনি যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তা দেশের মুক্তিকামী মানুষ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে বিজয় অর্জন করেছিল। শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়েছে। এ ভাষণের আবেদন আজো অটুট। পৃথিবীর অন্য কোনও ভাষণ এতদিন ধরে আবেদন ধরে রাখতে পারেনি। এই ৫০ বছর ধরে এই ভাষণ কতবার এবং কত জায়গায় বাজানো হয়েছে! কত মানুষ শুনেছে, তা কি কখনও হিসাব করা গেছে? যায়নি। প্রতিবছর ৭-মার্চে ভাষণ বাজানো হচ্ছে ঢাকা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত, মানুষ এ ভাষণে প্রেরণা পায়। ১৯৭৫ সালের পর ২১ বছর সময় লেগেছে এ ভাষণ জনগণের সামনে সরকারিভাবে প্রচার করার জন্য। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসার পর সরকারি গণমাধ্যমে এ ভাষণ প্রচার শুরু হয়। আজ এই ভাষণ ডকুমেন্টারি হেরিটেজ বা বিশ্ব প্রামান্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের ইউনেস্কো তার মেমরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার-এ বঙ্গবন্ধুর ৭-ই মার্চের ভাষণ অর্ন্তভুক্ত করেছে।

‘দ্যা ওয়ার্ল্ডাস গ্রেটেস্ট স্পিচেস’ শীর্ষক রেফারেন্স বইয়ে এই ভাষণ স্থান পেয়েছে। লেখক ও ইতিহাসবিদ জ্যাকব এক এর বিশ্বসেরা ভাষণ নিয়ে লেখা উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস দ্য স্পিচেস দ্যাট ইনস্প্যায়ার্ড স্টোরি গ্রন্থেও স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। সাত কোটি মানুষরে দাবায় রাখতে পারবা না।’ গেরিলা যুদ্ধের রনকৌশল ছিল এই ভাষণে । পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা প্রস্তুত রেখেছিল তাদের সমরাস্ত্র। শেখ মুজিব তাঁর ভাষণে কী বলেন, তা শুনেই তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে এই ময়দানে। এয়ার এ্যাটাক করবে এবং গুলি করে সমবেত মানুষকে হত্যা করে তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেবে। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণের রনকৌশলে বাঙালি জাতি আশ্বস্ত হয়ে সকল প্রস্তুতি নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গ্রাম বাংলায়। প্রস্তুতি নিয়েছিল যুদ্ধের। প্রতিটি ঘর পরিণত হয়েছিল একেকটি দুর্গে। প্রতিটি মানুষ হয়েছিল একেকজন যোদ্ধা। ওই ভাষণ ছিল সকলের প্রেরণার উৎস। আর সে কারণেই বাঙালি এত দ্রুত বিজয় অর্জন করতে পেরেছিল।

বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনামাফিক আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারা কলকাতায় পৌঁছে যান। পৌঁছে যান ৬৯ সালে পূর্ববাংলার নির্বাচনে নির্বাচিত ৩০০জন জনপ্রতিনিধি এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে পূর্ববাংলার ১৬৯ জন প্রতিনিধি। তারা কলকাতায় একটি সিনেমা হলে সভা করে ৫ জন প্রতিনিধিকে বেছে নেন অস্থায়ী মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য। সেই কর্মসূচি অনুযায়ী এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দিন আহমেদ। ক্যাপ্টেন মনসুর আলি, আবু হেনা কামারুজ্জামান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। বিদেশ মন্ত্রক দায়িত্ব দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোস্তাককে। সকালে কলকাতা থেকে দেশি-বিদেশি ১৫০ জন সাংবাদিককে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বিএসএফ তাদের গাড়িতে করে নিয়ে গেলেও আমরা কনভয়ের মধ্যে নিজেদের গাড়িতে ছিলাম। ঘটনাটা খুব গোপন রাখা হয়েছিল। তারপর চলে যুদ্ধ যুদ্ধ প্রস্তুতি। কিন্তু পাকিস্তান বাঙালি হত্যায় এক মুহূর্তের জন্য থেমে থাকেনি। অপরদিকে মুক্তিবাহিনী, মুজিববাহিনী, যৌথবাহিনী এবং বিএসএফ জওয়ানরা লড়াই চালাচ্ছিল। বাংলাদেশে ঢুকে দেখেছি মুক্তিবাহিনীরা পাকিস্তানের একের পর এক বাঙ্কার গুড়িয়ে দিয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসে ইন্দিরা গান্ধি উত্তরবঙ্গে শরণার্থী ক্যাম্পে এসেছিলেন। সেখানে তিনি রাত কাটান শিলিগুড়ির কাছে সামরিক বাহিনীর ৩৩ ডিভিশনের সদর দপ্তরে। জওয়ানদরে উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করতে গিয়ে শ্রীমতি গান্ধী বলেছিলেন যুদ্ধ হবে। তোমরা কি যুদ্ধে জিততে পারবে? জওয়ানরা বন্দুক উচিয়ে বলেছিলেন, ‘‘হামলোগ জিতেগা’’। তারপর তিনি দিল্লি ফিরে গিয়ে ওয়াশিংটন চলে যান নিক্সনের কাছে। নিক্সনের কাছে তিনি হাতজোড় করে বলেছিলেন, আপনি পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন, যাতে বাঙালি হত্যা বন্ধ করে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে।

পেন্টাগন থেকে পাকিস্তানকে যতরকম বাঙালি হত্যা করা যায় তার নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩ ডিসেম্বর ইন্দিরা গান্ধি কলকাতা বিগ্রেড প্যারেড গ্রাইন্ডে বিশাল একটি জনসভা করছিলেন। সেদিনই খবর আসে পাকিস্তান দিল্লিসহ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, আগ্রায় বোমাবর্ষণ করেছে। মিটিং ছেড়ে আমরা আগাম রাজভবনে পৌঁছে গেলাম। গেটে দাঁড়িয়েছিলেন মূখ্যসচিব নির্মল সেনগুপ্ত। তিনি কতগুলো টেলেক্স বার্তা শ্রীমতি গান্ধির হাতে দিলেন। উনি বললেন, ‘‘তুমি পড়ে যাও’’। নির্মলবাবু পড়ে গেলেন পাকিস্তান কোথায় কোথায় বোমা মেরেছে। আমরাও দ্রুত তার পেছনে দমদম বিমানবন্দরে চলে গেলাম। বিমানের সিড়িতে পা দিতেই আমি প্রশ্ন করেছিলাম পাকিস্তান আক্রমণ করেছে। আপনি কিছু বলছেন না। উনি হাত জোর করে বললেন, আমাকে তিন ঘন্টা সময় দাও। আমি রেডিওতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেব। দিল্লিতে ফিরে গিয়ে তিনি ভাষণে বলেছিলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশ আক্রমণ করেছে।

ভারত তার সমুচিত জবাব দেবে। বাংলাদেশ হোগা, হোগা, হোগা। জয় হিন্দ্, জয় বাংলা বলে স্লোগান দিলেন। পাকিস্তান সেদিন রাতেই বনগা সীমান্ত দিয়ে ৬টি ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছিল। ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দাবাহিনী সেগুলিকে ঢুকতে দিয়েছিল। তারপর ভারতীয় ট্যাঙ্ক দিয়ে তাদের ঘিরে রাখে। পরে সেই ট্যাঙ্কগুলো গুড়িয়ে দেওয়া হয়। ৭ দিনের মাথায় পাকিস্তান বাহিনী চরম পদর্দুস্ত হয়ে পড়ে। ৯০ শতাংশ বাংলাদেশের এলাকা যৌথবাহিনীর সেনারা দখল করে নেয়।

১১ ডিসেম্বর তাজউদ্দিন সরকার যশোরে একটি জনসভা করে। সেই জনসভায় তাজউদ্দিন সাহেব বলেছিলেন, ৭ দিনের মধ্যে ঢাকা দখল করে নেব। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। জয় আমাদের প্রায় হয়েই গিয়েছে। এদিকে আকাশবানী থেকে ভারতের সামরিকবাহিনীর প্রধান ঘনঘন হিন্দি, উর্দু, ইংবেজি ও বাংলার পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেন আপনারা কে কোথায় আছেন জানি। এখনই ভারতীয় সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করুন, নাহলে আপনারা আর পাকিস্তানে ফেরত যেতে পারবেন না।

৫১ বছর আগের ঘটনা এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে। তাজউদ্দিনের  উদ্দেশ্য করে বলেন সচিবালয়ে গিয়ে দেখি (যার নাম আমরা মুজিবনগর করেছিলাম) যা যা করছে, কেউ কোথাও নেই। চলে গেলাম হিন্দুস্থান হোটেলে। যে ঘরে ডিপিধর থাকতেন, সেটির দরজা খোলা। ভিতরে পাঁচজন মন্ত্রী। মানেকেশ পূর্বাঞ্চলের প্রধান জয়দীপ সিং আরোরা, জেনারেল সওগত সিং, জেনারেল জেকব এবং জেনারেল ভোলা সরকার। তাদের সামনে ঢাকা শহরের একটি বড়ো মানচিত্র। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টসহ ছাউনিগুলো একদিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকদের বাসস্থান চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাজউদ্দিন বলছেন সামরিক এলাকায় বোমাবর্ষণ করুন, সিভিলিয়ান এলাকায় বোমাবর্ষণ করেবন না। ভারতীয় সামরিক বাহিনী তাজউদ্দিনের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন।

১১ তারিখ সকালেই ভারতীয় বিমানবাহিনীর কয়েকটি বিমান বাংলাদেশের ওপর চক্কর দিয়ে আসে। পাকিস্তানের হাতে তখন কোনও বিমান বা ট্যাঙ্ক ছিল না। ১২ ডিসেম্বর পোর্ট উইলিয়াম থেকে জেনারেল জেকব পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি হত্যার নায়ক জেনারেল নিয়াজিকে ফোন করে বলেন এখন তো আপনাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। যদি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান তাহলে একটু পরেই আমি ঢাকায় আসছি। নিয়াজি রাজি হলেন। জেনারেল জেকব, ভোলা সরকার, সওগত সিং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়াজির সঙ্গে দেখা করে প্রস্তাব দেন। জেকব তাকে বলেছিলেন, আপনি আপনার পরিবার এবং ৯৩ হাজার সেনাকে নিয়ে আত্মসমর্পন করুন। জেকব নিজেই আমাকে বলেছিলেন, কতবার আমরা আত্মসমর্পণের কথা বলছি ততবার নিয়াজি পাল্টা বলছিলেন, আত্মসমর্পণ নয়, যুদ্ধবিরতি। তাদের মধ্যে ৪০ মিনিট কথা হয়। জেকব বললেন, জেনালের আমরা ফিরে যাচ্ছি। আপনাদের কোনও নিরাপত্তা আমরা দিতে পারবো না। নিয়াজি জেকবকে বললেন, আমাকে ১০ মিনিট সময় দিন। পাশের ঘরে গিয়ে তিনি ভুট্টোর সঙ্গে কথা বলেন। জেকবকে তিনি বলেন, তাহলে কখন সারেন্ডার হবে? উত্তরে তিনি বলেন, কলকাতা ফিরে গিয়ে জানাব। তাকে রাতে জানিয়ে দেওয়া হলো তিনদিন পর ১৬ ডিসেম্বর। সারেন্ডার অনুষ্ঠানে নিয়াজি তার ব্যাজগুলি খুলে টেবিলের ওপর রাখেন। সঙ্গে সঙ্গে গোটা পৃথিবীতে এই আনন্দ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় বাঙালিরা উল্লাসে মেতে ওঠে। নিয়াজিকে নিয়ে পোর্ট উইলিয়ামে চলে আসেন জেকব। তখন রাত ৮টা। আমি নিয়াজির সাক্ষাৎকার চাইলাম। জেকব ভেতরে গিয়ে নিয়াজিকে বোঝালো আমাকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য। প্রায় ১ ঘন্টা ধরে জেকব চেষ্টা করলেও নিয়াজি বলে দেন তাঁর মাথা ধরেছে। কথা বলতে পারবেন না। পূর্ব বাংলা একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে জন্ম নিল। পাকিস্তান ভেঙ্গে দুই টুকরো হলো।

কন্ট্রোল রুম থেকে ইন্দিরা গান্ধিকে ফোন করা হলো। আর ১৫/১৬  মিনিটের মধ্যে আমরা লাহোর দখল করতে পারি। আমাদের সেনারা যেখানে দাড়িয়ে আছে তারা নির্দেশ চায়। ওয়াররুমের সদস্যদের খবর দেওয়া হলো। শ্যামমোনকেশকেও তলব করা হলো। ইন্দিরা গান্ধি একটু চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তখনকার ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজজগজীবন উল্লসিত হয়ে বললেন বহিনজি আমি কালই লাহোর যাব। আপনি লাহোর দখল করার নির্দেশ দিন। ইন্দিরা সভার কাথা শুনে অর্থমন্ত্রীকে বললেন, ভারতীয় সেনারা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানেই থাক। আর এগোতে হবে না। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। ইন্দিরা গান্ধি বললেন, ৬২ তে চিনের সঙ্গে যুদ্ধ, ৬৫ তে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ, আবার কালই চলে আসবে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা। আমাদের ভাণ্ডার শূণ্য শ্যামযেই কথায় সায় দিলেন। অন্যান্য মন্ত্রীরাও সায় দিলেন। আর কলকাতা শহরে দেখা গেল রাস্তায় রাস্তায় মিছিল। তারা স্লোগান দিচ্ছে, এশিয়ার মমিমূর্ত ইন্দিরা গান্ধি যুগ যুগ জিও। বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই। আর এই যুদ্ধে (১৩ দিন) আজকের বাংলাদেশ আর্থিক দিক থেকে বলীয়ান হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমার মনে আছে, ঢাকার কন্টিনেন্টাল হোটেলের লবিতে মাইক হাতে লে: জেনারেল ভোলা সরকার সাংবাদিকদের বলছেন ঢাকার রায়ের বাজারে একটি পুকুরে কয়েকশ মৃতদেহ পড়ে আছে। তিনি আমাদের সেখানে নিয়ে গেলেন। এরা সকলেই ছিলেন বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, অধ্যাপক, শিক্ষক। ১৩ থেকে ১৬ তারিখের মধ্যে পাক সেনারা তাদের গুলি করে মেরে সেখানে ফেলে দিয়েছিল।  সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে ধ্বংস করতে ছেয়েছিল। সববিছুকে মিথ্যা প্রমাণীত করে শেখ হাসিনা তাঁর বাবার মতোই দেশকে  এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।  স্বপ্ন পূরণের নতুন দিগন্তে এখন বাংলাদেশ।

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননাপ্রাপ্ত ভারতীয় সাংবাদিক

 

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;