বিশ্বস্বীকৃতি পেল বিশ্বকবির শান্তিনিকেতন

ছবি: সংগৃহীত
‘দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে/যাবে না ফিরে’—কালোত্তীর্ণ পুরুষ কবিগুরুর সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উদার চিন্তাধারার ছাপ এই দুই লাইনে উপলব্ধি করা যায়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন সীমাহীন জ্ঞানের পরিপূর্ণ বিকাশ। বিশ্ব মানবতাবাদের চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শান্তিনিকেতনকে সমগ্র বিশ্বে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন কবি। কবিগুরুর সেই বাসনা এবার পূরণ হলো ইউনেসকো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসেবে স্বীকৃতির মাধ্যমে।
বাউল লালমাটির দেশ শান্তিনিকেতন উজ্জ্বল হয়ে উঠল বিশ্ব মানচিত্রে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন পেল বিশ্বস্বীকৃতি। বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসেবে তকমা পেয়েছে শান্তিনিকেতন।
গতকাল (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এ ঘোষণা দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (আগের নাম টুইটার) ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়ে এ কথা জানায় ইউনেসকো। তাতে বলা হয়, ‘ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ভারতের শান্তিনিকেতন। অভিনন্দন!’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত শান্তিনিকেতনকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিতে বহুদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিল ভারত সরকার। অবশেষে আজ সেই স্বীকৃতি দিল ইউনেসকো।
শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেসকো বলছে, ‘কলকাতা থেকে এক শ মাইল উত্তরে অবস্থিত শান্তিনিকেতন মূলত একটি আশ্রম। এটি প্রতিষ্ঠা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে যেকোনো মানুষ সেখানে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার আরাধনা করতে পারতেন।’
শান্তিনিকেতন যে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে, কয়েক মাস ধরেই অবশ্য সে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বিশেষ করে কয়েক মাস আগে ফ্রান্সভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটসের (আইসিওএমওএস) পক্ষ থেকে শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করার পর থেকে এ আলোচনা জোরালো হয়।
গত শুক্রবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ইউনেসকোর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৫তম বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার দুই দিন পর গতকাল শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানাল ইউনেসকো।
উল্লেখ্য, ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে স্কুল এবং ১৯২১ সালে বিশ্বভারতীর পথ চলা শুরু। ১৯৫১ সালে এই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। শান্তিনিকেতনেই জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।