বাঁশির সুরের মূর্ছনায় যার সংসারের সুর উঠে
কৃষ্ণের বাঁশির সুরে বিমোহিত হয়ে রাধা পড়েছিলেন তার প্রেমে। জার্মানির হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার গল্প কে না জানে। বিখ্যাত গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরের ‘সখি কারে ডাকে ঐ বাঁশি নাম ধরিয়া তুই দে না বলিয়া।’ বাঁশি নিয়ে এমন হাজারো কবিতা, গান, প্রেম উপাখ্যান, গল্প ও কবিতা লিখেছেন বিশ্বের নামীদামী লেখকরা। আসলে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায় বাঁশির সুরের মূর্ছনায়। বাঁশির সুর মানুষকে যে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এমনই এক বাঁশিওয়ালা গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে বাঁশির সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তার নাম বিদ্যুৎ খান। বাড়ি টাঙ্গাইলে। শুধু বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দই দেন না সেই বাঁশির সুরের মূর্ছনা উঠলেই তার সংসারের বাঁশির সুর উঠে।
মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) রাত ১২টার কিছু সময় আগে চারদিকে ট্রেন গন্তব্যের যাত্রীদের তাড়াহুড়ো। বিভিন্ন মালামাল নিয়ে ট্রেনে উঠার ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে মানুষের মাঝে। হকার ও যাত্রীদের হইহুল্লোড়ে কান ঝালাপালা। এমন সময় প্লাটফর্মের এক পাশ থেকে আকস্মিক বাঁশির সুর ভেসে আসে। মত মাতানো সুরের টানে অনেকেই তার সামনে গিয়ে জড়ো হলেন। একের পর এক গানের সুর তুলে দর্শকদের আটকে দিলেন ঘন্টাখানেক।
একান্ত আলাপচারিতায় বাঁশিওয়ালা বিদ্যুৎ খান বলেন, ‘পেশায় ছিলাম গাড়ি চালক। রাস্তাঘাটে এখন গাড়ি চালাতে অনেক সমস্যা তাই পেশা বদল করেছি। এখন বাঁশি বিক্রি করেই সংসার চালাই। তবে আগের মত বাঁশির চাহিদা নেই। বিক্রিও খুব বেশি নয়।’
বাঁশি বাজানোর শেখার গল্প শুনিয়ে বললেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বড় ভাইয়ের বাঁশি বাজানো মন দিয়ে শুনেছি। আস্তে আস্তে আমি তা রপ্ত করি। আধুনিক, বিচ্ছেদ, ছায়াছবির গানের পাশাপাশি হিন্দি গানেরও সুর দিতে পারি।’
জীবন সংসারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমাদের দাম্পত্য জীবন। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। জয়দেবপুরেই একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি।’
বাঁশি তৈরির উপকরণ জোগাড় করা কঠিন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘রাঙ্গামাটির পাহাড়ে এক ধরণের বাঁশ জন্মে। ওই বাঁশ দিয়েই বাঁশি তৈরি করা হয়। নিজেই বাঁশি তৈরি করি। বাঁশি তৈরির কৌশলের ওপর নির্ভর করে কোন বাঁশিতে কি স্কেলে সুর তোলা যাবে। ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত একেকটি বাঁশি বিক্রি করা হয়। প্রফেশনাল কাজের জন্য যা ব্যবহার করা হয় তা বিক্রি হয় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের মনোহরী দোকানী শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ‘বাঁশিওয়ালা খুব ভালো লোক। বাঁশি বিক্রি হোক আর না হোক সে সারাক্ষণ বাঁশি বাজাতে থাকে। আমরা তার বাঁশির সুর শুনি। এতে স্টেশন এলাকায় এক নতুন মাত্রা পায়।’