বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাফল্য ও আদ্যোপান্ত



সাফাত জামিল, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
২০১১ সালে ওডিআই স্ট্যাটাস অর্জন করে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল

২০১১ সালে ওডিআই স্ট্যাটাস অর্জন করে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল

  • Font increase
  • Font Decrease

তিন-তিনবার এশিয়া কাপের ফাইনালে হারের স্বাদ পাওয়া বাংলাদেশের নামের পাশে কিন্তু রয়েছে চ্যাম্পিয়নের তকমা। তবে সাকিব-তামিমদের টাইগার বাহিনী নয়, বিজয়ের এই মুকুট এসেছিল সালমা-রুমানাদের ‘টাইগ্রেস বাহিনীর’ হাত ধরে। বলা হচ্ছে প্রমীলা ক্রিকেটে এশিয়ার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের কথা—ব্যাট-বলের লড়াইয়ে ছেলেদের পারফরমেন্সের সাথে যারা পাল্লা দিয়ে চলছেন প্রায় সমানতালে।

১২ বছর আগে ব্যাংককে থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা পড়ে এদেশের নারী ক্রিকেট দলের। প্রথম দুই ম্যাচেই জয়ের তৃপ্তি নিয়ে টাইগ্রেস বাহিনী সেবছরই এসিসি নারী টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে জিতে নেয় শিরোপা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সালমা খাতুনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলকে। তবে ২০১১ সালে কোচ মমতা মাবেনের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করে টাইগ্রেসরা। সেবার নিজেদের মাটিতে আয়োজিত নারী বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ৫ম স্থানে থেকে শেষ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাওয়া ৯ উইকেটের জয়ের মধ্যদিয়ে নেদারল্যান্ডসকে হটিয়ে বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো লাভ করে ওয়ানডে স্ট্যাটাস।

বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষ দশে প্রবেশ করা বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এরপর দ্বিপাক্ষিক এবং ত্রিদেশীয় সিরিজ মিলিয়ে ওডিআই খেলেছে সর্বমোট ৩৬টি। তাতে সফলতার মুখ দেখা গেছে মোটে ৮ বার, আর ফলাফলশূন্য রয়ে গেছে দুটি ম্যাচ। র‌্যাংকিংয়ের নয় নম্বর অবস্থানেও বেশিবার পরিবর্তন আসেনি। তবে বাঘিনীদের গর্জন টের পাওয়া গেছে বর্তমান ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ও জনপ্রিয় সংস্করণ টি-টুয়েন্টিতে। ৬৬ ম্যাচে ২৫ জয়ের পরিসংখ্যান খুব একটা আহামরি না হলেও একসময় আইসিসি টি-টুয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান ছিল টাইগ্রেসদেরই দখলে।

২০১৭ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে বাংলাদেশ


এখন পর্যন্ত ওডিআই বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণে ব্যর্থ বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এরই মধ্যে খেলে ফেলেছে তিনটি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ। এ সংস্করণের বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে দুইবার। এছাড়াও চলতি বছর নিজেদের ৮ টি-টুয়েন্টির সবকটিতেই জয়ের মুখ দেখেছে জাহানারা-খাদিজাদের দল। এশিয়ান গেমসেও সাফল্যের ভারী পাল্লা রয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের—২০১০ ও ২০১৪ আসরে তাঁদের ঝুলিতে গেছে রৌপ্যপদক।

ফিরে যাই এশিয়া কাপের আলোচনায়। ২০১২ সালে ঘরের মাটিতে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হারা সাকিব-তামিমরা পরের দুই ফাইনালে হারে ভারতের কাছে। তবে সেই ভারতের মেয়েদের হারিয়েই ২০১৮ সালে এশিয়ার ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে বাঘিনীরা। কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এ প্রমীলা টুর্নামেন্টের সপ্তম আসরে আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে স্বাগতিক মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ড। কোচ অঞ্জু জৈনের অধীনে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা বাংলাদেশ সেমিফাইনালে স্বাগতিকদের ৭০ রানে হারিয়ে প্রথমবার ফাইনালে মুখোমুখি হয় আগের সবগুলো আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতের। গ্রুপ পর্বেও ভারতকে হারিয়ে আসার পর রুদ্ধশাস ফাইনালে তিন উইকেটের জয়ে ভারতের পর একমাত্র দল হিসেবে এশিয়া কাপ ঘরে তোলে সালমা-জাহানারারা।

ভারতের পর একমাত্র দল হিসেবে প্রমীলা এশিয়া কাপ জেতে বাংলাদেশ


টাইগ্রেসদের বর্তমান কোচিং স্টাফে হেড কোচ অঞ্জু জৈন ছাড়াও আছেন আরও দুই ভারতীয়—সহকারী কোচ দেবিকা পালশিকর আর ফিজিও অনুজা দলবি। তাঁদের মিলিত প্রচেষ্টায় ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংসহ সব জায়গাতেই উন্নতির ছোঁয়া পেয়েছে বাংলাদেশ দল। শুধু জাতীয় দলই নয়, দারুণ গতিতে ছুটছে নারীদের ইমার্জিং ক্রিকেট দলও। মাস দুয়েক আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে তারা।

এছাড়া ব্যক্তিগত অনেক সাফল্য এসেছে গত দুই বছরে। একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে ওডিআই হ্যাটট্রিকের অধিকারী রুমানা আহমেদ জায়গা পেয়েছিলেন ২০১৮ সালের আইসিসি বর্ষসেরা টি-টুয়েন্টি দলে, সাথে পান বিশেষ ‘টিম অব দি ইয়ার’ ক্যাপ। আর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অনবদ্য পারফর্মেন্সের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এবছরের ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ—উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জে ডাক পেয়েছিলেন অলরাউন্ডার জাহানারা আলম। ভেলোসিটি দলের হয়ে অভিষেকও ঘটে তার।

ক্রিকেটপাড়ায় ঝড় তুলছে নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের বেতন ও ভাতার বৈষম্যের বিষয়টি


তবে এমন সব অর্জনের পরও ক্রিকেটপাড়ায় নিয়ত ঝড় তুলছে এদেশের নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের মধ্যকার বেতন ও ভাতার বৈষম্যের বিষয়টি। বিশেষ করে ছেলেদের ছাপিয়ে মেয়েদের এশিয়া কাপ জেতার পরপরই আলোচনায় এসেছে এই বৈষম্যের চিত্র—যেখানে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলকে দুই কোটি টাকা ও প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেবার ঘোষণা দেয় বিসিবি। নারী দলের চুক্তিবদ্ধ ১৭ ক্রিকেটারের বেতন যেখানে মাত্র ত্রিশ হাজার, সেখানে ছেলেদের দলে সর্বনিম্ন বেতনও প্রায় এক লাখ টাকা। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে পার্থক্যটা আরো চোখে পড়ার মতো—ছেলেদের ২৫-৩০ হাজার টাকা ম্যাচ ফি’র বিপরীতে মেয়েরা পান মোটে ৬০০!

অন্যদিকে খেলোয়াড়েরা মনে করছেন, বর্তমান সময়ের এ সাফল্যগুলো একটি সুন্দর ভবিষ্যতের ভিত হিসেবে কাজ করবে। আগামীর নারী ক্রিকেটারদের ব্যাপক সুযোগ সুবিধার পথ তৈরি করে দিতে আত্মোৎসর্গে দ্বিধা নেই সালমা খাতুনের। আর উইকেটকিপার নিগার সুলতানা মনে করেন, অবহেলিত নারী ক্রিকেটে মিডিয়ার ফোকাস ব্যাপকভাবে আসাটা জরুরি। তবে রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব হবে দলের ধারাবাহিক সাফল্যের মাধ্যমে, এমনটাই বিশ্বাস করেন তিনি।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জে ডাক পেয়েছিলেন জাহানারা আলম


সদ্য সমাপ্ত ২০২০ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফাইনাল ম্যাচে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করা সালমা খাতুনের টাইগ্রেস বাহিনী ‘এ’ গ্রুপে লড়বে স্বাগতিক ও বর্তমান শিরোপাধারী অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা এবং ভারতের বিরুদ্ধে। ভারতের বিপক্ষে বাঘিনীদের প্রথম ম্যাচটি হবে পার্থের ঐতিহাসিক ওয়াকা ক্রিকেট গ্রাউন্ডে—যেখানে এখন পর্যন্ত খেলা হয়নি বাংলাদেশের পুরুষ বা নারী কোনো ক্রিকেট দলেরই। তবে তার আগে আগামী মাসের শেষে দুই সপ্তাহের সফরে পাকিস্তান যাবে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজের পাশাপাশি থাকছে দুই ওয়ানডের আয়োজন।

আসন্ন টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এসব টুকরো অর্জন নিয়েই সম্ভাবনায় বুক বাঁধছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল আর বিসিবি। দলের তারকা খেলোয়াড়দের বয়সও হয়ে গেছে প্রায় ত্রিশ, তাই বিশ্বমঞ্চে দেশের সামর্থ্য প্রমাণ করতে ২০২০ সালের আসরকেই টার্গেট করে এগোচ্ছে লেডি টাইগাররা। ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বাংলাদেশ দল—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

   

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;