বিশ্ব পর্যটন দিবসের বিশেষ সাক্ষাৎকার (পর্ব ৩)

সংখ্যায় বেশি ট্যুরিস্ট না, চাই কোয়ালিটি ট্যুরিস্ট



মারিয়া রিমা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান:

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান:

  • Font increase
  • Font Decrease

২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের অবস্থান, সমস্যা, সমাধান ও বিবিধ বিষয় নিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ডিপার্টমেন্টের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান-এর ৩ পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রকাশিত হলো শেষ পর্ব। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট মারিয়া রিমা

● প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
● দ্বিতীয় পর্ব পরতে ক্লিক করুন

বার্তাটোয়েন্টিফোর: কক্সবাজার প্রসঙ্গ। আমরা বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, বাংলাদেশের প্রধান ট্যুরিজম ডেসটিনেশান। আপনি কদিন আগে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসলেন। কক্সবাজার কেমন আছে?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: হিজড়াদের উৎপাত সব। সমুদ্র সৈকতে হিজড়া এসে বলে যদি, “এই দে পয়সা দে” কী করবেন? ভিক্ষুক আমি আগে কোনোদিন সমুদ্র সৈকতে দেখিনি। আর দেখলাম কুকুর। একদল কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করছে। মানুষ টাকা খরচ করে এইসব ডিস্টার্বেন্সে যাবে নাকি? আপনি একটা কর্নার করে দেন যারা সাইলেন্সটাকে উপভোগ করতে চায়। কক্সবাজার তো শেষ হয়ে গেছে। কী বলব! এখন আমাদেরকে ইনানীর দিকে আগাতে হবে।
এর মধ্যে আমি ইনানীতে একটা কাজ করেছি। এনভায়রনমেন্ট নিয়ে। এখানে আমি যেটা দেখিয়েছি যে, ইনানী বিচ যেটা বলি, এই ইনানী বিচ ছাড়াও কিন্তু আরো তিনটা বিচ আছে যেখানে মানুষরা যায় না। আমি ইনানী বিচের একদম ম্যাপিং করে দেখিয়েছি, এই জায়গাটায় কচ্ছপ ডিম পাড়ে এবং এখানে তাদের বংশবৃদ্ধি হয়। এই এরিয়াকে টোটালি ক্লোজ করে দিতে হবে পার্টিকুলার পারপাস। টুরিস্টদের খালি ইনানী বিচ না। গাড়ি করে গেল, একটু পাড়ে হাঁটাহাঁটি করল এরকম না। আপনি ওখানে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট করেন। লোকজন একটু আনন্দ ফুর্তি করবে সে ব্যবস্থা তো থাকতে হবে। বাইরের দেশে কত কিছু আছে দেখেন এন্টারটেইনের জন্য। ওদের বিচে যা আছে সব আমাদের এখানে এপ্রোপ্রিয়েট নাও হতে পারে। যেগুলা দেয়া যায় সেগুলার তো ব্যবস্থা করতে হবে। তো এখানে শুধু এক বিচ, ইনানী বিচে লোকদেরকে না এনে তিনটা বিচ আপনি একসঙ্গে করেন। তাহলে চাপও বেশি পড়ল না, ভ্যারাইটিজও হলো। এখন কক্সবাজারকে ডেভেলপ করার জন্য আর কিছু নাই। আমাদের এখন স্প্রেড করতে হবে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: আমাদের কুয়াকাটা আছে, সেন্টমার্টিন আছে, আমাদের হাওর আছে। এরা বেঁচে থাকবে? আমরা কি তাদের বাঁচতে দিব?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: আমরা তো নষ্ট করে দিচ্ছি। তবে কিছু কিছু জায়গা এখন পর্যন্ত ঠিক আছে। যেমন কুয়াকাটায় এখনো বেশি ট্যুরিস্ট যায় না এজন্য কুয়াকাটা এখনো ঠিক আছে। এনভায়রনমেন্টালি ঠিক আছে কিন্তু ডেসটিনেশান হিসেবে ঠিক নাই।
আমাকে পটুয়াখালীর ডিসি একবার ফোন করেছিল। বলে যে, স্যার, কুয়াকাটা নিয়ে কী করা যায়? আমি বললাম, কুয়াকাটা নিয়ে খুব সহজ একটা বুদ্ধি আছে। বলল, স্যার, আপনি তাহলে একবার আসেন। তারপর তো উনি ট্রান্সফার হয়ে গেলেন আরেক জায়গায়। সেটা হচ্ছে কী আমি গোয়াতে দেখেছি। গোয়া বিচ কিন্তু ছোট্ট বিচ। কিন্তু আপনি ট্যুরিস্ট হয়ে যদি গোয়াতে যান দেখবেন বিচ কী সুন্দর ঝলমল করছে। লাইটিংয়ে বলেন, বালুর ওপরে খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এটা হচ্ছে ওটা হচ্ছে, গান হচ্ছে। আমি তাদের বললাম, এভাবে তোমাদের বিচ কি অপরিষ্কার হবে না? তারা বলে, না, নষ্ট হবে না। বললাম, কেন? বলে, আমাদের এই জায়গাটা নিলামে দেয়া হয়। এখানে এই জায়গাটা ধরেন তিনটা রেস্টুরেন্টকে নিলাম দিয়ে দিলাম। রেস্টুরেন্টকে এরিয়া বুঝিয়ে দেয়া হয় এবং বলে দেয়া হয়, এই এরিয়ায় যদি কোনো রকম ময়লা আবর্জনা পাওয়া যায় তাহলে তোমাকে ফাইন করা হবে। ওদের কাজই হচ্ছে, যে যাই ফেলুক না কেন ওগুলো পরিষ্কার করা। একদিকে কী হচ্ছে রাতের বেলা বিচ ঝলমল করছে অন্যদিকে প্রচুর ট্যুরিস্ট আসছে। এবং ওখানে কোনো পার্মানেন্ট টয়লেট রাখা হয়নি। সব টেম্পোরারি টয়লেট। এরকমভাবে আমরা কুয়াকাটা করতে পারি আর কী।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: অষ্টগ্রাম আমি গিয়েছিলাম স্যার। ওখানকার কমিউনিটি হাওরের ওপর বড় রাস্তা ব্রিজ চায়। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে আমরা হাওর রক্ষা করতে পারি?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: যেখানে যে পরিবেশ ওই পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। যেমন ধরেন, টাঙ্গুয়ার হাওর। ওইখানে হলো, সাবমারজেন্স রোড। মানে হলো, পানি যখন হবে তখন আপনার রোড ইউজ করতে পারবেন না। আবার যখন পানি সরে যাবে তখন আবার এই রাস্তাটা বের হয়ে আসবে। এই সিস্টেম আছে তো। তারা যদি চায় এই সিস্টেম করে দেন। পানির সময় পানি থাকবে। আপনি ব্রিজ করে, বাঁধের মতো করে রাস্তা বানাবেন, পানির ফ্লো নষ্ট করবেন, আসল যে বৈশিষ্ট, যে এট্রাকশান এটা নষ্ট করবেন, এটা কী ধরনের স্টুপিডিটি! ওখানে এমনিতেও বড়সর ব্রিজ একটা করে রেখেছে দেখলাম। দেখতে কী অদ্ভুত! অবাক কাণ্ড!

বার্তাটোয়েন্টিফোর: আমাদের ডেসটিনেশানগুলোকে আমরা কিভাবে বাঁচাতে পারি?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: এগুলো উদ্যোগ নিতে হবে কমিউনিটিকে। গভঃমেন্ট তো শুধু আইন করতে পারবে। আর ট্যুরিস্ট পুলিশদেরকে এই আইন শিখাতে হবে। ওদেরকে মারামারি শেখানোর দরকার নাই। এই আইনগুলো শেখাতে হবে। আরেকটা গ্রুপ হলো, আমাদের ট্যুর অপারেটররা। ট্যুর অপারেটরদের অবশ্যই একজন গাইড দিয়ে দেবে। এই গাইডকে শিখিয়ে দিতে হবে “হোয়াট টু ডু, হোয়াট নট টু ডু”।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: আমাদের দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার কি আন্তর্জাতিক মানের?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: আমাদের এত কম সংখ্যক ট্যুরিস্ট বাইরে থেকে আসে যে, ইনফ্রাস্ট্রাকচারের দিকে এত মনোযোগের দরকার নাই। আমাদের দরকার ডোমেস্টিক ট্যুরিজমের দিকে নজর দেয়া। ইনফ্রাস্ট্রাকচার বলতে যদি বলেন, রাস্তা ঘাট, ব্রিজ তাহলে দরকার আছে। আমাদের কিছু ডেসটিনেশান আছে সেখানে আমরা ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অভাবে যেতেই পারি না। সিলেটের দিকে এমন কিছু ডেসটিনেশান আছে। আর যখন দেখবেন এক জায়গায় ফরেন ট্যুরিস্ট যাচ্ছে, তখন আপনি ইন্টারন্যাশনাল মানের ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করলেন।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: পর্যটনে এখন ট্যুরিস্ট পুলিশ যুক্ত হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ সম্পর্কে মতামত, সাজেশান আছে আপনার?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: ট্যুরিস্ট পুলিশ করা হোক এটা নিয়ে আমরা খুব সোচ্চার ছিলাম। ট্যুরিস্ট পুলিশদের ট্রেনিংও করানো হয়। আমিও মাঝে মধ্যে ট্রেইনার হিসেবে যাই। কিন্তু আমি যে বিষয়টা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করি সেটা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত সাধারণ পুলিশ এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ কী সেটা ভাগ করে দেয়া হয় নাই। পুলিশ মানে একটা আলাদা মনোভাব চলে আসে, “মারদাঙ্গা”। আমার পর্যটনের পুলিশ হতে হবে মারদাঙ্গা না। আমার পর্যটনের পুলিশ হতে হবে ট্যুরিস্ট ফ্রেন্ডলি। আমি এদেরকে বারবার বলেছি, দেখেন, আপনারা পর্যটন পুলিশদের যে ইউনিফর্ম দিয়েছেন, ইমিডিয়েটলি চেঞ্জ ইট। এটা দেখলেই মানুষজন ভয় পাবে আর পুলিশেরও রক্ত গরম থাকবে। তো সাদা পোশাকে পুলিশ হতে হবে। যেন কেউ না বুঝতে পারে। কোনো সমস্যা হলে সে এগিয়ে আসবে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: দেশের সাম্প্রতিক ক্যাসিনো ইস্যু নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: শোনেন, ক্যাসিনো বলে এত চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে, এগুলো কি ক্যাসিনো? এগুলো হলো জুয়া যেটা সবসময় কিছু মানুষ খেলছে। এগুলো বন্ধ করে দিলেও কিছু লোক খেলবে। হয়তো অন্য কোথাও গিয়ে জমাট হবে, খেলবে। ক্যাসিনো অনেক বড় আয়োজনের ব্যাপার। ঢাকা শহরে ৬০টা ক্যাসিনো আছে এটা বিশ্বাসযোগ্য?
আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছে, ক্যাসিনো বন্ধের কারণে পর্যটনের ওপর প্রভাব পড়বে না? আমি বললাম, ঢাকায় ক্যাসিনো আছে সেটা আমি জানলাম না। তাহলে এটা পর্যটনের ওপর কিভাবে প্রভাব ফেলবে?
তবে বাংলাদেশে ক্যাসিনো অবৈধ এবং ইন্ডিয়াতেও অবৈধ। নেপালে ছোট আকারে কিছু আছে। ফিলিপিনসে্ প্রচুর ক্যাসিনো আছে। ইন্ডিয়ার গোয়াতে আছে ক্যাসিনো, জাহাজে। ওখানে ওরা বলছে, আইন যেটা আছে সেটা ল্যান্ডে আছে, সুতরাং আমরা পানির ওপর জাহাজে ক্যাসিনো করলাম। আমরা কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য ক্যাসিনো বড় পরিসরে করতে পারি আর কী।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: এখন দেশে ট্যুরিজমের ব্যাপক ডিগ্রি, ইউনিভার্সিটি, ইনিস্টিটিউট গড়ে উঠেছে। আমরা কতটা দক্ষ হচ্ছি? বা হচ্ছি না কেন?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: আমি বিভিন্ন জায়গায় বলি। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে বলি। আমরা ট্যুরিজমের নামে হাফ এডুকেটেড লোক দিতে পারছি। আর যেগুলো প্রাইভেট ইন্সটিটিউটগুলো আছে তাদের লেখাপড়ার মান এতই সাব স্ট্যান্ডার্ড যে এদেরকে দিয়ে কোনো কাজই হবে না। তিনমাসে ট্রেনিং! তিনমাসের ট্রেনিং আপনার কী হয়? বরং পর্যটন কর্পোরেশনের HTTI ভালো। এখন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি কয়েকটা কলেজে চালু করলেন। উনি আমাকে ডেকেছিলেন, যে রাশেদ ভাই, আপনি আমার বিবিএটার ব্যাপার একটু দেখেন। এখানে আমি একটা সিলেবাস করে দিয়েছি। যে সিলেবাসে পাস করলে পরে, এরা আসলেই ট্যুরিজমের এসেট হয়ে বের হবে। যেমন ধরেন আপনার হাউজ কিপিং। ৩ ইউনিট। ২ ইউনিট হবে ক্লাসে। আর এক ইউনিট পুরো প্র্যাকটিক্যাল হবে।


এবং এর ফলও দেখছি। ধানমন্ডিতে যে বেঙ্গল গ্রুপ আছে না একটা, ওখানে দেখি ইউনিফর্ম পরা ওয়েটার, সাপ্লাই করে ওখানের কজন ছেলে এসে আমাকে সালাম দিচ্ছে। ডেফোডিল ইন্সটিটিউটে আমি কোর্স নিতাম। ওরা বলছে, স্যার, আমরা এখানে পার্টটাইম করছি। এতে আমাদের ইনকামও হয় এবং এই একটা ভালো জব এক্সপেরিয়েন্স হয় যেটা পরে ডিরেক্ট জবে কাজে দেয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদের জন্য এরকম ব্যবস্থা করতে পারলে তাদের জবের জন্য ভাবতে হতো না। আমাদের আগামীতে ৫/৭ বছরের মধ্যে ১৯টা ফাইভ স্টার হোটেলের অনুমোদন হয়েছে। ১৯টায় যদি ৫০০ করে লোক লাগে আপনার প্রায় ১০ হাজার। আর আমার কতজন ছেলেমেয়ে বের হচ্ছে! এরা কেন ইন্ডিয়া থেকে, নেপাল থেকে লোক নিয়ে আসবে? আমরা স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখলে তারা কেন বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসবে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: ঢাকা ভার্সিটিতে ট্যুরিজম বিভাগ চালু করতে আপনিই প্রথম প্রস্তাব রেখেছিলেন?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: সেটা ২০০৬/৭ সালে। আজাদ চৌধুরী সাহেব ছিলেন তখন ভিসি। যেহেতু আমি ট্যুরিজমে পিএইচডি করে আসি। ঢাকা ইউনিভার্সিটির সিনেটে আমি প্রথম বলেছিলাম, স্যার, ট্যুরিজমের যে ভবিষ্যত এটা এত পটেনশিয়াল, বাংলাদেশে এটাতে পড়াশোনার ব্যবস্থা করানো উচিত এবং সে হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রগণ্য থেকে একটা ট্যুরিজম ইন্সটিটিউট করতে পারে। এবং এতে সবাই সাপোর্ট দিয়েছিল। আনফরচ্যুনেটলি ফয়েজ সাহেবরা এসে তড়িঘড়ি করে বিজনেস ফ্যাকাল্টির আন্ডারে এটা তৈরি করল একটা ডিপার্টমেন্ট। তখন আমি ছিলাম না। আমি ছিলাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দায়িত্বে। ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্ট যতদিন থাকবে এটা একটা বোঝা হয়ে থাকবে।
আমি চেয়েছিলাম আলাদা ইন্সটিটিউট, ডিপার্টমেন্ট না। যেখানে আমরা নিজেদের মতো করে স্টুডেন্টদের পড়াশোনা করাব, ট্রেনিং করাব, জব রিপ্লেস করাব। ফ্যাকাল্টিতে হওয়ার কারণে নয়টা ডিপার্টমেন্ট আছে। নয়টা ডিপার্টমেন্টে কিছু কিছু আইন কম্পলসারি। আমাদের ৩ ইউনিটের মধ্যে ১ ইউনিট যেটা বাইরে তিনমাসের যদি প্র্যাকটিক্যাল করাই ফ্যাকাল্টি সেটা অনুমতি দেবে না। অন্য ডিপার্টমেন্টে যেহেতু এটা নাই।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: ট্যুরিজম নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনের সাথে আপনি জড়িত আছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশকে আপনি রিপ্রেজেন্ট করছেন। আপনি কতটা সন্তুষ্ট?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: আমি যেখানেই গেছি বাংলাদেশ ট্যুরিজম নিয়েই গেছি। সেখানে দেখি লোকজন বেশ আগ্রহ দেখায়, আগ্রহ দেখায় মানে অ্যাম্বারেসও করা হয়েছে আর কি। অস্ট্রেলিয়ায় গেলাম, ওখানে যখন বললাম, “উই হ্যাভ দি লঙ্গেস্ট আনব্রোকেন সি বিচ অ্যান্ড ইট ইজ হান্ড্রেড টুয়ান্টি কিলোমিটারস্।” তখন ওই ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসার, সে দাঁড়িয়ে বলল, “হাউ লং ডিড ইউ টেল?” আমি বললাম, “ইট ইজ হান্ড্রেড টুয়ান্টি কিলোমিটারস্ লং আনব্রোকেন।” তখন সে বলছে, “আর ইউ কিডিং?” আমি তাকে কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারলাম না।
পরে আমি ভাবলাম তারা এরকম কেন বলছে। দেখালাম যে, অস্ট্রেলিয়াতে লঙ্গেস্ট বিচ ৭/৮ কিঃমিঃর বেশি নাই। ওদের দৃষ্টিটা ওই ৭/৮ কিঃমিঃ পর্যন্তই। ১২০ কিঃমিঃ হতে পারে এটা তার ধারণার মধ্যে নাই। এবং আমাদের প্রচারণার অভাবে বলেন, আমাদের কমিউনিকেশানের অভাবে আমরা মানুষদের জানাতে পারছি না। আমি যেখানে গিয়েছি বলেছি। আমি সাউথ কোরিয়াতে টাঙ্গুয়ার হাওর সম্পর্কে বলেছি। টাঙ্গুয়ার হাওর হলো হানড্রেড স্কয়ার মাইল। এটা শুনে তো ওরা অবাক হয়ে যায়। ১০০ বর্গমাইল শুধু একটা ব্যাকওয়াটার এরিয়া! এগুলো অন্তত আমরা যেখানে গিয়েছি আমরা সেখানে সফলভাবে বলে এসেছি।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: ইন ফিউচারে বাংলাদেশে ট্যুরিজমের অবস্থান কেমন দেখতে চান?

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব অপটিমিস্টিক লোক। আমাদের দেশে অনেক কিছু হচ্ছে। তার পরেও তো আমরা কিছুটা এগিয়েছি। দিন যত যাবে উন্নয়ন কিন্তু তত হবেই। আমরা পিছিয়ে যাব না। আমরা আগাবই। আমার রিসেন্ট যে এরিয়া হচ্ছে, সেটা হচ্ছে আমরা ভবিষ্যতে কতটুকু আগাব এটা আমাদের এখন চিন্তা করার সময় আসছে।
আমি কি বাংলাদেশে ১ মিলিয়ন ট্যুরিস্ট আনাব? নাকি আমি কোয়ালিটি ট্যুরিস্ট আনাব ৫ হাজার। এখন ইন্ডিয়া থেকে ট্যুরিস্ট আসলে ৫০ টাকাও খরচ করবে না। নিজের আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়াবে, বাসে করে ঘুরে বেড়াবে। এদেরকে নিয়ে আসব? নাকি অন্য দেশের কিছু ট্যুরিস্ট যারা আমাদের এখানে ৫ হাজার ডলার খরচ করে যাবে তাদের আনার চেষ্টা করব? এটা এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ। আমি সংখ্যায় বেশি ট্যুরিস্ট আসুক চাই না। আমি চাই কোয়ালিটি ট্যুরিস্ট আসুক, কম ট্যুরিস্ট আসুক। কারণ ট্যুরিজম যেভাবে আপনার এনভায়রনমেন্টকে ধ্বংস করে দিচ্ছে মোটামুটি সব দেশ এখন এই নিয়ে চিন্তা করছে।

বার্তাটোয়েন্টিফোর: ওকে স্যার। আমরা এখানেই আলোচনা শেষ করছি। আপনাকে অনেক থ্যাংকস সময় দেবার জন্য।

ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান: আপনাকেও। আপনার প্রশ্নগুলো ইন্টারেস্টিং ছিল।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;