আরব্য রজনী বদলে দিয়েছিল বিশ্বসাহিত্যের গতিমুখ



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
আরব্য রজনীর প্রভাব পড়েছিল পরবর্তী প্রতিটি সংস্কৃতিতে

আরব্য রজনীর প্রভাব পড়েছিল পরবর্তী প্রতিটি সংস্কৃতিতে

  • Font increase
  • Font Decrease

এই তো ক’দিন আগের কথা। তাও আবার এই বাংলাদেশে। পাড়া বা মহল্লার মানুষ দলবেঁধে বিটিভি খুলে অপেক্ষা করত সন্ধ্যায়। উপলক্ষ ‘আলিফ লায়লা’। আলাদিনের জাদুর চেরাগ, আলি বাবা ও চল্লিশ চোর কিংবা সিন্দাবাদের দুঃসাহসিক সমুদ্রযাত্রার গল্প মানুষের মুখে মুখে ফিরছে তারও কয়েক প্রজন্ম আগে থেকে। এবং আরো আশ্চর্যের কথা হলো; পূর্বে চীন থেকে পশ্চিমে ইংল্যান্ড পর্যন্ত প্রায় সমানভাবে পরিচিত এই আখ্যানগুলো। বলা হয়ে থাকে সাহিত্যিক স্টাইলগুলোর আধার এটি। রোমান্টিক, এডভেঞ্চার থেকে শুরু করে রহস্য এবং উপকথা পর্যন্ত।

গ্রন্থের মূল নাম ‘আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা’ বা সহস্র এক আরব্য রজনী। ইংরেজিতে এরাবিয়ান নাইটস নামেই সমধিক বিখ্যাত। সৃষ্টির ব্যাপারে বাগদাদে নবম শতকের আব্বাসীয় খলিফা হারুন আল রশিদকে উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এর পেছনে ছিল কয়েক শতাব্দীব্যাপী পণ্ডিতদের মিলিত প্রচেষ্টা। এইজন্যই ত্রয়োদশ শতকের সালাউদ্দিন আইয়ুবি এবং ক্রুসেডের প্রসঙ্গও উঠে আসে নানা উপলক্ষে। আরব, পারস্য, তুর্কি, গ্রিক এবং ভারতীয় উৎস থেকে আহরিত উপাদানে রচিত আখ্যানটি মাতিয়ে রেখেছে পৃথিবীর নানা প্রান্তের শ্রোতাদের। ভীতি, রূপক, গভীর রাতের রহস্যানুসন্ধান, প্রেমোপাখ্যান, খোলামেলা রস-তামাশা আর শিক্ষণীয় বিষয়কে জড়াজড়ি করে গেঁথে রাখা হয়েছে জালের মতো। পশ্চিমে হরর গল্পের পথিকৃৎ এডগার এলান পো কিংবা এইচ পি লাভক্র্যাফট্ আরব্য উপন্যাস থেকে প্রভাবিত ছিলেন; তাদের লেখাতেই এসবের প্রমাণ আছে। আজকের আয়োজন আরব্য উপন্যাসের পাঁচটি প্রসঙ্গ নিয়ে।

এক যে ছিল খুনি রাজা

আরব্য রজনীর অজস্র গল্পকে মূলত বাক্সের মতো করে ধরে আছে মাত্র একটি গল্প। অন্যান্য হরর গল্পের তুলনায় বিষয়টা পাঠকের কাছে পরিণত হয়েছে আরো বেশি ভীতিকর হিসাবে। বাদশা শাহরিয়ার হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, তার স্ত্রী তার বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছে। তার অনুপস্থিতির সুযোগে শরীর বিকিয়ে দিয়েছে অন্য কারো কাছে। আরো কয়েকটা অনুরূপ অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে যাবার পর নারীর প্রতি তীব্র ঘৃণা জন্ম নেয় বাদশার। ফলে প্রতিদিন একটি নতুন বিয়ে করে রাত্রি যাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সে। সেই সাথে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাত্রিশেষে নববধুকে হত্যা করার।

শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা শেহেরজাদ এবং শাহরিয়ার


এভাবে চলতে থাকা হত্যাযজ্ঞের এক পর্যায়ে আগমন ঘটে উজির কন্য শেহেরজাদের। তার চিন্তা উন্মাদ বাদশার হাত থেকে রাজ্য বাঁচানোর। রাজা তাকে বিয়ে করলে প্রতি রাতে শেহেরজাদ গল্প বলতে শুরু করে। আর সকাল হবার আগে এমন জায়গায় গল্পের সমাপ্তি টানা হয়, যেখানে রাজার আগ্রহ অত্যুচ্চে। সুতরাং রাজা বাধ্য হন পরবর্তী রাতের জন্য শেহেরজাদকে বাঁচিয়ে রাখতে। এভাবে এক হাজার এক রাত পরে বাদশা শাহরিয়ার তার হত্যা করার পরিকল্পনা বাদ দেন। বর্তমান সময়ের বিখ্যাত সব হরর গল্পকে ভিত্তি ধরে পুরো ফ্রেমটাকে একটা আধুনিক হরর গল্প আর শাহরিয়ারকে তার ভিলেন দাবি করলে মোটেও ভুল হবে না।

ভূতের বাড়ি

আধুনিক ভৌতিক কিংবা থ্রিলার গল্পগুলোতে ফাঁকা ভৌতিক বাড়ি এবং তাতে রাত্রিযাপনের প্রসঙ্গ প্রায়ই আনা হয়। আরব্য উপন্যাসেও এর নজির মেলে। আলি এবং বাগদাদের ভূতুরে বাড়ি নামে একটা গল্পে একজন ব্যবসায়ীর বাগদাদ ভ্রমণের কথা এসেছে। আলি একটি বিশেষ বাড়ি সম্পর্কে নানা রকমে গুঞ্জন শোনে প্রতিবেশিদের মাঝে। বাড়ি নয় যেন জ্বীনের আখড়া। যে কেউ সেই বাড়িতে যায়; সকাল হবার আগেই বরণ করে মৃত্যু।

গল্পের কাঠামো ভৌতিক হলেও সমাপ্তিটা রসময়


স্থানীয় মানুষের ভীতিকর বর্ণনায় পাঠক তটস্থ হয়ে উঠলেও আদতে শেষ হয় রোমান্টিক রসময়তা নিয়ে। আলি সারারাত সেখানে ব্যয় করলেও জ্বীনেরা তাকে ভয় দেখায় না; বরং অগাধ পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে সহযোগিতা করে।

জ্বীন এবং তাদের জগৎ

অতিপ্রাকৃতিক সৃষ্টি হিসাবে গল্পগুলোতে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে জ্বীন। প্রাক-ইসলামি আরবে জ্বীন বলতে বোঝাত এমন সত্তা; যা মরুভূমিতে তাড়া করে বেড়ায়। ইসলামের ব্যাখ্যা অনুসারে, জ্বীনেরা আগুনের তৈরি। বেশিরভাগ গল্পগুলোতেই জ্বীনেরা খারাপ বা ক্ষতিকর হিসাবে উপস্থাপিত হয়নি; বরং মানুষের সাহায্যকারী এবং সৎ ব্যক্তিদের উপকারের জন্য হাজির হয়েছে। তারপরেও রেগে যাওয়া জ্বীনদের ভীতিকর প্রতিশোধপরায়ণতাকেও চিত্রিত করা বাদ থাকেনি।

প্রায়শ গল্পের গতিমুখ বিস্ময়করভাবে বদলে দিয়েছে হঠাৎ জ্বীনের আগমন


উদাহরণস্বরূপ ‘ব্যবসায়ী এবং জ্বীন’ গল্পের প্রসঙ্গ টানা যায়। এক ব্যবসায়ী নিজের অসতর্কতা বশে এক জ্বীনের অদৃশ্য পুত্রকে হত্যা করে ফেললে রেগে যায় পিতা জ্বীন। সওদাগরকে হত্যা করতে তৎপর হয়ে উঠে সে। যদিও দিনশেষে সওদাগর ক্রুদ্ধ জ্বীনকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে মৃত্যু থেকে রক্ষা পায়। সেই ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করে তিনজন বৃদ্ধ নিজ নিজ অবিশ্বাস্য জীবনের গল্প বলার মাধ্যমে। জ্বীন তা শুনে সন্তুষ্ট হয় এবং খুন করতে চাওয়া ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়।

একটি ফাঁকা শহর

আরব্য উপন্যাসের অন্যতম আকর্ষণ বারাস শহরের আখ্যান। গল্পে এক অভিযাত্রীর দল দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় হাজির হয় দেয়াল ঘেরা শহরে। বাইরের দেয়ালে মুখোমুখি হয় নয়নাভিরাম মুগ্ধকর রমণীদের; যাদের চতুরতায় অভিযাত্রীরা এক এক করে মৃত্যুমুখে পতিত হতে থাকে। এভাবে বেশ কয়েক জনের মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হয় জট। পরবর্তী যাত্রায় ভেতরের দিকে গেলে দেখা মেলে বিস্ময়কর সমৃদ্ধিতে ভরা প্রাসাদ। যাত্রার প্রতি স্তরে ছিল স্বর্ণ আর মণিমুক্তা। কিন্তু গোটা শহরটা ছিল নিশ্চুপ।

আরব্য রজনীকে গণ্য করা হয় বিচিত্র সব স্টাইলে গল্পের সমাবেশ হিসাবে


নাগরিক বলতে কেবল মৃতদেহ। দোকানে, বাড়িতে, বন্দরে সব জায়গায় মৃতদেহ। অভিযাত্রী দল এবার শহরের রাণীর কাছে গেলেন ঘটনার সুরাহা করতে। প্রথমে রাণীর ঝলমলে চোখ দেখে বিভ্রান্ত হলেও অচিরেই বুঝতে পারে রাণী নিজেই মৃত্যুর কাছে হার মেনে নিয়েছেন। পাশের শিলালিপি থেকে পরবর্তীতে ঘটনা পরিষ্কার হয়। নগরীটি এক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিল। নানা প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নাগরিকেরা যে যার জায়গায় গিয়ে নিজেদের ভাগ্যের জন্য অপেক্ষা করছিল। পরিণামে জুটেছে মৃত্যু। পুরো গল্পে সম্পত্তির ক্ষণিকতা স্বচ্ছ হয়ে ধরা দিয়েছে।

পিশাচ এবং ভূত

ইংরেজিতে ghoul শব্দটি মূলত এসেছে আরবি থেকে। আরব্য উপন্যাসে রাতের অন্ধকারে ভয়ঙ্কর আর বিকট বিশেষ প্রাণী হিসাবে পিশাচের উল্লেখ আছে। জ্বীনদের থেকে তাদের তফাৎ আছে। তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো—মানুষের রক্ত আর মাংসের জন্য প্রায়ই তাদের আগমন ঘটে। আরবি উপকথায় আছে, তাদেরকে হত্যা করা যায়। কেবলমাত্র একবার ঘা দিলেই তাদের মৃত্যু ঘটবে। তবে আবেগের বশে দ্বিতীয় ঘা দিয়ে বসলেই বিপদ। পুনরায় জীবনে ফিরে আসবে সেই পিশাচ।

এডগার এলান পো কিংবা স্টিফেন কিং অনুপ্রেরণা পেয়েছেন আরব্য রজনীর থেকে


এই ধরনের গল্পগুলো পরবর্তীতে ড্রাকুলা, ভ্যাম্পায়ার কিংবা অন্যান্য ভৌতিক প্রাণীর আগমণ ঘটাতে সহযোগিতা করেছে সাহিত্যিকদের। এর বাইরে আলি বাবা কিংবা আলাদিনের মতো জনপ্রিয় গল্পগুলো তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে মধ্যযুগের বিস্ময়কর গল্পসংকলনের নাম আরব্য রজনী; যা বদলে দিয়েছে অন্যান্য অনেক ভাষায় সাহিত্যের গতিমুখ।

   

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;