যে কারণে চিকিৎসায় নোবেল পেলেন বিজ্ঞানীত্রয়ী
অক্সিজেন প্রাণিদেহের জন্য অপরিহার্য। অক্সিজেনের সাহায্যে প্রাণিকোষে খাদ্য জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কোষের খাদ্য উৎপাদনের জন্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রার অক্সিজেন দরকার হয়। ঠিক যেমন একটি প্রদীপ নির্দিষ্ট পরিমাণের অক্সিজেন ব্যাতীত জ্বলতে পারে না। কিন্তু প্রাণিকোষ প্রতিনিয়ত অক্সিজেনের পরিমাণের তারতম্যের মধ্যে দিয়ে যায়। অক্সিজেনের স্বল্পতা বা আধিক্য যাই হোক না কেন, কোষ বা টিস্যুর কার্যকারিতার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। দেহকোষের অক্সিজেনের প্রাপ্যতা অনুযায়ী সুচারুভাবে খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া একটি মলিকুলার সুইচ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যার মাধ্যমে কোষ অক্সিজেনের প্রাপ্যতা অনুভব করে ও এর সাথে অভিযোজন (মানিয়ে নেওয়া) করতে পারে।
কোষের অক্সিজেন প্রাপ্যতার তারতম্য অনুভব ও অভিযোজন প্রক্রিয়ার এই মলিকুলার সুইচ আবিষ্কার করেই এবছর চিকিৎসায় যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার জিতে নেন দুই মার্কিন বিজ্ঞানী উইলিয়াম কেলিন ও জর্জ এল সিমেঞ্জা এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পিটার র্যা ডক্লিফ।
ড. এল সিমেঞ্জা ১৯৫৬ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক।
বিজ্ঞানী পিটার র্যা ডক্লিফ ১৯৫৪ সালে যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন এবং একাধারে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ফ্রান্সিস ক্রিক ইন্সটিটিউটে গবেষণা করেন।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসাবে পরিচিত বিজ্ঞানী উইলিয়াম কেলিন ১৯৫৭ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আমেরিকার বোস্টনে অবস্থিত ডানা ফার্বার ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে কর্মরত আছেন।
বিজ্ঞানীত্রয়ী পৃথকভাবে দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করেন, যদিও বিভিন্ন সেমিনারে দেখা করে তারা তাদের স্ব স্ব গবেষণার উন্নতি নিয়ে মতবিনিময় করেন।
বিজ্ঞানীরা তাদের নোবেলজয়ী গবেষণায় দেখান, অক্সিজেন স্বল্পতায় প্রাণিকোষের সর্বত্র একটি প্রোটিন কমপ্লেক্স সৃষ্টি হয় যাকে বলা হয় ‘হাইপক্সিয়া ইনডিউসেবল ফ্যাক্টর (HIF)’। এই প্রোটিন উপাদানটির অনেক কাজের মধ্যে অন্যতম হলো একটি বিশেষ ধরনের জিনের কার্যকারিতা তরান্বিত করে কোষে ইরিথ্রপটিন (EPO) হরমোন নিঃসরণ করানো। এই EPO হরমোন অক্সিজেন বহনকারী লোহিত কণিকা উৎপাদন করে হাইপক্সিয়া বা অক্সিজেন স্বল্পতার ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে। মানবদেহে প্রায় ৩০০ প্রকারের এধরনের জিন বিদ্যমান।
নোবেল কমিটি তাদের ঘোষণায় জানায়, এই আবিষ্কারের ফলে মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোজন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা আরো বিশদভাবে জানতে পারবে। এতে ক্যান্সার বা স্ট্রোকের মতো ব্যাধির চিকিৎসার এক অভূতপুর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে বলে তারা আশাবাদী।