বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো রাজ পরিবার

জাপানের ভবিষ্যত প্রিন্স ১৩ বছর বয়সী হিসাহিতোর নাম ঘোষণা করা হচ্ছে



জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
প্রিন্স হিসাহিতো

প্রিন্স হিসাহিতো

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছরের ১ মে জাপানের সম্রাটের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রিন্স নারুহিতো। আগামীকাল ২২ অক্টোবর তিনি আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সম্রাট হওয়ার কথা ঘোষণা দেবেন এবং সেইসাথে তার পরবর্তীসময়ে রাজবংশের কে সম্রাট হবে তার পরিচয়ও আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। প্রিন্স নারুহিতোর পর যিনি সম্রাট হবেন তিনি হিসাহিতো। সম্পর্কে হিসাহিতো নারুহিতোর ভাইয়ের ছেলে। হিসাহিতোর বয়স এখন মাত্র ১৩ বছর। তাকে এখনই সম্রাট হওয়ার যোগ্য করে তুলছেন ৫৯ বছর বয়সী প্রিন্স নারুহিতো। হিসাহিতো ইতোমধ্যেই জাপানি ঐতিহ্য মেনে ‘হাকামা’ কিমানো পরা অভ্যাস করছে। শিখছে তির ছুড়ে লক্ষ্যভেদ করা। গত অগাস্টে তাকে নিয়ে ভুটান সফরে গিয়েছিলেন নারুহিতো। আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত করানোই ছিল উদ্দেশ্য। এ মাস থেকেই হিসাহিতোকে কুংফু শেখানো হচ্ছে রাজমহলে। প্রিন্স নারুহিতোর বাবা সম্রাট আকিহিতো সিংহাসন ত্যাগ করার পরে গত ১ মে তিনি সম্রাট হন। জাপানের প্রথা অনুযায়ী কেবল রাজপরিবারের পুরুষ সদস্যরাই সিংহাসনে বসার অধিকারী। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে চান না এই নিয়ম বদলে যাক। পুরানো প্রথা অনুযায়ী নারুহিতোর ভাই আকিশিনোর ছেলে হিসাহিতো জাপানের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। সেদেশের বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘আসাহি’-র বরাত দিয়ে গত শুক্রবার হাফিংটনপোস্ট এসব তখ্য দিয়েছে।

◤ জাপানের বর্তমান সম্রাট প্রিন্স নারুহিতো ◢


১৯৬৫ সালের পর থেকে জাপানের রাজবংশে কোনো ছেলে জন্মায়নি। রক্ষণশীলরা রীতিমতো চিন্তায় পড়েছিলেন, কিভাবে দেশের প্রাচীন প্রথা রক্ষা করা যাবে। নারুহিতোর বিয়ে হওয়ার আট বছর পর তাঁর স্ত্রী কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। সে হলো প্রিন্সেস আইকো। অনেকেই ভাবছিলেন, রাজবংশের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইন বদলানো হতে পারে। রাজকন্যারাও সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হবেন। কিন্তু পুরনো আইন বদল করা হয়নি। ২০০৬ সালে জন্ম হয় হিসাহিতোর। দক্ষিণপন্থীরা মনে করেন, ঈশ্বরের আশীর্বাদে তার জন্ম হয়েছে। জাপানের মিডিয়া প্রশ্ন তুলেছে, হিসাহিতোকে আগামী দিনের সম্রাট হিসাবে যথাযথ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জাপানে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল, তাতে বলা আছে, সম্রাট কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী নন। তিনি রাষ্ট্র ও জনগণের ঐক্যের প্রতীক। হিসাহিতো এখন ওখানোমিজু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এক জুনিয়ার হাইস্কুলে পড়াশোনা করে। রাজপরিবারের ছেলেমেয়েরা সাধারণত গাকুশুয়িন জুনিয়ার হাই প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি হয়। হিসাহিতো প্রথম রাজকুমার যে পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করছে।

◤ নারুহিতোর কন্যা প্রিন্সেস আইকো ◢


আগামীকাল জাপানের সম্রাট হিসেবে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হচ্ছে নারুহিতোর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং অন্যান্য প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে স্মারক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্রাটের সিংহাসন আরোহণ পর্ব শেষ হবে। মূল অনুষ্ঠান হবে চার ধাপে। এর আগে জাপানের ২০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম স্ব-ইচ্ছায় সিংহাসন ছাড়েন সম্রাট আকিহিতো গত ২৯ এপ্রিল। এর আগে অবশ্য ১৮১৭ সালে এক সম্রাট ছেড়েছিলেন। ৮৫ বছর বয়সী সম্রাট আকিহিতো ২০১৬ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন, বয়সের কারণে তার ভয় হচ্ছে যে, তিনি ঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। জনমত জরিপে দেখা যায, স্বাস্থ্যের কারণে সিংহাসন ছাড়তে জাপান সম্রাটের ইচ্ছাকে সমর্থন করেছেন বেশিরভাগ জাপানি। পরে দেশটির সংসদ একটি আইন পাস করে, যাতে তিনি সিংহাসন ত্যাগ করতে পারেন। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তার ৫৯ বছর বয়সী যুবরাজ নারুহিতো।

◤ ৮৫ বছর বয়সী সম্রাট আকিহিতো ◢


জাপানি ভাষায় ‘সোকুই নো রেই’ নামে পরিচিত এই অনুষ্ঠানটি জাপানে নতুন সম্রাটের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কিত। দূর অতীতকাল থেকেই জাঁকজমকের সঙ্গে এ অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এবার বিশ্বের ১৯০টির মতো দেশের প্রতিনিধিরা এ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বিদেশি অতিথিদের অনেকেই এরই মধ্যে টোকিও এসে পৌঁছেছেন। মূল অনুষ্ঠান টোকিওর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সম্রাটের প্রাসাদে অনুষ্ঠিত হবে। সম্রাট নারুহিতো ও সম্রাজ্ঞী মাসাকো পূর্ণাঙ্গ রাজকীয় সাজপোশাক পরিধান করে সেখানে অপেক্ষমাণ অতিথিদের সামনে উপস্থিত হবেন। শুরুতে সম্রাট নিজেকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে একটি বিবৃতি পাঠ করে শোনাবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে একটি অভিনন্দন বার্তা পাঠ করবেন। অতিথিরা এরপর সমবেতভাবে ‘বানজাই’ ধ্বনি তুলে সম্রাটের সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করে জাপানি পানীয় ‘সাকে’ পান করবেন। এর ঠিক পরপর সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী সেই কক্ষ ত্যাগ করবেন।

◤ বাবা মায়ের সাথে প্রিন্স হিসাহিতো ◢


বিদেশি অতিথিদের মধ্যে থাকছেন ব্রিটেনের যুবরাজ চার্লস, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হমিদ, চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং চি-শান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়েওন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে থাকছেন পরিবহন মন্ত্রী এলেইন চাও। সম্রাট নারুহিতোর সিংহাসন আরোহণের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মোট খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক এক হাজার ছয় শ কোটি ইয়েন। অভিষেকের সঙ্গে সম্পর্কিত চারটি অনুষ্ঠানের মধ্যে আছে সম্রাটের প্রাসাদে আয়োজিত সিংহাসন আরোহণ সংক্রান্ত ঘোষণা, আনুষ্ঠানিক অভিষেকের পর মোটরগাড়ি শোভাযাত্রা, সম্রাটের প্রাসাদে দেওয়া ভোজসভা এবং প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভোজসভা। তবে গত সপ্তাহে জাপানের ওপর আঘাত হানা সামুদ্রিক ঝড় হাগিবিসের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে মোটরগাড়ি শোভাযাত্রার অনুষ্ঠানটি নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জাপানের ১২৬তম সম্রাট হতে যাচ্ছেন যুবরাজ নারুহিতো যিনি জাপানকে ‘রেইওয়া’ যুগে নিয়ে যাবেন। তিনি অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন এবং ২৮ বছর বয়সে যুবরাজ হন। ১৯৮৬ সালে একটি চায়ের আসরে যুবরাজ্ঞী মাসাকো ওয়াডার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ১৯৯৩ সালে তারা বিয়ে করেন। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান প্রিন্সেস আইকোর জন্ম হয় ২০০১ সালে। যদিও জাপানের বর্তমান আইন অনুযায়ী কোনো নারী সিংহাসনে বসতে পারেন না। যে কারণে প্রিন্সেস আইকো সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী নন। যুবরাজ নারুহিতোর পর উত্তরাধিকারী তালিকায় রয়েছেন তার ভাই প্রিন্স ফুমিহিতোর ১৩ বছরের সন্তান হিসাহিতো। তাকে এ অভিষেক অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যত সম্রাট হিসেবে নাম ঘোষণা করা হবে। এটি বিশ্বের সবচে পুরনো রাজ পরিবার। পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয়, যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে থেকে এই রাজতন্ত্র চলছে।

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;