লতাজি এবং রাহুল দেববর্মন, শচীন কর্তার দুই দুঃখের কারণ



জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
লতা মঙ্গেশকর, শচীন দেববর্মন ও রাহুল দেববর্মন

লতা মঙ্গেশকর, শচীন দেববর্মন ও রাহুল দেববর্মন

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর মারা যান কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শচীন দেববর্মন (এস ডি বর্মন)। ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লার এক সঙ্গীতশিল্পী-পরিবারে তাঁর জন্ম। ছিলেন ত্রিপুরা রাজবংশের সন্তান। আগরতলার বাসিন্দা হলেও শচীন দেবের শৈশব কেটেছে কুমিল্লায় এবং শেষ জীবন মুম্বাইতে। তাঁর সহধর্মিণী মীরা দেবী এবং একমাত্র পুত্র রাহুল দেববর্মনও মুম্বাই চিত্রজগতের প্রতিষ্ঠিত কণ্ঠশিল্পী।

রাগসঙ্গীতে তাঁর ভালো দখল ছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করে তিনি ত্রিপুরার রাজদরবারে কিছুদিন চাকরি করেন। পরে চাকরি ছেড়ে কলকাতা গিয়ে ওস্তাদ বাদল খাঁ, আলাউদ্দিন খাঁ, ফৈয়াজ খাঁ, আব্দুল করিম খাঁ, ভীষ্মদেব, কানা কৃষ্ণ প্রমুখ সঙ্গীত বিশারদের নিকট রাগসঙ্গীতে আনুষ্ঠানিক তালিম নেন। ১৯২৩ সালে কলকাতা বেতারে শচীন দেব প্রথম গান করেন এবং ১৯৩২ সালে তাঁর প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড বের হয়। তিনি নজরুল সঙ্গীতও রেকর্ড করেন। এরপর তাঁর বহুসংখ্যক বাংলা ও হিন্দি গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। রেকর্ডকৃত তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান হলো: ‘যদি দখিনা পবন’ (রাগপ্রধান), ‘প্রেমের সমাধি তীরে’ (কাব্যগীতি), ‘নিশীথে যাইও ফুলবনে’ (পল্লীগীতি), ‘বধুঁগো এই মধুমাস’ (পল্লীগীতি)।

◤ মা-বাবার সাথে ছোট্ট শচীন ◢


১৯৩৪ সালে নিখিল ভারত সঙ্গীত সম্মিলনে গান গেয়ে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ উপাধি এবং চলচ্চিত্রে হিন্দি গানের নেপথ্য গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। এর আগে ১৯৩৭ সাল থেকে পরপর কয়েকটি বাংলা ছায়াছবিতে তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছায়াছবি হলো: রাজগী, ছদ্মবেশী, জীবন-সঙ্গিনী, মাটির ঘর ইত্যাদি। তিনি যখন খ্যাতির চূড়োয় তখন দুটো মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন। প্রচল আছে একটি আঘাত পান লতা মঙ্গেশকরের কাছ থেকে অন্যটি তাঁর ছেলে গায়ক ও সুরকার রাহুল দেববর্মনের কাছ থেকে।

সেই দুটি আঘাত ও শেষ গানে মৃত্যু

অনেক দিন পরে ‘মিলি’ ছবির গানে নিজেকে যেন নতুন করে উজাড় করে দিচ্ছিলেন শচীন কর্তা। এমনিতেই শচীন দেববর্মনের গান মানেই মেঠো সুর। মিঠে সুর। বাবা নবদ্বীপ চন্দ্র ছিলেন শচীন কর্তার গানের গুরু। ত্রিপুরা সম্বন্ধে এমনিতেই প্রবাদ আছে, সেখানকার রাজবাড়িতে রাজা-রানি, কুমার-কুমারী থেকে দাস-দাসী পর্যন্ত সবাই গান জানে। গান গায়। তো, শচীন কর্তা যে সুরের রসে মজে থাকবেন এবং মজাবেন সেটাই তো স্বাভাবিক।

তাহলে হঠাৎ এই বিশেষ ছবির গান নিয়ে আলোচনা কেন? আসলে তার বছর খানেক আগে ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনা ভীষণ আহত করেছিল শচীন দেববর্মনকে। তার পরেই এই ছবির গানে শচীন নিজেকে আবার নতুন করে প্রমাণ করতে বসেছিলেন নিজের কাছে। বরাবর দুজনকে নিয়ে খুব গর্ব ছিল তাঁর। এক, ছেলে রাহুল দেববর্মন (আর ডি বর্মন)। দুই, লতা মঙ্গেশকর। ঘটনাচক্রে দুজনেই তাঁকে প্রচণ্ড আঘাত দিয়েছিলেন। সেই আঘাত এতটাই ছিল যে শচীন ঠিক করেছিলেন, গান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবেন। কিন্তু ত্রিপুরার রাজকুমার ময়দান থেকে হেরে ফিরবেন, এটাও তো হওয়ার নয়। তাই ‘মিলি’ তাঁর হাতের শেষ অস্ত্র।

কিন্তু ময়দান ছাড়ার মতো কী এমন ঘটেছিল শচীন কর্তার সঙ্গে? মুম্বইয়ে শচীন কর্তার খুব প্রিয় নারী শিল্পী ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। লতার কথা উঠলেই তিনি বলতেন, “আমায় হারমোনিয়াম দে। লতাকে এনে দে। আর আধা ঘণ্টা সময় দে। আমি সুর করে দিচ্ছি।” লতাজির ওপর এতটাই ভরসা করতেন যে গীতা দত্ত প্রথম পছন্দ হলেও যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন লাতাজির ওপর। তাঁর মতে, “ওই মাইয়া আমায় জাদু করসে। ওরে ছাড়া আঁধার দেহি আমি।” পরে এই লাতাজিই প্রচণ্ড অপমান করেছেন শচীন কর্তাকে। কোনো সুরকার কখনো নিজের তৈরি স্বরলিপি কাছ ছাড়া করেন না। শচীনও এটাই করতেন। কিন্তু লাতাজি যখন সুরের দুনিয়ার মধ্যগগনে তখন বেয়াড়া আবদার করেছিলেন। তাঁর দাবি, গানের নোটেশন তাঁর হাতে ছেড়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে তিনি সুর এদিক-ওদিক করে নেবেন। এই দাবি মানা কোনো সুরকারের পক্ষে সম্ভব? বিশেষ করে শচীন কর্তার মতো রাজবংশীয় ঘরানার মানুষ। যিনি বরাবরের স্বাধীনচেতা!

◤ লতা মঙ্গেশকরকে সুর বুঝিয়ে দিচ্ছেন শচীন কর্তা ◢


সুরের স্বরলিপির দখলদারি নিয়ে প্রথম দ্বন্দ্বের শুরু। কর্তা লতাজিকে ভালো করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, এই আবদার মানা সম্ভব না। জিদ্দি লতাজিও অনড় তাঁর চাহিদা থেকে। নিরুপায় কর্তা বাধ্য হয়ে লতাজির বদলে নিলেন তাঁর বোন আশা ভোঁসলেকে। সেই থেকে লতাজির সাথে শচীনের দূরত্ব বেড়ে গেল। এরপর একজন আরেকজনকে দেখলে এড়িয়ে যেতেন। শচীন লতার এই আবদারে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন বলে পরে জানান আরেক বিখ্যাত সুরকার সলিল চৌধুরী। সেই সময় শচীন দেবের মতো অনেকেই লতাজিকে তাদের গান থেকে বাদ দিয়েছিলেন। এই ধাক্কায় মন ভেঙে গিয়েছিল শচীনের।

এর কয়েক মাস পরেই ঘটল দ্বিতীয় ঘটনা। দেব আনন্দ আর শচীনের জুটি প্রথম থেকেই সুপারহিট। দেব আনন্দ পরিচালনায় আসার পর ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’ বানাবেন বলে ঠিক করলেন। সুর দেবার জন্য ডাক পড়ল শচীনের আর পঞ্চমের (তার ছেলে রাহুল দেববর্মন)। চিত্রনাট্য শোনার পর দুজনে দুজনের মতো করে সুর শোনালেন। পঞ্চমের গান বেশি পছন্দ হলো দেবের। তিনি শচীন কর্তাকে খুব নরম গলায় জানালেন, “এই ছবিতে পঞ্চমের সুর বেশি ভালো মানাবে। তাহলে পঞ্চম সুর দিক।” হাসিমুখে সম্মতি দিলেন শচীন। ছেলের উন্নতি দেখলে কোন বাবা না খুশি হয়? কিন্তু তার মনে এ কষ্ট ছিল নিজের ছেলে পঞ্চম (রাহুল) তাকে অনুসরণ করল না সুরে। সস্তা বাজিমাত কুড়ানোর জন্য পপ সুরের দিকে এগুলো। এটিও তিনি তার স্ত্রীকে মারা যাওয়ার আগের দিন বলেছিলেন।

◤ অপর দিকে আশা ভোঁসলেকে জনপ্রিয় ঘরানার সুর বুঝিয়ে দিচ্ছেন শচীনপুত্র রাহুল দেববর্মন ◢


আগ্রহ নিয়ে একদিন রেকর্ডিং রুমে ছেলের সুরও শুনতে এলেন। পঞ্চম (রাহুল) সেদিন ‘দম মারো দম’ গান তোলাচ্ছিলেন আশাজিকে। দু লাইন শোনার পরেই রাগে মুখ লাল এস ডি বর্মনের। চেঁচিয়ে উঠে পঞ্চমকে বললেন, “আমি এই গান তরে শিখাইছি? মাঠের গান ভুলে, বাংলার গান ভুলে, তুই ইংরিজি গানের নকল কইরা সুর করস! আমার সব শিক্ষা বৃথা গেল। তুই আমার কুলাঙ্গার ছেলে।” রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে কর্তা যখন মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলেন, সবার দেখে মনে হলো, রাজা যুদ্ধে হেরে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

◤ স্ত্রী মীরা দেবীসহ শচীন দেববর্মন ◢


রেকর্ডিং রুম ছেড়ে বেরিয়ে এসে কদিন গুম হয়ে বাড়ি বসে রইলেন। তারপর শুরু করলেন ‘মিলি’ ছবির গান। সুর দিতে দিতেই paralytic attak হলো কর্তার। কোমায় আচ্ছন্ন বাবার মাথার কাছে বসে ‘মিলি’র গানে সুর দিচ্ছেন পঞ্চম (রাহুল)। কিন্তু রাহুলের কণ্ঠে সেই পপুলার ধারার সুর। ছটফট করছিলেন। মীরা এগিয়ে এসে কপালে হাত রাখলেন, শচীন মীরাকে ফুটফুটিয়ে বললেন, “আমার সেই গানটা ধরো, ‘যদি দখিনা পবন’। মীরা সেই গান ধরলেন। একি রহস্য, দখিনা জানালা দিয়ে তখন অঝরে হাওয়া এসে ঢুকতে শুরু করল ঘরে। যেন ঝড়ো বাতাস। এরপর, মীরা ডাকলেন শচীনকে, কিন্তু শচীন সেই যে চোখ বন্ধ করলেন, আর খোলেননি।

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;