বৈজ্ঞানিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে স্বপ্ন



তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণে সুফল পাচ্ছে চলমান গবেষণা

স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণে সুফল পাচ্ছে চলমান গবেষণা

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের স্বপ্নের ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কখনো আনন্দের স্বপ্ন দেখে মুখে হাসি ফোটে। আবার কখনো শরীর ঘেমে যাওয়া দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠা। মাঝেমাঝে এমনও বহু স্বপ্ন দেখা যায় যার কোনো মানে নেই, নেই কোনো যোগসূত্র নিজের সাথে। কেমন হবে যদি স্বপ্নদেখার ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়?

ব্যাপারটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য একদল বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন যাবত নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আশার কথা হলো ইতোমধ্যেই তারা পেয়েছেন কল্পনাতীত সফলতা। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা আমাদেরকে এই স্বপ্নদেখা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রেখেছে। যা আমাদের লুসিড ড্রিমিংয়ের ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে সক্ষম।

লুসিড ড্রিম মূলত স্বপ্নের এমন একটা অবস্থা যেখানে ঘুমন্ত ব্যক্তি বুঝতে পারেন তিনি স্বপ্ন দেখছেন এবং এই স্বপ্নের ওপর তার হালকা নিয়ন্ত্রণও থাকে। স্বপ্নের চরিত্র, ভাষা এবং ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে তিনি ব্যাখ্যা করতে পারেন৷ এমন স্বপ্নকেই লুসিড ড্রিমিং বলা হয় আর এই লুসিড ড্রিমিংকে নিয়েই বিস্তর গবেষণা হচ্ছে৷ আমরা যেন আমাদের এই ফ্যাসিনেশন থেকে সর্বোচ্চ এডভান্টেজ নিতে পারি, সে ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে গবেষকদের একটি দল।

২০১৬ সালের মেটা-বিশ্লেষণ অনুসারে, সারা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক লোক জীবনকালে কমপক্ষে একবার হলেও একটি চমকপ্রদ স্বপ্ন দেখে থাকেন। আবার অনেকেই প্রতিমাসেই এসব দেখেন। কেউ কেউ আবার মাসেই একাধিকবার এমন স্বপ্ন দেখে থাকেন৷ ১৯৭৫ সালে বিজ্ঞানীগণ যখন প্রথম লুসিড ড্রিমিং সম্পর্কে একটি ল্যাবে পরিক্ষা নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হয়েছিলেন, তখন গবেষকরা সেগুলো কিভাবে ঘটতে পারে এবং কিভাবে তারা স্বপ্নদ্রষ্টাকে সাহায্য করতে পারেন সে সম্পর্কে আরো বেশি করে শিখতে পেরেছেন।

লুসিড ড্রিমিং নিয়ে গবেষণার ফলে স্বপ্নপরবর্তী বিভিন্ন প্রভাবের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। যেমন দুঃস্বপ্ন দেখে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা কমানো। এছাড়াও শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন চেতনা সম্পর্কে রহস্য উদঘাটনে সহায়তা করছে এই গবেষণা।

মোট ১৬৯ জনের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদল ফলাফল প্রকাশ করেছে। যেখানে তাদের অবচেতন মনে দেখা স্বপ্নগুলোর বাস্তবিক রূপ দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে।

গবেষণায় যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের বলা হয়েছিল, তারা যেন প্রতিদিন অন্তত দশবার নিজেকে জিজ্ঞেস করে, “আমি কি স্বপ্ন দেখছি?” একটা চমৎকার তথ্য হলো আমরা যখন স্বপ্ন দেখি তখন আমাদের মুখ হা করা থাকে৷ এবং এটাই অধিকাংশের ক্ষেত্রে ঘটে৷ যাই হোক, অংশগ্রহণকারীদের যখনই পরীক্ষার মুখোমুখী হতে হতো, তাদেরকে প্রকৃত স্বপ্নের মতোই একটি পরিবেশ দেওয়া হতো৷ উদ্দেশ্য ছিল যেন প্রকৃত ফলাফল বের হয়ে আসে।

একটি কক্ষে প্রায় পাঁচ-সাত ঘণ্টা ঘুমানোর পর তাদের ডেকে তোলা হতো। ঘুম ভাঙার পরে তাদেরকে প্রায় ৭০০ শব্দের একটি ডকুমেন্ট পড়তে দেওয়া হতো৷ যেই ডকুমেন্টের মূল বিষয় লুসিড ড্রিমিং। সেখানে লুসিড ড্রিমিংয়ের সময় কী করতে হবে, কিভাবে স্বপ্নকে চালিত করতে হবে এসব বিস্তারিত লেখা থাকত। যেহেতু এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল স্বপ্নের ওপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, তাই এখানে এভাবেই লোকদের তৈরি করা হতো যেন স্বপ্ন তার আপন গতিতে প্রবাহিত হতে না পারে৷ স্বপ্নদর্শক যেন নিজ স্বপ্নকে ইচ্ছামতো পরিচালিত করতে পারে৷ সে যেন তাই দেখতে পায়, যা সে আসলেই দেখতে চায়৷ ৫-৭ ঘণ্টা ঘুমানোর পর ঘুম থেকে উঠিয়ে ডকুমেন্ট পড়িয়ে আবার ঘুমাতে দেওয়া হয়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে—একবার ঘুম ভাঙার পরে যখন আবার ঘুম আসে, স্বপ্ন মূলত তখনই দেখা হয়। এজন্যেই আমরা অনেকেই স্বপ্ন দেখি ভোরবেলা৷ এর একটু আগে যখন আমাদের একটু ঘুম ভাঙে এবং আড়মোড়া দিয়ে যখন আমরা আবার ঘুমাই, ঠিক তখনই স্বপ্ন এসে উঁকি দিয়ে যায়৷

আমরা জানি আমরা যা স্বপ্ন দেখি তা আমাদের জীবনেরই প্রতিবিম্ব। আমাদের জীবনে যা ঘটে, অধিকাংশ সময় আমাদের অবচেতন মনে তা-ই দেখে থাকি। আর এই গবেষণাতেও এই টেকনিক ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ঘুমানোর আগে একটা বাক্য বারবার পড়তে বলা হতো। আর সেটা হলো, “এরপর আমি যা স্বপ্ন দেখব, তা আমি মনে রাখব”। এটাই হতো তাদের শেষ শব্দ। এই শব্দ বলেই তারা ঘুমাতে যেত। আর তাই এই শব্দগুলোই গেঁথে থাকত তাদের মাথায়। এবং এখানে প্রতিটা ব্যক্তিকে তাদের স্বপ্নগুলো লিখে রাখতে বলা হতো। দেখা হতো গত সপ্তায় দেখা তাদের স্বপ্নের সাথে এই সপ্তায় দেখা স্বপ্নের পার্থক্য কী। কোনো বিশেষ পার্থক্য পেলে তাও রেকর্ড করা হতো।

এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহে তাদের সাথে লুসিড ড্রিমিংয়ের টেকনিক ব্যবহার করা হতো না। তাই তাদের সবার স্বপ্ন আলাদা আলাদা রকমের হতো। একেকজন একেক বিষয়ের স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে যখন লুসিড ড্রিমিংয়ের ট্যাকনিক তাদের ওপর প্রয়োগ করা হলো, তখন দেখা গেল কেউ কেউ তাদের দেখা মোট স্বপ্নের ৪৬ শতাংশই লুসিড ড্রিমিং টেকনিক ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন। অনেকে ১৭ শতাংশ, অনেকে ১১ শতাংশ করে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন সকলেই।

প্রসপেক্টিভ মেমোরি হলো এমন একটা বিষয় যেটা আমাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে ধারণা প্রদান করে। ভবিষ্যতে আমরা কী করতে চাই তা আমাদের মনে রাখতে সাহায্য করে এই মেমোরি৷ এই গবেষণার একজন সহযোগী গবেষক ডেনহাম জে আস্পি বলেন, “আমি স্বপ্ন দেখব, এই কথাটা যখন বারবার উচ্চারণ করেন তখন সেটা প্রসপেক্টিভ মেমরিতে সেট হয়ে যায়। আর এই প্রসপেক্টিভ মেমোরিই লোকেদের একটি চমৎকার স্বপ্নের দিকে নিয়ে যায়৷”

যদিও প্রত্যেকের অবচেতন মনের স্বপ্নকে লুসিড ড্রিমে পরিবর্তন করতে হলে যেই প্রযুক্তির দরকার পড়বে এবং যেই দক্ষতা ও অনুশীলনের প্রয়োজন হবে, আমরা তার চেয়ে এখনো যোজন দূরত্বে আছি। কিন্তু আশার কথা হলো, সেই দূরত্বকে বাগে আনার জন্য কাজ শুরু হয়েছে।

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;