আগ্রা হবে অগ্রবন?
শতবর্ষ প্রাচীন নগরী ও একদা ভারতের রাজধানী আগ্রা শহরের নাম বদলের কথা বলা হচ্ছে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজেপি দলীয় যোগী সরকারের তরফে। যদিও নাম বদলের খেলাকে 'রাজনৈতিক' বলে অভিহিত করেছে বিরোধী পক্ষ, তথাপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আগ্রার নাম বদলকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তাঁর রাজ্যে একের পর এক স্মৃতিসৌধ ও স্থাপত্যের নাম কিংবা রেল স্টেশনের নাম বদলাতে দেখা গিয়েছে যোগীকে। এবার সেই তালিকায় নাম উঠে এসেছে আগ্রার। মুঘল ঐতিহ্যময় তাজমহলের শহর আগ্রার নাম বদল করতে চাইছেন যোগী। তাঁর জায়গায় নাম হিসাবে তিনি বেছে নিয়েছেন ‘অগ্রবন’।
এই ব্যাপারে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী লখনৌ ইউনিভার্সিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন আগ্রার নামের কোনও অস্তিত্ব আছে কিনা খতিয়ে দেখতে। যদি আগ্রা নামের কোনও অস্তিত্ব না পাওয়া যায় তাহলে খুব শীঘ্রই নতুন নাম পাবে শহরটি।
আর এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ মুখর ভারতের নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ। প্রতিবাদ জানাতে টুইটারে সরব হয়েছেন অভিনেত্রী-পরিচালক অপর্ণা সেন। তিনি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছেন, ‘শুনছি নাকি আগ্রার নামটা বদলে দেওয়া হবে? আশা করি এটা একটা গুজব? কিন্তু কেই বা এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন? তাঁদের কী একবারের জন্যও মনে হল না ভারতের যারা করদাতা তাদের সঙ্গে কিংবা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলা দরকার? আমরা কিন্তু আগ্রা নামের পরিবর্তন করতে দেব না।'
লক্ষণীয় বিষয় হলো, স্বয়ং উত্তরপ্রদেশের জেলাশাসক এনজি রবিকুমার স্পষ্ট জানিয়েছেন , ‘আগ্রার নাম অগ্রবন থাকার কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই৷’
এমনকি, ডক্টর বি আর আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুগম আনন্দও জানিয়েছেন অভিন্ন মত। তিনি বলেন, ‘আগ্রার নাম অতীতে কবে অগ্রবন ছিল, সে বিষয়ে কোনও ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়নি।’
তারপরেও ক্ষমতাসীন যোগী সরকার যে আগ্রা নগরীর নাম বদলের সিদ্ধান্তে অটল তা-ও বোঝা যাচ্ছে। এরই মাঝে উত্তর প্রদেশের বিখ্যাত মোঘলসরাই রেলস্টেশনের নাম বদলে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশের প্রসিদ্ধ শহর, নেহরু পরিবারের আবাস এলাহাবাদ-এর নামও বদল করে প্রয়াগরাজ রাখা হয়েছে।
শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, ভারতের নানা স্থানে শহর ও স্থাপনার নাম বদলের হিড়িক বার বার দেখা গেছে। রাজধানী দিল্লির বহু স্থান ও জনপথের মুঘল বা ইংরেজ আমলের নাম বদলে দেয়া হয়েছে। কলকাতার অনেকগুলো বিখ্যাত সরণীর প্রাচীন ও প্রতিষ্ঠিত নাম বদল করে অন্য নাম দেওয়া হয়েছে। কলকাতার উত্তর-দক্ষিণ সম্মিলনী ঐতিহাসিক পার্ক স্ট্রিট বা শিয়ালদহ থেকে হাওড়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রসারিত হ্যারিসন রোডের নাম লোক মুখে থাকলেও কাগজে, কলমে, সাইনবোর্ডে নেই।
বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পালাবদল ও ক্ষমতার হাতবদলের কারণে রাজনৈতিক বিবেচনায় নাম বদলের বিরুদ্ধে ভারতের ঐতিহাসিক ও বুদ্ধিজীবী সমাজ তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তারা বলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নাম বদল দেশ ও জনপদের ঐতিহাসিক সূত্র ও ঐতিহ্য ধ্বংস করবে। এতে সহস্র বর্ষের ভারতবর্ষের অতীতের উত্তরাধিকার বিনষ্ট হবে এবং সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের পরম্পরা ক্ষুন্ন হবে।