যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে সন্ত্রাসী হামলা ও ধর্মের কারণে শিক্ষার্থী কমছে
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রানসিস্কোর একটি স্কুল পার্কিংয়ে গত রোববার গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত দুই শিশু নিহত হয়েছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেরলেস এলিমেন্টারি স্কুলের পার্কিংয়ে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই এলাকায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খুবই বিরল। এর আগে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বন্দুকধারীর গুলিতে দুজন ছাত্র নিহত ও তিনজন আহত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘এন্টি ভায়োলেন্স, সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর পক্ষ থেকে গত রোববার এক জরিপে বলা হয় ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে সন্ত্রাসী হামলায় চলতি বছরের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত মারা গেছে ১০৩ শিক্ষার্থী। গতবছর এ সংখ্যা ছিল ৯৯। তারা বলছেন দিন দিন স্কুলে হামলা বাড়ছে এবং শিশুরা স্কুলে যাওয়ার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ স্টিভেন ফিশার বলেছেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের ওপর যারা হামলা চালাচ্ছে তারা বেশিরভাগই মানসিক ভারসাম্যহীন। দেশটিতে মানসিক রোগীর সমস্যা বাড়ছে। দেশটির সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়গুলি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে আনছেন। এসব বেশি ঘটতে দেখা যাচ্ছে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে। যদি সেখানকার নাগরিকদের খুব বেশি সময় নেই সরকারের নীতি নিয়ে মাথা ঘামাবার। তবু সরকার বা রাজনীতির চেয়ে সেখানে যেটি প্রাধান্য পায় সেটি হলো ধর্ম। টেক্সাসের অনেক বাবা-মায়েরা হতাশ হয়ে যাচ্ছেন এই ভেবে যে, সেখানকার সরকারি স্কুলগুলো ধর্মের শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। টেক্সাসের রাজধানী অস্টিনের বাসিন্দা শ্যানন হেলমি বলছেন, ‘এখানকার সরকারি স্কুল বোর্ডের অধীনে ধর্ম যেন একটা নিষিদ্ধ বিষয় হয়ে গেছে।’ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এডিন সিমন্ডস বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাদকাসক্ত বিকারগ্রস্তের সংখ্যা বাড়ছে। তারা বিভিন্ন কারণে হতাশাগ্রস্ত। তাদের মধ্যে এমন একটা মানসিকতা কাজ করতে পারে যে আগামীতে আর শিশুদের ভবিষ্যত নেই। তাই হামলা চালাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে শিশুরা স্কুলে যাওয়ার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে
এদিকে মার্কিন জাতীয় পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালের ৫০.৭ মিলিয়ন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে। ২০১৮ সালে ৪৬.৬ মিলিয়ন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। চলতি বছর এ হার আরো নিচে নেমে এসেছে। চলতি সরকারি স্কুলে ভর্তির হার ৪৫.৯ মিলিয়ন শিক্ষার্থী। ‘এন্টি ভায়োলেন্স, সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর নির্বাহী পরিচালক স্টিভেন ফিশার বলেন, ‘উভলিঙ্গ মানুষদের মূল সমাজের অন্তর্ভুক্তির বিষয় পাঠ্যক্রমে থাকার কারণেও সন্ত্রাসী হামলা বাড়ছে বলে অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন।’
মজার ব্যাপার,শুধু মার্কিনীরাই নয় মার্কিন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টানা তৃতীয় বছরের মতো কমেছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার। যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন নানা বিধি নিষেধ আরোপের পর বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরিমাণ কমে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইন্সস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন পরিচালিত বার্ষিক জরিপে বলা হয়, ২০১৮-১৯ আগের বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে আসা বিদেশি পড়ুয়া কমেছে। ভর্তি হয়েছে মাত্র ৬.৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৬.৬ শতাংশ। ২০১৬-১৭ শিক্ষার্থী কমেছিল ৩.৩ শতাংশ।
ধারাবাহিক এ হ্রাসের পেছনে রয়েছে নানা কারণ। কলেজের প্রশাসক ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ভিসা নীতি পাল্টে ফেলেছে। বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার বিরুদ্ধে তৈরি করা হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। ইন্সস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গুডম্যান বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে মার্কিন কলেজে ভর্তি হওয়া খরচ সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। একই ধরনের শিক্ষার্থীদের জন্য লড়াই করছে কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠানগুলিও। গুলিবর্ষণের ঘটনার কারণে অনেকে ভয় পেয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন কমে যাওয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা আয়ের বড় উৎস হয়ে উঠেছিল মার্কিন কলেজগুলোর জন্য। বেশিরভাগ স্নাতক পর্যায়ের বিদেশি শিক্ষার্থীকেই সেখানে প্রায় পুরো টিউশন ফি শোধ করতে হয়।