ভারতবর্ষের জন্য জীবন উৎসর্গ করা প্রথম ভিনদেশি নারী



ওসমান জাফর, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল (সিস্টার নিবেদিতা)

মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল (সিস্টার নিবেদিতা)

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতবর্ষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এরকম বিদেশি মহৎপ্রাণ অনেকেই আজ বিস্মৃত। তাঁদেরই একজন অ্যাংলো আইরিশ—মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল। যিনি ভারতবর্ষে এসে ‘ভগিনী নিবেদিতা’ বা সিস্টার নিবেদিতা নাম গ্রহণ করেন। তিনিই ছিলেন প্রথম ভিনদেশি নারী যিনি বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে মানবসেবার উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষের আসেন এবং সন্ন্যাসব্রত পালন করেন।

১৮৯৫ সালে লন্ডন শহরে নভেম্বর মাসে এক পারিবারিক আসরে স্বামী বিবেকানন্দের দেখা পান মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল। স্বামী বিবেকানন্দ তখন লন্ডনের বিভিন্ন জায়গায় নিজের মহৎ বাণীর কথা প্রচার করার জন্য বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি প্রচার করছেন বেদান্ত দর্শন, ধর্মব্যাখ্যা। স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতার ক্লাসে প্রশ্ন-উত্তর তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং এসব অনুষ্ঠানে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন।

মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতায় মুগ্ধ হন এবং স্বামীজির বাণী তাঁর হৃদয় স্পর্শ করে। তিনি স্বামীজির ব্যক্তিত্বেও অভিভূত হন। তখনই তিনি মানবসেবাকে মনেপ্রাণে গ্রহণের ইচ্ছায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। তিনি তখন যুবতী। বয়স মাত্র ২৯। ১৭ বছর বয়সে পড়ালেখা শেষ করে ১৮৮৪-১৮৯৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পাশাপাশি পড়াশোনা করছিলেন বুদ্ধধর্মের ওপর। এছাড়া তাঁর পিতা স্যামুয়েল রিচমেন্ডের ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাবও তাঁর ওপর বর্তেছে। পিতা স্যামুয়েল রিচমেন্ড সবসময় বলতেন, মানবসেবাই ঈশ্বরসেবা। এছাড়া স্বামী বিবেকানন্দ মারফত ভারতবর্ষের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সমাজ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে তিনি ভারতবর্ষের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

পিতা স্যামুয়েল রিচমেন্ডের ধর্মীয় শিক্ষার প্রভাবও তাঁর ওপর বর্তেছে

স্বামী বিবেকানন্দের সাথে ১৮৯৫ সালের নভেম্বরে মোলাকাতের পর ১৮৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি লন্ডন ছেড়ে ভারতবর্ষে আসেন। সে বছরই ২৫ মার্চ তিনি ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করলে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর নামকরণ করেন ‘নিবেদিতা’।

জীবনের প্রথম পর্ব
১৮৬৭ সালের ২৮ অক্টোবর উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যানন শহরে মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেল ছিলেন ধর্মযাজক। মায়ের নাম ছিল মেরি ইসাবেলা। মাত্র দশ বছর বয়সে মার্গারেটের বাবা মারা যান। তারপর তার দাদামশাই তথা আয়ারল্যান্ডের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী হ্যামিলটন তাকে লালনপালন করেন। মার্গারেট লন্ডনের চার্চ বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর হ্যালিফ্যাক্স কলেজে তিনি এবং তাঁর বোন মেরি পড়াশোনা করেছিলেন।

১৮৮৪ সালে, সতের বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে মার্গারেট শিক্ষিকার পেশা গ্রহণ করেন। দু বছরের জন্যে কেসউইকের একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়ান। এরপরে একে একে রেক্সহ্যামে (১৮৮৬), চেস্টারে (১৮৮৯) এবং লন্ডনের উইম্বলডনে (১৮৯০) তিনি শিক্ষকতা করেন। কিছুদিন পরে ১৮৯৫ সালে উইম্বলডনে নিজে ‘রাস্কিন স্কুল’ উদ্বোধন করেন। তিনি এই স্কুলে নতুন শিক্ষাপদ্ধতি ব্যবহার করেন। পাশাপাশি নানা পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতে ও গির্জার হয়ে নানা সেবামূলক কাজও শুরু করেন। তিনি একজন ওয়েলশ যুবকের কাছে বিবাহের প্রতিশ্রুতি পান, কিন্তু সে যুবক অচিরে মারা যান।

কলকাতা পর্ব
১৯৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারি লন্ডন ত্যাগের পর তিনি উত্তর কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে ১৬ নম্বর বোসপাড়া লেনে একটি বাসা নেন। তারপর মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য সে বাসাতেই তিনি মেয়েদের একটি স্কুল খোলেন। এখন যার নাম রামকৃষ্ণ সারদা মিশন ভগিনী নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়। ১৮৯৯ সালে কলকাতায় মহামারী দেখা দিলে তিনি স্থানীয় যুবকদের সহায়তায় রোগীদের সেবাশুশ্রুষা ও পল্লী-পরিষ্কারের কাজ করেন।

১৮৯৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি কলকাতায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করার পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে হিন্দু রক্ষণশীল পরিবার থেকে ছাত্রী সংগ্রহের কাজ করতেন। এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি নানা মানবকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সকল বর্ণের ভারতীয় নারীর জীবনযাত্রার উন্নতির লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু ও তার স্ত্রী অবলা বসু, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ওকাকুরো কাকুজো প্রমুখ তৎকালীন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছিলেন নিবেদিতার বন্ধুস্থানীয়। রবীন্দ্রনাথ তাকে ‘লোকমাতা’ আখ্যা দেন। ভারতীয় শিল্পকলার সমঝদার নিবেদিতা ভারতের আধুনিক চিত্রকলা সৃষ্টিতেও অন্যতম অনুপ্রেরণার কাজ করেন।

সারদা দেবীর সঙ্গে ভগিনী নিবেদিতা 

নন্দলাল বসু এই কথা একাধিকবার স্মরণ করেছেন, জীবনের শেষ পর্বে নিবেদিতা এমনকি স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। শ্রীঅরবিন্দের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। এই সময় ব্রিটিশ সরকার যাতে রামকৃষ্ণ মিশনকে অযথা উত্ত্যক্ত না করে, সেই কথা ভেবে মিশনের সঙ্গে তিনি তাঁর ‘আনুষ্ঠানিক’ সম্পর্ক ত্যাগ করেন। কারণ ভগিনী নিবেদিতা রামকৃষ্ণ মিশনের রাজকৃষ্ণ পরহংসের সহবত লাভ করে তাঁকে ভগবানতুল্য ভক্তিশ্রদ্ধা করতেন ও মিশনের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক বজায় ছিল। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই সিস্টার নিবেদিতার গুরু স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যু হয়।

সিস্টার নিবেদিতা

তিনি বিট্রিশ সরকারের ভারতীয়দের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম-দুঃশাসনের কারণে ব্রিটিশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কিন্তু রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের নিয়মানুসারে ধর্ম ও রাজনীতির সংস্রব ঠেকাতে সংঘের কেউ রাজনীতিতে জড়াতে পারত না। তাই মিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ত্যাগ করতে হয় নিবেদিতাকে। যদিও সারদা দেবী ও রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে তাঁর আমৃত্যু সুসম্পর্ক বজায় ছিল। তিনি ভারতবর্ষে কলেমার মহামারী দমনেও উদ্যোগী হন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় গোপনে বিপ্লবীদের সাহায্য করতে শুরু করেন নিবেদিতা। এই সময় অরবিন্দ ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু প্রমুখ বিশিষ্ট ভারতীয় ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। এসবের পাশাপাশি নিবেদিতা মডার্ন রিভিউ, দ্য স্টেটসম্যান, অমৃতবাজার পত্রিকা, ডন, প্রবুদ্ধ ভারত, বালভারতী প্রভৃতি পত্রিকায় ধর্ম, সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব, শিল্প ইত্যাদিতে বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতেন।

প্রভাব
ভগিনী নিবেদিতা ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর বই মাতৃরূপা কালী পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ভারতমাতা’ ছবিটি আঁকেন। বিধাননগরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ২০১০ সালে নির্মিত ভবনটি নিবেদিতার নামে নামাঙ্কিত।

তামিলনাড়ুর চেন্নাইতে ভগিনী নিবেদিতার প্রতিষ্ঠিত অ্যাকাডেমিটির নাম রাখা হয়েছে সিস্টার নিবেদিতা অ্যাকাডেমি। তার নামে একাধিক বিদ্যালয় ও কলেজের নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৬৮ সালে ভারত সরকার তার স্মৃতিরক্ষার্থে ৪.০৬ X ২.২৮ সেন্টিমিটারের একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে।

লেখালেখি
সিস্টার নিবেদিতা পত্রিকায় কলাম ও ইংরেজিতে অনেক বই লিখছেন। ভগিনী নিবেদিতার বইগুলির মধ্যে দ্য ওয়েব অফ ইন্ডিয়ান লাইফ (এই বইতে নিবেদিতা ভারতীয় সংস্কৃতি ও রীতিনীতি সম্পর্কে পাশ্চাত্যে প্রচলিত নানা ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করেন), মাতৃরূপা কালী , স্বামীজিকে যেরূপ দেখিয়াছি , স্বামীজির সহিত হিমালয়ে, ক্রেডল টেলস অফ হিন্দুইজম, স্টাডিজ ফ্রম অ্যান ইস্টার্ন হোম, সিভিল আইডিয়াল অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ন্যাশানালিটি, হিন্টস অন ন্যাশানাল এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া, গ্লিম্পসেস অফ ফেমিন অ্যান্ড ফ্লাড ইন ইস্ট বেঙ্গল-১৯০৬ উল্লেখযোগ্য।

মৃত্যু
ভারতের গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ায় অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নিবেদিতা। হাওয়া বদলের জন্য জগদীশচন্দ্র বসু ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দার্জিলিংয়ে বেড়াতে যান নিবেদিতা। ১৯১১ সালের ১৩ অক্টোবর দার্জিলিংয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪৪ বছর। তিনি জন্মেছিলেন ১৮৬৭ সালের ২৮ অক্টোবর। ১৮৯৮ থেকে ১৯১১ সাল—এ তের বছর কী অক্লান্ত পরিশ্রমই না তিনি করেছেন, অথচ তিনি আজ বিস্মৃতপ্রায়।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;