তারেক মাসুদ : বাংলা চলচ্চিত্রের মহাজীবন



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
তাঁর হাতে উঠে এসেছে বাঙালির আত্মপরিচয়

তাঁর হাতে উঠে এসেছে বাঙালির আত্মপরিচয়

  • Font increase
  • Font Decrease

যাত্রা শুরু হবার পর থেকেই চলচ্চিত্র বর্তমান সমাজ, অতীতের অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যতের প্রত্যাশাকে বিম্বিত করে আসছে। ‘২০০১: এ স্পেস অডিসি’-এর মতো সায়েন্স ফিকশন এবং ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’-এর মতো ইতিহাসকে পটভূমি ধরে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে হলিউডে। বাংলার সমাজ-বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েনে অভিজ্ঞতা আরেকটু ভিন্ন। কুসংস্কার, পশ্চাৎপদতা, ধর্মীয় উগ্রতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তার ভেতর থেকেই গড়ে ওঠা কতিপয় স্বপ্নালু মানুষ নিয়েই এখানকার জীবন। বাংলার সেইসব জমিয়ে রাখা কথাগুলো খুব যত্ন করে সাজিয়ে তুলে ধরেছেন এক চলচ্চিত্রকার—তারেক মাসুদ। সত্যজিৎ রায় ও জহির রায়হানের পর বাংলা চলচ্চিত্রে তারেক মাসুদ তাই প্রধান সেনাপতি। প্রায় মুখ থুবড়ে পড়া এক শিল্পকে পুনরায় মাথা তুলে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে গেছেন আজীবন।

তারেক মাসুদের জন্ম ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর। ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার নুরপুর গ্রামে। মাদরাসায় পড়াশোনার মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবনের শুরু হয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে শুরু হয় সাধারণ শিক্ষা। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে কিছুদিন ঘুরাঘুরি করে থিতু হন নটরডেম কলেজের মানবিক বিভাগে। সেখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স সমাপ্ত করেন। অনেক আগে থেকেই তারেক মাসুদ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। স্বাধীনধারা চলচ্চিত্র আন্দোলনের অগ্রগণ্য পরিচালক তিনি; যা শুরু হয়েছিল আশির দশকের মধ্যভাগে। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত নির্মাতা আলমগীর কবিরের দ্বারা ছিলেন গভীরভাবে প্রভাবিত।

তারেক মাসুদের প্রথম কাজ আদম সুরত (The Inner Strength) নির্মিত হয় ১৯৮৯ সালে। এটি মূলত চিত্রশিল্পী এস. এম. সুলতানের জীবনভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র; যার কাজ শুরু ১৯৮২ সালে। নির্মাণের উৎস হিসাবে তারেক মাসুদ প্রায় সাত বছর শিল্পীর সান্নিধ্যে কাটান। বস্তুত এই সময়েই তার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই রাজনীতি, শিল্প-সংস্কৃতি ও দর্শনচর্চায় তার সংযুক্তি ছিল। চিত্রা নদীর পাড়ে ধারণ করা হয় আদম সুরত। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তারেক মাসুদ বলেছেন, “চিত্রা নদীর পাড়ে থাকেন চিত্রশিল্পী সুলতান। আমরা যখন সুলতান ভাইয়ের ওপর ছবি বানাতে আসলাম; তখন চিত্রাই হয়ে উঠল সমস্ত কিছুর কেন্দ্রবিন্দু।”

আদম সুরতের সৃষ্টি চিত্রশিল্পী এস.এম. সুলতানকে নিয়ে

নারী সমাজের অধিকার ও ভূমিকা এবং তার বিপরীতে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান সূক্ষ্ণভাবে ফুটিয়ে তুলতে তারেক মাসুদ আশ্রয় নিলেন নতুন কাজের। ১৯৮৫ সালে নির্মিত হলো প্রামাণ্যচিত্র ‘সোনার বেড়ী’। আদম সুরত এবং সোনার বেড়ী—দুটো প্রামাণ্যচিত্রই সমকালে এবং পরবর্তী সময়ে তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যদিও জনসাধারণে কাছে তখনও খুব একটা জনপ্রিয়তা পাননি।

চলচ্চিত্রকার হিসাবে তারেক মাসুদ আলোচিত হয়ে উঠেন ‘মুক্তির গান’-এর মাধ্যমে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজনির্ভর এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয় ১৯৯৫ সালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বল্পকালীন প্রবাসজীবনে আবিষ্কার করেন মার্কিন পরিচালক লিয়ার লেভিনের ধারণকৃত ফুটেজ। ঘটনাটা তাকে ব্যাপকভাবে ধাক্কা দেয়। লিয়ার লেভিনের সেই ফুটেজ এবং পাশাপাশি পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ১৯৭১ সালের ফুটেজগুলো একত্রিত করতে উঠেপড়ে লেগে যান। তাঁকে সঙ্গ দেন আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। অনেক প্রচেষ্টার পর আলোর মুখ দেখে ‘মুক্তির গান’। জহির রায়হানের স্টপ জেনোসাইডের পর তারেক মাসুদের এই মুক্তির গান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রামাণ্য দলিল হিসাবে বিবেচিত। মুক্তির গান ‘ফিল্ম সাউথ এশিয়া-১৯৯৭’ থেকে বিশেষ সম্মাননা অর্জন করে। সারা দেশে বিকল্প পরিবেশনায় প্রদর্শিত হয় মুক্তির গান। নানা শ্রেণির মানুষ নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন। তারেক মাসুদ এবার নেন দ্বিতীয় পদক্ষেপ। সেই সব প্রতিক্রিয়া নিয়ে ১৯৯৯ সালে নির্মিত হয় ভিডিও চলচ্চিত্র ‘মুক্তির কথা’। প্রচলিত ও প্রাধান্য পাওয়া মধ্যবিত্তের বয়ানের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন একটা ভাষ্য উঠে এসেছে এই নির্মাণের ভেতর দিয়ে।

মুক্তির গান পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের দলিলে পরিণত হয় 

তারেক মাসুদের অভিযাত্রায় তখনও অনেক সৃষ্টি বাকি। দেশের মাটিতে চলচ্চিত্রকার হিসাবে তাঁর খ্যাতি তুঙ্গেই। বিদেশের মাটিতে সেই খ্যাতি এনে দিল প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘মাটির ময়না’। ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ফিপ্রেস্কি আন্তর্জাতিক সমালোচক পুরস্কারের আওতায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পরিচালকের আত্মজীবনীনির্ভর চলচ্চিত্র এটি; যেখানে মাদ্রাসা পড়ুয়া এক বালকের চোখে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা প্রতিভাত হয়েছে। উঠে এসেছে বাংলার লোকজ সংস্কৃতি ও সমাজ দর্শন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনায় পরবর্তী ইউরোপে মাটির ময়না আরো বেশি করে আলোচিত হতে থাকে।

অনন্য চলচ্চিত্রের তালিকায় আস্তে আস্তে যুক্ত হয় ‘অন্তর্যাত্রা’, ‘নরসুন্দর’ এবং ‘রানওয়ে’-র নাম। অন্তর্যাত্রা মুক্তি পায় ২০০৬ সালে। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অভিবাসী বাংলাদেশিদের আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে বারবার শেকড়ের টানে ফিরে আসার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কাহিনী আরো ভেতরের। সাধারণ মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে বিহারীদেরকে পাকসেনার সাহায্যকারী ও দোসর হিসাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। তারেক মাসুদের মূলভাষ্য একে কেন্দ্র করেই। সিনেমাতে দেখা যায় পাকিস্তানি বাহিনীর তাড়া খেয়ে পলায়নরত এক মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচিয়ে দেয় বিহারী নরসুন্দররা। বিহারীরা এখানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীপক্ষ না; সহযোগী পক্ষ হিসাবে আবির্ভুত হয়েছে। তারেক মাসুদ বস্তুত এর মাধ্যমে ঢালাওভাবে কারো ওপর অভিযোগ করাকে খণ্ডন করেছেন। সবিশেষ রানওয়ে সমসাময়িক বাংলাদেশের সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলেছে। বিশেষ করে ২০০৪-৫ সালের জঙ্গিবাদের সমস্যা। মৃত্যুর আগে নির্মীয়মাণ চলচ্চিত্র ‘কাগজের ফুল’-এর মূল বিষয়বস্তু ছিল ১৯৪৭ সালের দেশেবিভাগ। বস্তুত গোড়ায় ইসলামী ভাবধারার অতীত অভিজ্ঞতা থাকার কারণে অন্য সবার থেকে তাঁর দৃষ্টি ছিল অনেক বেশি সূক্ষ্ম।

রানওয়ে সিনেমার একটি দৃশ্য

বাঙালির জাতীয় পরিচয়, লোকজ বিশ্বাস ও সংস্কৃতি তারেক মাসুদের চোখে ধরা দিয়েছে অন্যরকম বাস্তবতা নিয়ে। সারাটা জীবন তাই তাঁর রচনায় সেই ঘ্রাণ। আজন্ম দেশের মাটি আর মানুষ এবং তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনাকে সিনেমার পর্দায় বিম্বিত করে জনতার সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। সে ক্ষেত্রে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। আহমদ ছফার মাধ্যমেই ক্যাথরিনের সাথে তারেকের পরিচয়। দুজনের সন্তান নিষাদ মাসুদ। ব্যক্তিগত জীবনেও অসাধারণ মানুষটি লিখেছেন গানও; যেগুলো নিয়ে পরবর্তীতে ক্যাথরিন প্রকাশ করেছে এলবাম। স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য, প্রামাণ্যচিত্র ও অ্যানিমেশন মিলিয়ে তারেক মাসুদের মোট চলচ্চিত্র ১৬টি।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট। মানিকগঞ্জ ‘কাগজের ফুল’ সিনেমার লোকেশেন ঠিক করা হলো। সকল পরিকল্পনা শেষ করে ঢাকার পথে রওনা হলেন তারেক মাসুদ। সাথে স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ এবং সাংবাদিক মিশুক মুনীর। কিন্তু বাসায় পৌঁছানোর আগেই তাঁর যাত্রা ঘুরে গেল পরপারের দিকে। বাংলাদেশের চিরন্তন সমস্যা সড়ক দুর্ঘটনায় বলি হলো আধুনিক বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ক্যাথরিন মাসুদ তারেকের স্বপ্ন বাস্তবতায় আনতে শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে টিএসসি ও শামসুন্নাহার হলের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিস্মারক।

   

সুন্দরবনের জল-জঙ্গলের রূপকথা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ওপাড়ে ঘন বন জঙ্গল, মাঝখানে শিবসা নদী আর এপাড়ে বাঁধের ধারের জমিতে সারিবদ্ধ ঝুলন্ত বাড়ি। জঙ্গলে হেঁটে বেড়ায় চিত্রা হরিণ, নদীর ডাঙ্গায় দেখা মেলে ভোঁদরের। সবুজভাব নদীতে ডিঙি নৌকায় জীবিকার সন্ধানে মাছ ধরে ঝুলন্ত বাড়ির বাসিন্দা। সবমিলে যেন জল-জঙ্গলের রূপকথা।

দৃশ্যটি খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ানের। এখানে জল-জঙ্গলের সঙ্গে মানুষের বসবাস। সুন্দরবনের সৌন্দর্য ও উপকূ্লের তাণ্ডব সহ্য করা নলিয়ানকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বার্তা২৪.কম-এর ফটো এডিটর নূর এ আলম।

শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রলয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এখনকার বাসিন্দারা এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর/ছবি: নূর এ আলম


নিজের বসতভিটা হারানোর পর ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ধারের জমিতে। সেখানেও ঘর বানানোর মতো আর মাটি অবশিষ্ট নেই। ফলে জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর।

এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে/ছবি: নূর এ আলম


তাই এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে। মোটামুটি মাঝারি ঝড় হলেই ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে। সুন্দরবনে জেলেরা দিনে রাতে মাছ ধরে, তারা দিন-রাতের হিসাব করে না।

 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরছেন জেলে/ছবি: নূর এ আলম


 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরেন তারা। কিনারা দিয়ে কাদায় হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


এরপরও নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে। অনেক জেলে ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন।

জেলেরা ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন/ছবি: নূর এ আলম


বর্ষায় শিবসার জলে ডুবে থাকা নলিয়ানের এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার জন্য এই ডিঙি নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।

শিবসা নদী/নূর এ আলম


নলিয়ানে উপকূলের বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করা চিত্র শুধু নয়, রয়েছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক প্রকৃতি। শিবসার অপার সৌন্দর্য।

গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি/ছবি: নূর এ আলম


নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ঘন গাছপালার সবুজ বন। যাতে চোখ জুড়িয়ে আসে।

হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ/ছবি: নূর এ আলম


যেখানে রয়েছে হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ। গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি, ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির। 

নলিয়ান পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গলের ভেতরে লোহার ব্রিজ/ছবি: নূর এ আলম


পর্যটকদের জন্য জঙ্গল ভেদ করে তৈরি করা লোহার ব্রিজ। পর্যটকরা সুন্দরবনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে এই ব্রিজে হেলেন দিয়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে নেয়।

জঙ্গলে হরিণ খুনশুটিতে ব্যস্ত/ছবি: নূর এ আলম


সুন্দরবনের প্যাঁচেপ্যাঁচে কাঁদায় হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা মিলে হরিণের দলের সঙ্গে। জঙ্গলে তারা তখন নিজেদের মধ্যে খুনশুটিতে ব্যস্ত।

মায়াবী চোখে তাকিয়ে হরিণ/ছবি: নূর এ আলম


এরই ফাঁকে মায়াবী চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখে দু’পা বিশিষ্ট মানুষের দিকে। আড় চোখে তাকায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা বানরের দলও। তারা সারাদিন বনে দৌড়ঝাঁপ করে।

বানরের দৌঁড়ঝাপ/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে।

নদীর তীরে দেখা মেলে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী ভোঁদরের/ছবি: নূর এ আলম


জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়।

 শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে। জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়/ছবি: নূর এ আলম

বড় বড় ঘূর্ণিঝড় যারা মোকাবিলা করা নলিয়ানের কাছে কুমির আর এমন কি! সব কিছু তোয়াক্কা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয় তাদের কাছে!

;

ইতিহাসে ২৮ মার্চ: বর্ণবাদের প্রতিবাদে কিংয়ের পক্ষে ২৫ হাজার মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

  • Font increase
  • Font Decrease

মানব ইতিহাস আমাদের অতীতের কথা বলে। আজ যা কিছু বর্তমান তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আমাদের অতীতের কারণেই। সেই অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়।  

আজ ২৮ মার্চ, ২০২৪। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখঅ যাবে, আজকে ঘটেছিল নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। জেনে নেয়া যাক, কি ঘটেছিল আজকের তারিখে!

*মার্টিন লুথার কিং ছিলেন বর্ণবাদের বিপরীত আন্দোলনকারী আফ্রিকান নেতা। ১৯৬৫ সালে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সমর্থন করে মিছিলে নেমেছিলেন আজকের তারিখে। এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে আলাবামায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার তৈরিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।    

*যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৯৭৯ সালে পানির পাম্প ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে চারপাশে তেজস্ক্রিয় বাষ্প এবং আয়োডিন ছড়াতে শুরু করে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৫০০ জন কর্মী এই বাষোপর সংস্পর্শে আসায় শারীরিক সমস্যার আশঙ্কায় ছিল। আমেরিকার জনগণ এই ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।  

*১৯৮৬ সালে অ্যাচেসন এবং লিলিয়েনথাল পারমারবিক শক্তি সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা উল্লেখ করেন তারা। ২৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের সেই রিপোর্টটি প্রকাশ করে।

*হিলসবোরো দুর্ঘটনায় প্রায় ১শ লোকের প্রায় গিয়েছিল ১৯৯১ সালে। শেফিল্ডে পিষ্ট হয়ে ৯৬ জন লিভারপুল ফুটবল সমর্থক নিহত হন। এছাড়া আরও দেড় শতাধিক ভক্ত আহত হন। এই বিপর্যয়ে আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট ছিল নিহতদের পরিবার। তাই, আজকের তারিখে তারা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল।

*১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ ১৯৩৯ সালের ২৮ মার্চ শেষ হয়েছিল।

;

তালপাতার পাখায় ঘোরে সংসারের চাকা



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। যা দেখে মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুরের কবিতা ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ বলছি বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের কথা। বর্তমানে গ্রামটি তাল পাখার গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নারী-পুরুষ সবাই তালপাতা দিয়ে পাখা বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গরমে তালপাতার পাখার বাতাস গা জুড়িয়ে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম। একটির নাম যোগীরভবন, অপরটি আড়োলা আতালপাড়া। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটি পাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দুটি গ্রামে একেক পাড়ায় একেক ধরনের পাখা তৈরি হয়। যোগীরভবন গ্রামে নারীরা তৈরি করেন হাতলপাখা বা ডাঁটপাখা। আর আড়োলা আতালপাড়ায় তৈরি হয় ঘোরানো পাখা বা ঘুন্নী পাখা আর পকেট পাখা। পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন দুটি গ্রামের সব নারী। শীতের শেষে বসন্তকালে, অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।

পাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারী

গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাড়ির উঠানে রং তুলির আঁচড়ে ঘুরানো পাখা রাঙিয়ে তুলছেন সখিনা বেগম। রাঙানো পাখা বাঁধায় করছেন গোলজার। বাঁধা হয়ে গেলে পাখাটি বিক্রি করবেন তিনি।

হাতপাখার গ্রামে এবার ২০ লাখ পাখা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এই পাখা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।

গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা অবসর সময়ে পাখা তৈরির কাজ করেন। বংশ পরম্পরায় এই দুই গ্রামের মানুষ তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পাখার চাহিদা, সেই সঙ্গে বাড়ছে পাখা তৈরির কাজের পরিধি।

আড়োলা গ্রামের খন্দকার বলেন, দাদার আমল থেকে তারা তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালপাখা তৈরির কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙের আচর দিয়ে তাল পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে থাকেন। আকরাম আকন্দ বলেন, গত বছর তিনি পাখা বিক্রি করে সংসার খরচ বাদে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতে গত বছর দুই গ্রাম থেকে ১৫ লাখ তালপাখা বিক্রি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার চাহিদা বাড়ায় ২০ লাখ পাখা বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে নাম দেয়া হয়েছে- পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা।

পাখা তৈরিতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং লোহার তার প্রয়োজন হয়। পাখা তৈরির পর বিভিন্ন রঙের আচর দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। ১০ টাকায় কেনা তাল গাছের একটি পাতা বা ডাগুড় দিয়ে তৈরি হয় বড় পাখা বা ডাগুর পাখা ২টি, ঘুরানী পাখা ৪টি এবং পকেট পাখা ৬টি।

তালপাতার পাখা

পাখা তৈরির কারিগর জানান, বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় বাঁশ এবং তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর বাঁশ ছোট ছোট আকারে কাটতে হয়। তালপাতাও কেটে পাখা তৈরির উপযোগী করা হয়। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ। চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাহারি রঙ করে বিক্রয় উপযোগী করা হয়।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসেন তালপাখা কিনতে।

যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, তিনি প্রতি বছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ডাগুর পাখা তৈরি করেন। এই পাখাগুলো বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখার চাহিদা বেশি বলে জানান মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, একটি তাল পাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়ে গেছে।

আতাইল পাড়া গ্রামের পারভীন, মর্জিনা, সাবিনা, বেবি, সুমি জানান, তারা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি হাত পাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরের ছয় মাস সংসারের কাজের ফাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজ করে তারা বাড়তি আয় করছেন। এইসব নারীরা তাদের সৌখিন জিনিস কিনে থাকেন নিজের টাকায়।

পকেট পাখা ১১ টাকা, ঘুরানী পাখা ২০ টাকা এবং ডাগুর পাখা ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতপাখার চাহিদা বাড়ছে বলে পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী করিম জানান। শহর এবং গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু প্রশান্তি পেতে ধনী-গরিব সবাই হাত পাখার ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

;

ইতিহাসে ২৭ মার্চ:স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

  • Font increase
  • Font Decrease

সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সাথে বছরের পর বছর কেটে যায়। বর্তমান হয় অতীত। তার সাথেই তৈরি হয় ইতিহাসের। মানব সভ্যতায় ঘটে যাওয়া ইতিহাস হয়ে থাকে জাতির কাছে স্মরণীয়। প্রতি বছর যখন ক্যালেন্ডারে একই তারিখগুলো ফিরে আসে, মানুষ পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে।

আজ ২৭ মার্চ, ২০২৪। বিগত বছরগুলোতে এই তারিখে ঘটা অনেক ঘটনা হয়েছে স্মৃতিতে অমলিন। ইতিহাসের পাতায় জুড়ে গেছে নতুন নতুন ঘটনা। চলুন জেনে নিই,আজকের তারিখে কি ঘটেছিল!    

১৯৭৭ সালে স্পেনে টেনেরিফ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ডাচ এয়ারলাইনের সেই দুর্ঘটনায় কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রানওয়েতে দু’টো জেট বিমানের সংঘর্ষে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে উৎপন্ন বিধ্বংসী দাবানলে সর্বমোট ৫৮৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ১৯৮০ সালে উত্তর সাগরের প্ল্যাটফর্ম ধসে পড়ে। রিগটি ডান্ডি থেকে ২৩৫ মাইল পূর্বে সেই আবাসন প্ল্যাটফর্ম দুর্ঘটনায় ১২৩ জন শ্রমিক মারা যান।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে কমিউনিটি পার্টির অনেক রাশিয়ান উচ্চতর কর্মকর্তা পরাজিত হন। তৎকালীন সময়ে এই ঘটনাকে একটি বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।     

১৯৬৩ সালে ব্রিটেনে রেললাইন কম ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষতি হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মোট রেলব্যবস্থার এক-চতুর্থাংশ সেবা কমিয়ে দেওয়া হবে। এই নিয়ে সুদূরপ্রসারী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২৭ মার্চ।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

;