ব্রিটেনের রাজনীতিতে ৪ বাঙালি নারী
আজ ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন। এবারের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কমপক্ষে ১০ জন প্রার্থী লড়াইয়ে রয়েছেন। তবে আলোচনা বেশি হচ্ছে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চার নারীকে নিয়ে, যাদের তিনজন এখন সংসদ সদস্য। এরা সবাই লেবার পার্টির প্রার্থী। নিজ আসন ধরে রাখতে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা হক। তাদের সঙ্গে এবার মাঠে নেমেছেন আফসানা বেগম। বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনে তাকে সম্ভাবনাময় ধরা হচ্ছে।
রুশনারা আলী
পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সিলেটের বিশ্বনাথের মেয়ে রুশনারা আরো পাঁচ বছর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে থাকতে লড়ছেন। বাঙালি ভোটারদের সংখ্যাধিক্যের কারণে এ আসন লেবার পার্টির জন্য নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত। ৮০ হাজার ভোটারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।
২০১৭ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির চার্লট চিরিকোর চেয়ে ৩৫ হাজার ৫৯৩ ভোট বেশি পেয়ে তিনি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারার অধীন রুশনারার আসনটি লেবার দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সাধারণ এক কর্মজীবী বাঙালির মেয়ে রুশনারা পরিবারের প্রথম সদস্য, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ডিগ্রি নিয়েছেন অক্সফোর্ডের সেইন্ট জন’স কলেজ থেকে।
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে রুশনারা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও শিক্ষাবিষয়ক ছায়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পার্লামেন্টারি ট্রেজারি সিলেক্ট কমিটির সদস্য ছিলেন। কনজারভেটিভ সরকারের আমলেও তিনি বাংলাদেশ-বিষয়ক বাণিজ্য দূতের দায়িত্ব পালন করেন।
রূপা হক
লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে টানা দুইবারের এমপি রূপা হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনে; বাংলাদেশে আদি বাড়ি পাবনায়। ৪৮ বছর বয়সী রূপা অল্প ভোটের ব্যবধানে হলেও ২০১৫ সালের নির্বাচনে রক্ষণশীলদের হাত থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনেও তিনি ব্যবধান বাড়িয়ে আসনটি ধরে রাখেন।
রূপ হক কেমব্রিজে রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন পড়েছেন। তিনি পড়াচ্ছেন সমাজবিজ্ঞান, অপরাধবিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যায়নের মতো বিষয়। শিক্ষক রূপা এর আগে ডেপুটি মেয়র হিসাবে স্থানীয় সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন।
লেখক, মিউজিক ডিজে, যুক্তরাজ্যের কয়েকটি প্রধান দৈনিকের কলামনিস্ট রূপার ছোট বোন কনি হক বিবিসির ব্লু পিটার শো উপস্থাপনার কল্যাণে ব্রিটিশদের কাছে খুব পরিচিত নাম।
টিউলিপ সিদ্দিক
উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনটি ধরে রাখার লড়াইয়ে নেমেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ ২০১৫ সালে লেবার পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হন। পরের দফায় ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন।
একদিকে পারিবারিক পরিচয়, অন্যদিকে লন্ডনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে প্রার্থিতার কারণে টিউলিপ সবসময়ই আলোচনার কেন্দ্রে। ৩৭ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিককে পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। টিউলিপ প্রথমে ইংরেজি এবং পরে রাজনীতি, নীতি ও সরকার বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন যুক্তরাজ্যের অন্যতম শীর্ষ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট দলের বারাক ওবামার প্রচারাভিযানে অংশ নেন।
আফসানা বেগম
টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে লেবার পার্টি থেকে এবার প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফসানা বেগম। এই আসনের দুই দশকের লেবার পার্টি এমপি জিম ফিটজপেট্রিক চলতি বছরের শুরুর দিকে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। লেবার দলের নিরাপদ এই আসনে মনোনয়ন নিয়ে লড়াইয়ের মধ্যে অনেকটা চমকে দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ এ বাঙালি কন্যা।
আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসে হলেও বাংলাদেশে তাদের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আবাসন বিভাগে কর্মরত আছেন তিনি।
এবারের সাধারণ নির্বাচনে সর্বমোট ৬৫০ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা হচ্ছে চার কোটি ৬০ লাখ। বিভিন্ন দলের মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩২২। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে যে কোনো রাজনৈতিক দলের এমপির সংখ্যা হতে হবে ৩২৬ জন।
এখন কোনো দলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই—কনজারভেটিভ ২৯৮, লেবার ২৪৩, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি ৩৫, লিবডেম ২০, ডিইউপি ১০, স্বতন্ত্র ২৪ জনসহ আরো ২০ জন এমপি রয়েছেন।