যে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই চলে জীবনযুদ্ধের প্রস্তুতি
প্রায় ১৩৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত। জনসংখ্যার অনুপাতে মানুষের কর্মের সুযোগও কম। তাই ভারতে বেকারত্ব অন্যতম প্রধান সমস্যা। এই দেশে একটি চাকরি পেতে চলে কতই না প্রতিযোগিতা। পত্রপত্রিকায় প্রায়ই ভারতের বেকারত্বের খবর প্রকাশিত হয়। কোনো একটি ছোট চাকরির জন্য বড় বড় ডিগ্রিধারীরাও হাজির হয় এই দেশে।
রোজ সকালে এখানে জীবনযুদ্ধের জন্য মানুষ প্রস্তুতি নেয়। রেলপ্রধান ভারতের অন্যান্য স্টেশনের মতোই বিহারের সাসারাম রেল স্টেশনেও সকাল শুরু হয়। এখানেও দেখা যায় চাকরিপ্রার্থীদের ভিড়।
গয়া-মুগলসরাই জংশনের এই স্টেশনে একটার পর একটা ট্রেন আসে। তাতে চেপে কেউ দূর-দূরান্তে চলে যাচ্ছেন, কেউ আবার ফিরে আসছেন।
তবে একটি চিত্রে এই স্টেশনকে ভারতের অন্যান্য রেলস্টেশন থেকে সহজেই আলাদা করা যাবে। এখানে প্ল্যাটফর্মে গেলে দেখতে পাওয়া যায় বহু তরুণ এখানে সকাল সন্ধ্যা বই হাতে পড়াশোনা করছেন। এরা মূলত চাকরিপ্রার্থী।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার এক খবর প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, সাসারামের প্রথম ও দ্বিতীয় প্ল্যাটফর্মে সকাল-সন্ধ্যা প্রায় সহস্রাধিক চাকরিপ্রার্থী পড়াশোনা করেন।এ সময় এই স্টেশন যেন এক বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়।
কবে থেকে এই কানুন শুরু হয় তার সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ কারও জানা নেই। তবে ২০০২-২০০৩ সালের দিকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। তারপর থেকে এই অবধি এই দৃশ্য রোজকার ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
এই স্টেশনের আশপাশের গ্রামগুলোতে এখনো বিদ্যুতের তরঙ্গ পৌঁছায়নি। আলো জ্বলেনি। যে ভারত প্রযুক্তিতে এতো এগিয়ে, সেই ভারতে এমনও গ্রাম রয়েছে, ভাবতেই অবাক লাগে। এখানকার মানুষের মোটা অঙ্কের টাকা নেই। তারা তাদের সন্তানদের কোচিংয়ে পাঠাতে পারে না।
এসব গ্রামের দরিদ্র পড়ুয়ারা স্টেশনের আলোতে এসে পড়াশোনা করেন। তাদের রয়েছে পরিচয়পত্র। পরিচয়পত্র দেখিয়ে তারা প্ল্যাটফর্মে আসেন পড়াশোনা করতে।
দলে দলে বিভক্ত হয়ে এখানকার পড়ুয়ারা চাকরির প্রস্তুতি নেন। আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান করেন। অপেক্ষাকৃত বড় ক্লাসের শিক্ষার্থীরা তাদের অনুজদের পড়াশোনায় সাহায্য করেন।
এই স্টেশনে এমন অনেককে দেখা যায় যারা সারারাত পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। স্টেশনের প্রতিটা দোকানি তাদের চেনে। এই পড়ুয়া দলকে স্থানীয়রা ‘স্টেশনবালে লড়কা’ নামে চেনে।
এই স্টেশনে রোজ সূর্য ওঠে, আবার ডুবে যায়। রাত নামে, ভোরে শেষ হয়। এই নিয়ম যেমন সত্য তেমনি এখানকার পড়ুয়াদের পড়াশোনা, চেষ্টা সংগ্রাম তেমনই সত্য। অনেকেই সফল হন। চাকরি পেয়ে চলে যান। আবার অনেকে বছরের পর বছর পড়তে থাকেন। চোখে স্বপ্ন নিয়ে। ভারতের মত দেশে একটি কাজের আশায়, বেঁচে থাকার আশায়।