বিশ্লেষণ

সোলেমানি হত্যার পর কী অপেক্ষা করছে



জাভেদ পীরজাদা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি ও কুদস কমান্ডার সোলেমানি

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনি ও কুদস কমান্ডার সোলেমানি

  • Font increase
  • Font Decrease

শুক্রবার বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন রকেট হানায় নিহত হলেন ইরানি সেনা রেভোলিউশন গার্ড কোরের জেনারেল কাসেম সোলেমানি। আলজাজিরা.কম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, পেন্টাগন এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ইরানের ভবিষ্যৎ আক্রমণ পরিকল্পনা রদ করতেই এই আক্রমণ চালিয়েছিল আমেরিকা। ইরাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেনারেল কাসেম সোলেমানি ছাড়াও ইরাকি মিলিশিয়া কমান্ডার আবু মাহদি আল-মুহানদিসও এই হানায় নিহত হয়েছেন।

ওই হানায় অন্তত আট জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আল জাজিরা পিএমএফ-এর সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, দুটি গাড়িতে ‘হাই প্রোফাইল’ অতিথিরা ছিলেন। সেই গাড়ি দুটিতে রকেট নিক্ষিপ্ত হয়। আল জাজিরার দাবি, এই ঘটনা কেবল ইরাক নয়, সামগ্রিক মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রেই বড় টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে। আমেরিকা ও ইরাকের মধ্যে সম্পর্কে বড়সড় ফাটল ধরে গেল এই ঘটনায়, এমন দাবি করেন আল জাজিরার ওসামা বিন জাভেদ।

মার্কিন রকেট হানায় বিধ্বস্ত গাড়ি

মৃত সোলেমানি ঠিক কে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন সোলেমানি। ইরান রেভ্যুলশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) অভিজাত বাহিনী কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেমানি। পেন্টাগন জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। হামলার চেষ্টা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও বেশ কয়েকবার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল আমেরিকা ও জঙ্গি সংগঠন আইসিস।

১৯৫৭ সালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরমান শহরের উপকণ্ঠে জন্মগ্রহণ করেন কাসেম সোলেমানি। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর আইআরজিসিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধে জেনারেল সোলেমানি কেরমানের ৪১ ‘সারুল্লাহ’ ডিভিশনের নেতৃত্ব দেন। ওই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে তিনি ইরানের পূর্ব সীমান্তে মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তাকে আইআরজিসির কুদস (পবিত্র) বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ করেন। সেই সময়ে ইরানের পূর্ব সীমান্তে তালিবান যে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল তার অবসান ঘটাতে সক্ষম হন তিনি। ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন কাসেম সোলেমানি। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদের ইরান সমর্থিত সরকারকে সহযোগিতা ও ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।

আইএসবিরোধী যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় বহুবার জেনারেল সোলেমানিকে হত্যার চেষ্টা করেছে জঙ্গিরা। গত অক্টোবরেও তাকে হত্যার চেষ্টা বানচাল করার কথা জানিয়েছিল ইরান। চলতি সপ্তাহে ইরানপন্থি বিক্ষোভকারীরা বাগদাদের মার্কিন দূতাবাস ঘেরাওয়ের পরে তাকে হত্যার নির্দেশ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহ অভিযান ও ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদের মতো যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন করে ইরানের কুদস ফোর্স। এসব সংগঠনকে তারা অর্থ, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। গত এপ্রিলে আইআরজিসি ও তাদের অধীনস্থ কুদস ফোর্সকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে কালো তালিকাভুক্ত করে আমেরিকা।

ইরানি সেনা রেভোলিউশন গার্ড কোরের জেনারেল কাসেম সোলেমানি

সোলেমানিকে মেরে কারা খুশি, কী হতে যাচ্ছে
ট্রাম্পের জন্য নির্বাচনে জিততে এ রকম বড় কোনো পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক টিভি চ্যানেলেই প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাকে ইতিবাচক এক অভিযান হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনে এ ধরনের আক্রমণকে ‘সন্ত্রাস’ হিসেবে চিহ্নিত করা থাকলেও টুইটার-প্রেমী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে এই ঘটনা শেষে মার্কিন পতাকার ছবি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘পোস্ট’ দিয়ে দেশের ভেতর জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা জাগিয়ে তুলতে দেরি করেননি।

শেষ বিচারে এতে বিশেষভাবে উল্লসিত হবে ইসরায়েল, আইএস ও সৌদি আরব। এই তিন শক্তির কাছে জেনারেল সোলেমানি ছিলেন সরাসরি প্রধান প্রতিপক্ষ। তবে নিশ্চিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় সব দেশ এই ঘটনায় আক্রান্ত হবে।

সমরাস্ত্র ও তেলের কী হবে!
অনেক আগে থেকে ইরানকে সমরাস্ত্র উৎপাদনে বাধা দিতেই থাকে আমেরিকা। বারাক ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ইরানের রুহানী ক্ষমতায় এলে চুক্তিও হয়। কিন্তু ইরান মানেনি। তাই গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, ইরানকে কোনো সামরিক সাহায্য করা যাবে না। তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের শুরুতে ইরান প্রতিদিন গড়ে ৩৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করেছে। প্রতিদিন গড়ে রপ্তানি করেছে ২৩ লাখ ব্যারেল। এখানে উৎপাদন ও রপ্তানির মধ্যে বিরাট বৈষম্য লক্ষণীয়। এর মধ্যেই ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার খড়্গ, ইরান থেকে আর তেল আমদানি নয়। ওই সময় ইরান থেকে আটটি দেশ তেল আমদানি করছিল। তারা হলো চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, তুরস্ক, গ্রিস ও ইতালি। এই আটটি দেশকে অবশ্য ছয় মাসের সুযোগ দিয়ে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে তেলবিষয়ক সব লেনদেন চুকিয়ে ফেলতে হবে।

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, গ্রিস, তাইওয়ান ও ইতালি এরমধ্যে ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যতম বড় ক্রেতা চীন ও ভারত যথাক্রমে ৩৯ ও ৪৭ শতাংশ করে আমদানি কমিয়েছে। এতে গত বছরের মার্চ নাগাদ ইরানের অপরিশোধিত তেল রপ্তানি প্রতিদিন ১১ লাখ ব্যারেলে নেমে এসেছে। একজন মার্কিন কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, তেল রপ্তানি খাতে ইরান এরমধ্যে এক হাজার কোটি ডলারের বেশি রাজস্ব হারিয়েছে।গত বছরের মে মাসে ট্রাম্প সদর্পে ঘোষণা করেছেন, ইরানের তেল রপ্তানি তিনি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি

জবাব পাবে আমেরিকা
তেহরানের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, বড় মূল্য চোকাতে হবে তেহরানকে। শুক্রবার ভোরে বাগদাদ বিমানবন্দরের সামনেই রকেট হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইরানি কুদস সেনাপ্রধান কাসেম সোলেমানির। এরপরেই ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ইরানের হুঁশিয়ারি, ভয়ঙ্কর জবাব পাবে আমেরিকা। সেইসঙ্গে এই হামলার পরে মধ্যপ্রাচ্যর পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মার্কিন হামলায় সোলেমানির মৃত্যুর পরে পেন্টাগনের তরফে একটা বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এই বিবৃতিতে বলা হয়, “জেনারেল সোলেমানি বহুদিন ধরে ইরাকে বসবাস করা মার্কিন নাগরিক ও কূটনীতিবিদদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন। গত কয়েক মাসে এই এলাকায় হওয়া সবকটি হামলার দায়ও তার।” এই হামলায় ইরাকের কাতাইব হিজবুল্লাহ নেতা আবু মেহদি আল-মুহানদিসও খতম হয়েছেন। এই মুহানদিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ইরাকে মার্কিন সেনার ওপর রকেট হামলা চালিয়েছিলেন। গত শুক্রবার ইরাক ও সিরিয়াতে থাকা কাতাইব হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর কিছু ক্যাম্পের ওপর মার্কিন বায়ুসেনার হামলার পরে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায় এই গোষ্ঠীর সদস্যরা।

ইরানের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ জারিফ জানিয়েছেন, “মধ্যপ্রাচ্যর পরিস্থিতি খারাপ বলে যে দাবি আমেরিকা করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। এই মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে ইসলামের কমান্ডার কাসেম সোলেমানিকে হত্যা করল তারা। এই হত্যা ব্যর্থ যাবে না। এবার আমেরিকা বুঝতে পারবে, মধ্যপ্রাচ্যর পরিস্থিতি কী হতে পারে। আমেরিকাকে এই হামলার মূল্য চোকাতে হবে।”

সোলেমানির মৃত্যুতে ইরানে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ইরানের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন এই সোলেমানি। আমেরিকা ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ইরানের জবাব দেওয়ার প্রধান মুখ ছিলেন তিনি। বেশ কয়েকবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ছক বানচাল করেছেন এই সোলেমানি। তার মৃত্যুর পরেই জরুরি বৈঠক ডেকেছে ইরান প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর শীর্ষকর্তারা। এই বৈঠকেই পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করা হবে বলে খবর।

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;