মোসাদের গুপ্তচর এলি কোহেনের জীবন, অভিযান ও ফাঁসি



ওসমান জাফর, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
দামেস্কে নিজ বাসভবনের ছাদে এলি কোহেন

দামেস্কে নিজ বাসভবনের ছাদে এলি কোহেন

  • Font increase
  • Font Decrease

কোথায় যে ওত পেতে আছে আর গোপনে তথ্য সংগ্রহ করছে মোসাদের গুপ্তচরেরা তা বলা খুবই মুশকিল। এ নিয়ে একপ্রকার ‘মিথ’ই আছে—আপনি ঘরে কী দিয়ে ভাত খান তাও জানে মোসাদ। পৃথিবীর সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত গোপনে সংগ্রহ করে মোসাদ। মোসাদ হচ্ছে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার নাম। যাদের কার্যক্রম দেখে আপনার মনে হতে পারে, পৃথিবীর শিরা-উপশিরার সর্বত্রই বুঝি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মোসাদের গুপ্তচরেরা।

সাল ১৯৬৭। শুরু হয়ে গেছে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ—যা ছয় দিনের যুদ্ধ বা তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ নামেও পরিচিত। ১৯৬৭ সালের ৫ জুন সিনাই উপদ্বীপে মিশরীয় সেনাবাহিনীর বিমানক্ষেত্রে ইসরায়েলের অতর্কিত হামলা এ যুদ্ধের সূচনা করে—যা চলে ১০ জুন পর্যন্ত। একপাশে ইসরায়েল, বিপরীত পক্ষে মিশর, জর্ডান আর সিরিয়া। কিন্তু ছোট্ট এবং নতুন রাষ্ট্র ইসরায়েলকে কিছুতেই ধরাশায়ী করতে পারছে না আরব ব্লক। এর প্রধান কারণগুলোর অন্যতম বড় কারণ মোসাদ। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদই যুদ্ধের ফলাফল তৈরিতে ও ইসরায়েলকে যুদ্ধে জয়ী হতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। আর গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান শক্তি তাদের গুপ্তচরেরা।

সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখলে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এলি কোহেনের সংগৃহীত গোপন তথ্যাবলি। এলি কোহেন—যিনি ছিলেন একজন ইসরায়েলি গুপ্তচর। তাকে ইসরায়েলের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তার নামে নামকরণ করা হয় ইসরায়েলের রাস্তাঘাট, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। আজ থাকছে দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের খ্যাতিমান গুপ্তচর এলি কোহেনের জীবন কাহিনী—তার মোসাদে যোগদান, গোপন অভিযান ও ধরা পড়ার পর ফাঁসিসহ বিবিধ প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোকপাত।

তেল আবিবে মোসাদের হেড কোয়ার্টার

এলিয়াহু বেন-শওল কোহেনের জন্ম ২৬ ডিসেম্বর ১৯২৪। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন ১৮ মে ১৯৬৫। সিরিয়াতে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য কোহেন সমধিক পরিচিত, যেখানে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক ও সামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু সিরিয়ার কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স অবশেষে তার গোয়েন্দা কার্যক্রম উন্মোচিত করে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে দোষী সাব্যস্ত করার মাধ্যমে সামরিক আইনে ১৯৬৫ সালে তার ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর করে। ধারণা করা হয়, গ্রেপ্তারের আগে কোহেনের জোগাড় করা গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যগুলো ইসরায়েলকে ছয় দিনের যুদ্ধে সাফল্য এনে দিয়েছিল।

প্রারম্ভিক জীবন
১৯২৪ সালে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরে এক ধর্মপ্রাণ জায়নবাদী ইহুদি পরিবারে এলি কোহেনের জন্ম হয়। তার পিতা ১৯১৪ সালে সিরিয়ার আলেপ্পো শহর ছেড়ে মিশরে এসেছিলেন। এলি কোহেন ১৯৪৭ সালের দিকে মিশরের সেনাবাহিনীতে দাপ্তরিক কাজে যোগ দেন, কিন্তু আনুগত্যের প্রশ্নে সন্দেহভাজন মনে হওয়ায় সেনাবাহিনীতে অযোগ্য বলে বিবেচিত হন। ইহুদি হওয়ার কারণে মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়ে কোহেন পরের বছর ১৯৪৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে নিজ ঘরে অধ্যয়নের সিদ্ধান্ত নেন।

সেই বছরই—১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর অনেক ইহুদি পরিবার মিশর ছেড়ে দেশান্তরিত হয়ে ইসরায়েলে যেতে শুরু করে। কোহেনের পিতা-মাতাও ১৯৪৯ সালে ইসরায়েলে পাড়ি জমায়। কিন্তু ইলেকট্রনিক্সের ওপর ডিগ্রি শেষ না হওয়ায় এবং মিশরের ইহুদিদের সাহায্য ও জায়নবাদী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোহেন মিশরে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর দু বছর পর ১৯৫১ সালে মিশরে সামরিক অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে জায়নবাদ-বিরোধী অভিযান শুরু হলে এলি কোহেন গ্রেপ্তার হন এবং তার জায়নবাদী কার্যক্রমের জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন করা হয়। ১৯৫০-এর দিকে মিশরে থাকাকালীন এলি কোহেন মোসাদের গোপন—গোশান অভিযানে জড়িত ছিলেন, যে অভিযানের উদ্দেশ্য অত্যাচারের শিকার সংখ্যালঘু মিশরীয় ইহুদিদের মিশর থেকে বের করে ইসরায়েলে স্থানান্তর। দোষী সাব্যস্ত করলেও মিশরীয় কর্তৃপক্ষ মোসাদের এই গোপন অভিযানে কোহেনের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলি সৈন্যদের হাতে আটক মিশরীয় যোদ্ধারা

এছাড়া, মিশরের সাথে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্ক খারাপ করার জন্য মোসাদ মিশরীয়-ইহুদিদের ব্যবহার করে ১৯৫৪ সালে যে আত্মঘাতী সুসান অভিযান পরিচালনা করে, সেখানেও কোহেনের নাম জড়িত ছিল বলে সন্দেহ করা হয়। যদিও এক্ষেত্রেও মিশরীয় কর্তৃপক্ষ অভিযানে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের সাথে কোহেনের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ উদ্ধার করতে পারেনি।

পরবর্তী সময়ে ১৯৫৬ সালে সুয়েজ সংকট নামক দ্বিতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে মিশরের সরকার ইহুদিদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক ইহুদির নাগরিকত্ব বাতিল করে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করে। সেইসময় এলি কোহেনকেও মিশর ছাড়তে বাধ্য করা হয়। সেইসময় ইহুদি সংস্থার সহায়তায় ইতালির নেপলস শহর দিয়ে হাইফা বন্দর দিয়ে কোহেন অবশেষে ইসরায়েলে ঢোকেন। ১৯৫৭ সালে কর্মস্থল হিসেবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে তিনি যোগ দেন এবং ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা শাখায় কাউন্টার-ইন্ট্যালিজেন্স অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

অল্প কিছুদিন পর এই কাজে আগ্রহ হারিয়ে কোহেন বরং মোসাদে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু মোসাদ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে হতাশ কোহেন সামরিক বাহিনী থেকেও ইস্তফা নেন। পরের দু বছর তেল আবিবের একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কেরানী হিসেবে চাকরি করেন। ১৯৫৯ সালে কোহেন উদারপন্থী লেখক সামি মাইকেলের বোন নাদিয়া মাজাল্ডকে বিয়ে করেন। নাদিয়ার সাথে এলি কোহেনের সোফি, ইরিত ও শাই নামের তিন সন্তান।

পরিবারের সাথে এলি কোহেন

মোসাদে যোগদান
তৎকালীন মোসাদ প্রধান মেইর আমিত বিশেষ কাউকে খুঁজছিলেন, যিনি সিরিয়ার সরকারি কাজে গুপ্তপ্রবেশ করে সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য মোসাদকে জোগাড় করে দেবেন। এই গোপন গোয়েন্দা অভিযানের জন্য বাহিনীর কাউকে উপযুক্ত মনে না হওয়ায় মেইর আমিত পুরনো ফাইল ঘেঁটে বাতিল হওয়া মোসাদে চাকরিপ্রার্থীদের প্রোফাইল দেখতে শুরু করেন। খুঁজে পান এলি কোহেনকে। তবে এই বিশেষ অভিযানের জন্য কোহেন আসলেই উপযুক্ত কিনা তা যাচাইয়ে প্রায় দু সপ্তাহ তাকে নজরদারি এবং প্রাক-প্রশিক্ষণের মধ্যদিয়ে যেতে হয়। সবকিছু ঠিক মনে হওয়ার পর কোহেনকে জানানো হয় তিনি এই অভিযানের জন্য উপযুক্ত এবং তাকে পরবর্তী ছয় মাস মোসাদের নিজস্ব ট্রেনিং স্কুলে যেতে হবে। ট্রেনিং শেষে স্নাতক রিপোর্ট তাকে ‘কাত্সা’ বা ‘ফিল্ড এজেন্ট’ হওয়ার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত বলে বিবেচিত করে।

প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর গোপন মিশনের জন্য ‘আর্জেন্টিনা ফেরত প্রবাসী সিরিয়ান ব্যবসায়ী’ হিসেবে তাকে একটি ভুয়া পরিচয় দেওয়া হয়। এমনকি এই ভুয়া ব্যবসায়ী পরিচয়টিকে নিখুঁত বানানোর জন্য ১৯৬১ সালে তাকে আর্জেন্টিনায়ও পাঠানো হয়।

সিরিয়ার দামেস্কে সফর, অনুপ্রবেশ ও আস্থা তৈরি
কোহেন ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘কামেল আমিন থাবেত’ ছদ্মনামে সিরিয়ার দামেস্কে স্থানান্তরিত হন। কিভাবে কোন কৌশলে কোহেন সিরিয়ার উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদ, সেনাকর্মকর্তা, প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় কূটনীতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন, সেসবের সার্বিক রূপরেখা তৈরি করে দেয় মোসাদ।

আর্জেন্টিনার বিভিন্ন ক্যাফেতে রাজনৈতিক গল্প শোনার মাধ্যমে কোহেন নিজের সামাজিক জীবন অব্যাহত রাখতেন। নিজ ফ্ল্যাটে প্রায়সময় পার্টি আয়োজন করতেন। উচ্চপদস্থ সিরিয়ান মন্ত্রী, ব্যবসায়ী এবং সিরিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মূলত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুন্দরী নারী, বিমানবালা এবং উদীয়মান সংগীত তারকাদের নিয়ে সময় কাটাতে কোহেনের ফ্ল্যাটে যেতেন। এই ধরনের পার্টিতে সিরীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রায়ই তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড ও সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে অবাধে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতেন। এলি কোহেন সেই সমস্ত বৈঠকে মাতাল সেজে আলোচনার সবটাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন।

সিরিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের ঋণও দিতেন কোহেন। ফলে ক্রমশ বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠা কোহেনের কাছ থেকে রাজনৈতিক পরামর্শও চাইতে শুরু করেন সিরিয়ান কর্মকর্তারা। নারী সংক্রান্ত ব্যাপারেও কোহেন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। সিরিয়াতে তিনি প্রায় ১৭ জন নারীর সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন—যাদের বেশিরভাগই সমৃদ্ধশালী পরিবার থেকে উঠে আসা। ধারণা করা হয়, তৎকালীন সিরিয়ার প্রভাবশালী সেনাকর্মকর্তা ও বাথ পার্টির সদস্য আমিন আল-হাফিজের সাথেও কোহেনের সুসম্পর্ক ছিল।

সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট আমিন আল-হাফিজের সাথে এলি কোহেন

যদিও ২০০১ সালে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমিন আল-হাফিজ—কোহেনের সাথে তার সম্পর্কের ব্যাপারটি অস্বীকার করেন। স্বপক্ষ যুক্তি হিসাবে হাফিজ বলেন, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি মস্কোতে ছিলেন। তাই কোহেনের সাথে তার এই ধরনের সম্পর্কের প্রসঙ্গ পুরোপুরি অবান্তর। বলা হয়ে থাকে, হাফিজের শাসনামলে কোহেনকে এমনকি সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বানানোরও কথা ছিল।

গোপন তথ্য সংগ্রহ
১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৫—এই চার বছরে কোহেন ব্যাপক পরিসরে গোয়েন্দা তথ্য ইসরায়েলে পাচার করেন। রেডিও, সাংকেতিক চিঠি এমনকি গোপনে স্বশরীরে তিনবার ইসরায়েলে গিয়েও তিনি তথ্য সরবরাহ করেছেন। তার গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা-কৃতিত্বগুলোর একটি ছিল গোলান মালভূমিতে সফর। যেখানে কোহেন সিরিয়ান সামরিক দুর্গগুলোকে চিহ্নিত করে সেসব স্থানসমূহের স্পর্শকাতর তথ্য ইসরায়েলে প্রেরণ করেছিলেন। তখন সিরিয়ান সেনাদের প্রতি কপট-সহানুভূতি দেখিয়ে প্রখর রোদে তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য কোহেন সেনাদের প্রতিটি অবস্থানে গাছ লাগিয়ে আসেন। এই গাছগুলোই ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলিদের কাছে সিরিয়ান সেনাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। ইসরায়েলের সেনারা কেবল গাছ লক্ষ্য করেই সিরিয়ান সেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। যুদ্ধে মাত্র দুই দিনেই ইসরায়েল—সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। এছাড়াও সিরিয়ার দক্ষিণ সীমান্ত অঞ্চলে বেশ কয়েকবার সফর করে কোহেন সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে স্পর্শকাতর ছবি ও স্কেচ মোসাদের হাতে তুলে দেন।

প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সুন্দরী নারীদের নিয়ে সময় কাটাতে কোহেনের ফ্ল্যাটে যেতেন

কোহেন—মর্টার আর পরিধি নিয়ে তিনটি লাইন তৈরির ব্যাপারে সিরিয়ানদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পরিকল্পনাও জেনে ফেলেন। অথচ এর আগে ইসরায়েল সেনাবাহিনী শুধু একটি লাইন নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

আসল পরিচয় উন্মোচন ও গ্রেপ্তার
নতুন নিযুক্ত সিরিয়ান গোয়েন্দা উপদেষ্টা কর্নেল আহমেদ সু’এদানি কাউকেই বিশ্বাস করতেন না এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি কামেল আমিন থাবেতকে (কোহেন) অপছন্দ করতেন। এ পর্যায়ে কোহেন তার পরিচয় উন্মোচিত হবার আশঙ্কায় পড়েন। ১৯৬৪ সালের নভেম্বরে কোহেন যখন তথ্য পাচার করতে এবং নিজের তৃতীয় সন্তানকে দেখতে গোপনে ইসরায়েলে যান, তখন তিনি তার এই উদ্বেগের কথা মোসাদের কাছে প্রকাশ করেন। তা সত্ত্বেও, মোসাদ শেষবারের মতো কোহেনকে সিরিয়ায় যেতে প্ররোচিত করে। সিরিয়ায় যাওয়ার আগে কোহেন তার স্ত্রীকে এই বলে আশ্বস্ত করেন—এটাই সিরিয়ায় তার শেষ সফর, এরপর তিনি পাকাপাকিভাবে ইসরায়েলে ফিরে আসবেন।

১৯৬৫ সালের জানুয়ারিতে সিরিয়ান কর্তৃপক্ষ গোয়েন্দা তথ্যচুরি উদঘাটনে বেশ তৎপর হয়ে ওঠে। গোপনে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসে যারা সোভিয়েতের বানানো বিভিন্ন শনাক্তকরণ যন্ত্র ও প্রযুক্তির সাহায্যে সিরিয়া থেকে বাইরে পাঠানো রেডিও সংকেত পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। সিগন্যাল ট্রান্সমিশন পর্যবেক্ষণের পর সিরিয়ার বাইরে যাওয়া রেডিও সংকেতের উৎস খুঁজে বের করা হয় এবং ২৪ জানুয়ারি সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী কোহেনের অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে রেডিও সংকেত পাঠানো অবস্থায় হাতেনাতে তাকে গ্রেপ্তার করে।

২৪ জানুয়ারি ১৯৬৫ তাকে হাতেনাতে তাকে গ্রেপ্তার করে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী

বিচার ও মৃত্যুদণ্ড
সামরিক আইনে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে এলি কোহেন দোষী সাব্যস্ত হন এবং বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। রিমান্ডে তাকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ ও অত্যাচার করা হয়েছিল। কোহেনের প্রতি সহানুভূতি আদায় করে এই বিচার রুখতে ইসরায়েল সেইসময় একটি আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযান শুরু করে। কোহেনকে ফাঁসির সিদ্ধান্ত থেকে দামেস্ককে সরিয়ে আনতে ইসরায়েলের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী (পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন) গোল্ডা মেয়ার এই আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযানের নেতৃত্ব দেন। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা, প্রধানমন্ত্রীরা এমনকি পোপ পল ষষ্ঠও এই বিচারে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন। গোল্ডা মেয়ার এই বিচারের বিরুদ্ধে মধ্যস্থতা করতে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছেও আবেদন জানান। নানা আন্তর্জাতিক আবেদন এবং ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও কানাডার প্রতিনিধিদের অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সিরিয়ান সরকারকে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সিদ্ধান্ত থেকে টলানো যায়নি।

১৯৬৫ সালের ১৮ মে মাজরেহ স্কয়ারে জনসম্মুখে কোহেনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ফাঁসির দিনে কোহেন একজন রাবাইয়ের (ইহুদি পুরোহিত) সাথে সাক্ষাতের শেষ ইচ্ছা পোষণ করেন। ট্রাকে করে মাজরেহ স্কয়ারে ফাঁসির জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় সিরিয়ার প্রবীণ প্রধান ইহুদি পুরোহিত রাবাই নিসিন আন্দাবো শেষ যাত্রায় তাকে সঙ্গ দেন।

জনসম্মুখে কোহেনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়

সমাধি ও শবদেহ
১৯৬৫ সালের নভেম্বর মাসে কোহেনের স্ত্রী নাদিয়া তার স্বামী এলি কোহেনের কৃতকার্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে সিরিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হাফেজ আল-আসাদকে একটি চিঠিতে কোহেনের শবদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। ২০০৭ সালে তুরস্ক একবার মধ্যস্থতার কথা বলে কোহেনের মৃতদেহ সিরিয়া থেকে ইসরায়েলে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে হাফেজ আল-আসাদের প্রাক্তন ব্যুরো প্রধান মনসির মাওসিলি জানিয়ে দেন, কোহেনের মৃতদেহ ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়, কেননা কোথায় তাকে কবর দেওয়া হয়েছিল সেটা এখনো অজানা।

মোসাদ যাতে গোপন মিশনের মাধ্যমে কোহেনের শবদেহ ইসরায়েলে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সিরিয়ানরা অবস্থান পরিবর্তন করে অন্তত তিন জায়গায় কোহেনকে কবর দিয়েছিল।

২০১৮ সালে ৫ জুলাই কোহেনের হাতঘড়ি উদ্ধার হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। এলির স্ত্রী জানান, বিক্রির সময় কোহেনের ঘড়িটি মোসাদ কিনে ফেলে। পরে মোসাদের প্রধান জোসি কোহেন—এলির ঘড়িটি তার পরিবারের কাছে পেশ করেন। ঘড়িটি বর্তমানে মোসাদের হেডকোয়ার্টারে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে।

এলি কোহেনের ঘড়ি

জাতীয় বীর উপাধি ও পপুলার কালচারে এলি কোহেন
মৃত্যুর পর থেকে কোহেন ইসরায়েলে জাতীয় বীর হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকেন। ইসরায়েলের অনেক রাস্তা এবং এলাকা তার নামে রাখা হয়। ১৯৭৭ সালে কোহেনের পুত্রের বার মিতজাহ (১২ এবং ১৩ বছর বয়সে ইহুদি ছেলে-মেয়েদের জন্য আয়োজিত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান) অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাখেম বেগিন, সেনাবাহিনীর প্রধান মোরদেশাই গুরসহ মোসাদের আরো অনেক কর্মকর্তারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। জেরুজালেমের মাউন্ট হার্জেলে নিখোঁজ সৈনিকদের বাগানে এলি কোহেনের স্মৃতির উদ্দেশে একটি স্মারক নির্মিত হয়েছে।

দ্য ইম্পসিবল স্পাই চলচ্চিত্রটি কোহেনের জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। নেটফ্লিক্সের ‘দ্য স্পাই’ নামক একটি টিভি সিরিজে অভিনেতা সাশা ব্যারন কোহেন এলি কোহেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

   

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;