করোনা ক্লান্তি ও আশা জাগানিয়া ঝা রোদ

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস


মাহমুদ মেনন, সাংবাদিক
করোনা ক্লান্তি ও আশা জাগানিয়া ঝা রোদ

করোনা ক্লান্তি ও আশা জাগানিয়া ঝা রোদ

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনা ক্লান্তি... হ্যাঁ, ভাবতে গিয়ে ঠিক এই কথাটিই মাথায় এলো। করোনা কী আমাদের জন্য ক্লান্তিকর হয়ে উঠছে? যে ঘরটাতে গত কয়েকদিন স্বেচ্ছাবন্দি আছি তার দুই দিকের বারান্দা থেকে রাজধানীর দুটি ব্যস্ততম সড়ক দেখা যায়। একদিকে কারওয়ানবাজার থেকে বাংলামটর অবধি চোখে পড়ে। অন্যদিকে মগবাজার থেকে তেজগাঁর পথে নিচের মূল সড়ক, উপরের ফ্লাইওভার। আরও একটু দৃষ্টি প্রসারিত করলে হাতিরঝিলের দুই দিকের রাস্তাও দেখা যায়। এই সড়কগুলোর ব্যস্ততা নিয়ে হয়তো কাউকে ধারণা দিতে হবে না। এই লেখাটি যখন শুরু হয় তখন বেলা ১১টা ০৫। সপ্তাহের প্রথম দিন। এমন একটি সময়ে এই দুটি সড়ক সাধারণ দিনে পুরোপুরি জমাট বেঁধে থাকে। অনেকদিন দেখেছি, ফ্লাইওভারও হয়ে থাকে স্থবির গাড়িগুলো যেন চলতেই পারে না। কিন্ত আজ? আজও স্থবির। বলতে গেলে গাড়িই চলছে না এসব সড়কে। প্রতি মিনিটে গোটা দশেকও হবে না, গাড়ি পার হচ্ছে এই সড়কপথে। মনে হচ্ছে, গাড়িহীন হয়ে স্থবির পড়ে আছে ফ্লাইওভারটি। কারণ করোনা।

আমার মতো রাজধানীবাসী অনেকেই এখন সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে। বোধ হয়, প্রায় সকলেরই অলস সময় কাটছে। এই অলসতা আমাদের প্রত্যেকের জন্য বিলাসিতা তাতে সন্দেহমাত্র নেই। কারণ এই শহরের অধিকাংশ মানুষই দিন এনে দিন খায়। কিছু সংখ্যক মানুষ মাস এনে মাস চলে। আর অতি সামান্য কিছু মানুষ হয়তো রয়েছে যাদের জীবিকার জন্য খুব একটা চিন্তা করতে হয় না। এই কোয়ারেন্টাইন তাদেরই মানায়! কিন্তু কাজপাগল যারা তাদের জন্য এই স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইন স্রেফ ক্লান্তিকর। আর কাজ করেই যাদের জীবিকা অর্জন তাদের জন্য এ এক অসম্ভব বিষয়। তারপরেও এ আমাদের বাধ্য বিলাসিতা।

লিখতে বসলে টানা লিখে ফেলা আমার অভ্যাস। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটানে শেষ হয়ে যায়। কিন্ত করোনা ক্লান্তিই হয়তো দায়ী! লেখা এগুচ্ছে না। মাঝে ঘণ্টা দেড়েক সময় পার করে আবার কম্পিউটারে বসেছি।

লেখাটি যখন শুরু করি তখন বেলা ১১টা। এখন ঝা দুপুর। ঢাকা এখন ভীষণ রৌদ্রোজ্জ্বল। পরিচিত শব্দগুলো উধাও। গাড়ির হর্ন শোনা যাচ্ছেনা বললেই চলে। কাছেধারে কোনও বাড়িতে একটা কুকুর টানা ঘেউ ঘেউ ডাকছে। কিছুক্ষণ আগে একটা অ্যাম্বুলেন্সের প্যাঁ-পোঁ শব্দ কানে এসেছিলো... বাকিটা স্রেফ এক ক্লান্ত দুপুরের চিত্র। নিস্তব্ধতা ভেঙে একটি ট্রেন গেলো। শহরের স্বাভাবিক ধীর গতির চেয়ে একটু দ্রুত গেলো কি? আবার নিস্তব্ধতা নামতে সময় লাগলো না।   

মাথার উপর থেকে সূর্য কড়া উত্তাপ ছড়াচ্ছে। মোবাইল ফোনের ওয়েদার অ্যাপ জানাচ্ছে বাইরে তাপ ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাঙালির জন্য সহনীয়। তবে এই উত্তাপ যতই বাড়বে, ততই ভালো এমন একটা কথা অনেকের মুখে অনেকবার শুনেছি। একটু গুগল করে তার তথ্য প্রমাণ নিতে গিয়ে যা পেলাম বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিতে দ্বিমত করেননি। বলেছেন, সূর্যালোক ও তাপ উভয়ই ভাইরাসের আয়ুষ্কাল কমায়। তবে তারা এও বলেছেন, করোনাভাইরাসে সঠিকভাবে পরিচ্ছন্ন থাকা ও নিজেকে নিরাপদ রাখাই সবচেয়ে সেরা ও কার্যকর উপায়।

রাজধানীর চিত্র/ছবি: বার্তা২৪.কম

তবে চৈত্রের কড়া রোদ, আর আসন্ন গ্রীষ্ম নিয়ে আমাদের কিছুটা স্বস্তিতে থাকার সুযোগ রয়েছে বলেই বোধ করছি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা যত বাড়বে, ধীরে ধীরে করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন হেরাল্ডকে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমোলজি বিশেষজ্ঞ ড. স্টেফান বরাল বলেছেন, এটা হবে প্রাকৃতিক হ্রাস। আমরা যতই গরম আবহাওয়ার দিকে যাব, ততই করোনার বিস্তার দুর্বলতর হবে। 

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জন নিকোলাস আবহাওয়ার পূর্বাভাসদায়ী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যাকুওয়েদারকে বলেছেন- তিনটি বিষয় করোনাভাইরাস সহ্য করতে পারেনা- এক. সূর্যালোক দুই. তাপ আর তিন. আর্দ্রতা। ঢাকার আবহাওয়ায় এখন এই তিনেরই অবস্থান রয়েছে।

বিশেষ করে সূর্যালোক। নিকোলাস আরো বলছিলেন, অন্ধকারে করোনাভাইরাস ১৩ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত টিকে থাকে। কিন্তু সূর্যালোকে তা সর্বোচ্চ আড়াই মিনিট টিকে থাকতে পারে।

ঢাকায় এখন তাপমাত্রা ক্রমশঃ বাড়ছে। দুপুর একটায় যা ছিল ২৬ ডিগ্রি, তা একঘণ্টা পরে ২৯ ডিগ্রি দেখাচ্ছে। এতে গরমের কষ্ট বাড়বে, কিন্তু করোনাওতো মরবে। এ সপ্তাহে প্রতিদিনই তাপমাত্রা কিছুটা করে বাড়বে। সোমবার ৩২, মঙ্গলবার ৩৪, বুধবার ৩৬, বৃহস্পতিবার ৩৮, শুক্রবার ৩৯ ডিগ্রি হয়ে শনিবার ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এটা আশা জাগানিয়া।

তবে এখনি পুরোপুরি স্বস্তির জোনে পৌঁছে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়নি। দিনের তাপমাত্রা ক্রমশঃ বাড়লেও রাতের তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যাচ্ছে। রোববার দিনগত রাতে ১৮ ডিগ্রিতে নামবে বলে দেখাচ্ছে অ্যাকুওয়েদার। আগামী সপ্তাহেও রাতের গড় ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায়ও টিকে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। পরের সপ্তাহে অবশ্য রাতের তাপমাত্রার গড়ও ২৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে। 

সে কারণেই বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে করোনা নিয়ে পুরোপুরি স্বস্তিতে পৌঁছাতে আরো দিন দশেক অপেক্ষা করতে হবে। এই সময় পর্যন্ত করোনা সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শটাই বেশি গুরুত্বের সাথে দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ফলে এই ঘরে বসে থাকা যতই ক্লান্তিকর হোক, এই সময়টুকু সেটাই মানবে শহরবাসী, তেমনই প্রত্যাশা।

লেখক: মাহমুদ মেনন, সাংবাদিক

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস

;