ব্রিটিশ বাংলায় একজন সৈয়দ আমীর আলী
সাল ১৮৪৯। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা তথা ভারতবর্ষে ক্রমে ক্রমে ক্ষমতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। পলাশীর প্রহসন মূলক যুদ্ধের (১৭৫৭) মাধ্যমে বণিকেরা তখন রাজদণ্ডের মালিক। তখনো ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, যাকে ক্ষুদ্রার্থে সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭) বলা হয়, তা সংঘটিত হতে ৮ বছর বাকী।
কিন্তু ততদিনে ব্রিটিশরা সাবেক মুসলিম-মুঘল শাসনের যাবতীয় বিনাশ সাধন করে ঔপনিবেশিক শোষণ-নির্যাতনের ধারা বেগবান করেছে। সদ্য-ক্ষমতা হারানোর প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত ও নিষ্পেষিত মুসলিম সমাজ পরিবর্তিত বিরূপ পরিস্থিতিতে চরমভাবে দিশেহারা ও হতবিহ্বল, অথচ যারা ব্রিটিশের আগমনের পূর্বে ছিলেন ক্ষমতার মালিক।
১৭১ বছর আগের এমনই এক এপ্রিল মাসের ৬ তারিখ উড়িষ্যার কটক শহরে ইরানের মেশেদ থেকে আগত এক শিয়া মুসলিম পরিবারের বংশধারার সদস্য সৈয়দ সা’দাত আলীর গৃহে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। নাম সৈয়দ আমীর আলী (১৮৪৯-১৯২৮), যিনি পিতার পাঁচ পুত্রের মধ্যে ছিলেন চতুর্থ। পরবর্তীকালে যিনি আইনজীবী, ভারতীয় মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণে উদ্যোগী এবং ইসলামের ইতিহাস ও সমাজ বিষয়ক লেখক হিসেবে পালন করেন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ঐতিহাসিক ভূমিকা।
সৈয়দ আমীর আলীর প্রপিতামহ ১৭৩৯ সালে নাদির শাহের সৈন্যদলের সাথে ইরান পরিত্যাগ করে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন এবং অতঃপর মুঘল ও অযোধ্যার দরবারে চাকরি করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ইউনানি চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং পান্ডিত্যের অনুরাগী। আমীর আলীর জন্মের অল্প কিছুকাল পরে তাঁর পিতা বাসস্থান পরিবর্তন করে পরিবার-পরিজনসহ প্রথমে কলকাতায় আসেন এবং পরে হুগলির চুঁচুড়ায় চলে যান।
হুগলিতে পরিবারটি মুসলিম আশরাফ অভিজাতদের মতো সংযত আরামপ্রদ জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তার পরিবারের ঐতিহ্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ আমীর আলীকে নিজস্ব পরিচিতি সম্পর্কে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। তিনি শৈশবাবস্থায় নিজেকে পারিপার্শ্বিকতা থেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়ে পড়াশোনা ও আত্মমগ্নভাবে দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবনা-চিন্তায় ব্যাপৃত হন।
ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন পরিস্থিতি এমন ছিল যে, অনেক মুসলমান পরিবার ইংরেজ সরকারের শিক্ষাগত সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন এবং বহিরাগত, দখলদার ইংরেজের আনুকূল্য গ্রহণের চেয়ে নিজেদের দুর্ভাগ মেনে নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু সৈয়দ সা’দত আলী পরিবার ছিল বযতিক্রম। তিনি পুত্রদের জন্য নতুন শিক্ষাব্যবস্থার সুবিধাদি সাগ্রহে গ্রহণ করেন এবং তার সঙ্গে অনেক ইংরেজের সখ্যতা ছিল।
ফলে সৈয়দ আমীর আলীর বড় তিন ভাই প্রথমে কলকাতা মাদ্রাসা ও পরবর্তী সময়ে হুগলি কলেজিয়েট স্কুল ও মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করে ইংরেজ সরকারের চাকরিতে যোগদান করেন। আমীর আলীও একই পথ অবলম্বন করে ভাইদের শিক্ষাগত সাফল্য ও সুনামকে অতিক্রম করেন। তদুপরি হুগলি মাদ্রাসায় ব্রিটিশ শিক্ষকদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুবাদে তাদের সহায়তায় এবং কিছু প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি লাভের কারণে তিনি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮৬৭ সালে স্নাতক ও ১৮৬৮ সালে ইতিহাসে সম্মানসহ এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৬৯ সালে এল.এল.বি ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি কলকাতায় আইন ব্যবসায় শুরু করেন।
পেশাগত জীবনেও তিনি জ্ঞানচর্চা অব্যাহত রাখেন এবং হুগলির শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মূলকেন্দ্র ইমামবাড়া কেন্দ্রিক শিক্ষাধারায় সম্পৃক্ত থাকেন। তিনি আরবি ও ফারসি ছাড়াও ইংরেজি, গ্রিক ও অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং ইসলামী সাহিত্য, দর্শনের পাশাপাশি পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গেও পরিচিতি লাভ করেন। শুধু মুসলিম সমাজেই নয়, তিনি তৎকালের বৃহত্তর ভারতীয় সমাজের মধ্যে একজন সুশিক্ষিত ও সুপণ্ডিত রূপে পরিগণিত হন।
এক পর্যায়ে সৈয়দ আমীর আলী ব্রিটেনে পড়াশুনার জন্য সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। লন্ডনে তার প্রথমবার বসবাসের সময় (১৮৬৯ থেকে ১৮৭৩) তিনি আইন ব্যবসায়েও যোগ দেন। কিন্তু একই সাথে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন। তার মূল তৎপরতার মধ্যে ছিল, ভারতীয় মুসলমানদের সমস্যাবলি নিয়ে ভারত সচিবের সাথে আলোচনা করা, ব্রিটিশ নারীদের সম্পত্তিতে ও নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য সদ্য শুরু হওয়া ভোটাধিকার আন্দোলনের পক্ষে প্রচার অভিযান চালানো ইত্যাদি।
বিশেষত তিনি ভারতীয় মুসলমানদের সমস্যাবলির নিয়ে ব্রিটেনে যে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উন্মুক্ত বক্তৃতা দেন, তা পরবর্তীকালে তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থাকারে ১৮৭৩ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। যে গ্রন্থটি 'দ্য স্পিরিট অব ইসলাম' নামে বহুল পঠিত ও সমাদৃত। ইসলামি বিধানের প্রগতিশীল প্রকৃতি, এর যৌক্তিকতা, মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান জগতের তুলনায় মধ্যযুগীয় ইসলামি সমাজের শ্রেষ্ঠত্ব, উনিশ শতকের শেষ দিকে কিছু সমাজিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা, বিশেষত নারীদের অবস্থান সংক্রান্ত বিষয়ে তার সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যমূলক ধ্যান-ধারণাসমূহ এ গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে।
কলকাতায় ফিরে আসার পর সৈয়দ আমীর আলী আইন পেশায় অতিদ্রুত সুনাম অর্জন করেন। আইনজীবী থেকে তিনি চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট (১৮৭৯), কলকাতা হাইকোর্টের জজ (১৮৯০-১৯০৪) পদে উন্নীত হন। আইন ব্যবসার বাইরেও একজন লেখক, পণ্ডিত ও শিক্ষক হিসেবে সমাদৃত হন তিনি। মুসলিম পারসোনাল ল' নিয়ে তিনি ‘মুসলমানদের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কিত আইন’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থও প্রণয়ন করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত তার বক্তৃতাসমূহ দুখণ্ডে মোহামেডান ল, কম্পাইল্ড ফ্রম অথরিটিজ ইন দি ওরিজিনাল অ্যারাবিক হিসেবে মুদ্রিত হয়।
ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে বিচারকের ভূমিকায় সৈয়দ আমীর আলী কতিপয় সামাজিক বিষয়ে, বিশেষত বহুবিবাহের সমালোচনা করে এ ব্যাপারে মানুষের মতামতকে প্রভাবিত করতে সমর্থ হন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তিনি তখনকার বিতর্কসমূহে সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে অংশ নিয়ে মুসলিমদের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ব্রিটিশ শাসনের পরিবর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণভাবে ভারতে এবং বিশেষভাবে বাংলায় অন্যান্য সম্প্রদায় নিজেদের প্রয়োজনীয় সংস্কারসাধনের মাধ্যমে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করলেও মুসলমানরা ছিলেন এক্ষেত্রে পিছিয়ে। তিনি এই অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে মতামত সংগঠিত করতে শুরু করেন, যাতে সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলেন শিক্ষা দরদী, সমাজ সংস্কারক নওয়াব আবদুল লতিফ (১৮২৮-৯৩)।
সৈয়দ আমীর আলীর চেয়ে বয়সে প্রবীণ হলেও নওয়াব আবদুল লতিফও রক্ষণশীল সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বদলসহ মুসলিম সমাজের গতানুগতিক চিন্তাধারার মৌলিক পরিবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন। এলক্ষ্যে তিনি 'মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি'র (১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাধ্যমে সামাজিক, দার্শনিক, সাহিত্যিক বিষয়সমূহের ওপর মাসিক বৈঠকের আয়োজন করতেন।
সৈয়দ আমীর আলীও ১৮৭৭ সালে 'ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন' নামের একটি সমজাতীয় সামাজিক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যা তিনি ভারতের অন্যান্য প্রদেশসমূহে বিস্তারের মাধ্যমে 'সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন' নামে সর্বভারতীয় জাতীয় সংস্থায় রূপান্তরিত করে একটানা পঁচিশ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
শিক্ষা, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলমান সমাজের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য ব্যক্তিগত ও সামাজিক সংগঠক হিসেবে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি সৈয়দ আমীর আলী লেখক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে উজ্জ্বল ভূমিকাও পালন করেন। তিনি 'দ্য স্পিরিট অব ইসলাম' ছাড়াও 'অ্যা শর্ট হিস্ট্রি অব দ্য সারাসিনস' নামে আরেকটি চিন্তাদায়ক গ্রন্থ রচনা করেন এবং শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ পত্রিকা 'নাইনটিন্থ সেঞ্চুরি'তে ‘অ্যা ক্রাই ফ্রম দ্য ইন্ডিয়ান মোহামেডানস’ ও ‘দ্য রিয়েল স্ট্যাটাস অব উইমেন ইন ইসলাম’ শিরোনামের উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
ব্রিটেনের সাথে সৈয়দ আমীর আলীর যোগাযোগ জোরদার হয়েছিল লন্ডনে বারবার সফরের মাধ্যমে। লন্ডনে তিনি ১৮৮৪ সালে একেশ্বরবাদী চার্চে ইসাবেল ইডা কনস্ট্যামকে বিয়ে করেন, যিনি বাকি বিশ বছরের কর্মজীবনে তার সঙ্গে কলকাতায় বসবাস করেন। ১৯০৪ সালে ইংল্যান্ডে স্থায়িভাবে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তের ১৯২৮ সালে তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি কদাচিৎই ভারতে বা বাংলায় এসেছেন। তবে কর্মজীবন শেষে তিনি স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে চব্বিশ বছরব্যাপী অবসর জীবনযাপন কালেও ইসলামী বিষয়ের সমর্থনে এবং ভারতীয় মুসলমানদের উন্নতি বিধানে সাধ্যমত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯০৮ সালে তিনি মুসলিম লীগের লন্ডন শাখা প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর সভাপতি হন। তিনি মুসলমাদের জন্য আলাদা নির্বাচকমন্ডলীর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন, যা ১৯০৯ সালে মেনে নেওয়া হয়। ১৯০৯ সালে প্রিভি কাউন্সিলে তার নিয়োগের ফলে ব্রিটিশ সরকারের সাথে তার প্রভূত যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি মুসলমানদের স্বার্থে ওকালতি চালিয়ে যেতে থাকেন, বিশেষত ব্রিটিশ রেড ক্রিসেন্ট স্থাপন ও পরবর্তী সময়ে 'খিলাফত আন্দোলন'- এর প্রতি তার সমর্থন দানের মাধ্যমে। তথাপি যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম তীব্রতর হচ্ছিল তখন ভারত থেকে তার অনুপস্থিতি কার্যত তাকে ১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝিতে রাজনৈতিকভাবে মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন করে।
আমীর আলীর শ্রেষ্ঠ অবদান রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা বিস্তার ও লেখালেখির মধ্যে পরিস্ফুট হয়। তার প্রকাশিত গ্রন্থাদিতে ইসলামের স্বর্ণযুগের প্রশংসা করা হয়েছে এবং ভারতে উপনিবেশবাদ ও পাশ্চাত্যায়নের ফলে উদ্ভূত কতিপয় পরিবর্তনের সাথে মুসলমানদের সামঞ্জস্য বিধানের মাধ্যমে আত্মোন্নয়ন ও সম্প্রদায়গত কল্যাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়ে তার প্রগতিশীল মনোভাব স্মরণীয়। ইসলামের ইতিহাস ও সমাজ সম্পর্কে ত্রুটিপূর্ণ অথবা কুসংস্কারে পরিপূর্ণ পশ্চিমা সমালোচনার ব্যাপারে তিনি বলিষ্ঠভাবে প্রতিবাদ করেন।
সৈয়দ আমীর আলী ১৯২৮ সালের ৩ আগস্ট ইংল্যান্ডে মারা যান। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এটাই যে, সন্তানেরা তার নির্দেশানুযায়ী তার ব্যক্তিগত কাগজপত্র নষ্ট করে ফেলেন। তবে, পরবর্তীকালে তার ‘আত্মজীবনী’ বিখ্যাত 'ইসলামিক কালচার'-এর পাঁচটি সংখ্যায় ১৯৩১ থেকে ১৯৩২ সময়কালে প্রকাশিত এবং তার পরিবার কর্তৃক গ্রন্থাকারে সঙ্কলিত হয়।
ব্রিটিশ শাসনের অভিঘাতে বাংলা তথা ভারতবর্ষের মুসলিম সম্প্রদায় রাজনৈতিক ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক শক্তি হারিয়ে দিশেহারা অবস্থায় নিপতিত হলে আলীগড়ের স্যার সৈয়দ আহমদ খান শিক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে তাদেরকে আত্মোন্নয়নের ডাক দেন। যদিও তখন পর্যন্ত বৃহদাংশের মুসলমান ইংরেজদের বিতাড়িত করাকেই কর্তব্য জ্ঞান করে আন্দোলন, সংগ্রাম ও সশস্ত্র বিপ্লবের পথে অগ্রসর হচ্ছিলেন আর অপরাপর সম্প্রদায়ের সদস্যরা ইংরেজদের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সর্বদিক দিয়ে এগিয়ে আসছিলেন। ফলে পশ্চাৎপদ মুসলমানরা আরও পিছিয়ে পড়তে থাকে। সর্বভারতীয় স্তরে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের মতো বাংলায় মুসলমানদের বিরূপ পরিস্থিতি অতিক্রম করে এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছিলেন নওয়াব আবদুল লতিফ, সৈয়দ আমীর আলী প্রমুখ। এভাবে তারা ব্রিটিশ বাংলায় মুসলমানদের সমকালীন শিক্ষা ও পরিবর্তিত সামাজিক- রাজনৈতিক পরিস্থিতি আত্মস্থ করে আধুনিকতার দিকে এগিয়ে আসার পথ দেখিয়েছিলেন।