ব্রিটিশ বাংলায় একজন সৈয়দ আমীর আলী



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
সৈয়দ আমীর আলী,  ছবি: সংগৃহীত

সৈয়দ আমীর আলী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাল ১৮৪৯। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা তথা ভারতবর্ষে ক্রমে ক্রমে ক্ষমতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। পলাশীর প্রহসন মূলক যুদ্ধের (১৭৫৭) মাধ্যমে বণিকেরা তখন রাজদণ্ডের মালিক। তখনো ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম, যাকে ক্ষুদ্রার্থে সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭) বলা হয়, তা সংঘটিত হতে ৮ বছর বাকী।

কিন্তু ততদিনে ব্রিটিশরা সাবেক মুসলিম-মুঘল শাসনের যাবতীয় বিনাশ সাধন করে ঔপনিবেশিক শোষণ-নির্যাতনের ধারা বেগবান করেছে। সদ্য-ক্ষমতা হারানোর প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত ও নিষ্পেষিত মুসলিম সমাজ পরিবর্তিত বিরূপ পরিস্থিতিতে চরমভাবে দিশেহারা ও হতবিহ্বল, অথচ যারা ব্রিটিশের আগমনের পূর্বে ছিলেন ক্ষমতার মালিক।

১৭১ বছর আগের এমনই এক এপ্রিল মাসের ৬ তারিখ উড়িষ্যার কটক শহরে ইরানের মেশেদ থেকে আগত এক শিয়া মুসলিম পরিবারের বংশধারার সদস্য সৈয়দ সা’দাত আলীর গৃহে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। নাম সৈয়দ আমীর আলী (১৮৪৯-১৯২৮), যিনি পিতার পাঁচ পুত্রের মধ্যে ছিলেন চতুর্থ। পরবর্তীকালে যিনি আইনজীবী, ভারতীয় মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণে উদ্যোগী এবং ইসলামের ইতিহাস ও সমাজ বিষয়ক লেখক হিসেবে পালন করেন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ঐতিহাসিক ভূমিকা।

সৈয়দ আমীর আলীর প্রপিতামহ ১৭৩৯ সালে নাদির শাহের সৈন্যদলের সাথে ইরান পরিত্যাগ করে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন এবং অতঃপর মুঘল ও অযোধ্যার দরবারে চাকরি করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ইউনানি চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং পান্ডিত্যের অনুরাগী। আমীর আলীর জন্মের অল্প কিছুকাল পরে তাঁর পিতা বাসস্থান পরিবর্তন করে পরিবার-পরিজনসহ প্রথমে কলকাতায় আসেন এবং পরে হুগলির চুঁচুড়ায় চলে যান।

হুগলিতে পরিবারটি মুসলিম আশরাফ অভিজাতদের মতো সংযত আরামপ্রদ জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তার পরিবারের ঐতিহ্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ আমীর আলীকে নিজস্ব পরিচিতি সম্পর্কে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। তিনি শৈশবাবস্থায় নিজেকে পারিপার্শ্বিকতা থেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়ে পড়াশোনা ও আত্মমগ্নভাবে দেশ ও সমাজ নিয়ে ভাবনা-চিন্তায় ব্যাপৃত হন।

ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন পরিস্থিতি এমন ছিল যে,  অনেক মুসলমান পরিবার ইংরেজ সরকারের শিক্ষাগত সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন এবং বহিরাগত, দখলদার ইংরেজের আনুকূল্য গ্রহণের চেয়ে নিজেদের দুর্ভাগ মেনে নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু সৈয়দ সা’দত আলী পরিবার ছিল বযতিক্রম। তিনি পুত্রদের জন্য নতুন শিক্ষাব্যবস্থার  সুবিধাদি সাগ্রহে গ্রহণ করেন এবং তার সঙ্গে অনেক ইংরেজের সখ্যতা ছিল।

ফলে সৈয়দ আমীর আলীর বড় তিন ভাই প্রথমে কলকাতা মাদ্রাসা ও পরবর্তী সময়ে হুগলি কলেজিয়েট স্কুল ও মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করে ইংরেজ সরকারের চাকরিতে যোগদান করেন। আমীর আলীও একই পথ অবলম্বন করে ভাইদের শিক্ষাগত সাফল্য ও সুনামকে অতিক্রম করেন। তদুপরি হুগলি মাদ্রাসায় ব্রিটিশ শিক্ষকদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুবাদে তাদের সহায়তায় এবং কিছু প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি লাভের কারণে তিনি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮৬৭ সালে স্নাতক ও ১৮৬৮ সালে ইতিহাসে সম্মানসহ এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৬৯ সালে এল.এল.বি ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি কলকাতায় আইন ব্যবসায় শুরু করেন।

পেশাগত জীবনেও তিনি জ্ঞানচর্চা অব্যাহত রাখেন এবং হুগলির শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মূলকেন্দ্র ইমামবাড়া কেন্দ্রিক শিক্ষাধারায় সম্পৃক্ত থাকেন। তিনি আরবি ও ফারসি ছাড়াও ইংরেজি, গ্রিক ও অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং ইসলামী সাহিত্য, দর্শনের পাশাপাশি পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গেও পরিচিতি লাভ করেন। শুধু মুসলিম সমাজেই নয়, তিনি তৎকালের বৃহত্তর  ভারতীয় সমাজের মধ্যে একজন সুশিক্ষিত ও সুপণ্ডিত রূপে পরিগণিত হন।

এক পর্যায়ে সৈয়দ আমীর আলী ব্রিটেনে পড়াশুনার জন্য সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। লন্ডনে তার প্রথমবার বসবাসের সময় (১৮৬৯ থেকে ১৮৭৩) তিনি আইন ব্যবসায়েও যোগ দেন। কিন্তু একই সাথে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন। তার মূল তৎপরতার মধ্যে ছিল, ভারতীয় মুসলমানদের সমস্যাবলি নিয়ে ভারত সচিবের সাথে আলোচনা করা, ব্রিটিশ নারীদের সম্পত্তিতে ও নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য সদ্য শুরু হওয়া ভোটাধিকার আন্দোলনের পক্ষে প্রচার অভিযান চালানো ইত্যাদি।

বিশেষত তিনি ভারতীয় মুসলমানদের সমস্যাবলির নিয়ে ব্রিটেনে যে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উন্মুক্ত বক্তৃতা দেন, তা পরবর্তীকালে তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থাকারে ১৮৭৩ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়। যে গ্রন্থটি 'দ্য স্পিরিট অব ইসলাম' নামে বহুল পঠিত ও সমাদৃত। ইসলামি বিধানের প্রগতিশীল প্রকৃতি, এর যৌক্তিকতা, মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান জগতের তুলনায় মধ্যযুগীয় ইসলামি সমাজের শ্রেষ্ঠত্ব, উনিশ শতকের শেষ দিকে কিছু সমাজিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা, বিশেষত নারীদের অবস্থান সংক্রান্ত বিষয়ে তার সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যমূলক ধ্যান-ধারণাসমূহ এ গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে।

কলকাতায় ফিরে আসার পর সৈয়দ আমীর আলী আইন পেশায় অতিদ্রুত সুনাম অর্জন করেন। আইনজীবী থেকে তিনি চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট (১৮৭৯), কলকাতা হাইকোর্টের জজ (১৮৯০-১৯০৪) পদে উন্নীত হন। আইন ব্যবসার বাইরেও একজন লেখক, পণ্ডিত ও শিক্ষক হিসেবে সমাদৃত হন তিনি। মুসলিম পারসোনাল ল' নিয়ে তিনি  ‘মুসলমানদের  ব্যক্তিজীবন সম্পর্কিত আইন’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থও প্রণয়ন করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত তার বক্তৃতাসমূহ দুখণ্ডে মোহামেডান ল, কম্পাইল্ড ফ্রম অথরিটিজ ইন দি ওরিজিনাল অ্যারাবিক হিসেবে মুদ্রিত হয়।

ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে বিচারকের ভূমিকায় সৈয়দ আমীর আলী কতিপয় সামাজিক বিষয়ে, বিশেষত বহুবিবাহের সমালোচনা করে এ ব্যাপারে মানুষের মতামতকে প্রভাবিত করতে সমর্থ হন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তিনি তখনকার বিতর্কসমূহে সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে অংশ নিয়ে মুসলিমদের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ব্রিটিশ শাসনের পরিবর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাধারণভাবে ভারতে এবং বিশেষভাবে  বাংলায় অন্যান্য সম্প্রদায় নিজেদের প্রয়োজনীয় সংস্কারসাধনের মাধ্যমে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করলেও মুসলমানরা ছিলেন এক্ষেত্রে পিছিয়ে। তিনি এই অতি  প্রয়োজনীয় বিষয়ে মতামত সংগঠিত করতে শুরু করেন, যাতে সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলেন শিক্ষা দরদী, সমাজ সংস্কারক  নওয়াব আবদুল লতিফ (১৮২৮-৯৩)।

সৈয়দ আমীর আলীর চেয়ে বয়সে প্রবীণ হলেও নওয়াব আবদুল লতিফও রক্ষণশীল সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বদলসহ মুসলিম সমাজের গতানুগতিক চিন্তাধারার মৌলিক পরিবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন। এলক্ষ্যে তিনি 'মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি'র (১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত) মাধ্যমে সামাজিক, দার্শনিক, সাহিত্যিক বিষয়সমূহের ওপর মাসিক বৈঠকের আয়োজন করতেন।

সৈয়দ আমীর আলীও ১৮৭৭ সালে 'ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন' নামের একটি সমজাতীয় সামাজিক সংস্থা  প্রতিষ্ঠা করেন, যা তিনি ভারতের অন্যান্য প্রদেশসমূহে বিস্তারের মাধ্যমে 'সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন' নামে সর্বভারতীয় জাতীয় সংস্থায় রূপান্তরিত করে একটানা পঁচিশ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ  কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।

শিক্ষা, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলমান সমাজের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য ব্যক্তিগত ও সামাজিক সংগঠক হিসেবে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখার পাশাপাশি সৈয়দ আমীর আলী লেখক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে উজ্জ্বল ভূমিকাও পালন করেন। তিনি 'দ্য স্পিরিট অব ইসলাম' ছাড়াও 'অ্যা শর্ট হিস্ট্রি অব দ্য সারাসিনস' নামে আরেকটি চিন্তাদায়ক গ্রন্থ রচনা করেন এবং শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ পত্রিকা 'নাইনটিন্থ সেঞ্চুরি'তে ‘অ্যা ক্রাই ফ্রম দ্য ইন্ডিয়ান মোহামেডানস’  ও ‘দ্য রিয়েল স্ট্যাটাস অব উইমেন ইন ইসলাম’ শিরোনামের উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। 

ব্রিটেনের সাথে সৈয়দ আমীর আলীর যোগাযোগ জোরদার হয়েছিল লন্ডনে বারবার সফরের মাধ্যমে। লন্ডনে তিনি ১৮৮৪ সালে একেশ্বরবাদী চার্চে ইসাবেল ইডা কনস্ট্যামকে বিয়ে করেন, যিনি বাকি বিশ বছরের কর্মজীবনে তার সঙ্গে কলকাতায় বসবাস করেন। ১৯০৪ সালে ইংল্যান্ডে স্থায়িভাবে  চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তের ১৯২৮ সালে তার মৃত্যুর পূর্বে তিনি কদাচিৎই ভারতে বা বাংলায় এসেছেন। তবে কর্মজীবন শেষে তিনি স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে চব্বিশ বছরব্যাপী অবসর জীবনযাপন কালেও  ইসলামী বিষয়ের সমর্থনে এবং ভারতীয় মুসলমানদের উন্নতি বিধানে সাধ্যমত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

১৯০৮ সালে তিনি মুসলিম লীগের লন্ডন শাখা প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর সভাপতি হন। তিনি মুসলমাদের জন্য আলাদা নির্বাচকমন্ডলীর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন, যা ১৯০৯ সালে মেনে নেওয়া হয়। ১৯০৯ সালে প্রিভি কাউন্সিলে তার নিয়োগের ফলে ব্রিটিশ সরকারের সাথে তার প্রভূত যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি মুসলমানদের স্বার্থে ওকালতি চালিয়ে যেতে থাকেন, বিশেষত ব্রিটিশ রেড ক্রিসেন্ট স্থাপন ও পরবর্তী সময়ে 'খিলাফত আন্দোলন'- এর প্রতি তার সমর্থন দানের মাধ্যমে। তথাপি যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম তীব্রতর হচ্ছিল তখন ভারত থেকে তার অনুপস্থিতি কার্যত তাকে ১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝিতে রাজনৈতিকভাবে মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন করে।

আমীর আলীর শ্রেষ্ঠ অবদান রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা বিস্তার ও লেখালেখির মধ্যে পরিস্ফুট হয়। তার প্রকাশিত গ্রন্থাদিতে ইসলামের স্বর্ণযুগের প্রশংসা করা হয়েছে এবং ভারতে উপনিবেশবাদ ও পাশ্চাত্যায়নের ফলে উদ্ভূত কতিপয় পরিবর্তনের সাথে মুসলমানদের সামঞ্জস্য বিধানের মাধ্যমে আত্মোন্নয়ন ও সম্প্রদায়গত কল্যাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়ে তার প্রগতিশীল মনোভাব স্মরণীয়। ইসলামের ইতিহাস ও সমাজ সম্পর্কে ত্রুটিপূর্ণ অথবা কুসংস্কারে পরিপূর্ণ পশ্চিমা সমালোচনার ব্যাপারে তিনি বলিষ্ঠভাবে প্রতিবাদ করেন।

সৈয়দ আমীর আলী ১৯২৮ সালের ৩ আগস্ট ইংল্যান্ডে মারা যান। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এটাই যে,  সন্তানেরা তার নির্দেশানুযায়ী তার ব্যক্তিগত কাগজপত্র নষ্ট করে ফেলেন। তবে, পরবর্তীকালে তার ‘আত্মজীবনী’ বিখ্যাত 'ইসলামিক কালচার'-এর পাঁচটি সংখ্যায় ১৯৩১ থেকে ১৯৩২ সময়কালে  প্রকাশিত এবং তার পরিবার কর্তৃক গ্রন্থাকারে সঙ্কলিত হয়।

ব্রিটিশ শাসনের অভিঘাতে বাংলা তথা ভারতবর্ষের মুসলিম সম্প্রদায় রাজনৈতিক ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক শক্তি হারিয়ে দিশেহারা অবস্থায় নিপতিত হলে আলীগড়ের স্যার সৈয়দ আহমদ খান শিক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে তাদেরকে আত্মোন্নয়নের ডাক দেন। যদিও তখন পর্যন্ত বৃহদাংশের মুসলমান ইংরেজদের বিতাড়িত করাকেই কর্তব্য জ্ঞান করে আন্দোলন, সংগ্রাম ও সশস্ত্র বিপ্লবের পথে অগ্রসর হচ্ছিলেন আর অপরাপর সম্প্রদায়ের সদস্যরা ইংরেজদের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সর্বদিক দিয়ে এগিয়ে আসছিলেন। ফলে পশ্চাৎপদ  মুসলমানরা আরও পিছিয়ে পড়তে থাকে। সর্বভারতীয় স্তরে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের মতো বাংলায় মুসলমানদের বিরূপ পরিস্থিতি অতিক্রম করে এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছিলেন নওয়াব আবদুল লতিফ, সৈয়দ আমীর আলী প্রমুখ। এভাবে তারা ব্রিটিশ বাংলায় মুসলমানদের সমকালীন শিক্ষা ও পরিবর্তিত সামাজিক- রাজনৈতিক পরিস্থিতি আত্মস্থ করে আধুনিকতার দিকে এগিয়ে আসার পথ দেখিয়েছিলেন।

   

সুন্দরবনের জল-জঙ্গলের রূপকথা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ওপাড়ে ঘন বন জঙ্গল, মাঝখানে শিবসা নদী আর এপাড়ে বাঁধের ধারের জমিতে সারিবদ্ধ ঝুলন্ত বাড়ি। জঙ্গলে হেঁটে বেড়ায় চিত্রা হরিণ, নদীর ডাঙ্গায় দেখা মেলে ভোঁদরের। সবুজভাব নদীতে ডিঙি নৌকায় জীবিকার সন্ধানে মাছ ধরে ঝুলন্ত বাড়ির বাসিন্দা। সবমিলে যেন জল-জঙ্গলের রূপকথা।

দৃশ্যটি খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ানের। এখানে জল-জঙ্গলের সঙ্গে মানুষের বসবাস। সুন্দরবনের সৌন্দর্য ও উপকূ্লের তাণ্ডব সহ্য করা নলিয়ানকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বার্তা২৪.কম-এর ফটো এডিটর নূর এ আলম।

শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রলয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এখনকার বাসিন্দারা এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর/ছবি: নূর এ আলম


নিজের বসতভিটা হারানোর পর ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ধারের জমিতে। সেখানেও ঘর বানানোর মতো আর মাটি অবশিষ্ট নেই। ফলে জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর।

এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে/ছবি: নূর এ আলম


তাই এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে। মোটামুটি মাঝারি ঝড় হলেই ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে। সুন্দরবনে জেলেরা দিনে রাতে মাছ ধরে, তারা দিন-রাতের হিসাব করে না।

 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরছেন জেলে/ছবি: নূর এ আলম


 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরেন তারা। কিনারা দিয়ে কাদায় হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


এরপরও নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে। অনেক জেলে ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন।

জেলেরা ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন/ছবি: নূর এ আলম


বর্ষায় শিবসার জলে ডুবে থাকা নলিয়ানের এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার জন্য এই ডিঙি নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।

শিবসা নদী/নূর এ আলম


নলিয়ানে উপকূলের বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করা চিত্র শুধু নয়, রয়েছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক প্রকৃতি। শিবসার অপার সৌন্দর্য।

গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি/ছবি: নূর এ আলম


নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ঘন গাছপালার সবুজ বন। যাতে চোখ জুড়িয়ে আসে।

হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ/ছবি: নূর এ আলম


যেখানে রয়েছে হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ। গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি, ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির। 

নলিয়ান পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গলের ভেতরে লোহার ব্রিজ/ছবি: নূর এ আলম


পর্যটকদের জন্য জঙ্গল ভেদ করে তৈরি করা লোহার ব্রিজ। পর্যটকরা সুন্দরবনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে এই ব্রিজে হেলেন দিয়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে নেয়।

জঙ্গলে হরিণ খুনশুটিতে ব্যস্ত/ছবি: নূর এ আলম


সুন্দরবনের প্যাঁচেপ্যাঁচে কাঁদায় হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা মিলে হরিণের দলের সঙ্গে। জঙ্গলে তারা তখন নিজেদের মধ্যে খুনশুটিতে ব্যস্ত।

মায়াবী চোখে তাকিয়ে হরিণ/ছবি: নূর এ আলম


এরই ফাঁকে মায়াবী চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখে দু’পা বিশিষ্ট মানুষের দিকে। আড় চোখে তাকায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা বানরের দলও। তারা সারাদিন বনে দৌড়ঝাঁপ করে।

বানরের দৌঁড়ঝাপ/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে।

নদীর তীরে দেখা মেলে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী ভোঁদরের/ছবি: নূর এ আলম


জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়।

 শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে। জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়/ছবি: নূর এ আলম

বড় বড় ঘূর্ণিঝড় যারা মোকাবিলা করা নলিয়ানের কাছে কুমির আর এমন কি! সব কিছু তোয়াক্কা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয় তাদের কাছে!

;

ইতিহাসে ২৮ মার্চ: বর্ণবাদের প্রতিবাদে কিংয়ের পক্ষে ২৫ হাজার মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

  • Font increase
  • Font Decrease

মানব ইতিহাস আমাদের অতীতের কথা বলে। আজ যা কিছু বর্তমান তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আমাদের অতীতের কারণেই। সেই অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়।  

আজ ২৮ মার্চ, ২০২৪। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখঅ যাবে, আজকে ঘটেছিল নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। জেনে নেয়া যাক, কি ঘটেছিল আজকের তারিখে!

*মার্টিন লুথার কিং ছিলেন বর্ণবাদের বিপরীত আন্দোলনকারী আফ্রিকান নেতা। ১৯৬৫ সালে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সমর্থন করে মিছিলে নেমেছিলেন আজকের তারিখে। এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে আলাবামায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার তৈরিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।    

*যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৯৭৯ সালে পানির পাম্প ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে চারপাশে তেজস্ক্রিয় বাষ্প এবং আয়োডিন ছড়াতে শুরু করে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৫০০ জন কর্মী এই বাষোপর সংস্পর্শে আসায় শারীরিক সমস্যার আশঙ্কায় ছিল। আমেরিকার জনগণ এই ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।  

*১৯৮৬ সালে অ্যাচেসন এবং লিলিয়েনথাল পারমারবিক শক্তি সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা উল্লেখ করেন তারা। ২৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের সেই রিপোর্টটি প্রকাশ করে।

*হিলসবোরো দুর্ঘটনায় প্রায় ১শ লোকের প্রায় গিয়েছিল ১৯৯১ সালে। শেফিল্ডে পিষ্ট হয়ে ৯৬ জন লিভারপুল ফুটবল সমর্থক নিহত হন। এছাড়া আরও দেড় শতাধিক ভক্ত আহত হন। এই বিপর্যয়ে আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট ছিল নিহতদের পরিবার। তাই, আজকের তারিখে তারা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল।

*১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ ১৯৩৯ সালের ২৮ মার্চ শেষ হয়েছিল।

;

তালপাতার পাখায় ঘোরে সংসারের চাকা



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। যা দেখে মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুরের কবিতা ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ বলছি বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের কথা। বর্তমানে গ্রামটি তাল পাখার গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নারী-পুরুষ সবাই তালপাতা দিয়ে পাখা বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গরমে তালপাতার পাখার বাতাস গা জুড়িয়ে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম। একটির নাম যোগীরভবন, অপরটি আড়োলা আতালপাড়া। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটি পাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দুটি গ্রামে একেক পাড়ায় একেক ধরনের পাখা তৈরি হয়। যোগীরভবন গ্রামে নারীরা তৈরি করেন হাতলপাখা বা ডাঁটপাখা। আর আড়োলা আতালপাড়ায় তৈরি হয় ঘোরানো পাখা বা ঘুন্নী পাখা আর পকেট পাখা। পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন দুটি গ্রামের সব নারী। শীতের শেষে বসন্তকালে, অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।

পাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারী

গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাড়ির উঠানে রং তুলির আঁচড়ে ঘুরানো পাখা রাঙিয়ে তুলছেন সখিনা বেগম। রাঙানো পাখা বাঁধায় করছেন গোলজার। বাঁধা হয়ে গেলে পাখাটি বিক্রি করবেন তিনি।

হাতপাখার গ্রামে এবার ২০ লাখ পাখা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এই পাখা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।

গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা অবসর সময়ে পাখা তৈরির কাজ করেন। বংশ পরম্পরায় এই দুই গ্রামের মানুষ তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পাখার চাহিদা, সেই সঙ্গে বাড়ছে পাখা তৈরির কাজের পরিধি।

আড়োলা গ্রামের খন্দকার বলেন, দাদার আমল থেকে তারা তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালপাখা তৈরির কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙের আচর দিয়ে তাল পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে থাকেন। আকরাম আকন্দ বলেন, গত বছর তিনি পাখা বিক্রি করে সংসার খরচ বাদে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতে গত বছর দুই গ্রাম থেকে ১৫ লাখ তালপাখা বিক্রি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার চাহিদা বাড়ায় ২০ লাখ পাখা বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে নাম দেয়া হয়েছে- পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা।

পাখা তৈরিতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং লোহার তার প্রয়োজন হয়। পাখা তৈরির পর বিভিন্ন রঙের আচর দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। ১০ টাকায় কেনা তাল গাছের একটি পাতা বা ডাগুড় দিয়ে তৈরি হয় বড় পাখা বা ডাগুর পাখা ২টি, ঘুরানী পাখা ৪টি এবং পকেট পাখা ৬টি।

তালপাতার পাখা

পাখা তৈরির কারিগর জানান, বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় বাঁশ এবং তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর বাঁশ ছোট ছোট আকারে কাটতে হয়। তালপাতাও কেটে পাখা তৈরির উপযোগী করা হয়। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ। চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাহারি রঙ করে বিক্রয় উপযোগী করা হয়।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসেন তালপাখা কিনতে।

যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, তিনি প্রতি বছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ডাগুর পাখা তৈরি করেন। এই পাখাগুলো বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখার চাহিদা বেশি বলে জানান মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, একটি তাল পাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়ে গেছে।

আতাইল পাড়া গ্রামের পারভীন, মর্জিনা, সাবিনা, বেবি, সুমি জানান, তারা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি হাত পাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরের ছয় মাস সংসারের কাজের ফাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজ করে তারা বাড়তি আয় করছেন। এইসব নারীরা তাদের সৌখিন জিনিস কিনে থাকেন নিজের টাকায়।

পকেট পাখা ১১ টাকা, ঘুরানী পাখা ২০ টাকা এবং ডাগুর পাখা ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতপাখার চাহিদা বাড়ছে বলে পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী করিম জানান। শহর এবং গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু প্রশান্তি পেতে ধনী-গরিব সবাই হাত পাখার ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

;

ইতিহাসে ২৭ মার্চ:স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

  • Font increase
  • Font Decrease

সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সাথে বছরের পর বছর কেটে যায়। বর্তমান হয় অতীত। তার সাথেই তৈরি হয় ইতিহাসের। মানব সভ্যতায় ঘটে যাওয়া ইতিহাস হয়ে থাকে জাতির কাছে স্মরণীয়। প্রতি বছর যখন ক্যালেন্ডারে একই তারিখগুলো ফিরে আসে, মানুষ পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে।

আজ ২৭ মার্চ, ২০২৪। বিগত বছরগুলোতে এই তারিখে ঘটা অনেক ঘটনা হয়েছে স্মৃতিতে অমলিন। ইতিহাসের পাতায় জুড়ে গেছে নতুন নতুন ঘটনা। চলুন জেনে নিই,আজকের তারিখে কি ঘটেছিল!    

১৯৭৭ সালে স্পেনে টেনেরিফ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ডাচ এয়ারলাইনের সেই দুর্ঘটনায় কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রানওয়েতে দু’টো জেট বিমানের সংঘর্ষে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে উৎপন্ন বিধ্বংসী দাবানলে সর্বমোট ৫৮৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ১৯৮০ সালে উত্তর সাগরের প্ল্যাটফর্ম ধসে পড়ে। রিগটি ডান্ডি থেকে ২৩৫ মাইল পূর্বে সেই আবাসন প্ল্যাটফর্ম দুর্ঘটনায় ১২৩ জন শ্রমিক মারা যান।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে কমিউনিটি পার্টির অনেক রাশিয়ান উচ্চতর কর্মকর্তা পরাজিত হন। তৎকালীন সময়ে এই ঘটনাকে একটি বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।     

১৯৬৩ সালে ব্রিটেনে রেললাইন কম ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষতি হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মোট রেলব্যবস্থার এক-চতুর্থাংশ সেবা কমিয়ে দেওয়া হবে। এই নিয়ে সুদূরপ্রসারী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২৭ মার্চ।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

;