করোনাভাইরাস কি মৃত্যুর প্রতি আমাদের মনোভাব বদলে দেবে?



ইউভাল নোয়াহ হারারি
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাস মহামারি কি আমাদের মৃত্যুর প্রতি প্রথাগত এবং গ্রহণীয় মনোভাবে ফিরিয়ে নেবে? নাকি আরো শক্তিশালী করবে দীর্ঘজীবন লাভের জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে?

আধুনিক দুনিয়া এই বিশ্বাস নিয়েই গঠিত যে, মানুষ মৃত্যুকে ঘোল খাওয়াতে এবং পরাজিত করতে পারবে। মনোভাবটা বিপ্লবাত্মক। কারণ ইতিহাস জুড়ে আছে মৃত্যুর কাছে মানুষের মৌন আত্মসমর্পণ। আধুনিক জামানার শেষ অব্দি অধিকাংশ ধর্ম এবং মতাদর্শ মৃত্যুকে কেবল অবশ্যম্ভাবী নিয়তি হিসাবেই দেখেনি। দেখেছে জীবনের তাৎপর্যের প্রধান উৎস হিসাবেও। মানুষের অস্তিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে শেষ নিঃশ্বাস নেবার পর। কেবল তখনই আপনি জানতে পারবেন জীবনের সত্যিকার গোপন বিষয়গুলো। কেবল তখনই আপনি পাবেন চিরন্তন মুক্তি অথবা অন্তহীন নরকভোগ। মৃত্যুহীন পৃথিবীতে, অর্থাৎ জান্নাত, জাহান্নাম অথবা পুনর্জন্ম না থাকলে খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম এবং হিন্দুধর্মের মতো ধর্মগুলো কোনো অর্থ বহন করবে না। কারণ ইতিহাসের অধিকাংশ সময় জুড়ে মহামানবেরা ব্যস্ত ছিলেন মৃত্যুকে অর্থ দেবার জন্য। পরাজিত করার জন্য না।

মহাকাব্য গিলগামেশ, অরফিউস এবং ইউরিদাইসের উপকথা, বাইবেল, কোরান, বেদ এবং অসংখ্য পবিত্র গ্রন্থ এবং কাহিনী-পীড়িত মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করেছে এটাই যে, আমরা মারা যাই খোদার নির্দেশ অথবা মহাবিশ্ব বা প্রকৃতি মাতার কারণে। আমাদের বরং উচিত নিয়তিকে বিনয় এবং প্রসন্নতার সাথে গ্রহণ করা। সম্ভবত খোদা একদিন মৃত্যু বিলুপ্ত করবেন যীশুর পুনরাবির্ভাবের মতো কোনো আধ্যাত্মিক ইশারায়। কিন্তু এমন বিপর্যয়ের সমন্বয়সাধন করা ছিল পরিষ্কারভাবেই রক্তমাংসের মানুষের চিন্তার উর্ধ্বে।

তারপর এলো বৈজ্ঞানিক বিপ্লব। বিজ্ঞানীদের জন্য মৃত্যু স্বর্গীয় ফরমান নয়; শুধু এক প্রযুক্তিগত সমস্যা। মানুষ মারা যায় কারণ ঈশ্বর সেরকম বলেছেন বলে নয়; বরং সামান্য প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে। হৃৎপিণ্ড থামিয়ে দেয় রক্ত সংবহন করা। ক্যানসার ধ্বংস করে দিয়েছে লিভার। ভাইরাস বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিয়েছে ফুসফুস। এবং এইসব প্রযুক্তিগত সমস্যার পেছনে দায়ী কে?—অন্যান্য প্রযুক্তিগত ত্রুটি। হৃৎপেশিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোর কারণে হৃৎপিণ্ড রক্ত সংবহন থামিয়ে দেয়। জিনগত মিউটেশনের কারণে লিভারে ক্যানসার আক্রান্ত কোষ ছড়িয়ে পড়ে। বাসে কারো হাঁচি দেবার কারণে আমার ফুসফুসে ভাইরাস বাসা বাঁধে। এতে কোনো আধ্যাত্মিক বিষয় জড়িত নয়।

বিজ্ঞান বিশ্বাস করে, প্রতিটি প্রযুক্তিগত ত্রুটিরই একটা প্রযুক্তিগত সমাধান রয়েছে। মৃত্যুকে জয় করার জন্য আমাদের যীশুর দ্বিতীয় আগমনের অপেক্ষায় বসে থাকার প্রয়োজন নেই। দুজন বিজ্ঞানী ল্যাবেই তা করতে পারে। যেখানে প্রথাগত মৃত্যু ছিল কালো আলখেল্লা পড়া যাজক ও ধর্মবেত্তাদের বিশেষত্ব। এখন তা ল্যাবের সাদা কোট পড়া মানুষগুলোর। যদি হৃৎপিণ্ডে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, আমরা পেসমেকারের মাধ্যমে তাকে উদ্দীপ্ত রাখতে পারি। এমনকি প্রতিস্থাপিত করতে পারি নতুন হৃৎপিণ্ড। যদি ক্যানসার তাণ্ডব শুরু করে, তাহলে আমরা তাকে ধ্বংস করতে পারি বিকিরণের মাধ্যমে। ফুসফুসে ভাইরাসের ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটলে আমরা তাকে পরাভূত করতে পারি কিছু নতুন ঔষধ প্রয়োগ করে।

সত্য যে, বর্তমানে সকল প্রকার প্রযুক্তিগত সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারি না। কিন্তু সেই সব নিয়ে কাজ চলছে। মহাপুরুষেরা এখন আর মৃত্যুকে অর্থ দেবার জন্য সময় ব্যায় করেন না। তার বদলে তারা ব্যস্ত জীবনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে। বৃদ্ধ বয়স এবং রোগের পেছনে জীবাণুঘটিত, শারীরবৃত্তীয় এবং বংশগতি পদ্ধতি দায়ী, এ নিয়ে তারা গবেষণা করছেন। উদ্ভাবন করছেন নতুন ঔষধ এবং বিপ্লবাত্মক চিকিৎসাপদ্ধতি।

করোনাভাইরাস কি মৃত্যু নিয়ে আমাদের প্রচলিত ধারণার পরিবর্তন আনবে?

জীবন প্রবর্ধনের যুদ্ধে মানুষ উল্লেখযোগ্যভাবে সফল। গত দুই শতক জুড়ে বিশ্বে গড় আয়ু ৪০ বছরের কম থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ বছর। কিছু উন্নত দেশে তা ৮০ বছরেরও বেশি। বিশেষ করে শিশুরা মৃত্যুর ছোবল থেকে সফলভাবে মু্ক্ত হতে পেরেছে। বিশ শতকের আগ পর্যন্ত কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ শিশু কখনোই পরিণত বয়সে পৌঁছাতে পারেনি। বালকেরা প্রায়শ ডায়েরিয়া, হাম এবং বসন্তের মতো রোগে মারা যেত। সতেরো শতকের ইংল্যান্ডে প্রতি ১০০০ নবজাতক শিশুর মধ্যে ১৫০ জন মারা যেত প্রথম বছরেই। ১৫ বছর অব্দি টিকে থাকতে পারত কেবল ৭০০ জন। বর্তমানে ইংরেজ শিশুদের প্রতি ১০০০ জনে মাত্র পাঁচ জন মৃত্যুবরণ করে প্রথম বছরে। ১৫ তম জন্মদিন উদযাপন করতে পারে ৯৯৩ জন। সারা বিশ্বে শিশু মৃত্যুহার কমে ৫ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে।

জীবনকে সুরক্ষাদান এবং দীর্ঘায়ু করার জন্য আমাদের পদক্ষেপ এতটাই সফল যে, এটা আমাদের বিশ্ববীক্ষাই বদলে দিয়েছে গভীরভাবে। যেখানে প্রথাগত ধর্মগুলো পরকালকে তাৎপর্যের উৎস হিসাবে গণ্য করেছে; সেখানে উদারতাবাদ, সমাজতন্ত্র এবং নারীবাদের মতো আঠারো শতকের মতবাদগুলো পরকাল নিয়ে সব ধরনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটে যখন একজন কমিউনিস্টের মৃত্যু হয়? কী ঘটে একজন পুঁজিবাদীর? নারীবাদীরই বা কী ঘটে? কার্ল মার্ক্স, অ্যাডাম স্মিথ কিংবা সিমন দ্য বোভেয়ারের লেখায় এর উত্তর খোঁজা নিরর্থক।

আরো পড়ুন করোনাবিরোধী যুদ্ধে মানবজাতি নেতৃত্বহীন

আধুনিক মতবাদগুলোর মধ্যে কেবল জাতীয়তাবাদই মৃত্যুকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় মর্যাদা। এর সবচেয়ে কাব্যিক এবং বেপরোয়া মুহূর্তে, জাতীয়তাবাদ ওয়াদা করে যে, যে-ই জাতির জন্য মৃত্যুবরণ করবে; সে-ই হবে জাতির যৌথ স্মৃতিতে চিরঞ্জীব। তথাপি এই ওয়াদা এতটাই ধোঁয়াশাপূর্ণ যে কট্টর জাতিয়তাবাদীও আদতে জানে না এর সাথে কী করতে হবে। আপনি আদতে স্মৃতিতে “বেঁচে থাকেন” কিভাবে? যদি আপনার মৃত্যু হয়, তবে কিভাবে জানবেন মানুষ আপনাকে মনে রেখেছে নাকি রাখেনি? উডি এ্যালেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সিনেমাপ্রেমিদের স্মৃতিতে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকতে চান কিনা। তিনি উত্তর দেন, “আমি বরং আমার এপার্টমেন্টকেই প্রাধান্য দেব।” এমনকি অনেক ঐতিহ্যবাহী ধর্ম তাদের দৃষ্টির পরিবর্তন এনেছে। পরকালের জান্নাতের প্রতিশ্রুতির বদলে তারা এখন ইহকালের প্রতি বেশি জোর দিচ্ছে।

বর্তমান মহামারি কি মৃত্যুর প্রতি মানুষের মনোভাবের বদল ঘটাবে? সম্ভবত না। বরং বিপরীতটাই। কোভিড-১৯ সম্ভবত মানুষের জীবনকে সুরক্ষা দিতে আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করে দেবে। কোভিড-১৯ এর প্রতি প্রভাবশালী সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া হালছাড়া ভাব নয়—এটি নিষ্ঠুরতা এবং আশার এক মিশ্রণ।

প্রাক-আধুনিক যুগে যখনই কোনো মহামারির প্রাদুর্ভাব ঘটত বিশেষ করে মধ্যযুগের ইউরোপে, মানুষ ভীত হয়ে পড়ত তাদের জীবন নিয়ে। বিমর্ষ হয়ে পড়ত প্রিয়জনের মৃত্যুতে। কিন্তু প্রধান সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া ছিল হালছাড়া ভাবই । একে বলা যেতে পারে ‘রপ্ত করা অসহায়ত্ব’। মানুষ নিজেদেরকে বলত সব খোদার ইচ্ছা। কিংবা মানবজাতির কৃত পাপের জন্য স্বর্গীয় প্রতিফল। “আল্লাহ ভালো জানেন। পাপিষ্ঠ মানুষের এটাই প্রাপ্য। দেখবে দিনশেষে সবকিছু মঙ্গলের জন্য। দুশ্চিন্তা নেই, ভালো মানুষেরা স্বর্গে তাদের প্রতিফল পাবে। ওষুধের খোঁজাখুঁজি করে সময় নষ্ট করো না। অসুখ খোদা পাঠিয়েছেন আমাদের সাজা দেওয়ার জন্য। যারা ভাবে মানুষ তাদের উদ্ভাবনকুশলতা দ্বারা এই মহামারি অতিক্রম করতে পারবে, তারা শুধুমাত্র তাদের পাপের পাল্লাই ভারী করে। খোদার পরিকল্পনাকে টেক্কা দেওয়ার আমরা কে?”

আজকের দৃষ্টিভঙ্গি বিপরীত মেরুতে। যখন ট্রেন দুর্ঘটনা, দাবানল এমনকি হারিকেনের মতো কোনো দুর্যোগে মানুষ মারা যায়, আমরা তখন একে স্বর্গীয় শাস্তি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে মানুষের সংশোধনযোগ্য ব্যর্থতা হিসাবেই দেখি। যদি ট্রেন কোম্পানি নিরাপত্তার ব্যাপারে কার্পণ্য না করত, যদি পৌরসভা আগুন নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়াত, যদি সরকার দ্রুত উদ্ধারকারী দল পাঠাত—তবে এই সব মানুষকে বাঁচানো যেত। একুশ শতকের প্রচুর মৃত্যুর জন্য হয়েছে মামলা ও তদন্ত।

আরো পড়ুন করোনাভাইরাস পরবর্তী দুনিয়া

প্লেগ মহামরির প্রতিও আমাদের মনোভাব এটাই। যখন কিছু ধর্মপ্রচারকেরা এইডসকে সমকামীদের জন্য খোদার শাস্তি হিসাবে বর্ণনা করত, আধুনিক সমাজ এমন চরমপন্থী ধারণাকে নির্বাসিত করেছে। বর্তমানে এইডস, ইবোলা এবং অন্যান্য সাম্প্রতিক মহামারিকে আমরা দেখি সাংগঠনিক ব্যর্থতা হিসাবে। আমরা মনে করি এমন সংক্রামক মহামারিকে প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং সরঞ্জাম মানবজাতির আছে। এবং যদি কোনো সংক্রামক রোগ নেহায়েত মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরেই চলে যায়; তার দায় খোদার ক্রোধের চেয়ে মানুষের অযোগ্যতার ওপর বর্তায়। কোভিড-১৯ এই নিয়মের ব্যতিক্রম না। এই সংকটে করার আছে অনেক কিছু; যদিও দোষারোপের খেলা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশ পরস্পরকে দোষ দিচ্ছে। বিরোধী রাজনীতিবিদেরা হাতবোমার পিনের মতো দায় চাপাচ্ছে একে অপরের ঘাড়ে।

নির্মমতার পাশাপাশি রয়েছে বিপুল আশাও। যাজকেরা আমাদের নায়ক নন; যারা মৃতকে কবর দেন এবং দায় চাপান দুর্যোগের ওপর—আমাদের নায়ক হলেন ডাক্তারেরা; যারা জীবন বাঁচান। আর আমাদের মহানায়ক হলেন সেই গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা। সিনেমাপ্রেমিরা জানেন, স্পাইডারম্যান কিংবা ওয়ান্ডার ওম্যান শেষমেশ অপশক্তিকে পরাজিত করে পৃথিবীকে রক্ষা করে। অনুরূপ গবেষণাগারের মানুষগুলো একমাস কিংবা বছরের মধ্যে কোভিড-১৯ এর কার্যকরী চিকিৎসা এমনকি ভ্যাকসিন নিয়ে আসবে। তখন আমরা কদর্য করোনা ভাইরাসকে দেখিয়ে দেব এই গ্রহের শ্রেষ্ঠ প্রাণী কে। হোয়াইট হাউস থেকে ওয়াল স্ট্রিট হয়ে একেবারে ইতালির বেলকনি অব্দি প্রত্যেকের মুখে একটাই প্রশ্ন, “কখন ভ্যাকসিন প্রস্তুত হবে?” কবে? না হয় যদি।

যখন ভ্যাকসিন প্রকৃত অর্থেই প্রস্তুত হবে এবং মহামারি শেষ হবে, মানবজাতির প্রধান পথ কী হবে? যে কোনো ভাবেই হোক, মানুষের জীবন সুরক্ষার জন্য আমাদের আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। আমাদের প্রয়োজন আরো হাসপাতাল, আরো ডাক্তার এবং আরো নার্সের। মজুদ করা দরকার আরো রেসপিরেটরি মেশিন, সুরক্ষা যন্ত্র এবং টেস্টিং কিট। অপরিচিত জীবাণু নিয়ে গবেষণা এবং নতুন চিকিৎসার উন্নয়নে আমাদের আরো অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। পুনরায় যেন আর চমকে উঠতে না হয়।

অনেকে আপত্তি জানাতে পারে যে, এটা ভুল শিক্ষা। সংকট আমাদের বিনয় শেখায়। প্রাকৃতিক শক্তিকে দমন করার সক্ষমতা নিয়ে আমাদের নিশ্চিত হওয়া ঠিক না। এই নিন্দুকদের অধিকাংশই মধ্যযুগে স্থায়ী; যারা সঠিক জবাব নিয়ে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হয়েও বিনয় প্রচার করে। কতিপয় ধর্মান্ধ তো নিজেদের দমিয়ে রাখতে পারে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় সাপ্তাহিক বাইবেল পাঠের নেতৃত্ব দেওয়া এক যাজক তো দাবি করলেন এই মহামারি সমকামিতার জন্য স্বর্গীয় শাস্তি। তারপরেও প্রথাবাদীদের মধ্যে বড় বড় চিন্তকেরাও আজকাল ধর্মগ্রন্থের চেয়ে বিজ্ঞানের ওপর বেশি ভরসা রাখেন।

ক্যাথোলিক চার্চ বিশ্বাসীদের চার্চ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ইসরায়েল বন্ধ করে দিয়েছে সিনাগগ। ইরান মানুষকে নিরুৎসাহিত করছে মসজিদে যেতে। মন্দির এবং সকল প্রকার উপদলই তাদের উৎসব স্থগিত করে দিয়েছে। সবকিছুর কারণ—বিজ্ঞানীরা হিসাব করেছেন এবং উপদেশ দিয়েছেন পূন্যস্থানগুলোকে বন্ধ করে দিতে।

অবশ্য মানুষের ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্বপ্ন নিয়ে সতর্ককারীদের সবাই মধ্যযুগীয় না। এমনকি বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করেছেন প্রত্যাশা করার ক্ষেত্রে আমাদের আরো বাস্তববাদী হতে হবে। জীবনের সকল প্রকার দুর্যোগেই আমরা ডাক্তারদের ক্ষমতার ওপর অন্ধভাবে বিশ্বাস রাখতে পারি না। যখন মানবজাতি সামগ্রিকভাবে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে; ব্যক্তি মানুষকে তখনও নিজের দুর্বলতার মোকাবিলা করতে হয়। সম্ভবত এক বা দুই শতকের মধ্যে বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে বর্ধিত করবে; যদিও এখনই না। সম্ভাব্য ব্যতিক্রম বিলিয়নিয়রের সন্তানসহ, আজকের আমাদের সকলকেই মরতে হবে একদিন। সকলেই হারাব প্রিয়জনদের। আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে এই নশ্বরতা।

বহু শতাব্দী ধরে মানুষ প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া হিসাবে ধর্মকে ব্যবহার করেছে এই বিশ্বাস করে যে, মৃত্যুর পরে রয়েছে অনন্ত জীবন। এখন মানুষ মাঝে মাঝে বিকল্প প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া হিসাবে ব্যবহার করে বিজ্ঞানকে। বিশ্বাস করে ডাক্তার তাদের বাঁচাতে পারবে এবং তারা নিজেদের এপার্টমেন্টেই চিরকাল বাস করতে পারবে। এখানে আমাদের একটা ভারসম্যপূর্ণ মনোভাব প্রয়োজন। মহামারির মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করা উচিত। কিন্তু আমাদের এখনো ব্যক্তিগত মৃত্যু এবং নশ্বরতার দায় কাঁধে নিতে হবে।

বর্তমান সংকট মানবজীবন এবং মানবীয় অর্জনের নশ্বর প্রকৃতি নিয়ে অনেককেই আরো সচেতন করে তুলতে পারে। তারপরেও আমাদের আধুনিক সভ্যতা সামগ্রিকভাবে খুব সম্ভবত বিপরীত দিকে যাচ্ছে। ভঙ্গুরতার কথা মনে রেখেই কাঠামোকে শক্ত করা হয়। এই সংকট চলে গেলে দর্শন বিভাগের বাজেটে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখব বলে আমি মনে করি না। কিন্তু বাজি ধরতে পারি, ব্যাপক বৃদ্ধি করা হবে মেডিকেল স্কুল এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাজেট।

এবং হতে পারে এটাই সর্বোচ্চ মানবীয় প্রত্যাশা। সরকার কোনোভাবেই দর্শনে ভালো না। এটা তাদের ক্ষেত্রও না। সরকারের প্রকৃতপক্ষেই উচিত উন্নততর স্বাস্থ্যসেবায় মনোযোগ দেওয়া। উন্নত দর্শন চর্চা হলো ব্যক্তির ওপর। ডাক্তার আমাদের অস্তিত্বের ধাঁধাঁর সমাধান করতে পারেন না। কিন্তু সেই ধাঁধাঁ নিয়ে ভাবার জন্য তারা আমাদের আরো একটু বেশি সময় ক্রয় করে দিতে পারেন। সেই সময় দিয়ে আমরা কী করব; সে আমাদের ওপর।


দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রবন্ধের বাংলা রূপান্তর
অনুবাদ : আহমেদ দীন রুমি

   

সুন্দরবনের জল-জঙ্গলের রূপকথা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ওপাড়ে ঘন বন জঙ্গল, মাঝখানে শিবসা নদী আর এপাড়ে বাঁধের ধারের জমিতে সারিবদ্ধ ঝুলন্ত বাড়ি। জঙ্গলে হেঁটে বেড়ায় চিত্রা হরিণ, নদীর ডাঙ্গায় দেখা মেলে ভোঁদরের। সবুজভাব নদীতে ডিঙি নৌকায় জীবিকার সন্ধানে মাছ ধরে ঝুলন্ত বাড়ির বাসিন্দা। সবমিলে যেন জল-জঙ্গলের রূপকথা।

দৃশ্যটি খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ানের। এখানে জল-জঙ্গলের সঙ্গে মানুষের বসবাস। সুন্দরবনের সৌন্দর্য ও উপকূ্লের তাণ্ডব সহ্য করা নলিয়ানকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বার্তা২৪.কম-এর ফটো এডিটর নূর এ আলম।

শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রলয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এখনকার বাসিন্দারা এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর/ছবি: নূর এ আলম


নিজের বসতভিটা হারানোর পর ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ধারের জমিতে। সেখানেও ঘর বানানোর মতো আর মাটি অবশিষ্ট নেই। ফলে জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর।

এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে/ছবি: নূর এ আলম


তাই এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে। মোটামুটি মাঝারি ঝড় হলেই ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে। সুন্দরবনে জেলেরা দিনে রাতে মাছ ধরে, তারা দিন-রাতের হিসাব করে না।

 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরছেন জেলে/ছবি: নূর এ আলম


 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরেন তারা। কিনারা দিয়ে কাদায় হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


এরপরও নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে। অনেক জেলে ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন।

জেলেরা ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন/ছবি: নূর এ আলম


বর্ষায় শিবসার জলে ডুবে থাকা নলিয়ানের এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার জন্য এই ডিঙি নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।

শিবসা নদী/নূর এ আলম


নলিয়ানে উপকূলের বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করা চিত্র শুধু নয়, রয়েছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক প্রকৃতি। শিবসার অপার সৌন্দর্য।

গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি/ছবি: নূর এ আলম


নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ঘন গাছপালার সবুজ বন। যাতে চোখ জুড়িয়ে আসে।

হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ/ছবি: নূর এ আলম


যেখানে রয়েছে হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ। গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি, ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির। 

নলিয়ান পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গলের ভেতরে লোহার ব্রিজ/ছবি: নূর এ আলম


পর্যটকদের জন্য জঙ্গল ভেদ করে তৈরি করা লোহার ব্রিজ। পর্যটকরা সুন্দরবনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে এই ব্রিজে হেলেন দিয়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে নেয়।

জঙ্গলে হরিণ খুনশুটিতে ব্যস্ত/ছবি: নূর এ আলম


সুন্দরবনের প্যাঁচেপ্যাঁচে কাঁদায় হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা মিলে হরিণের দলের সঙ্গে। জঙ্গলে তারা তখন নিজেদের মধ্যে খুনশুটিতে ব্যস্ত।

মায়াবী চোখে তাকিয়ে হরিণ/ছবি: নূর এ আলম


এরই ফাঁকে মায়াবী চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখে দু’পা বিশিষ্ট মানুষের দিকে। আড় চোখে তাকায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা বানরের দলও। তারা সারাদিন বনে দৌড়ঝাঁপ করে।

বানরের দৌঁড়ঝাপ/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে।

নদীর তীরে দেখা মেলে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী ভোঁদরের/ছবি: নূর এ আলম


জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়।

 শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে। জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়/ছবি: নূর এ আলম

বড় বড় ঘূর্ণিঝড় যারা মোকাবিলা করা নলিয়ানের কাছে কুমির আর এমন কি! সব কিছু তোয়াক্কা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয় তাদের কাছে!

;

ইতিহাসে ২৮ মার্চ: বর্ণবাদের প্রতিবাদে কিংয়ের পক্ষে ২৫ হাজার মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

  • Font increase
  • Font Decrease

মানব ইতিহাস আমাদের অতীতের কথা বলে। আজ যা কিছু বর্তমান তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আমাদের অতীতের কারণেই। সেই অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়।  

আজ ২৮ মার্চ, ২০২৪। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখঅ যাবে, আজকে ঘটেছিল নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। জেনে নেয়া যাক, কি ঘটেছিল আজকের তারিখে!

*মার্টিন লুথার কিং ছিলেন বর্ণবাদের বিপরীত আন্দোলনকারী আফ্রিকান নেতা। ১৯৬৫ সালে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সমর্থন করে মিছিলে নেমেছিলেন আজকের তারিখে। এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে আলাবামায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার তৈরিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।    

*যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৯৭৯ সালে পানির পাম্প ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে চারপাশে তেজস্ক্রিয় বাষ্প এবং আয়োডিন ছড়াতে শুরু করে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৫০০ জন কর্মী এই বাষোপর সংস্পর্শে আসায় শারীরিক সমস্যার আশঙ্কায় ছিল। আমেরিকার জনগণ এই ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।  

*১৯৮৬ সালে অ্যাচেসন এবং লিলিয়েনথাল পারমারবিক শক্তি সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা উল্লেখ করেন তারা। ২৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের সেই রিপোর্টটি প্রকাশ করে।

*হিলসবোরো দুর্ঘটনায় প্রায় ১শ লোকের প্রায় গিয়েছিল ১৯৯১ সালে। শেফিল্ডে পিষ্ট হয়ে ৯৬ জন লিভারপুল ফুটবল সমর্থক নিহত হন। এছাড়া আরও দেড় শতাধিক ভক্ত আহত হন। এই বিপর্যয়ে আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট ছিল নিহতদের পরিবার। তাই, আজকের তারিখে তারা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল।

*১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ ১৯৩৯ সালের ২৮ মার্চ শেষ হয়েছিল।

;

তালপাতার পাখায় ঘোরে সংসারের চাকা



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। যা দেখে মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুরের কবিতা ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ বলছি বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের কথা। বর্তমানে গ্রামটি তাল পাখার গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নারী-পুরুষ সবাই তালপাতা দিয়ে পাখা বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গরমে তালপাতার পাখার বাতাস গা জুড়িয়ে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম। একটির নাম যোগীরভবন, অপরটি আড়োলা আতালপাড়া। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটি পাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দুটি গ্রামে একেক পাড়ায় একেক ধরনের পাখা তৈরি হয়। যোগীরভবন গ্রামে নারীরা তৈরি করেন হাতলপাখা বা ডাঁটপাখা। আর আড়োলা আতালপাড়ায় তৈরি হয় ঘোরানো পাখা বা ঘুন্নী পাখা আর পকেট পাখা। পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন দুটি গ্রামের সব নারী। শীতের শেষে বসন্তকালে, অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।

পাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারী

গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাড়ির উঠানে রং তুলির আঁচড়ে ঘুরানো পাখা রাঙিয়ে তুলছেন সখিনা বেগম। রাঙানো পাখা বাঁধায় করছেন গোলজার। বাঁধা হয়ে গেলে পাখাটি বিক্রি করবেন তিনি।

হাতপাখার গ্রামে এবার ২০ লাখ পাখা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এই পাখা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।

গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা অবসর সময়ে পাখা তৈরির কাজ করেন। বংশ পরম্পরায় এই দুই গ্রামের মানুষ তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পাখার চাহিদা, সেই সঙ্গে বাড়ছে পাখা তৈরির কাজের পরিধি।

আড়োলা গ্রামের খন্দকার বলেন, দাদার আমল থেকে তারা তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালপাখা তৈরির কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙের আচর দিয়ে তাল পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে থাকেন। আকরাম আকন্দ বলেন, গত বছর তিনি পাখা বিক্রি করে সংসার খরচ বাদে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতে গত বছর দুই গ্রাম থেকে ১৫ লাখ তালপাখা বিক্রি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার চাহিদা বাড়ায় ২০ লাখ পাখা বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে নাম দেয়া হয়েছে- পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা।

পাখা তৈরিতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং লোহার তার প্রয়োজন হয়। পাখা তৈরির পর বিভিন্ন রঙের আচর দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। ১০ টাকায় কেনা তাল গাছের একটি পাতা বা ডাগুড় দিয়ে তৈরি হয় বড় পাখা বা ডাগুর পাখা ২টি, ঘুরানী পাখা ৪টি এবং পকেট পাখা ৬টি।

তালপাতার পাখা

পাখা তৈরির কারিগর জানান, বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় বাঁশ এবং তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর বাঁশ ছোট ছোট আকারে কাটতে হয়। তালপাতাও কেটে পাখা তৈরির উপযোগী করা হয়। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ। চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাহারি রঙ করে বিক্রয় উপযোগী করা হয়।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসেন তালপাখা কিনতে।

যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, তিনি প্রতি বছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ডাগুর পাখা তৈরি করেন। এই পাখাগুলো বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখার চাহিদা বেশি বলে জানান মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, একটি তাল পাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়ে গেছে।

আতাইল পাড়া গ্রামের পারভীন, মর্জিনা, সাবিনা, বেবি, সুমি জানান, তারা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি হাত পাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরের ছয় মাস সংসারের কাজের ফাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজ করে তারা বাড়তি আয় করছেন। এইসব নারীরা তাদের সৌখিন জিনিস কিনে থাকেন নিজের টাকায়।

পকেট পাখা ১১ টাকা, ঘুরানী পাখা ২০ টাকা এবং ডাগুর পাখা ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতপাখার চাহিদা বাড়ছে বলে পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী করিম জানান। শহর এবং গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু প্রশান্তি পেতে ধনী-গরিব সবাই হাত পাখার ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

;

ইতিহাসে ২৭ মার্চ:স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

  • Font increase
  • Font Decrease

সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সাথে বছরের পর বছর কেটে যায়। বর্তমান হয় অতীত। তার সাথেই তৈরি হয় ইতিহাসের। মানব সভ্যতায় ঘটে যাওয়া ইতিহাস হয়ে থাকে জাতির কাছে স্মরণীয়। প্রতি বছর যখন ক্যালেন্ডারে একই তারিখগুলো ফিরে আসে, মানুষ পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে।

আজ ২৭ মার্চ, ২০২৪। বিগত বছরগুলোতে এই তারিখে ঘটা অনেক ঘটনা হয়েছে স্মৃতিতে অমলিন। ইতিহাসের পাতায় জুড়ে গেছে নতুন নতুন ঘটনা। চলুন জেনে নিই,আজকের তারিখে কি ঘটেছিল!    

১৯৭৭ সালে স্পেনে টেনেরিফ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ডাচ এয়ারলাইনের সেই দুর্ঘটনায় কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রানওয়েতে দু’টো জেট বিমানের সংঘর্ষে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে উৎপন্ন বিধ্বংসী দাবানলে সর্বমোট ৫৮৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ১৯৮০ সালে উত্তর সাগরের প্ল্যাটফর্ম ধসে পড়ে। রিগটি ডান্ডি থেকে ২৩৫ মাইল পূর্বে সেই আবাসন প্ল্যাটফর্ম দুর্ঘটনায় ১২৩ জন শ্রমিক মারা যান।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে কমিউনিটি পার্টির অনেক রাশিয়ান উচ্চতর কর্মকর্তা পরাজিত হন। তৎকালীন সময়ে এই ঘটনাকে একটি বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।     

১৯৬৩ সালে ব্রিটেনে রেললাইন কম ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষতি হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মোট রেলব্যবস্থার এক-চতুর্থাংশ সেবা কমিয়ে দেওয়া হবে। এই নিয়ে সুদূরপ্রসারী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২৭ মার্চ।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

;