মুক্ তিহরণ সরকারের ‘গণভাওয়াইয়া’



সাইফুল ইসলাম
মুক্ তিহরণ সরকার, ছবি: সংগৃহীত

মুক্ তিহরণ সরকার, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দিনটা ছিল ১৯৮৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। এদিন বিকেলবেলা গাইবান্ধা জেলা শহরের পৌরপার্কে গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় ক্ষেতমজুর সমিতির জেলা সম্মেলন। সম্মেলনের উদ্বোধন হয় একটি গান দিয়ে। গান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই পিনপতন নীরবতা নেমে আসে সম্মেলনস্থলে। এই নীরবতার দাওয়াই ছিল উদ্বোধনী গানের কথাগুলো। মাইকে ভেসে আসা গানের প্রতিটি শব্দে প্রতিধ্বনিত হয় করুণ দশায় নিপতিত পাটচাষিদের অন্তর্বেদনা-

পানি কামড়ার কামড় খায়া হামরা জেবন করি ক্ষয়
অ্যাইংক্যা পাটের দাম হলে বাহে চাষার ক্যামনে সয়।
মাইনক্যা বাহে তুঁই ক’তো
অ্যাইংক্যা পাটের দাম হলে বাহে চাষার ক্যামনে সয় ॥

আইজক্যা বাড়ে সারের দাম কাইল বাড়ে ওষুধ
ব্যাংকোত থাকি লোন নিছি যে তারও বাড়ছে সুদ।
এবার যদি শোধ না করি কমতো হবার নয় ॥
মাইনক্যা বাহে তুঁই কতো...

চাষার ঘরোত পাট থাইকলে চাষার শুক্যায় চাম
মহাজনের ঘরোত গেইলে পত্তি বাড়ে দাম।
চাষার বোলে করবে ভালো সউগ শালায় তো কয় ॥
মাইনক্যা বাহে তুঁই কতো...

স্থানীয় লক্ষ্মীপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক (তিনি আমারও শিক্ষক) রণজিৎ কুমার সরকারের সাবলীল কণ্ঠে গাওয়া এই গান শেষ হতে না হতেই সম্মেলনের আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে, শুরু হয় মুখ চাওয়া-চাওয়ি। কার লেখা গান এটা? এমন গান তো এর আগে শুনিনি কখনো। সম্মেলনের প্রধান অতিথি কমরেড জসীম উদ্দিন ম-লের মুখেও ছিল একই প্রশ্ন। মাইকে ঘোষণা দিয়ে গীতিকারের নাম বলা না হলেও এ-কান ও-কান হয়ে তথ্যটা পৌঁছে যায় অনেকের কাছে। হৃদয়স্পর্শী এ গানের স্রষ্টা মুক্ তিহরণ সরকার। যিনি কবি আর কৃষকের মাঝে কোনো তফাত খুঁজে পাননি।

চিরঅবহেলিত কৃষকের দুঃখ-গাথা নিয়ে লেখা এ রকম আরো অনেক গানের নির্মাতা সাহিত্যিক-সাংবাদিক মুক্ তিহরণ সরকারের ২৪তম প্রয়াণ দিবস আজ। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৭ সালের এইদিনে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে জীবনাবসান ঘটে অকৃতদার এ গুণী মানুষটির। তাঁর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলিস্বরূপ পাঠকের কাছে তাঁরই সৃষ্টিকর্মের একটুখানি তুলে ধরছি আজ।

মুক্ তিহরণ সরকারের সাহিত্য, সাংবাদিকতা, সঙ্গীত। সবকিছুর মূলে ছিল গণমানুষ। গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করে তার যাবতীয় সৃষ্টিকর্ম। গণমানুষের কল্যাণেই উৎসর্গীকৃত ছিল তাঁর জীবন। আর তাঁর সৃষ্টিকর্মের একটা উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে আছে ভাওয়াইয়া গান। ভাওয়াইয়া গান সম্পর্কে মুক্ তিহরণ সরকারের বোধ কিছুটা স্বতন্ত্র। তাঁর মতে, ভাওয়াইয়া গান হচ্ছে শ্রমজীবী তথা গণমানুষের দিনানুদৈনিক জীবনচিত্র। ভাওয়াইয়ার চারিত্রবৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন-

... ভাওয়াইয়া মূলত শ্রম-সঙ্গীত। এ গানের কথা যে কোনো শ্রমের সাথে যুক্ত মানুষ, যেমন পাটছেলা, ধানকাটা কিংবা গাড়িয়াল ভাইয়ের শহরে প্রিয়জনকে ছেড়ে যাওয়া অথবা তার কাছে ফিরে আসার কামনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এক কথায় খেটে খাওয়া মানুষের শ্রম লাঘবের গান– দৈনন্দিন জীবনচিত্রই ভাওয়াইয়া। [উত্তরাঞ্চলের ভাওয়াইয়া ও রংপুর বেতারের সম্প্রচার নিয়ে কথা, সাপ্তাহিক পূর্বাভাস, ঢাকা: ১৩/১০/৮৯]

অন্যদিকে তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের লেখা যেসব ভাওয়াইয়া গানে কৃষকসহ অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রাম, দুঃখ-বেদনা, ক্ষোভ, অধিকারবঞ্চনার কথা ফুটে উঠেছে সেগুলোকে তিনি আখ্যায়িত করেছেন ‘গণভাওয়াইয়া’ হিসেবে। গানের পটভূমি, কথা, আর্থ-সামাজিক পরিবেশ- সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তিনি এ ধরনের গানগুলোকে গণভাওয়াইয়া নামকরণ করেন। ‘গণভাওয়াইয়া’ অভিহিত এসব গানে গণমানুষের সংগ্রামী জীবনগাথা ও শোষণ-বঞ্চনার কাহিনীর পাশাপাশি উঠে এসেছে সমসাময়িক রাজনীতি-অর্থনীতি, শাসন-নিপীড়নের চিত্রও। তাই গণভাওয়াইয়াগুলো শুধু গান নয়- সময়ের স্বচ্ছ দর্পণ, গণমানুষের শৃঙ্খলমুক্তি আর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অলিখিত ইতিহাস।

প্রসঙ্গত, পাটচাষিদের দুর্দশা নিয়ে উপর্যুক্ত গানটি লেখা হয় বিগত শতাব্দীর আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ওই দশকের শুরুর দিকে নিজেদের উৎপাদিত পাট নিয়ে সীমাহীন দুরবস্থায় পড়েন চাষিরা। তখন ন্যায্যমূল্য না পেয়ে সোনালি আঁশখ্যাত পাট রাস্তায় ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কোনো কোনো কৃষক। অথচ কৃষকের কাছ থেকে পানির দরে কিনে নিয়ে পোয়াবারো ঘটে মহাজনদের ভাগ্যে। মৌসুম শেষে পাটকলগুলোর কাছে সেই পাট কয়েকগুণ দামে বিক্রি করেন মহাজনরা। শুধু পাট নয়, কৃষকের উৎপাদিত ধান, আখ, আলু, পেঁয়াজ। সবকিছুর ক্ষেত্রে এখনো একই অবস্থা বিরাজমান। ফসলের ন্যায্যমূল্য না-পাওয়াই যেন কৃষকের অখ-নীয় নিয়তি। তবু তথাকথিত শিক্ষিত বা ভদ্রলোকেরা যখন এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে নিয়ে উপহাস করেন তখন মুক্ তিহরণ সরকার অবহেলিত মানুষগুলোর পক্ষ নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে এই অমানবিকতার প্রতিবাদ জানান সাহসী উচ্চারণে-

কোন শালা কয় দ্যাশের মানুষ খাটে না
ভরজেবন খাটে তবু গরিবের ভাত জোটে না ॥

কেটা মাঠোৎ ফসল ফলায় ক’ তো?
মোরে নাকান চাষা আছে যত।
নাকি সাহেব হয়া যামরা বেড়ায়
জুতা ছাড়া হাটে না? ॥

পাট করি ক্যান বাজারোৎ দ্যায় পুড়ি
কুশারগুল্যা কীসোক করে খড়ি?
তোমার জন্যে চাষাগুল্যার
উপাস ছাড়া কাটে না ॥

অথচ ফসলের কারিগর কৃষকই তার কাঁচাপণ্যে উৎপাদিত শিল্পপণ্যের প্রান্তিক ক্রেতা। ওই শিল্পপণ্য সবচেয়ে চড়াদামে কিনতে হয় তাকেই। কৃষকের প্রতি রাষ্ট্রের এ-ও এক প্রহসন। এই প্রহসনের বিরুদ্ধেও অবলীলায় গর্জে ওঠে মুক্ তিহরণ সরকারের লেখনী-

হামার ফসল হামার খাটনির
দাম বুঝিয়্যা নেমো।
(না হলে) হালুয়্যা পেন্টির ডাংগোত এবার
ঠিক করিয়্যা দেমো
হামরা মানুষ বানে দেমো ॥

ওমরা হামাক দিয়া কাম করি নেই
অল্প পইস্যা দিয়া
(আবার) বেশি দামে ওমার জিনিস
হামরা নেই কিনিয়া
এবার থাকি হামরাও হামার পাওনা বুঝিয়া নেমো ॥

হামরা ভরদিন গাইয়োক ঘাস খিলিয়া
বেচাই যে ভাই দুধ
(আবার) সে দুধ বেচি দেখি হামার
জোটে না যে খুদ।
এখন থাকি হামরাও হামার হিস্যা বুঝিয়া নেমো ॥

নিজের ফলানো ফসল নিজে ভোগ করতে না পারার কষ্টও কৃষকের চিরকালের। বরাবরই ধনকুবেরদের উদরে চলে যায় তার মেহনতের নির্যাস। তার পালন করা মুরগি, মুরগির ডিম, গাভীর দুধ; উৎপাদিত কলা, পুকুরের মাছ, সরু চাল, গাছের ভালো ফল সবই চলে যায় ধনকুবেদের পেটে। উপরন্তু অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত কৃষিজীবী-শ্রমজীবী মানুষদের সন্তানেরা গণ্য হয় রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে। উপরতলার বাসিন্দাদের সেবাদাসে পরিণত হয় তারা। এসব অধিকারবঞ্চিত মানুষের কাতারে মিশে গিয়ে তাদের বেদনাভাগী হন মুক্ তিহরণ সরকার। সেই বেদনাভাষ্য মূর্ত হয় তাঁর কলমে-

হে বড়লোকের বেটি
হে বড়লোকের বেটা ॥

হামরা বাহে মুরগি পালি
(তাক) খায় কেটা
হামরা বাহে হাঁসও পালি, কলা গাড়ি
(তাক) খায় কেটা
খায় বড়লোকের বেটি, খায় বড়লোকের বেটা ॥

সেই বড়লোকের বেটি যখন ইস্কুলোতে যায়
তার বই উবি দ্যায় কেটা
সেই বড়লোকের বেটা যখন ইস্কুলোতে যায়
তার বই উবি দ্যায় কেটা
দ্যায় হামার ঘরে বেটি, হামার ঘরে বেটা ॥

তিন টানের গাড়িগুল্যা হামার ঘরে
জাগা হয় না চেংরাগুল্যা ছাদোত চড়ে
একটানের গাড়িগুল্যাত যায় কেটা তার যায় কেটা
যায় বড়লোকের বেটি, যায় বড়লোকের বেটা ॥

সাংবাদিকতায় উচ্চ শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে শহুরে সাংবাদিক হবেন। এটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু মুক্ তিহরণ সরকার কেন তা হননি তার কারণ একটাই। গৎবাঁধা সাংবাদিকতার গণ্ডিমুক্ত হতে চেয়েছিলেন তিনি। শুধু চাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিলেন কর্মে। আত্মজয়ের এ এক তুলনাহীন উদাহরণ। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে শহরে খুঁটি না গেড়ে গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন আপন মহিমা প্রচারের যুগে একান্তই প্রচার-বিমুখ মানুষটি। নাগরিক বোধের ব্যাপ্তি অসীম হলেও নাগরিক-জীবনের হাতছানিকে অনায়াসে উপেক্ষা করেছিলেন তিনি। গ্রামে থেকে চাষাভুষার কন্যাসন্তানদের শিক্ষিত করার মানসে বিদ্যালয় গড়ে তুলে সেখানে টানা ১০ বছর শিক্ষকতা করেছেন বিনাপারিশ্রমিকে। জন্মগ্রামে ফিরে গিয়ে মিশে গিয়েছিলেন মাটিঘনিষ্ঠ মানুষের সঙ্গে। তাই তাদের নিয়ে মুক্ তিহরণ সরকারের উপলব্ধিও আর দশজন লেখকের চেয়ে আলাদা সেটা তাঁর লেখাই প্রমাণ করে। এমনকি জীবনের শেষ কয়টি বছর শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা আর সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি কৃষিপেশার সঙ্গেও ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন এই মানুষটি। সাংবাদিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে কৃষিপেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার নজির বোধ হয় এদেশে একমাত্র তিনিই। তাই তিনি নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন- কৃষকদের কাজের নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই, জেগে থাকার সময়টুকু কাটে কাজের মধ্যেই, তারা নিজেদের ফাঁকি দিতে জানেন না, ফাঁকি দেওয়ার সংস্কৃতি কৃষকের নয়, তাদের জীবনভর কোনো ছুটি নেই। এই গভীর দর্শন থেকেই হয়তো আপন মনোভূমি কর্ষণ করে সাহিত্যের চাষবাসের পাশাপাশি এক সময় তিনি নিজেও হয়ে ওঠেন মাঠের কৃষক। কৃষক হিসেবে তার উপলব্ধি প্রতিবিম্বিত হয় এভাবে।

চল্ চাষি ভাই মালকাচ মারি
নাগি যাই আবার চাষে
হামার কামের ছুটি তো নাই
বারোটা মাসে।
দুঃখ দিয়া জেবন ভরা বারোটা মাসে ॥

জেবন মানে বুঝি হামরা খালি কাম আর কাম
মাইগে-ছইলে সারা বছর ঝরাই মাথার ঘাম
বসি থাকলে চলবে কি আর
নাগি যাই আবার চাষে ॥

নতুন করি বেছন ছিটান
চলি গেইছে ধান খাওয়া বান
পলি পরা জমিগুল্যাত
লাগাই আবার ধান
খরা বান আর ঝড়-ঝাপ্টা কোন বছর না আসে ॥

সগলে মিলি তোলো আবার
সগলের ভাঙা ঘর
কোন বছর না তুফান আসি
ফেলায় হামার ঘর
তবু হামরা জেবন কাটাই ভালো দিনের আসে ॥

ফসলের সঙ্গে নিবিড় মমতায় জড়ানো কৃষকের জীবন। ধনধান্যে পুষ্পেভরা আমাদের এই বসুন্ধরার ফসলের নিরলস ও নিপুণ কারিগর বাংলার কৃষক। গোলাভরা ধান থাকলে তার কণ্ঠে থাকে প্রাণজুড়ানো গান। ধানভিন্ন বাংলার কৃষকের জীবন একেবারেই অকল্পনীয়। এই ধান তার কাছে কাঁচা সোনাস্বরূপ। মুক্ তিহরণ সরকারের ক্ষেত্রেও এই উপলব্ধি ছিল একেবারেই সহজাত। কারণ মাটির সঙ্গে, ফসলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও ছিল শর্তহীন, ঠিক মায়ের সঙ্গে যেমন সন্তানের। তাই তিনি লিখতে পারেন।

সোনার চেয়ে বেশি দামি
হামার দেশের ধান
এই ধানে ভাই সারা বছর
হামার বাঁচায় প্রাণ ॥

শ্যামলা বরণ জমিন দেখি
হামার ভরে বুক,
তারও চায়া এই দুনিয়ায়
নাই বুঝি আর সুখ।
তাই তো হামরা সারা বছর
করি ভাওয়াইয়া গান ॥

পাকা ধানের সোনার বরণ
বাতাসে দেখি নড়ন-চড়ন
গাঁয়ের চাষী ভাইয়ের ঘরে
মন করে আন্চান্ ॥

তোর দাম যে ট্যাকা দিয়া
যায় না রে ভাই গোনা,
গাচের ফসল নস্রে কেবল
তুই যে কাঁচা সোনা।
তুই আছিস জন্যে এখ্নো
আছে হামার সুখের বান ॥

কালের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে মুক্ তিহরণ সরকারের গণভাওয়াইয়াগুলো। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ স্বৈরশাসক এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে দেশজুড়ে যে গণআন্দোলন শুরু হয় সে আন্দোলনে বড় ভূমিকা ছিল সত্যেন সেন প্রতিষ্ঠিত উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর। রাজধানীর গণ্ডি পেরিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছিল এর কার্যক্রম। ওই সময় গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নেও খোলা হয় উদীচীর শাখা। তখন স্থানীয় পর্যায়ে উদীচীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই গানগুলো পরিবেশনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিও ছিল অনেক। কোনো কোনো গানে এরশাদ সরকারের অপশাসনের চিত্র তুলে ধরায় তার দলের কর্মী নামধারী দুর্বৃত্তদের হামলার লক্ষ্যে পরিণত হন গানগুলোর গীতিকার ও শিল্পীরা। কামারপাড়া রেলওয়ে স্টেশনটি ছিল কামারপাড়া উদীচীর সদস্যদের বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু। সত্যেন সেনের এক জন্মদিনে স্টেশনসংলগ্ন চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘বাবা সৈনিক সৈনিক রে ...’ গানটি পরিবেশনের পর স্থানীয় বাসিন্দা এক সেনা সদস্য তো তাৎক্ষণিকভাবে এ গানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের একটি কক্ষে। আমি ওই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলাম গাইবান্ধার কামারপাড়া শাখা সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে। সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন উদীচীর শাখাসমূহের কার্যক্রম পর্যালোচনা শেষে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখায় কামারপাড়া শাখাকে শ্রেষ্ঠ শাখার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই স্বীকৃতিপ্রাপ্তির মূলে যাঁর অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি তিনি মুক্ তিহরণ সরকার। তাঁর লেখা গণভাওয়াইয়া ও গণমানুষের পদাবলি ওই সময় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল গাইবান্ধাসহ পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। সেরা শাখা হিসেবে কামারপাড়ার নাম ঘোষণার পর মধ্যাহ্ন বিরতির সময় উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক (রানা ভাই) ও বরেণ্য চিত্রশিল্পী আনোয়ার হোসেন আমাকে একান্তে ডেকে নিয়ে আমাদের সাফল্যের কারণ জানতে চান। জানালাম, এই সাফল্যের কারিগর মুক্ তিহরণ সরকার, আমাদের মুক্তিদা, তিনিই আমাদের গুরু। এখানে অবশ্যই উল্লেখ্য, ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধায় জেলা পর্যায়ে সংগঠিত যে কোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল কামারপাড়া উদীচী। এর আহ্বায়ক ছিলেন মুক্ তিহরণ সরকার। ওই সময় উদীচীর গাইবান্ধা জেলা সংসদের সহ-সভাপতিও ছিলেন তিনি। তাঁর ও কামারপাড়া উদীচীর অন্য সদস্যদের লেখা গণসঙ্গীত (গণভাওয়াইয়া) ছিল স্থানীয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও এ গানগুলোও শ্রোতাদের মনে ব্যাপক সাড়া জাগায়। বলা আবশ্যক, সে সময় জেলা পর্যায়ের গণআন্দোলন কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে কামারপাড়া উদীচীর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। আর এর চালিকাশক্তি ছিলেন মুক্ তিহরণ সরকার- যার সৃষ্টির মূলে রয়েছে হৃদয়ের গভীর গহ্বর থেকে উঠে আসা মানবমুক্তির অকৃত্রিম বন্দনা।

আজ মুক্ তিহরণ সরকারের ২৪তম তিরোধান দিবসে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে একটা যৌক্তিক অনুরোধ রেখে এ লেখার সমাপ্তি টানব। আর তা হলো গণভাওয়াইয়াসহ তাঁর সমুদয় সৃষ্টিকর্ম সরকারিভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হোক। তাঁর সৃষ্টিসম্পদ সংরক্ষণ ও প্রচার সময়ের দাবি। এ কাজ সম্পাদনের মধ্য দিয়ে এসব গণভাওয়াইয়ার স্রষ্টা মুক্ তিহরণ সরকারের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দায় কিছুটা হলেও পূরণ হবে।

সাইফুল ইসলাম: গণমাধ্যমকর্মী

 

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;